রায়পুর উপজেলা
রায়পুর উপজেলা (লক্ষ্মীপুর জেলা) আয়তন: ১৯৫.৯৮ বর্গ কিমি। অবস্থান: ২২°৫৩´ থেকে ২৩°০৪´ উত্তর অক্ষাংশ এবং ৯০°৩৮´ থেকে ৯০°৫০´ পূর্ব দ্রাঘিমাংশ। সীমানা: উত্তরে ফরিদগঞ্জ এবং রামগঞ্জ উপজেলা, দক্ষিণে লক্ষ্মীপুর সদর ও মেহেন্দীগঞ্জ উপজেলা, পূর্বে লক্ষ্মীপুর সদর উপজেলা, পশ্চিমে হিজলা ও হাইমচর উপজেলা এবং মেঘনা নদী।
জনসংখ্যা ২৭৫১৬০; পুরুষ ১৩২২৮৪, মহিলা ১৪২৮৭৬। মুসলিম ২৬৬২২২, হিন্দু ৮৯০৩, বৌদ্ধ ৫, খ্রিস্টান ৭ এবং অন্যান্য ২৩।
জলাশয় প্রধান নদী: মেঘনা।
প্রশাসন রায়পুর থানা গঠিত হয় ১৮৭৭ সালে এবং উপজেলায় রূপান্তর করা হয় ১৯৮৩ সালের ২৪ মার্চ।
উপজেলা | ||||||||
পৌরসভা | ইউনিয়ন | মৌজা | গ্রাম | জনসংখ্যা | ঘনত্ব (প্রতি বর্গ কিমি) | শিক্ষার হার (%) | ||
শহর | গ্রাম | শহর | গ্রাম | |||||
১ | ১০ | ৪৮ | ৮৩ | ৫৯৩৫২ | ২১৫৮০৮ | ১৪০৪ | ৫৫.৯ (২০০১) | ৪৭.৯ |
পৌরসভা | ||||||||
আয়তন (বর্গ কিমি) | ওয়ার্ড | মহল্লা | লোকসংখ্যা | ঘনত্ব (প্রতি বর্গ কিমি) | শিক্ষার হার (%) | |||
১০.০২ (২০০১) | ৯ | ১৫ | ৩০৭৫৬ | ২৫৬৯ (২০০১) | ৬০.৮ |
উপজেলা শহর | ||||||||
আয়তন (বর্গ কিমি) | মৌজা | লোকসংখ্যা | ঘনত্ব (প্রতি বর্গ কিমি) | শিক্ষার হার (%) | ||||
২২.০৬ (২০০১) | ৪ | ২৮৫৯৬ | ১২৫২ (২০০১) | ৬৪.৭ |
ইউনিয়ন | ||||||||
ইউনিয়নের নাম ও জিও কোড | আয়তন (একর) | লোকসংখ্যা | শিক্ষার হার (%) | |||||
পুরুষ | মহিলা | |||||||
উত্তর চর আবাবিল ২৩ | ৩৩৮৪ | ১২৮৯৬ | ১৩৬৯৩ | ৪৭.২ | ||||
উত্তর চর বংশী ৩৫ | ১২০৭৯ | ১৭৫৯৯ | ১৯১১১ | ৪৭.৫ | ||||
কেরোয়া ৫৯ | ৪১৪০ | ১৪০৩৫ | ১৬৬৩৩ | ৬৫.৫ | ||||
চর মোহনা ৪৭ | ৫৯৮৫ | ১২৭৮৩ | ১২৬১৬ | ৪৯.৫ | ||||
চরপাতা ৫২ | ১৯৩৬ | ৬৮১৪ | ৮০৫২ | ৫৮.০ | ||||
দক্ষিণ চর আবাবিল ২৮ | ৪০২৯ | ১১০৩৯ | ১২৩০০ | ৪৭.৫ | ||||
দক্ষিণ চর বংশী ৩৮ | ৬৯৮৭ | ১৩৬৩০ | ১৩৪২১ | ৩২.৪ | ||||
বামনী ১১ | ৩৬১০ (২০০১) | ১১৩৯৪ | ১৩৬৩৪ | ৬৩.৬ | ||||
রায়পুর ৭১ | ১৬৪৯ | ৫৭৭১ | ৫৯৩৩ | ৪৮.৮ | ||||
সোনাপুর ৮৩ | ২৩০৯ | ১১২৫৮ | ১১৭৯২ | ৫৭.৪ |
সূত্র আদমশুমারি রিপোর্ট ২০1১, বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো।
প্রাচীন নিদর্শনাদি ও প্রত্মসম্পদ কেরোয়া গ্রামে নির্মিত তিন গম্বুজবিশিষ্ট জ্বীনের মসজিদ (আঠারো শতক), শায়েস্তা নগরের জমিদার বাড়ি।
মুক্তিযুদ্ধ মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন রায়পুর আলীয়া মাদ্রাসা ছিল রাজাকারদের ক্যাম্প। অনেক মুক্তিযোদ্ধা, নারী-পুরুষকে তারা এই স্থানে হত্যা করতো। কাফিলাতলীর ও কাজির দিঘির পাড়ে পাকবাহিনীর সাথে মুক্তিযোদ্ধাদের লড়াই সংঘটিত হয়। তাছাড়া রায়পুর এলএম উচ্চ বিদ্যালয়ে পাকিস্তানি সৈন্যদের ক্যাম্প আক্রমণ ছিল এই অঞ্চলে মুক্তিযোদ্ধাদের অন্যতম উল্লেখযোগ্য একটি ঘটনা। রায়পুরের উপজেলা পরিষদ মিলনায়তনের সামনে ১টি স্মৃতিস্তম্ভ স্থাপিত হয়েছে।
বিস্তারিত দেখুন রায়গঞ্জ উপজেলা, বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ, বাংলাদেশ এশিয়াটিক সোসাইটি, ঢাকা ২০২০, খণ্ড ৯।
ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান মসজিদ ৩০৮, মন্দির ৯, মাযার ৫, দরগাহ ১। উল্লেখযোগ্য ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান: রায়পুর বড় মসজিদ, জ্বীনের মসজিদ, পীরবাড়ি মসজিদ, বড় মিয়া সাহেবের দরগাহ।
শিক্ষার হার, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড় হার ৫১.১%; পুরুষ ৫০.৯%, মহিলা ৫১.৩%। কলেজ ৩, মাধ্যমিক বিদ্যালয় ২৬, প্রাথমিক বিদ্যালয় ৮০, মাদ্রাসা ২১। উল্লেখযোগ্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠান: রায়পুর মহিলা কলেজ (১৯৬৩), রায়পুর সরকারি কলেজ (১৯৭০), চর আবাবিল এসসি উচ্চ বিদ্যালয় (১৯১০), রায়পুর এলএম পাইলট উচ্চ বিদ্যালয় (১৯১১), চর আবাবিল রছিম উদ্দিন উচ্চ বিদ্যালয় (১৯১৪), উত্তর কেরোয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় (১৮৯৫), রায়পুর আলীয়া মাদ্রাসা (১৮৮৬), লামচরী কারামতিয়া ফাজিল মাদ্রাসা (১৯২২)।
পত্র-পত্রিকা ও সাময়িকী পাকি: অবসর, মাসিক: ডাকাতিয়া, ত্রৈমাসিক: রায়পুর দর্পণ (১৯৯৮), প্রথম জাগরণ।
সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠান লাইব্রেরি ১, কাব ১, প্রেসকাব ১, মহিলা সংগঠন ৫৩, সংগীত বিদ্যালয় ১, থিয়েটার গ্রুপ ১, সিনেমা হল ২। উল্লেখযোগ্য সাংস্কৃতিক সংগঠন: খেলাঘর।
জনগোষ্ঠীর আয়ের প্রধান উৎস কৃষি ৪৭.১৬%, অকৃষি শ্রমিক ২.৮৫%, শিল্প ০.৭০% ব্যবসা ১৪.০১%, পরিবহণ ও যোগাযোগ ৪.১৪%, চাকরি ৯.৬৯%, নির্মাণ ২.২৮%, ধর্মীয় সেবা ০.৪৭%, রেন্ট এন্ড রেমিটেন্স ৮.৭১% এবং অন্যান্য ৯.৯৯%।
কৃষিভূমির মালিকানা ভূমিমালিক ৫১.৯২%, ভূমিহীন ৪৮.০৮%। শহরে ৫১.৪৫% এবং গ্রামে ৫২.০৬% পরিবারের কৃষিজমি রয়েছে।
প্রধান কৃষি ফসল ধান, পাট, গম, আখ, সরিষা, আলু, সয়াবিন, ভুট্টা।
বিলুপ্ত বা বিলুপ্তপ্রায় ফসলাদি কাউন, জোয়ার, তিল, তিসি, খেসারি, কলাই।
প্রধান ফল-ফলাদি নারিকেল, সুপারি, আম, কাঁঠাল, কলা, আমড়া, লেবু।
মৎস্য, গবাদিপশু ও হাঁস-মুরগির খামার মৎস্য ৮, হাঁস-মুরগি ৭২, হ্যাচারি ৯, দুগ্ধ-খামার ১৪।
যোগাযোগ বিশেষত্ব পাকারাস্তা ২১৩ কিমি, আধা-পাকারাস্তা ৩৭ কিমি, কাঁচারাস্তা ৪৩৩ কিমি; নৌপথ ২৪ কিমি। বেড়ীবাধ ৯৬.৫ কিমি।
বিলুপ্ত বা বিলুপ্তপ্রায় সনাতন বাহন পাল্কি, গরুর গাড়ি।
শিল্প ও কলকারখানা টেক্সটাইল মিল ১, রাইস মিল ৬২, ফাওয়ার মিল ২৫, বিস্কুট ফ্যাক্টরি ১৪, আইস ফ্যাক্টরি ৭, বিড়ি ফ্যাক্টরি ২, স’মিল ৩০, অয়েল মিল ৫, ওয়েল্ডিং কারখানা ২৫, অ্যালুমিনিয়ম কারখানা ১, ইটভাটা ৪।
কুটিরশিল্প স্বর্ণশিল্প, বাঁশ ও বেতের কাজ।
হাটবাজার ও মেলা হাটবাজার ২৮। রায়পুর বাজার, হায়দারগঞ্জ বাজার, খাসের হাট, রাখালিয়া হাট উলেখযোগ্য।
প্রধান রপ্তানিদ্রব্য নারিকেল, সুপারি, সয়াবিন, ভুট্টা।
বিদ্যুৎ ব্যবহার এ উপজেলার সবক’টি ওয়ার্ড ও ইউনিয়ন পল্লিবিদ্যুতায়ন কর্মসূচির আওতাধীন। তবে ৪৪.৭% পরিবারের বিদ্যুৎ ব্যবহারের সুযোগ রয়েছে।
পানীয়জলের উৎস নলকূপ ৯০.৫%, ট্যাপ ৪.৬% এবং অন্যান্য ৪.৯%।
স্যানিটেশন ব্যবস্থা এ উপজেলার ৭৮.৭% পরিবার স্বাস্থ্যকর এবং ১৯.২% পরিবার অস্বাস্থ্যকর ল্যাট্রিন ব্যবহার করে। ২.১% পরিবারের কোনো ল্যাট্রিন সুবিধা নেই।
স্বাস্থ্যকেন্দ্র উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ১, উপস্বাস্থ্য কেন্দ্র ২, পরিবার পরিকল্পনা কেন্দ্র ৭, ক্লিনিক ৬।
এনজিও ব্র্যাক, প্রশিকা, আশা। [নাজমুল আহসান রাজু]
তথ্যসূত্র আদমশুমারি রিপোর্ট ২০০১ ও ২০১১, বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো; রায়পুর উপজেলা সাংস্কৃতিক সমীক্ষা প্রতিবেদন ২০০৭।