কাজীপুর উপজেলা
কাজীপুর উপজেলা (সিরাজগঞ্জ জেলা) আয়তন: ৩২৮.৭৯ বর্গ কিমি। অবস্থান: ২৪°৩২´ থেকে ২৪°৪৬´ উত্তর অক্ষাংশ এবং ৮৯°৩২´ থেকে ৮৯°৪৮´ পূর্ব দ্রাঘিমাংশ। সীমানা: উত্তরে ধুনট, সারিয়াকান্দি ও সরিষাবাড়ী উপজেলা, দক্ষিণে সিরাজগঞ্জ সদর উপজেলা, পূর্বে সরিষাবাড়ী উপজেলা ও যমুনা নদী, পশ্চিমে ধুনট উপজেলা। ক্রমাগত নদী ভাঙনে বিলীন হয়েছে মল্লিকপাড়া, ধুলাউড়ি, মাইজবাড়ী, মানিক পটল, কাজীপুর, মেঘাই, তাড়াকান্দি, টেংলাহাটা সহ অনেক প্রাচীন জনপদ।
জনসংখ্যা ২৭৪৬৭৯; পুরুষ ১৩৪৯৯২, মহিলা ১৩৯৬৮৭। মুসলিম ২৬৭৪৭৬, হিন্দু ৭১৮১, খ্রিস্টান ১ এবং অন্যান্য ২১।
জলাশয় প্রধান নদী: যমুনা।
প্রশাসন কাজীপুর থানা গঠিত হয় ১৯২০ সালে এবং থানাকে উপজেলায় রূপান্তর করা হয় ১৯৮৪ সালে।
উপজেলা | ||||||||
পৌরসভা | ইউনিয়ন | মৌজা | গ্রাম | জনসংখ্যা | ঘনত্ব (প্রতি বর্গ কিমি) | শিক্ষার হার (%) | ||
শহর | গ্রাম | শহর | গ্রাম | |||||
১ | ১২ | ১১২ | ১৭২ | ১৬৫৪০ | ২৫৮১৩৯ | ৮৩৫ | ৪৬.২ (২০০১) | ৩৭.০ |
পৌরসভা | ||||||||
আয়তন (বর্গ কিমি) | ওয়ার্ড | মহল্লা | লোকসংখ্যা | ঘনত্ব (প্রতি বর্গ কিমি) | শিক্ষার হার (%) | |||
৮.৪৯ (২০০১) | ৯ | ১১ | ১২৬৩৭ | ১৬০১ (২০০১) | ৪৬.৯ |
উপজেলা শহর | ||||||||
আয়তন (বর্গ কিমি) | মৌজা | লোকসংখ্যা | ঘনত্ব (প্রতি বর্গ কিমি) | শিক্ষার হার (%) | ||||
৮.৭০ (২০০১) | ২ | ৩৯০৩ | ১৬৩৭ (২০০১) | ৪২.০ |
ইউনিয়ন | ||||||||
ইউনিয়নের নাম ও জিও কোড | আয়তন (একর) | লোকসংখ্যা | শিক্ষার হার (%) | |||||
পুরুষ | মহিলা | |||||||
কাজীপুর ৩৪ | ৬০৫৮ | ১০১৯৬ | ১০৫৩২ | ৪৫.৮ | ||||
খাস রাজবাড়ী ৪৩ | ৮০৭২ | ৪৮৬৬ | ৪৯৫৫ | ২৩.২ | ||||
গান্দাইল ২৫ | ৫৫৫৭ | ১৩১৫৯ | ১৪১৯২ | ৪১.৬ | ||||
চর গিরিশ ১৫ | ৫৪৬৪ | ১০৬৩২ | ১০৬৫৭ | ৩৫.০ | ||||
চালিতাডাঙ্গা ১৭ | ৬২৯১ | ১৬২১৯ | ১৭৫৯৬ | ৩৯.২ | ||||
তেকানি ৯৪ | ৭৭০০ | ৬৮৯২ | ৭০৬০ | ৩৮.৬ | ||||
নাটুয়ার পাড়া ৬০ | ৬৮২১ | ৯১৮৭ | ৯১০৫ | ৩৭.৭ | ||||
নিশ্চিন্তপুর ৬৯ | ৮০২০ | ৯২১০ | ৯৩৮১ | ৩৪.০ | ||||
মনসুরনগর | ৯১৮৬ | ১১৫১১ | ১১০৭৪ | ২৩.৪ | ||||
মাইজবাড়ী ৫১ | ৪৩৫৩ | ১২৬৮৬ | ১২৮১৮ | ৩৭.৯ | ||||
শুভগাছা ৮৬ | ৬৩২৫ | ৬৯৮৭ | ৭৪২৫ | ৪৭.১ | ||||
সোনামুখী ৭৭ | ৫৯৬৬ | ১৭৪৪৩ | ১৮২৫৯ | ৩৫.৬ |
সূত্র আদমশুমারি রিপোর্ট ২০১১, বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো
মুক্তিযুদ্ধ ১৯৭১ সালে পাকবাহিনী উপজেলার বিভিন্ন স্থানে ব্যাপক লুটপাট, অগ্নিসংযোগ ও গণহত্যা চালায়। ডিসেম্বর মাসে গান্ধাইল ইউনিয়নের বরইতলা গ্রামে মুক্তিযোদ্ধাদের সঙ্গে পাকসেনাদের লড়াইয়ে বেশ কয়েকজন মুক্তিযোদ্ধা শহীদ হন। উপজেলার বরইতলায় ১টি গণকবর রয়েছে। বরইতলা যুদ্ধের স্মরণে সেখানে ১টি এবং আলমপুর চৌরাস্তায় ও পিপুলবাড়িয়ায় আরও ২টি স্মৃতিস্তম্ভ নির্মিত হয়েছে।
বিস্তারিত দেখুন কাজিপুর উপজেলা, বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ, বাংলাদেশ এশিয়াটিক সোসাইটি, ঢাকা ২০২০, খণ্ড ২।
ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান মসজিদ ২৩১, মাযার ৩, মন্দির ৪৫।
শিক্ষার হার, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড় হার ৩৭.৫%; পুরুষ ৪০.৭%, মহিলা ৩৪.৪%। কলেজ ১২, মাধ্যমিক বিদ্যালয় ৫১, প্রাথমিক বিদ্যালয় ২১৬, মাদ্রাসা ১০। উল্লেখযোগ্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠান: কাজীপুর সরকারি মনসুর আলী কলেজ, নাটুয়ারপাড়া ডিগ্রি কলেজ, কাজীপুর মহিলা কলেজ, মেঘাই ই.ইউ.আই, বহুমুখী উচ্চ বিদ্যালয় (১৯১৯), মেঘাই হাই স্কুল (১৯২০), গান্দাইল হাই স্কুল (১৯২০), রানী দিনমণি হাই স্কুল (১৯৫৭), কাজীপুর সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়, সোনামুখী সিনিয়র ফাজিল মাদ্রাসা।
সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠান লাইব্রেরি ১, ক্লাব ৩২, খেলার মাঠ ১২।
জনগোষ্ঠীর আয়ের প্রধান উৎস কৃষি ৬৭.৪৪%, অকৃষি শ্রমিক ১.৯৬%, শিল্প ১.৭২%, ব্যবসা ১১.৩১%, পরিবহণ ও যোগাযোগ ১.৭১%, চাকরি ৬.৭৫%, নির্মাণ ২.৫৫%, ধর্মীয় সেবা ০.১৯%, রেন্ট অ্যান্ড রেমিটেন্স ০.১৫% এবং অন্যান্য ৬.২২%।
কৃষিভূমির মালিকানা ভূমিমালিক ৬৮.৫৩%, ভূমিহীন ৩১.৮৭%। শহরে ৬০.৪২% এবং গ্রামে ৬৯.৫৬% পরিবারের কৃষিজমি রয়েছে।
প্রধান কৃষি ফসল ধান, পাট, গম, ডাল, মরিচ, সরিষা, তিল, তামাক, শাকসবজি।
বিলুপ্ত বা বিলুপ্তপ্রায় ফসলাদি আউশ ধান।
প্রধান ফল-ফলাদি আম, জাম, কাঁঠাল, পেঁপে, পেয়ারা, নারিকেল, লিচু, কলা।
মৎস্য, গবাদিপশু ও হাঁস-মুরগির খামার এ উপজেলায় মৎস্য, গবাদিপশু, হাঁস-মুরগি, হ্যাচারি ও কৃত্রিম প্রজনন কেন্দ্র রয়েছে।
যোগাযোগ বিশেষত্ব পাকারাস্তা ৮৭ কিমি, আধা-পাকারাস্তা ৩ কিমি, কাঁচারাস্তা ২৯৪ কিমি; সেতু ১০৭, কালভার্ট ২৪১।
বিলুপ্ত বা বিলুপ্তপ্রায় সনাতন বাহন পালকি, ডুলি, ঘোড়ার গাড়ি।
কুটিরশিল্প তাঁতশিল্প, লৌহশিল্প।
হাটবাজার ও মেলা হাটবাজার ৩৭, মেলা ৩। নাটুয়ারপাড়া হাট, সোনামুখী হাট, হরিনাথপুর হাট, ভানুডাঙ্গা হাট, চালিতাডাঙ্গা হাট, মাথাইল চাপর হাট, গান্দাইল হাট, পানাগাড়ী হাট এবং সোনামুখী মেলা উল্লেখযোগ্য।
প্রধান রপ্তানিদ্রব্য ধান, পাট, মরিচ, সরিষা।
বিদ্যুৎ ব্যবহার এ উপজেলার সবক’টি ওয়ার্ড ও ইউনিয়ন পল্লিবিদ্যুতায়ন কর্মসুচির আওতাধীন । তবে ২৮.২% পরিবারের বিদ্যুৎ ব্যবহারের সুযোগ রয়েছে।
পানীয়জলের উৎস নলকূপ ৯৭.০%, ট্যাপ ০.৪% এবং অন্যান্য ২.৬%।
স্যানিটেশন ব্যবস্থা এ উপজেলার ৮৩.৪% পরিবার স্বাস্থ্যকর এবং ১৫.৬% পরিবার অস্বাস্থ্যকর ল্যাট্রিন ব্যবহার করে। ১.০% পরিবারের কোনো ল্যাট্রিন সুবিধা নেই।
স্বাস্থ্যকেন্দ্র উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ১, স্বাস্থ্যকেন্দ্র ৯, ক্লিনিক ১, ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্র ১১, পশু হাসপাতাল ১।
প্রাকৃতিক দুর্যোগ ১৮৯৭, ১৯৪৩ ও ১৯৭৪ সালের দুর্ভিক্ষে এ উপজেলায় প্রাণহানি ঘটে। এছাড়া ১৮৮৫ ও ১৮৯৭ সালের ভূমিকম্পে এ উপজেলার ঘরবাড়ি ও অন্যান্য সম্পদের ব্যাপক ক্ষতি হয়।
এনজিও ব্র্যাক, প্রশিকা, টিএমএসএস, উজ্জীবন। [রফিকুল ইসলাম]
তথ্যসূত্র আদমশুমারি রিপোর্ট ২০০১ ও ২০১১, বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো; কাজীপুর উপজেলা সাংস্কৃতিক সমীক্ষা প্রতিবেদন ২০০৭।