ব্যাংকিং ব্যবস্থা, আধুনিক
ব্যাংকিং ব্যবস্থা, আধুনিক প্রাচীনকাল তথা খ্রিস্টপূর্ব ১০০০ হতে খ্রিস্টপূর্ব ৪০০ সময়কালে ভারতীয় উপমহাদেশে ব্যাংকিং কার্যক্রম সম্পর্কিত কোন তথ্য পাওয়া যায়নি। তবে ব্যবসায়ীদের পরস্পরকে আর্থিক সহায়তা প্রদান করার বিষয়ে তথ্য রয়েছে। এ সময়ে ধনিক শ্রেণি তাদের অতিরিক্ত/উদ্বৃত্ত সম্পদ পিতলের কলসিতে/পাতিলে পুরে মাটিতে পুঁতে রাখত এবং স্বর্ণ বা রৌপ্য পাত্রের গায়ে এ-সংক্রান্ত হিসাব লিখে রাখত। আনুষ্ঠানিক ব্যাংক বা ব্যাংকিং ব্যবসায় না থাকলেও সে সময়ের লোকেরা ব্যাংকিং সম্পর্কে কিছুটা হলেও অবহিত ছিল। সে সময়ে ঋণ এবং ঋণের অঙ্কের ওপর বাড়তি পরিশোধ (সুদ) বিষয়েও জনগণের অভিজ্ঞতা ছিল।
ঋণ গ্রহণ ও প্রদানের চর্চা বৈদিক আমলেও চালু ছিল। প্রাচীন হিন্দু ধর্মগ্রন্থ বেদ-এ সে সময়ে ব্যবসা-বাণিজ্যের প্রসারের ইঙ্গিত রয়েছে এবং ভারতীয় উপমহাদেশে ব্যাংক ব্যবসায়-সংক্রান্ত তথ্যাদির উল্লেখ রয়েছে। তৎকালে ব্যাংক ব্যবসায় ছিল মন্দির ও উপাসনালয় কেন্দ্রিক। ঋষি মনুর আমলে অর্থ ধার করা ও ধার দেয়ার নিয়ম ব্যাংকিং পদ্ধতিতে পরিবর্তিত হয়। মনুর মতে, ভাল পরিবারের ও চরিত্রের অধিকারী, আইন সম্পর্কে ভাল জ্ঞানসম্পন্ন এবং সম্মানিত ও ধনী আত্মীয় পরিবেষ্টিত লোকের নিকট টাকাপয়সা আমানত রাখা উচিত। কৌটিল্যের অর্থশাস্ত্র নামক গ্রন্থেও ব্যাংকিং ব্যবসায় এবং সুদের উল্লেখ রয়েছে। এছাড়া স্যার রিচার্ড টেম্পল প্রাচীন ভারতে ব্যাংক ব্যবসায় চালানো হতো বলে অভিমত প্রকাশ করেছেন।
মুগল শাসনাধীন ভারতীয় উপমহাদেশ বিভিন্ন মূল্যের স্বর্ণমুদ্রা প্রচলিত ছিল। মূল্যবান স্বর্ণমুদ্রা অর্থের কারবারিদেরকে এ ব্যবসায়ে প্রবলভাবে উদ্বুদ্ধ করেছিল। এ সময়ে প্রবর্তিত অর্থব্যবসায়ে স্থানীয় কিছু পরিবার যথেষ্ট প্রসিদ্ধি লাভ করে। এসকল পরিবারের মধ্যে জগৎশেঠ পরিবারই ছিল শক্তিশালী। ঢাকা, হুগলি, মুর্শিদাবাদ প্রভৃতি গুরুত্বপূর্ণ ব্যবসায়কেন্দ্রে জগৎশেঠ পরিবারের অর্থব্যবসায়ের শাখা ছিল। মুগল শাসকরা এসব পারিবারিক অর্থব্যবসায়কে পৃষ্ঠপোষকতা প্রদান করতেন এবং প্রয়োজনবোধে তাদের নিকট হতে ঋণ গ্রহণ করতেন। মুগলদের টাকশালে জনসাধারণ অল্প খরচে সোনা, রুপা প্রভৃতি মুদ্রায় রূপান্তর করতে পারত। উক্ত সময়ে মুদ্রা বিনিময়ের সঙ্গে হুন্ডির মাধ্যমেও টাকাপয়সা লেনদেন করা হতো। এছাড়া জমিদারদের নিকট হতে সংগৃহীত সরকারি রাজস্ব সে সময়ে পারিবারিক আর্থিক প্রতিষ্ঠান তথা ব্যাংকের মাধ্যমে সরকারি কোষাগারে পাঠানো হতো। জমিদারগণ অনাদায়ি রাজস্বও পারিবারিক ব্যাংকের মাধ্যমে সরকারের কোষাগারে প্রেরণ করত। মুগল আমলে বৃহৎ পুঁজিপতি ব্যাংকার হতে শুরু করে ক্ষুদ্র গ্রাম্য মহাজন পর্যন্ত বিভিন্ন স্তরের লোক নিজ নিজ সামর্থ অনুযায়ী টাকাপয়সা লেনদেনের ব্যবসা করত। অর্থাৎ মুগল আমলেই ভারতীয় উপমহাদেশের ব্যাংক ব্যবস্থার স্বরূপ প্রকাশিত হয় এবং পরবর্তী তথা ব্রিটিশ আমলে ব্যাংক ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠান আকারে প্রবর্তিত ও বিস্তৃত হতে থাকে। মুগল আমলেই ১৭০০ সালে ভারতের কলকাতায় দ্য হিন্দুস্থান ব্যাংক প্রতিষ্ঠিত হয় যা এ অঞ্চলের সর্বপ্রথম আধুনিক ব্যাংক হিসেবে পরিচিতি লাভ করে।
ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি কর্তৃক বাংলা, বিহার ও উড়িষ্যার দেওয়ানি দখলের পর থেকে জগৎশেঠ পরিবারসহ তৎকালের অপরাপর অর্থ ব্যবসায়ী তথা ব্যাংকারদের অবস্থার ক্রমাবনতি ঘটতে থাকে। তাদের আয় ক্রমান্বয়ে অত্যধিক নিম্নস্তরে নেমে যায়। সে সময়ে ইংরেজদের সহযোগী ছিল মীরজাফর গং এবং তাদের সহায়তায় জগৎশেঠের ঐতিহ্যবাহী ব্যাংক ব্যবসায় পতন ত্বরান্বিত হয়। ব্যাংকারদের এ ভঙ্গুর দশার কারণে অভ্যন্তরীণ ও বহির্বাণিজ্যে সৃষ্ট বিশৃঙ্খলা দূরীকরণের লক্ষ্যে ইংরেজদের উদ্যোগে ইংলিশ এজেন্সি হাউস প্রতিষ্ঠিত হয়। ১৭৮৪ সালে প্রতিষ্ঠিত বেঙ্গল ব্যাংক ছিল ভারতে ব্রিটিশ আশীর্বাদপুষ্ট প্রথম আধুনিক ব্যাংক। ঢাকা ব্যাংক বাংলাদেশ অঞ্চলে প্রতিষ্ঠিত প্রথম বাণিজ্যিক ব্যাংক যা ১৮০৬ সালে কার্যক্রম শুরু করে। ১৮৬২ সালে ঢাকা ব্যাংক কিনে নিয়ে বেঙ্গল ব্যাংক এ অঞ্চলে তার প্রথম শাখা খোলে। ১৮৭৩ সালে বেঙ্গল ব্যাংক সিরাজগঞ্জ ও চট্টগ্রামে নতুন ২টি শাখা খোলে। ১৯০০ সালে চাঁদপুরে বেঙ্গল ব্যাংক অপর একটি শাখা খোলে। ১৯৪৭ সালে ভারত বিভক্তির পূর্বপর্যন্ত বাংলাদেশ অঞ্চলে ঢাকা, চট্টগ্রাম, ময়মনসিংহ, রংপুর, চাঁদপুর এবং নারায়ণগঞ্জে বেঙ্গল ব্যাংকের ৬টি শাখা কার্যরত ছিল।
এরপর অবিভক্ত ভারতে ১৮০৬ সালে ব্যাংক অব ক্যালকাটা, ১৮৪০ সালে ব্যাংক অব বোম্বে এবং ১৮৪৩ সালে ব্যাংক অব মাদ্রাজ নামে ৩টি প্রেসিডেন্সি ব্যাংক প্রতিষ্ঠিত হয়। এ সকল ব্যাংকের সমন্বয়ে ১৯২১ সালে দি ইম্পেরিয়াল ব্যাংক অব ইন্ডিয়া প্রতিষ্ঠা করা হয়। ১৯৩৫ সালে ভারতীয় কেন্দ্রীয় ব্যাংক হিসেবে রিজার্ভ ব্যাংক অব ইন্ডিয়া প্রতিষ্ঠিত হয় এবং ১৯৪৭ সালে ভারত বিভক্তির পূর্বপর্যন্ত এটি ব্রিটিশ ভারতের কেন্দ্রীয় ব্যাংক হিসেবে কাজ করে।
এতদ্ব্যতীত বাংলা অঞ্চলসহ ব্রিটিশ ভারতে অন্যান্য বেশকিছু ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান কার্যরত ছিল। ব্রিটিশ আমলে বাংলাদেশ এলাকায় লোন অফিস নামে প্রতিষ্ঠিত আর্থিক প্রতিষ্ঠানসমূহের অবস্থান ছিল ফরিদপুর (১৮৬৫), বগুড়া (১৮৭২), বরিশাল (১৮৭৩), ময়মনসিংহ (১৮৭৩), নাসিরাবাদ (১৮৭৫), যশোর (১৮৭৬), মুন্সিগঞ্জ (১৮৭৬), ঢাকা (১৮৭৮), সিলেট (১৮৮১), পাবনা (১৮৮২), কিশোরগঞ্জ (১৮৮৩), নোয়াখালী (১৮৮৫), খুলনা (১৮৮৭), মাদারীপুর (১৮৮৭), টাঙ্গাইল (১৮৮৭), নীলফামারী (১৮৯৪) এবং রংপুরে (১৮৯৪)। অপরদিকে ব্যাংকসমূহের মধ্যে ছিল কুড়িগ্রাম ব্যাংক (১৮৮৭), কুমারখালী ব্যাংক (১৮৯৬), মহালক্ষ্মী ব্যাংক, চট্টগ্রাম ব্যাংক (১৯১০), দিনাজপুর ব্যাংক (১৯১৪), কুমিল্লা ব্যাংকিং কর্পোরেশন (১৯১৪) এবং কুমিল্লা ইউনিয়ন ব্যাংক (১৯২২)। যে সকল ভারতীয় ব্যাংকের এতদঞ্চলে শাখা ছিল সেগুলি হচ্ছে: ন্যাশনাল ব্যাংক অব ইন্ডিয়া (১৮৬৪), বেঙ্গল সেন্ট্রাল ব্যাংক (১৯১৮), নিউ স্ট্যান্ডার্ড ব্যাংক (১৯২০), ইম্পেরিয়াল ব্যাংক অব ইন্ডিয়া (১৯২১), হাবিব ব্যাংক (১৯৪১) এবং ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংক লিমিটেড (১৯৪২)।
ভারত বিভক্তির মাধ্যমে ১৯৪৭ সালে পাকিস্তান রাষ্ট্রের জন্মের পর ১৯৪৮ সালে পাকিস্তানের কেন্দ্রীয় ব্যাংক হিসেবে স্টেট ব্যাংক অব পাকিস্তান প্রতিষ্ঠিত হয়। পরবর্তীকালে ১৯৪৯ সালে ন্যাশনাল ব্যাংক অব পাকিস্তান নামে একটি বাণিজ্যিক ব্যাংক প্রতিষ্ঠা লাভ করে। পাকিস্তানে সর্বমোট ৩৬টি বাণিজ্যিক ব্যাংক কার্যরত ছিল যার মধ্যে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানে শুধু ন্যাশনাল ব্যাংক অব পাকিস্তান, হাবিব ব্যাংক এবং অস্ট্রেলেশিয়া ব্যাংকের একটি করে শাখা ছিল। দি ইউনাইটেড ব্যাংক, ইউনিয়ন ব্যাংক, স্ট্যান্ডার্ড ব্যাংক এবং কমার্স ব্যাংক নামক চারটি পাকিস্তানি ব্যাংক ১৯৫৯-১৯৬৫ সময়কালে বাংলাদেশ অঞ্চলে ব্যাংকিং ব্যবসায় পরিচালনা করে। পূর্ব পাকিস্তানের নাগরিকদের মালিকানাধীন ঢাকায় প্রধান কার্যালয়সমেত মাত্র ২টি ব্যাংক ছিল। ব্যাংক দুটি হচ্ছে ইস্টার্ন মার্কেন্টাইল ব্যাংক লি. (বর্তমানে পূবালী ব্যাংক লিমিটেড) এবং ইস্টার্ন ব্যাংকিং কর্পোরেশন লিমিটেড (বর্তমানে উত্তরা ব্যাংক লিমিটেড)। এ ব্যাংক দুটি প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল যথাক্রমে ১৯৫৯ এবং ১৯৬৫ সালে।
ব্রিটিশ এবং পাকিস্তান আমলে বাংলাদেশ অঞ্চলে ব্যাংকিং ব্যবস্থার বিকাশের গতি ছিল অত্যন্ত মন্থর। এ অঞ্চলে ১৯০১ সালে বিভিন্ন ব্যাংকের মাত্র ২৫টি শাখা ছিল যা ১৯৪৬ সালে ৬৬৮টিতে উন্নীত হয়। পাকিস্তান সৃষ্টির পর ব্যাংকিং সেক্টরের উন্নয়ন বাধাগ্রস্ত হয় এবং ১৯৫০ সালে ব্যাংক শাখার সংখ্যা ১৪৮টিতে নেমে আসে। ১৯৬৫ সালে এ সংখ্যা আবার ৫৪৫টিতে উন্নীত হয়। ১৯৬৫ সালের পরবর্তী সময়ে পরিস্থিতির নাটকীয় পরিবর্তন সাধিত হয় এবং ব্যাংকের শাখার সংখ্যা ১৯৭০ সালে ১,০৭৫টিতে দাঁড়ায়।
বাংলাদেশের ব্যাংকিং ব্যবস্থা পাকিস্তান হতে উত্তরাধিকারসূত্রে প্রাপ্ত ১,১৩০টি শাখা নিয়ে এর কার্যক্রম শুরু করে। স্বাধীন বাংলাদেশের সরকার বিদেশি ব্যাংক ব্যতীত বাংলাদেশে কার্যরত সকল পাকিস্তানি মালিকানাধীন ব্যাংকসমূহ অধিগ্রহণ করে। অতঃপর ১৯৭২ সালের ব্যাংক জাতীয়করণ আদেশের মাধ্যমে বাংলাদেশি মালিকানাধীন ২টি ব্যাংকসহ অধিকৃত ১০টি পাকিস্তানি ব্যাংকের সমন্বয়/একত্রীকরণের মাধ্যমে ৬টি স্বতন্ত্র ব্যাংক গঠন করে। সেগুলিকে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংক হিসেবে ঘোষণা করা হয়। নতুন নামকরণকৃত ও পুনর্গঠিত ব্যাংকগুলি হচ্ছে: সোনালী ব্যাংক (দ্য ন্যাশনাল ব্যাংক অব পাকিস্তান, দ্য ব্যাংক অব বাহওয়ালপুর, দ্য প্রিমিয়ার ব্যাংক), অগ্রণী ব্যাংক (হাবিব ব্যাংক, কমার্স ব্যাংক), জনতা ব্যাংক (দ্য ইউনাইটেড ব্যাংক, দ্য ইউনিয়ন ব্যাংক), রূপালী ব্যাংক (দ্য মুসলিম কমার্শিয়াল ব্যাংক, দ্য স্ট্যান্ডার্ড ব্যাংক), পূবালী ব্যাংক (দ্য অস্ট্রেলেশিয়া ব্যাংক, দ্য ইস্টার্ন মার্কেন্টাইল ব্যাংক) এবং উত্তরা ব্যাংক (দ্য ইস্টার্ন ব্যাংকিং কর্পোরেশন)।
বাংলাদেশ ব্যাংক দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংক এবং এটি বাংলাদেশ ব্যাংক অর্ডার, ১৯৭২ দ্বারা প্রতিষ্ঠিত হয়। সাবেক স্টেট ব্যাংক অব পাকিস্তান-এর ঢাকাস্থ ডেপুটি গভর্নরের অফিসকে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানে এর সমস্ত দায় ও সম্পদ গ্রহণপূর্বক বাংলাদেশ ব্যাংকরূপে পূর্ণ কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মর্যাদায় উন্নীত করা হয়। কেন্দ্রীয় ব্যাংক হিসেবে বাংলাদেশ ব্যাংক এর দায়িত্ব হচ্ছে নোট ইস্যুকরণ, ব্যাংকিং কার্যক্রম নিয়ন্ত্রণের জন্য ক্ষমতা ও বাস্তবায়ন, বৈদেশিক মুদ্রা নিয়ন্ত্রণ এবং সামগ্রিক ব্যাংকিং ব্যবস্থার তদারকীকরণ। বর্তমানে ঢাকাস্থ প্রধান কার্যালয় ব্যতীত বাংলাদেশ ব্যাংকের ৯টি শাখা অফিস রয়েছে। শাখা অফিসগুলি হচ্ছে মতিঝিল (ঢাকা), সদরঘাট (ঢাকা), চট্টগ্রাম, খুলনা, রাজশাহী, সিলেট, বগুড়া, রংপুর এবং বরিশাল। বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বমোট পরিশোধিত মূলধনের পরিমাণ ৩ কোটি টাকা। উক্ত মূলধন প্রতিটি ১০০ টাকা মূল্যের ৩ লক্ষ শেয়ারে বিভক্ত এবং সকল শেয়ারের মূল্য বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক পরিশোধিত। তবে বাংলাদেশ ব্যাংক হচ্ছে সরকারি মালিকানাধীনে একটি স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান। ৯ সদস্যবিশিষ্ট একটি পরিচালনা পর্ষদের অধীনে এর কার্যক্রম পরিচালিত হয়।
বাংলাদেশে কার্যরত ব্যাংকগুলিকে বিভিন্ন শ্রেণিতে ভাগ করা যায়। দেশের অধিকাংশ ব্যাংক হচ্ছে শাখা ব্যাংক যারা তাদের প্রধান কার্যালয়ের অধীনে থেকে দেশের বিভিন্ন স্থানে এবং পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে শাখা স্থাপনের মাধ্যমে ব্যাংকিং কার্যক্রম চালিয়ে আসছে। শাখাগুলির নিজস্ব কোন সত্তা নেই। তারা প্রধান কার্যালয়ের নিয়মানুযায়ী এবং প্রতিনিধি হিসেবে ব্যাংকিং কার্যক্রম পরিচালনা করে। বাংলাদেশি ব্যাংকসমূহের বিদেশস্থ শাখাগুলিকে বিদেশি রাষ্ট্রের আইনের সাথে নিজ দেশীয় আইনও মেনে চলতে হয়। বাংলাদেশে ব্যাংকিং ব্যবসায় পরিচালনার জন্য দেশীয় সকল ব্যক্তিমালিকানাধীন ব্যাংককে কোম্পানি আইন, ১৯৯৪-এর অধীনে রেজিস্ট্রার অব জয়েন্ট স্টক কোম্পানিজ-এর নিকট পাবলিক লি. কোম্পানি হিসেবে রেজিস্ট্রি করিয়ে কোম্পানির অনুকূলে Certificate of Incorporation সংগ্রহ করতে হয়। অপরদিকে শেয়ার ইস্যুর মাধ্যমে মূলধন সংগ্রহের জন্য সিকিউরিটিজ অ্যান্ড একচেঞ্জ কমিশনের অনুমতি পেতে হয়। মালিকানাভিত্তিক শ্রেণি বিভাজনের আওতায় বাংলাদেশের ব্যাংকগুলিকে সরকারি, বেসরকারি, স্বায়ত্তশাসিত, বিদেশি এবং মিশ্র এ সকল শ্রেণিতে ভাগ করা যায়। বাংলাদেশে ৬টি সরকারি মালিকানাধীন ব্যাংকের মধ্যে এ পর্যন্ত ৩টিকে বেসরকারি খাতে হস্তান্তর করা হয়েছে। সম্পূর্ণভাবে সরকারি মালিকানা ও নিয়ন্ত্রণাধীন বাকি তিনটি হচ্ছে সোনালী, জনতা এবং অগ্রণী। বেসরকারি খাতে হস্তান্তরিত রূপালী ব্যাংকের মালিকানার ৫১% সরকারের অধীনে এবং ৪৯% পাবলিক শেয়ার। এর মালিকানা পরিবর্তন হয় ১৯৮৩ সালে। সরকারের শেয়ার বেশি বিধায় রূপালী ব্যাংককে অনেক দলিলেই সরকারি ব্যাংক হিসেবে দেখানো হয়ে থাকে। অপর ২টি বিরাষ্ট্রীয়কৃত ব্যাংক উত্তরা ব্যাংককে ১৯৮৩ সালে এবং পূবালী ব্যাংককে ১৯৮৬ সালে সম্পূর্ণরূপে ব্যক্তিমালিকানাধীন খাতে হস্তান্তর করা হয়।
প্রতিষ্ঠা বছরসহ দেশীয় ব্যক্তিমালিকানাধীন ব্যাংকসমূহ: উত্তরা ব্যাংক লিমিটেড (১৯৭২ সালে প্রতিষ্ঠিত এবং ১৯৮৩ সালে ব্যক্তিমালিকানায় রূপান্তরিত), পূবালী ব্যাংক লিমিটেড (১৯৭২-এ প্রতিষ্ঠিত, ১৯৮৩ সালে ব্যক্তিমালিকানায় হস্তান্তর করা হয়), আইএফআইসি ব্যাংক লিমিটেড (১৯৭৬), ইসলামি ব্যাংক বাংলাদেশ লিমিটেড (১৯৮৩), ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংক লিমিটেড (১৯৮৩), দ্য সিটি ব্যাংক লিমিটেড (১৯৮৩), ন্যাশনাল ব্যাংক লিমিটেড (১৯৮৩), আরব-বাংলাদেশ ব্যাংক লিমিটেড (১৯৮৫), ইস্টার্ন ব্যাংক লিমিটেড (১৯৯২), ন্যাশনাল ক্রেডিট অ্যান্ড কমার্স ব্যাংক লিমিটেড (১৯৯৩), প্রাইম ব্যাংক লিমিটেড (১৯৯৫), সাউথ ইস্ট ব্যাংক লিমিটেড (১৯৯৫), ঢাকা ব্যাংক লিমিটেড (১৯৯৫), আল-আরাফাহ ইসলামী ব্যাংক লিমিটেড (১৯৯৫), সোশ্যাল ইনভেস্টমেন্ট ব্যাংক লিমিটেড (১৯৯৫), ডাচ-বাংলা ব্যাংক লিমিটেড (১৯৯৬), প্রিমিয়ার ব্যাংক লিমিটেড (১৯৯৯), মার্কেন্টাইল ব্যাংক লিমিটেড (১৯৯৯), স্ট্যান্ডার্ড ব্যাংক লিমিটেড (১৯৯৯), ওয়ান ব্যাংক লিমিটেড (১৯৯৯), এক্সিম ব্যাংক লিমিটেড (১৯৯৯), বাংলাদেশ কমার্স ব্যাংক লিমিটেড (১৯৯৯), মিচ্যুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংক লিমিটেড (১৯৯৯), ট্রাস্ট ব্যাংক লিমিটেড (১৯৯৯), ব্যাংক এশিয়া লিমিটেড (১৯৯৯), ফাস্ট সিকিউরিটি ব্যাংক লিমিটেড (১৯৯৯), শাহজালাল ইসলামী ব্যাংক লিমিটেড (২০০১), যমুনা ব্যাংক লিমিটেড (২০০১) এবং ব্র্যাক ব্যাংক লিমিটেড (২০০১)। এছাড়া ওরিয়েন্টাল ব্যাংক লিমিটেড পরিবর্তিত নাম আইসিবি ইসলামী ব্যাংক লিমিটেড রূপে কার্যক্রম পরিচালনা করছে।
এছাড়া দেশে কয়েকটি রাষ্ট্রায়ত্ত বিশেষায়িত ব্যাংক রয়েছে যেগুলি সুনিদিষ্ট অর্থনৈতিক উদ্দশ্যে সাধনের জন্য প্রতিষ্ঠা করা হয়। এদের মধ্যে বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংক (১৯৭৩) এবং রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংক (১৯৮৭) প্রতিষ্ঠিত হয় কৃষি উন্নয়ন কার্যক্রমে অর্থায়নের জন্য। শিল্প উন্নয়ন প্রক্রিয়ায় অর্থায়নের জন্য ১৯৭২ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় বাংলাদেশ শিল্প ব্যাংক। অপরদিকে আত্ম-কর্মসংস্থান কার্যক্রমে সহায়তা প্রদানের জন্য ১৯৯৭ সালে প্রতিষ্ঠা করা হয় কর্মসংস্থান ব্যাংক। এছাড়া সমবায়ী জনগণকে ঋণ প্রদান ও তাদের সঞ্চয় বৃদ্ধির উদ্দেশ্য নিয়ে ১৯৪৮ সালে সমবায় ব্যাংক প্রতিষ্ঠা করা হয়, যা আজও একই উদ্দেশ্য সাধনে নিয়োজিত রয়েছে। ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পে সহায়তা প্রদানের জন্য ১৯৯২ সালে বেসিক ব্যাংক লিমিটেড প্রতিষ্ঠা করা হয়। দেশের শিল্প প্রকল্পসমূহকে ঋণ সহায়তা প্রদান ও পুঁজিবাজার উন্নয়ন ও বিনিয়োগ কর্মকান্ডের ভিতকে সম্প্রসারিত করণে ১৯৭২ সালে শিল্প ঋণ সংস্থা গঠন করা হয়। পরবর্তীকালে ১৯৯৭ সালে এটিকে বাণিজ্যিক ব্যাংকিং কার্যক্রম পরিচালনার অনুমতি প্রদান করা হয়। দেশের আর্থিক খাতের বিরাজমান পরিস্থিতির আলোকে শিল্পে প্রয়োজনীয় ও দীর্ঘমেয়াদি অর্থায়নের মাধ্যমে অর্থনৈতিক অগ্রগতি সাধনে বাংলাদেশ শিল্প ঋণ সংস্থা ও বাংলাদেশ শিল্প ব্যাংকে একীভূত করে ২০১০ সালের ১ জানুয়ারিতে বাংলাদেশ উন্নয়ন ব্যাংক (বিডিবিএল) প্রতিষ্ঠা করা হয়। বর্তমানে বিশেষায়িত ব্যাংকের সংখ্যা মোট ৪টি।
বাংলাদেশে বিদেশি ব্যাংকের শাখাগুলি হচ্ছে: স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাংক, স্টেট ব্যাংক অব ইন্ডিয়া (১৯৭৬), দ্য হংকং অ্যান্ড সাংহাই ব্যাংকিং কর্পোরেশন লি. (১৯৯২), ন্যাশনাল ব্যাংক অব পাকিস্তান (১৯৯৫), সিটি ব্যাংক এন.এ (১৯৯৫), হাবিব ব্যাংক লিমিটেড (১৯৯৭), কমার্শিয়াল ব্যাংক অব সিলোন লিমিটেড (২০০৩)। ২০০৯-১০ অর্থবছর পর্যন্ত বিগত দশকে বাংলাদেশে পরিচালিত বিদেশি ব্যাংকের ক্ষেত্রে কতিপয় গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তন ঘটে। ২০০২ সালে এবং ২০০৫ সালে যথাক্রমে এ.এন.জেড গ্রীন্ডলেজ ব্যাংক ও আমেরিকান এক্সপ্রেস ব্যাংক দুটি স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাংকের সঙ্গে একীভূত হয়। সুতরাং উক্ত দুটি ব্যাংকের কোনো কার্যক্রম আর বাংলাদেশে নেই। ক্রেডিট এগ্রিকোল ইন্দোসুয়েজের যাবতীয় সম্পদ ও দায় নিয়ে ব্যাংক অব সিলোন ২০০৩ সালে এদেশে ব্যবসা পরিচালনা করছে। ২০০৫ সালে ব্যাংক আল-ফালাহ বাংলাদেশে তার কার্যক্রম শুরু করে। কোরিয়ার উরি ব্যাংক ১৯৯৬ সাল হতে এদেশে ব্যবসা পরিচালনা করে আসছে। বর্তমানে (২০১০) বাংলাদেশে মোট ৯টি বিদেশি ব্যাংক তাদের কার্যক্রম পরিচালনা করছে।
বাংলাদেশে স্বতন্ত্র কোন মার্চেন্ট ব্যাংক অথবা বিনিময় ব্যাংক নেই। তবে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলি তাদের স্বাভাবিক ব্যাংকিং কার্যক্রমের সাথে আংশিকভাবে ব্যাংকিং কার্যক্রম সম্পাদন করে থাকে। সম্প্রতি দেশের সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন ২৫টি আর্থিক প্রতিষ্ঠানকে মার্চেন্ট ব্যাংকিং-এর অনুমোদন দিয়েছে। বাণিজ্যিক ব্যাংক ও বিশেষায়িত ব্যাংকগুলি অর্থনীতির বিভিন্ন খাতে অর্থ বিনিয়োগ করে থাকে। সম্প্রতি ২২টি আর্থিক প্রতিষ্ঠান ও লিজিং কোম্পানিকে বিনিয়োগ ব্যাংকিং-এর অনুমতি দেওয়া হয়েছে। ফরেন এক্সচেঞ্জ রেগুলেশন অ্যাক্ট, ১৯৪৭-এর অধীনে রাষ্ট্রায়ত্ত ও ব্যক্তি মালিকানাধীন ব্যাংকসমূহের কিছু কিছু শাখাকে বৈদেশিক মুদ্রা বিনিময় ব্যবসায় চালানোর জন্য অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। অনুমোদনপ্রাপ্ত এ সকল ব্যাংককে বলা হয় অনুমোদিত ডিলার এবং তাদের ক্লাব বা সমিতির নাম হচ্ছে বাংলাদেশ ফরেন এক্সচেঞ্জ ডিলারস অ্যাসোসিয়েশন (BAFEDA)। অনুমোদিত ডিলার ব্যতীত দেশে ৫৫৪টি মানি চেঞ্জারস রয়েছে যারা বৈদেশিক মুদ্রা ক্রয়-বিক্রয়ের জন্য বাংলাদেশ ব্যাংক কর্তৃক অনুমোদনপ্রাপ্ত এবং বাংলাদেশ ব্যাংক কর্তৃক নিয়ন্ত্রিত হয়ে থাকে।
বাংলাদেশে কার্যত দেশি-বিদেশি সকল ব্যাংককে তালিকাভুক্ত ব্যাংক এবং অ-তালিকাভুক্ত ব্যাংক এই দুই শ্রেণিতে ভাগ করা যায়। তালিকাভুক্ত ব্যাংক হচ্ছে যারা বাংলাদেশ ব্যাংক অর্ডার ১৯৭২-এর ৩৭ ধারানুযায়ী বাংলাদেশ ব্যাংক কর্তৃক অফিসিয়ালি তালিকাভুক্ত ব্যাংকরূপে ঘোষিত এবং কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সদস্যভুক্ত। তালিকাভুক্ত হওয়ার বিশেষ তাৎপর্য হলো কেন্দ্রীয় ব্যাংক কর্তৃক নির্দেশিত ব্যাংকের কাঠামো, মূলধন সংরক্ষণ, বিধিবদ্ধ তহবিল, সংরক্ষণ, বিবরণী দাখিল ইত্যাদিসহ কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সর্বপ্রকার নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা মেনে চলার অঙ্গীকার করা। তালিকাভুক্তির মাধ্যমে ব্যাংকগুলি কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সদস্য হিসেবে বিশেষ মর্যাদা লাভ করে এবং কেন্দ্রীয় ব্যাংক হতে বিশেষ কিছু সুযোগ-সুবিধা ভোগ করে, যেমন রি-ডিসকাউন্টিং সুবিধা, মুদ্রা বাজারে অংশগ্রহণ করা, ক্লিয়ারিং ব্যবস্থার সদস্য হওয়া, ডিপোজিট স্কিম-এর সদস্য হওয়া, আইনগত মর্যাদা লাভ ইত্যাদি। রাষ্ট্রায়ত্ত এবং দেশীয় ও বিদেশি যেসব বেসরকারি ব্যাংকের তালিকা এ পর্যন্ত দেওয়া হয়েছে সেগুলির সবই তালিকাভুক্ত ব্যাংক। তালিকাভুক্ত ব্যাংকের সংজ্ঞানুযায়ী যে সকল ব্যাংককে বাংলাদেশ ব্যাংক কর্তৃক তালিকাভুক্ত ঘোষণা করা হয় নি, সেসব ব্যাংক হচ্ছে অ-তালিকাভুক্ত ব্যাংক। এদের মধ্যে আছে, ইডেন ব্যাংক, সৈয়দপুর কমার্শিয়াল ব্যাংক, দ্য কুমিল্লা কো-অপারেটিভ ব্যাংক, দিনাজপুর ইন্ডাস্ট্রিয়াল ব্যাংক, রাজশাহী ব্যাংক, শঙ্কর ব্যাংক, ফরিদপুর ব্যাংকিং কর্পোরেশন এবং মাদারীপুর কমার্শিয়াল ব্যাংক।
দেশে এবং বিদেশে ব্যাংকিং কার্যক্রম সম্পাদন ও সম্প্রসারণের উদ্দেশ্যে বাংলাদেশি ব্যাংকসমূহ বিদেশি ব্যাংকসমূহের সাথে করেসপন্ডেন্ট ব্যাংকিং সম্পর্ক রক্ষা করে থাকে। বাংলাদেশে ব্যাংকিং তৎপরতার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অংশ তথা আমানত সংগ্রহ এবং ঋণদান কার্যক্রমের সিংহভাগ পরিচালত হয় রাষ্ট্রায়ত্ত খাতের ব্যাংকসমূহ দ্বারা। ২০০০ সালের ৩১ মার্চ তারিখে দেশের ব্যাংকিং খাতে মোট আমানতের ৫৭.২৮% ছিল রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলিতে। আর দেশি বেসরকারি ব্যাংক, বিদেশি ব্যাংক এবং বিশেষায়িত আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলিতে ছিল যথাক্রমে ২৯.০১%, ৮.৪২% এবং ৫.২৯%। পক্ষান্তরে বিতরণকৃত মোট ঋণে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংক দেশীয় বেসরকারি ব্যাংক, বিদেশি ব্যাংক এবং বিশেষায়িত আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলির অংশ ছিল যথাক্রমে ৫১.৬৬%, ২৯.২৫%, ৬.০৩% এবং ১৩.০৬%। ব্যাংকিং খাতের সংস্কার, অধিকতর প্রতিযেগিতামূলক পরিবেশ সৃষ্টি, বেসরকারি ব্যাংকের শাখা সম্প্রসারণ ইত্যাদি বিবিধ কারণে বিগত দশকে শ্রেণিভিত্তিক আন্তঃব্যাংক সম্পদ ও দায়ের অংশীদারিত্বে ব্যাপক পরিবর্তন এসেছে। ২০০৯-১০ অর্থবছরে রাষ্ট্র নিয়ন্ত্রিত ব্যাংকসমূহের আমানত ২০০০ সালের মোট আমানতের শতকরা ৫৮ ভাগ হতে হ্রাস পেয়ে শতকরা ৩৫ ভাগে নেমে এসেছে। এ সময়ে দেশি বেসরকারি বাণিজ্যিক ব্যাংকসমূহের আমানত শতকরা প্রায় ৩০ ভাগ হতে বৃদ্ধি পেয়ে ৫৩ ভাগে উন্নীত হয়। অনুরূপভাবে মোট সম্পদে রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন ব্যাংকসমূহের সম্পদের অংশ উক্ত সময়ে মোট সম্পদের শতকরা ৫২ ভাগ হতে হ্রাস পেয়ে প্রায় ৩২ ভাগে এসে দাঁড়িয়েছে। এসময়ে দেশি বেসরকারি ব্যাংকের সম্পদের অংশ শতকরা ২৯ ভাগ হতে বৃদ্ধি পেয়ে ৫০ ভাগে দাঁড়ায়।
ব্যাংক ও ব্যাংকিং খাতসংক্রান্ত যে সকল আইন বাংলাদেশে প্রচলিত সেগুলি হচ্ছে: ক. প্রত্যক্ষভাবে সংশ্লিষ্ট আইন: বাংলাদেশ ব্যাংক অর্ডার ১৯৭২; ব্যাংক কোম্পানি অ্যাক্ট, ১৯৯১; বাংলাদেশ ব্যাংক (ন্যাশনালাইজেশন) অর্ডার ১৯৭২; কোম্পানিজ অ্যাক্ট, ১৯১৩ এবং ১৯৯৪; ডিপোজিট ইন্সুরেন্স অর্ডার ১৯৮৪; ব্যাংকর্যাপসি অ্যাক্ট, ১৯৯৭ এবং ইনসলভেন্সি অ্যাক্ট, ১৯২০; ফিন্যান্সসিয়াল কোর্ট অ্যাক্ট ১৯৯০; ফরেন এক্সচেঞ্জ (রেগুলেশন) অ্যাক্ট, ১৯৬৮; ফিন্যান্সসিয়াল ইনস্টিটিউশন অ্যাক্ট ১৯৯৩; ফিন্যান্সসিয়াল রুলস ১৯৯৪, কো-অপারেটিভ সোসাইটিজ ১৯৮৪; খ. পরোক্ষভাবে সংশ্লিষ্ট আইন: কোড অব সিভিল প্রসিডিউর ১৮৯৮; কোড অব ক্রিমিনাল প্রসিডিউর ১৯৯৮; এভিডেন্স অ্যাক্ট ১৯৭২; জেনারেল ক্লজেস অ্যাক্ট ১৮৯৭; লিমিটেশনস অ্যাক্ট ১৯০৮; নেগোশিয়েবল ইন্সট্রুমেন্টস অ্যাক্ট ১৮৮১; পেনাল কোড ১৮৬০; ট্রাস্ট অ্যাক্ট ১৮৮২; ট্রান্সফার অব প্রপার্টি অ্যাক্ট এবং বাংলাদেশ চার্টাড একাউন্টেন্ট অর্ডার ১৯৭৩।
ব্যাংকিং ব্যবস্থার আধুনিকীকরণ দ্রুত পরিবর্তনশীল বিশ্ব অর্থনীতির সঙ্গে সঙ্গতি রেখে বাংলাদেশে একটি যুগোপযোগী ও আন্তর্জাতিক মানের সুদক্ষ ব্যাংকিং ব্যবস্থা গড়ার লক্ষ্যে ২০১০ সাল পর্যন্ত বিগত দশকে ব্যাংক ব্যাবস্থার সংস্কার, প্রযুক্তিগত আধুনিকীকরণ ও সেবার মান উন্নয়নের মাধ্যমে এক ব্যাপক পরিবর্তন আনা হয়েছে। রাষ্ট্রায়ত্ব ব্যাংকসমূহকে পাবলিক লিমিটেড কোম্পানিতে পরিণত করা হয়েছে। ATM booth, One Line Banking ব্যবস্থার প্রবর্তন এ ক্ষেত্রে এক যুগান্তকারী পদক্ষেপ হিসেবে বিবেচিত। ব্যাসেল-২-এর মানদন্ডে ব্যাংকসমূহ পরিচালনার জন্য যাবতীয় ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের তদারকি সুবিধা ও পরিধি বিস্তৃতকরণে ব্যাংক কোম্পানি আইন সংশোধন করে সংশোধন অধ্যাদেশ ২০০৭ জারী করা হয়েছে। অবৈধ অর্থ পাচার ও হুন্ডি ব্যবসা রোধকল্পে মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ আইন ২০০২ জারি করা যায় যা আন্তর্জাতিক আইনের সাথে সংগতিপূর্ণ ও আধুনিকীকরণে ২০০৮ সালে সংশোধিত আকারে জারি করা হয়েছে। [আবুল কালাম আজাদ]