জন্ডিস

NasirkhanBot (আলোচনা | অবদান) কর্তৃক ২০:৫৫, ৪ মে ২০১৪ তারিখে সংশোধিত সংস্করণ (Added Ennglish article link)
(পরিবর্তন) ← পূর্বের সংস্করণ | সর্বশেষ সংস্করণ (পরিবর্তন) | পরবর্তী সংস্করণ → (পরিবর্তন)

জন্ডিস (Jaundice)  পান্ডুরোগ, কামলা অথবা ন্যাবা নামে পরিচিত এক ধরনের রোগ। রক্তে বিলিরুবিন (bilirubin) নামক পিত্তরঞ্জকের পরিমাণ স্বাভাবিক মাত্রার চেয়ে অধিক হয়ে গেলে চোখ, ত্বক এবং মিউকাস আবরণী হলুদ বর্ণ ধারণ করে, যা জন্ডিস বা পান্ডুরোগ নামে পরিচিত। রক্তে লোহিত কণিকার অতিমাত্রায় ভাঙন, কোনো কোনো রোগ সংক্রমণ, ভাইরাসঘটিত যকৃতপ্রদাহ (viral hepatitis), পিত্তনালিতে প্রতিবন্ধকতা, বিভিন্ন ঔষধের পার্শ্ব-প্রতিক্রিয়া প্রভৃতি কারণে শরীরে বিলিরুবিনের পরিমাণ বৃদ্ধি পায়। স্বাভাবিক অবস্থায় রক্তকোষের হিমোগ্লোবিন বিপাকের ফলে বিলিরুবিন তৈরি হয়। রক্ত থেকে এ বিলিরুবিন যকৃতের মাধ্যমে অপসারিত হয়ে পিত্তরসে নির্গত হয় এবং অন্ত্রে পরিবাহিত হয়। রক্তে বিলিরুবিনের মাত্রা বেড়ে যাওয়ার উৎস অনুসারে জন্ডিস রোগ তিন ধরনের হয়ে থাকে ১. রক্তকোষ ভাঙনজনিত জন্ডিস (haemolytic jaundice), ২. যকৃতকোষীয় জন্ডিস (parenchymal or hepato-cellular jaundice) এবং ৩. পিত্তনালি বন্ধ হয়ে যাওয়াজনিত জন্ডিস (obstructive jaundice)।

সাধারণত রক্তকোষ ভাঙনজনিত রক্তস্বল্পতা (haemolytic anaemias), রক্ত পরিসঞ্চালনের সময় রক্তের গ্রুপের গড়মিল, রক্তকোষের ভাঙন সৃষ্টিকারী ইত্যাদি কারণে রক্তকোষ ভাঙনজনিত জন্ডিস হয়ে থাকে। বাংলাদেশে  থ্যালাসেমিয়া এবং হিমোগ্লোবিন-ই রোগের (haemoglobin-E disease) কারণে অধিকাংশ রক্তকোষ ভাঙনজনিত জন্ডিস হয়ে থাকে।

যকৃতকোষীয় জন্ডিস যকৃতকোষের নানা রকম রোগের কারণে সৃষ্টি হতে পারে। ভাইরাসঘটিত যকৃত প্রদাহ,  ঔষধ, রাসায়নিক পদার্থ ও বিষক্রিয়ার ফলে সৃষ্ট জন্ডিস,  ব্যাকটেরিয়া এবং  প্রোটোজোয়া সংক্রমণের কারণে সৃষ্ট জন্ডিস ইত্যাদি যকৃতকোষীয় জন্ডিসের উদাহরণ। যকৃতকোষীয় জন্ডিস ধীরে ধীরে যকৃতের কোষ ধ্বংস করে ফেলে। এতে যকৃত তার কার্যক্ষমতা হারিয়ে ফেলে এবং রক্ত থেকে বিলিরুবিন অপসারণে ব্যর্থ হয়। বাংলাদেশে জন্ডিস আক্রান্ত রোগীদের মধ্যে যকৃতকোষীয় জন্ডিস রোগীর সংখ্যাই বেশি। হেপাটাইটিস বি এবং হেপাটাইটিস সি নামক ভাইরাসের সংক্রমণ দ্বারা এ জন্ডিস হয়ে থাকে। তবে হেপাটাইটিস বি ভাইরাসের (এইচ.বি.ভি) তুলনায় হেপাটাইটিস সি ভাইরাসের সংক্রমণ খুবই কম। প্রধানত পানির মাধ্যমে এবং সংক্রমিত রক্ত গ্রহণের মাধ্যমে এইচ.বি.ভি সুস্থ দেহে সংক্রমণ ঘটিয়ে থাকে। ১৯৮৭ থেকে ১৯৯০ সাল পর্যন্ত হেপাটাইটিস বি ভাইরাস আক্রান্ত জন্ডিস রোগীদের ওপর পরিচালিত এক সমীক্ষায় দেখা গেছে, এইচ.বি.ভি সংক্রমণের অল্পকাল পরেই এদের বেশির ভাগ দীর্ঘস্থায়ী যকৃতের প্রদাহের শিকার হয় যাদের অনেকেই মৃত্যুবরণ করেছে। ১৯৯১ সালে প্রকাশিত অপর একটি সমীক্ষায় দেখা গেছে যে, ঢাকা শহরের ২০ শতাংশ পেশাদার রক্তদাতা, ১১ শতাংশ পতিতা এবং ৮ শতাংশ মাদকাসক্তের রক্তে এইচ.বি.ভি-এর উপস্থিতি রয়েছে।

পিত্তনালি বন্ধ হয়ে যাওয়াজনিত জন্ডিস নানা কারণে সৃষ্টি হয়ে থাকে। পিত্তনালি গঠনে জন্মগত ত্রুটি, পিত্তনালিতে পাথর (gall stone) আটকে গেলে, অগ্নাশয়ের (pancreas) ক্যানসার কিংবা লসিকাগ্রন্থি স্ফীত হয়ে পিত্তনালিকে বন্ধ করে এ ধরনের জন্ডিস সৃষ্টি করতে পারে।

অনেকক্ষেত্রে নবজাত শিশুর জন্মের ২৪ ঘণ্টার মধ্যে এক ধরনের জন্ডিস দেখা দেয়। মাতৃগর্ভে থাকাকালীন শিশুর দেহে মাতৃদেহ থেকে রক্ত সঞ্চালনের সঙ্গে কোনো কারণে অ্যান্টিবডিসমূহ (maternal antibodies) শিশুর জন্মের পর রক্তের লোহিত কণিকা ধ্বংস করতে থাকলে নবজাতকের জন্ডিস দেখা দেয়।

জন্ডিস রোগের ফলে ত্বক হলুদ বর্ণ ধারণ করা ছাড়াও প্লীহার আকৃতি বৃদ্ধি, প্রস্রাবের গাঢ় হলুদ বর্ণধারণ, রক্তস্বল্পতা, ক্ষুধামান্দ্য, বমি বমি ভাব প্রভৃতি লক্ষণ দেখা দেয়। জন্ডিস রোগীদের যথেষ্ট বিশ্রাম গ্রহণ, প্রচুর পরিমাণে পানি পান করা, যথেষ্ট শর্করা জাতীয় খাদ্য গ্রহণ এবং চর্বিজাতীয় খাদ্য বর্জন করা প্রয়োজন। এইচ.বি.ভি ভ্যাক্সিন গ্রহণের মাধ্যমে হেপাটাইটিস বি ভাইরাস সংক্রমণের ঝুঁকি থেকে মুক্ত থাকা যায়। বাংলাদেশের সকল হাসপাতাল এবং গুরুত্বপূর্ণ স্বাস্থ্য কেন্দ্রসমূহে এখন এইচ.বি.ভি ভ্যাক্সিন সহজলভ্য।  [মোঃ মাহবুব মোর্শেদ]