কলমাকান্দা উপজেলা
কলমাকান্দা উপজেলা (নেত্রকোনা জেলা) আয়তন: ৩৭৬.২২ বর্গ কিমি। অবস্থান: ২৪°৫৬´ থেকে ২৫°১১´ উত্তর অক্ষাংশ এবং ৯০°৪৪´ থেকে ৯০°৫৮´পূর্ব দ্রাঘিমাংশ। সীমানা: উত্তরে ভারতের মেঘালয় রাজ্য, দক্ষিণে বারহাট্টা ও নেত্রকোনা সদর উপজেলা, পূর্বে ধর্মপাশা উপজেলা, পশ্চিমে দুর্গাপুর (নেত্রকোনা) উপজেলা।
জনসংখ্যা ২৭১৯১২; পুরুষ ১৩৪৮৯৬, মহিলা ১৩৭০১৬। মুসলিম ২৩২৪২৩, হিন্দু ৩০৩৯০, বৌদ্ধ ১৫, খ্রিস্টান ৮৬০৭ এবং অন্যান্য ৪৭৭। এ উপজেলায় গারো, হাজং, হদি, বানাই প্রভৃতি আদিবাসী জনগোষ্ঠীর বসবাস আছে।
জলাশয় প্রধান নদী: সোমেশ্বরী ও গুনাই নদী। পাকাটা বিল, বাহার বিল উল্লেখযোগ্য।
প্রশাসন কলমাকান্দা থানা গঠিত হয় ১৯৪১ সালে এবং থানাকে উপজেলায় রূপান্তর করা হয় ১৯৮৩ সালে।
উপজেলা | ||||||||
পৌরসভা | ইউনিয়ন | মৌজা | গ্রাম | জনসংখ্যা | ঘনত্ব (প্রতি বর্গ কিমি) | শিক্ষার হার (%) | ||
শহর | গ্রাম | শহর | গ্রাম | |||||
- | ৮ | ১৭৯ | ৩৪৭ | ১৪৩৮৩ | ২৫৭৫২৯ | ৭২৩ | ৫৪.৮ | ৩৫.৫ |
উপজেলা শহর | ||||||||
আয়তন (বর্গ কিমি) | মৌজা | লোকসংখ্যা | ঘনত্ব (প্রতি বর্গ কিমি) | শিক্ষার হার (%) | ||||
৮.৩৭ | ২ | ১৪৩৮৩ | ১৭১৮ | ৫৪.৮ |
ইউনিয়ন | ||||||||
ইউনিয়নের নাম ও জিও কোড | আয়তন (একর) | লোকসংখ্যা | শিক্ষার হার (%) | |||||
পুরুষ | মহিলা | |||||||
কলমাকান্দা ৩৫ | ১৫৫৩২ | ২৪০০৬ | ২৩৮৪৬ | ৪২.৮ | ||||
কৈলাটি ২৩ | ১৩১৯৯ | ২১২৫৫ | ২১০৫২ | ৩৪.২ | ||||
খরনৈ ৪৭ | ১০৩৪৩ | ১৩২৩০ | ১৩৫৬৭ | ৩৫.০ | ||||
নাজিরপুর ৭১ | ১১২৯৩ | ১৮৮৯৫ | ১৯৩৩৫ | ৩৬.৭ | ||||
পোগলা ৮৩ | ১০৯১৮ | ১৬১৪১ | ১৬৪৪২ | ৩৬.৯ | ||||
বড়কারপান ১১ | ৯১৩১ | ৯৮২৫ | ৯৯৯৩ | ৩৫.১ | ||||
রংছাতি ৯৫ | ১৪০২৫ | ২০২১৭ | ২১১৪৬ | ২৯.৭ | ||||
লেঙ্গুরা ৫৯ | ৮৫২৬ | ১১৩২৭ | ১১৬৩৫ | ৪১.৮ |
সূত্র আদমশুমারি রিপোর্ট ২০১১, বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো।
প্রাচীন নিদর্শনাদি ও প্রত্নসম্পদ মনাই শাহের মাযার (বটতলা)।
মুক্তিযুদ্ধ ১৯৭১ সালের ২৬ জুলাই এ উপজেলার নাজিরপুর ইউনিয়নের তিন রাস্তার মিলনস্থলে পাকবাহিনীর সঙ্গে মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মুখ লড়াই হয়। উক্ত লড়াইয়ে ৭ জন মুক্তিযোদ্ধা শহীদ হন।
বিস্তারিত দেখুন কমলাকান্দা উপজেলা, বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ, বাংলাদেশ এশিয়াটিক সোসাইটি, ঢাকা ২০২০, খণ্ড ২।
শিক্ষার হার, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড় হার ৩৬.৬%; পুরুষ ৩৭.৯%, মহিলা ৩৫.৩%। উল্লেখযোগ্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠান: কলমাকান্দা পাইলট উচ্চ বিদ্যালয় (১৯৪২), কলমাকান্দা বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়, লেঙ্গুরা উচ্চ বিদ্যালয়, রংছাতি উচ্চ বিদ্যালয়।
সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠান লাইব্রেরি ১, ক্লাব ২২, সিনেমা হল ২, খেলার মাঠ ৬।
দর্শনীয় স্থান ৭ জন শহীদ মুক্তিযোদ্ধার সমাধি (লেঙ্গুরা)।
জনগোষ্ঠীর আয়ের প্রধান উৎস কৃষি ৭৭.৩৩%, অকৃষি শ্রমিক ৪.৩৭%, শিল্প ০.৩৮%, ব্যবসা ৮.৪৫%, পরিবহণ ও যোগাযোগ ০.৬৭%, চাকরি ২.১৫%, নির্মাণ ০.৫২%, ধর্মীয় সেবা ০.২৫%, রেন্ট অ্যান্ড রেমিটেন্স ০.২১% এবং অন্যান্য ৫.৬৭%।
কৃষিভূমির মালিকানা ভূমিমালিক ৬১.৮৮%, ভূমিহীন ৩৮.১২%। শহরে ৪৮.৬৯% এবং গ্রামে ৬২.৪৯% পরিবারের কৃষিজমি রয়েছে।
প্রধান কৃষি ফসল ধান, গম, সরিষা।
বিলুপ্ত বা বিলুপ্তপ্রায় ফসলাদি পাট, ডাল।
প্রধান ফল-ফলাদিব আম, কাঁঠাল, কলা, জাম।
মৎস্য, গবাদিপশু ও হাঁস-মুরগির খামার এ উপজেলায় মৎস্য ও হাঁস-মুরগির খামার রয়েছে।
যোগাযোগ বিশেষত্ব পাকারাস্তা ৫৩.২৯ কিমি, আধাপাকা রাস্তা ৫.৫ কিমি, কাঁচারাস্তা ৬১০.৩৪ কিমি; নদীপথ ১০ কিমি।
বিলুপ্ত বা বিলুপ্তপ্রায় সনাতন বাহন পালকি, গরু, ঘোড়া ও মহিষের গাড়ি।
শিল্প ও কলকারখানা বরফ কল, ময়দা কল, করাত কল, তেল কল, ছাপাখানা, ওয়েল্ডিং কারখানা।
কুটিরশিল্প স্বর্ণশিল্প, মৃৎশিল্প, লৌহশিল্প, সূচিশিল্প, কাঠের কাজ।
হাটবাজার ও মেলা নাজিরপুর বাজার, কলমাকান্দা বাজার, পাঁচগাঁও বাজার, গোবিন্দপুর বাজার, লেঙ্গুরা বাজার ও ডাইয়ারকান্দা বাজার এবং চেমনীল মেলা ও কমলাকান্দা মেলা উল্লেখযোগ্য।
প্রধান রপ্তানিদ্রব্য ধান।
বিদ্যুৎ ব্যবহার এ উপজেলার সবক’টি ইউনিয়ন পল্লিবিদ্যুতায়ন কর্মসূচির আওতাধীন। তবে ২২.৩% পরিবারের বিদ্যুৎ ব্যবহারের সুযোগ রয়েছে।
পানীয়জলের উৎস নলকূপ ৮৫.৬%, ট্যাপ ০.১% এবং অন্যান্য ১৪.৩%। এ উপজেলার অগভীর নলকূপের পানিতে মাত্রাতিরিক্ত আর্সেনিকের উপস্থিতি প্রমাণিত হয়েছে।
স্যানিটেশন ব্যবস্থা এ উপজেলার ২৮.৫% পরিবার স্বাস্থ্যকর এবং ৫৩.৯% পরিবার অস্বাস্থ্যকর ল্যাট্রিন ব্যবহার করে। ১৭.৬% পরিবারের কোনো ল্যাট্রিন সুবিধা নেই।
স্বাস্থ্যকেন্দ্র উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ১, উপস্বাস্থ্য কেন্দ্র ২, পরিবার পরিকল্পনা কেন্দ্র ৮, যক্ষ্মা ও কুষ্ঠরোগ নিয়ন্ত্রণ কেন্দ্র ১।
প্রাকৃতিক দুর্যোগ ১৯৮৮ ও ২০০৪ সালের বন্যায় উপজেলার অনেক ঘরবাড়ি, গবাদিপশু ও ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হয়।
এনজিও ব্র্যাক, কারিতাস, প্রশিকা, আশা। [সৈয়দ মারুফুজ্জামান]
তথ্যসূত্র আদমশুমারি রিপোর্ট ২০০১ ও ২০১১, বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো; কলমাকান্দা উপজেলা সাংস্কৃতিক সমীক্ষা প্রতিবেদন ২০০৭।