বরকতুল্লাহ, মোহাম্মদ
বরকতুল্লাহ, মোহাম্মদ (১৮৯৮-১৯৭৪) লেখক, প্রবন্ধকার। ১৮৯৮ সালের ২ মার্চ পাবনা জেলার শাহজাদপুরের ঘোড়াশালে তাঁর জন্ম। তিনি শাহজাদপুর হাইস্কুল এবং রাজশাহী কলেজে অধ্যয়ন করেন। পরে তিনি কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বিএ (অনার্স, ১৯১৮) এবং প্রেসিডেন্সি কলেজ থেকে এমএ (দর্শন, ১৯২০) ও আইন পরীক্ষায় (১৯২২) পাস করেন। পরে বেঙ্গল সিভিল সার্ভিস পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে তিনি চাকরিজীবনে প্রবেশ করে একে একে আয়কর অফিসার (১৯২৩), ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেট (১৯২৪), ম্যাজিস্ট্রেট (১৯৩০), সাব-ডিভিশনাল অফিসার (১৯৩৬) এবং কলকাতার রাইটার্স বিল্ডিং-এ সহকারী সেক্রেটারি (১৯৪৪) হন। সিভিল সাপ্লাই বিভাগেও তিনি কিছুদিন চাকরি করেন। পাকিস্তান হওয়ার পর তিনি ফরিদপুর, কুষ্টিয়া ও ময়মনসিংহের জেলা প্রশাসক (১৯৪৮-৫১) এবং পূর্ব পাকিস্তান সরকারের ডেপুটি সেক্রেটারি (১৯৫১-৫৫) ছিলেন। অবসর গ্রহণের পর ১৯৫৫-৫৭ পর্যন্ত বাংলা একাডেমীতে তিনি বিশেষ কমকর্তা হিসেবে প্রথম পরিচালকের দায়িত্ব পালন করেন।
বরকতুল্লাহ সরকারি দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি সাহিত্যচর্চাও করতেন। আধুনিক বাঙালি মুসলমান লেখকদের মধ্যে তিনিই সর্বপ্রথম দার্শনিক ভাবনাসমৃদ্ধ প্রবন্ধ রচনায় আত্মনিয়োগ করেন। তাঁর গ্রন্থসমূহের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো: পারস্য প্রতিভা (২ খন্ড ১৯২৪, ১৯৩২), মানুষের ধর্ম্ম (১৯৩৪), কারবালা ও ইমামবংশের ইতিবৃত্ত (১৯৫৭), নয়া জাতির স্রষ্টা হযরত মুহম্মদ (১৯৬৩), বাংলা সাহিত্যে মুসলিম ধারা (১৯৬৯) ইত্যাদি। দর্শনের বিভিন্ন দুরূহ বিষয় সাবলীল বাংলা গদ্যে প্রকাশ করে তিনি প্রতিষ্ঠা লাভ করেন। তিনি প্রবন্ধ সাহিত্যে বাংলা একাডেমী পুরস্কার (১৯৬০), নয়া জাতির স্রষ্টা হযরত মুহম্মদ গ্রন্থের জন্য দাউদ পুরস্কার (১৯৬৩) লাভ করেন এবং পাকিস্তান সরকার কর্তৃক সিতারা-ই-ইমতিয়াজ (১৯৬২) পদক ও প্রেসিডেন্ট এওয়ার্ড অফ পারফরমেন্স (১৯৭০) সম্মানে ভূষিত হন। ১৯৭৪ সালের ২ নভেম্বর ঢাকায় তাঁর মৃত্যু হয়। [বদিউজ্জামান]