লক্ষ্মীপুর জেলা

লক্ষ্মীপুর জেলা (চট্টগ্রাম বিভাগ)  আয়তন: ১৪৪০.৩৯ বর্গ কিমি। অবস্থান: ২২°৩০´ থেকে ২৩°১০´ উত্তর অক্ষাংশ এবং ৯০°৩৮´ থেকে ৯০°০১´ পূর্ব দ্রাঘিমাংশ। সীমানা: উত্তরে চাঁদপুর জেলা, দক্ষিণে ভোলা ও নোয়াখালী জেলা, পূর্বে নোয়াখালী জেলা, পশ্চিমে বরিশাল ও ভোলা জেলা এবং মেঘনা নদী।

জনসংখ্যা ১৭২৯১৮৮; পুরুষ ৮২৭৭৮০, মহিলা ৯০১৪০৮। মুসলিম ১৬৬৯৪৯৫, হিন্দু ৫৯৪১৭, বৌদ্ধ ১২০, খ্রিস্টান ১০৬ এবং অন্যান্য ৫০।

জলাশয় মেঘনা, ডাকাতিয়া ও কাটাখালী নদী এবং হোরাখালী খাল ও ছাগলচিরা খাল উল্লেখযোগ্য।

প্রশাসন লক্ষ্মীপুর মহকুমা গঠিত হয় ১৯৭৯ সালে এবং মহকুমাকে জেলায় রূপান্তর করা হয় ১৯৮৪ সালে।

জেলা
আয়তন (বর্গ কিমি) উপজেলা পৌরসভা ইউনিয়ন মৌজা গ্রাম জনসংখ্যা ঘনত্ব (প্রতি বর্গ কিমি) শিক্ষার হার (%)
শহর গ্রাম
১৪৪০.৩৯ ৫৮ ৫৫৯ ৫৪৭ ২৬২৯৯৭ ১৪৬৬১৯১ ১২০০ ৪৯.৪
জেলার অন্যান্য তথ্য
উপজেলার নাম আয়তন (বর্গ কিমি) পৌরসভা ইউনিয়ন মৌজা গ্রাম জনসংখ্যা ঘনত্ব (প্রতি বর্গ কিমি) শিক্ষার হার (%)
কমলনগর ৩১৪.৮৬ - ২৪ ৩৩ ২২২৯১৫ ৭০৮ ৩০.৭
রামগঞ্জ ১৬৯.৩১ ১০ ১১৯ ১৩৪ ২৮৫৬৮৬ ১৬৮৭ ৬৪.২
রামগতি ২৭৯.৮৮ ২৮ ৩৯ ২৬১০০২ ৯৩৩ ৩৯.৩
রায়পুর ১৯৫.৯৮ ১০ ৪৮ ৮৩ ২৭৫১৬০ ১৪০৪ ৫১.১
লক্ষ্মীপুর সদর ৪৮০.৩৫ ২১ ২২৮ ২৫৮ ৬৮৪৪২৫ ১৪২৫ ৫১.৯

সূত্র আদমশুমারি রিপোর্ট ২০১১, বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো।

মুক্তিযুদ্ধ ১৯৭১ সালের ৬ জুলাই মুক্তিযোদ্ধারা লক্ষ্মীপুর শহরের রহমতখালী সেতুর কাছে অতর্কিত হামলা চালিয়ে ৭২ জন পাকসেনাকে হত্যা করে। ২৫ অক্টোবর সদরের মীরগঞ্জে মুক্তিযোদ্ধা ও পাকসেনাদের এক সম্মুখ লড়াইয়ে পাকবাহিনীর মেজর সহ ৭০ জন সৈন্য ও ৪১ জন রেঞ্জার নিহত হয়। রামগঞ্জ উপজেলার ফতেহপুর দীঘির পাড়ে পাকসেনাদের সঙ্গে মুক্তিযোদ্ধাদের এক লড়াই সংঘটিত হয়। এ লড়াইয়ে বহুসংখ্যক পাকসেনা নিহত হয়। পরবর্তীতে পাকসেনারা ১৪ জন মুক্তিযোদ্ধাকে আটক করে রামগঞ্জ ক্যাম্পে এনে হত্যা করে। মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে রামগতি উপজেলার জমিদার হাটের বাঁকে পাকসেনাদের সঙ্গে মুক্তিযোদ্ধাদের লড়াইয়ে কয়েকজন রাজাকারসহ ১৭ জন পাকসেনা নিহত হয়। লক্ষ্মীপুর জেলায় ৪টি স্থানে গণকবর ও ২টি স্থানে বধ্যভূমির সন্ধান পাওয়া গেছে; ৩টি স্মৃতিস্তম্ভ নির্মিত হয়েছে।

শিক্ষার হার, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড় হার ৪৯.৪%; পুরুষ ৪৮.৯%, মহিলা ৪৯.৮%। কলেজ ১৭, আইন কলেজ ১, হোমিওপ্যাথিক কলেজ ১, মাধ্যমিক বিদ্যালয় ১৫৯, কারিগরি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ২, পিটিআই ১, প্রাথমিক বিদ্যালয় ৬৫৭, স্যাটেলাইট বিদ্যালয় ৩৫, কমিউনিটি বিদ্যালয় ২৭, মাদ্রাসা ১৬৭, মক্তব ২৪০। উল্লেখযোগ্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠান: লক্ষ্মীপুর সরকারি কলেজ (১৯৬৪), রামগঞ্জ সরকারি কলেজ (১৯৬৭), লক্ষ্মীপুর সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় (১৮৯৮), গোপালপুর দ্বারিকা উচ্চ বিদ্যালয় (১৯০১), চৌপল­ী কে ডি উচ্চ বিদ্যালয় (১৯০৫), রায়পুর এল এম পাইলট উচ্চ বিদ্যালয় (১৯১১), লক্ষ্মীপুর আদর্শ সামাদ সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় (১৯১২), দত্তপাড়া রামরতন উচ্চ বিদ্যালয় (১৯১২), মিরপুর উচ্চ বিদ্যালয় (১৯২৪), চন্ডীপুর মনসা উচ্চ বিদ্যালয় (১৯২৪), দালাল বাজার এন কে উচ্চ বিদ্যালয় (১৯২৪), চৌপল­ী জয়তারা উচ্চ বিদ্যালয় (১৯২৮), গোপীনাথপুর চম্পকা বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় (১৯২৯), রামগতি বি.বি.কে পাইলট আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয় (১৯৩৩), প্রাইমারি টিচার্স ট্রেনিং ইনস্টিটিউট (১৯৫৩), রায়পুর আলীয়া মাদ্রাসা (১৮৮৬), ভবানীগঞ্জ কারামতিয়া সিনিয়র মাদ্রাসা (১৯০৪)।

জনগোষ্ঠীর আয়ের প্রধান উৎস ৪৭.৫১%, অকৃষি শ্রমিক ৩.১৯%, শিল্প ০.৮৫%, ব্যবসা ১৪.৪০%, পরিবহণ ও যোগাযোগ ৩.৫৮%, নির্মাণ ২.০১%, ধর্মীয় সেবা ০.৪২%, চাকরি ১১.০২%, রেন্ট অ্যান্ড রেমিটেন্স ৫.৯৬% এবং অন্যান্য ১১.০৬%।

পত্র-পত্রিকা ও সাময়িকী দৈনিক: লক্ষ্মীপুর কণ্ঠ (১৯৯৫), আল-চিশ্ত (১৯৯৫); সাপ্তাহিক: নতুন সমাজ, নতুন দেশ (১৯৭৩), সমবায় বার্তা (বাংলাদেশ বার্তা, ১৯৭৩), মুক্তিবাণী (১৯২৮, অবলুপ্ত), গণমুখ (১৯৭৩, অবলুপ্ত), এলান (১৯৮২), নতুন পথ (১৯৮৭), দামামা (১৯৯২), আনন্দ আকাশ (১৯৯৫, অবলুপ্ত), রামগঞ্জ বার্তা (১৯৯১), রোজনামচা (অবলুপ্ত); পাক্ষিক: অবসর; মাসিক: রেনেসাঁ, জাগরণ (২০০০), ডাকাতিয়া; ত্রৈমাসিক: রায়পুর দর্পণ (১৯৯৮); সাময়িকী: চেতনা (১৯৬৯), প্রচ্ছদ (১৯৮৪), ছায়াপথ, কবিতা বার্তা, রামগতি দর্পণ, লক্ষ্মীপুর বার্তা (১৯৮৯), রামগতি বার্তা (১৯৯৮), অগ্রজ (১৯৯৯), বিচিত্রিতা (১৯৯৪)।

লোকসংস্কৃতি ছড়া, ধাঁধাঁ, শ্লোক, প্রবাদ-প্রবচন, লোকগাঁথা, পালা গান, মুর্শিদী গান, সারি গান উল্লেখযোগ্য।

দর্শনীয় স্থান রামগঞ্জ আনসার ব্যাটেলিয়ান ও শ্রীরামপুর রাজবাড়ি।  [মো. শাহজাহান]

আরো দেখুন  সংশ্লিষ্ট উপজেলা।

তথ্যসূত্র আদমশুমারি রিপোর্ট ২০০১ ও ২০১১, বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো; লক্ষ্মীপুর জেলার সাংস্কৃতিক সমীক্ষা প্রতিবেদন ২০০৭; লক্ষ্মীপুর জেলার উপজেলাসমূহের সাংস্কৃতিক সমীক্ষা প্রতিবেদন ২০০৭।