কুতুবশাহী মসজিদ
কুতুবশাহী মসজিদ হজরত পান্ডুয়ায় অবস্থিত। এটি নূর কুতুব আলমএর এক বংশধর ১৫৮৩ খ্রিস্টাব্দে নির্মাণ করেন। নূর-কুতুব আলমের সমাধি এবং একলাখী সমাধিসৌধ এর মাঝখানে এটি নির্মিত। ১৫৭৬ খ্রিস্টাব্দে মুগল কর্তৃক পশ্চিম বঙ্গ বিজয়ের পর নির্মিত হলেও, কোণার বুরুজগুলির উপরে নির্মিত ক্ষুদ্র গম্বুজগুলি ছাড়া, মসজিদটি আকৃতিতে গৌড়ের সুলতানি মসজিদের অনুরূপ। ছোট গম্বুজগুলি মুগল নকশায় নির্মিত বুরুজগুলির বৈশিষ্ট্যের পরিচয় বহন করে না। যদি এগুলি মসজিদের ধ্বংসপ্রাপ্ত গম্বুজগুলির নির্মাণের সময় নির্মিত হয়ে থাকে, তাহলে এগুলি মুগল রীতিতে হওয়া উচিত ছিল। সম্ভবত: রাজাশাহীর বাঘা মসজিদএর ন্যায় ইমারতটিকে মুগল বৈশিষ্ট্যের রূপ দেওয়ার জন্য পরবর্তী কালে এগুলি সংযোজিত হয়েছিল।
মসজিদের উপকরণাদি হচেছ অন্তস্থলে ইট এবং বাইরের দিকে সাধারণ পাথর খন্ড। আকার-আকৃতির দিক থেকে এটি গৌড়-লখনৌতির বড় সোনা মসজিদের প্রায় অনুরূপ। এর পরিমাপ হচেছ ২৫.১০ মি × ১১.৫০ মি। এর উত্তর দিক থেকে দক্ষিণ দিকে দুটি আইল আছে। পূর্ব দিকে রয়েছে পাঁচটি সূচ্যগ্র খিলান প্রবেশ পথ এবং উত্তর ও দক্ষিণ পার্শ্বের মাঝখানে একটি করে মোট দুটি জালিকৃত জানালা আছে। সুতরাং এর মোট গম্বুজের সংখ্যা ছিল ১০টি। এগুলি সাধারণ গৌড় রীতির পেন্ডেন্টিভ অনুযায়ী পাথরের বহু পলকাটা বিশিষ্ট স্তম্ভের উপর নির্মিত। কিবলা পার্শ্বে উপরে খাজবিশিষ্ট খিলানসহ পাঁচটি মিহরাব আছে। খাজবিশিষ্ট খিলানগুলি এখন ধ্বংসপ্রাপ্ত। প্রধান মিহরাবের উত্তর পার্শ্বে একটি উচু মিম্বার আছে যা আদিনা মসজিদএর হুবহু অনুরূপ। মিম্বারের সামনে বর্তমানে পাথরের একটি আয়তাকার প্লাটফর্ম আছে। এটি সম্ভবত স্থানীয় জনৈক দরবেশের (ফকির) সমাধি। এটি পরবর্তী সময়ে সংযোজিত। দড়ি নকশার আলঙ্কারিকপট্টি কোণার বুরুজগুলির চারদিকে, দরজা প্যানেলের উপরে এবং উপরে বক্রাকৃতির কার্নিশের নিচে দেখা যায় এবং খিলানের সম্মুখ ভাগে দাঁতালো নকশা এবং স্প্যান্ড্রেলে গোলাপ নকশা পরিলক্ষিত হয়। অভ্যন্তরে স্তরে স্তরে পেন্ডেন্টিভের সাধারণ অলঙ্করণ রীতির প্রকাশ পায় এবং উত্থিত সম্মুখভাগে অনাবৃত ইটের খিলানসমূহ দেখা যায়।
মসজিদটিকে কখনও কখনও সোনা মসজিদ বলেও অভিহিত করা হয়। কারণ গৌড়-লখনৌতির বড় ও ছোট সোনা মসজিদএর ন্যায় এর গম্বুজগুলিও গিলটি করা ছিল। [এ.বি.এম হুসেন]