ঠাকুরগাঁও জেলা
ঠাকুরগাঁও জেলা (রংপুর বিভাগ) আয়তন: ১৮০৯.৫২ বর্গ কিমি। অবস্থান: ২৫°৪০´ থেকে ২৬°১২´ উত্তর অক্ষাংশ এবং ৮৮°০৫´ থেকে ৮৮°৩৯´ পূর্ব দ্রাঘিমাংশ। সীমানা: উত্তরে পঞ্চগড় জেলা, পূর্বে পঞ্চগড় ও দিনাজপুর জেলা, পশ্চিম ও দক্ষিণে ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য।
জনসংখ্যা ১২১৪৩৭৬; পুরুষ ৬২৭২০০, মহিলা ৫৮৭১৭৬। মুসলিম ৯২৪২৫৪, হিন্দু ২৭৮৭০৩, বৌদ্ধ ৭১৫৬, খ্রিস্টান ১৩১ এবং অন্যান্য ৪১৩২। এ উপজেলায় সাঁওতাল, ওরাওঁ, মুন্ডা, মুসহোর, রাজবংশী প্রভৃতি আদিবাসী জনগোষ্ঠীর বসবাস রয়েছে।
জলাশয় প্রধান নদী: টাংগন, নাগর, কুলিক, তিরনাই, পাথরাই; কাচনা বিল উল্লেখযোগ্য।
প্রশাসন ১৮৬০ সালে দিনাজপুর জেলার অধীনে ঠাকুরগাঁও মহকুমা গঠিত হয়। মহকুমাকে ১৯৮৪ সালে জেলায় রূপান্তর করা হয়। জেলার পাঁচটি উপজেলার মধ্যে ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলা সর্ববৃহৎ (৬৮৩.৪৫ বর্গ কিমি) এবং সবচেয়ে ছোট উপজেলা হরিপুর (২০১.০৬ বর্গ কিমি)।
জেলা | |||||||||
আয়তন (বর্গ কিমি) | উপজেলা | পৌরসভা | ইউনিয়ন | মৌজা | গ্রাম | জনসংখ্যা | ঘনত্ব (প্রতি বর্গ কিমি) | শিক্ষার হার (%) | |
শহর | গ্রাম | ||||||||
১৮০৯.৫২ | ৫ | ২ | ৫১ | ৬৪৩ | ৬৪১ | ১১৭৮২৩ | ১০৯৬৫৫৩ | ৬৭১ | ৪১.৮ |
জেলার অন্যান্য তথ্য | |||||||||
উপজেলা নাম | আয়তন (বর্গ কিমি) | পৌরসভা | ইউনিয়ন | মৌজা | গ্রাম | জনসংখ্যা | ঘনত্ব (প্রতি বর্গ কিমি) | শিক্ষার হার (%) | |
ঠাকুরগাঁও সদর | ৬৮৩.৪৫ | ১ | ১৯ | ১৯৪ | ১৯৭ | ৫০৪৪২৮ | ৭৩৮ | ৪৭.৪ | |
পীরগঞ্জ | ৩৫৩.৩০ | ১ | ১০ | ১৬৮ | ১৬৮ | ২১৫৭৫৪ | ৬১১ | ৪১.৩ | |
বালিয়াডাঙ্গি | ২৮৪.১২ | - | ৮ | ৭৮ | ৭৮ | ১৬৯৭৭১ | ৫৯৮ | ৩৯.২ | |
রানীশংকাইল | ২৮৭.৫৯ | - | ৮ | ১২৪ | ১২৬ | ১৯৬১৩৪ | ৬৮২ | ৩৫.১ | |
হরিপুর | ২০১.০৬ | - | ৬ | ৭৫ | ৭২ | ১২৮২৮৯ | ৬৩৮ | ৩৪.১ |
সূত্র আদমশুমারি রিপোর্ট ২০০১, বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো।
মুক্তিযুদ্ধের ঘটনাবলি ১৯৭১ সালের ১৭ এপ্রিল পাকবাহিনী পীরগঞ্জে ভাতারমারী ফার্মের নিকটে কয়েকজন নিরীহ বাঙালিকে নির্মমভাবে হত্যা করে। বালিয়াডাঙ্গি উপজেলা বেলচা ঝিগড়া গ্রামে পাকসেনারা ১৮ জন গ্রামবাসিকে হত্যা করে। ২৮ এপ্রিল পাকবাহিনীর গুলিতে ছোটপলাশবাড়ি ও বড়পলাশবাড়ি গ্রামে ২ জন মুক্তিযোদ্ধা শহীদ হন এবং কুশলডাঙ্গী হাট সংলগ্ন তিরনাই নদীর পাশে ৯ জন নিরীহ লোককে তারা গুলি করে হত্যা করে। একই দিন পাকবাহিনী কালীগঞ্জে ৭ জনকে হত্যা করে। এ জেলার ভুলি, গড়েয়া, সালন্দরে পাকসেনাদের সঙ্গে মুক্তিযোদ্ধাদের মুখোমুখি যুদ্ধ হয়। এছাড়া হরিপুর উপজেলায় পাকবাহিনী ব্যাপক গণহত্যা, নির্যাতন ও লুটপাট করে।
মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিচিহ্ন বধ্যভূমি: ৪; গণকবর ৬।
শিক্ষার হার, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড় হার ৪১.৮%; পুরুষ ৪৮.৪%, মহিলা ৩৪.৮%। কলেজ ৬৭, কারিগরি কলেজ ১১, শিক্ষক কেন্দ্র ১, বি.এড কলেজ ১, ভোকেশনাল ট্রেনিং ইনস্টিটিউট ১, ভোকেশনাল টেকা্রটাইল ইনস্টিটিউট ১, যুব প্রশিক্ষণ কেন্দ্র ২, মাধ্যমিক বিদ্যালয় ৩৫৮, প্রাথমিক বিদ্যালয় ৮৬৫, কমিউনিটি স্কুল ১০, মাদ্রাসা ৭৭। উল্লেখযোগ্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠান: ঠাকুরগাঁও জেলা স্কুল (১৯০৪), ঠাকুরগাঁও সরকারি বালক উচ্চ বিদ্যালয় (১৯০৪), পীরগঞ্জ পাইলট উচ্চ বিদ্যালয় (১৯০৭), রানীশংকাইল পাইলট উচ্চ বিদ্যালয় (১৯১৪), রানীশংকাইল মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় (১৯১৭), চড়তা উচ্চ বিদ্যালয় (১৯২৮), লাহিড়ী উচ্চ বিদ্যালয় (১৯৩২), পীরগঞ্জ মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় (১৯৩৩), হরিপুর দ্বিমুখী উচ্চবিদ্যালয় (১৯৩৬), হরিপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় (১৯৫৩), ঠাকুরগাঁও সরকারি কলেজ (১৯৫৭), পীরগঞ্জ ডিগ্রি কলেজ (১৯৬৪), রানীশংকাইল ডিগ্রি কলেজ (১৯৭২)।
জনগোষ্ঠীর আয়ের প্রধান উৎস কৃষি ৭৬.৭৪%, অকৃষি শ্রমিক ২.৮৪%, শিল্প ০.৩৬%, ব্যবসা ৯.০৫%, পরিবহণ ও যোগাযোগ ২.৩৪%, চাকরি ৩.৯১%, নির্মাণ ০.৭৬%, ধর্মীয় সেবা ০.১১%, রেন্ট অ্যান্ড রেমিটেন্স ০.১৭% এবং অন্যান্য ৩.৭২%।
পত্র-পত্রিকা ও সাময়িকী অবলুপ্ত দৈনিক পত্রিকা: ঠাকুরগাঁও দর্পণ, কথাকলি, সংগ্রামী বাংলা, গ্রামবাংলা, বাংলাদেশ, জনরব, উত্তর হাত, এ সময়, স্বরগম, সিঞ্চন, ব্যতিক্রম, স্পন্দন, ছাড়পত্র, দীপালোক, বীর বাঙালী, রক্তাক্ত প্রান্তর, দুর্বাদল, রক্তের রং নীল, রক্তঝরা দিন; অবলুপ্ত সাহিত্য পত্রিকা: এসো চেয়ে দেখি পৃথিবী, উষসী, চালচিত্র; সাময়িকী: অঙ্গীকার, ঐকান্তিক, সমকাল, মুকুল, আবে হায়াত, রবীন্দ্র স্মরনিকা, বার্ষিক সিঁড়ি।
লোকসংস্কৃতি জারি, সারি, ভাওয়াইয়া, কবি গান, সত্যপীরের পালা গান, চড়ক পূজা, রাসযাত্রা, প্রবাদ প্রবচন, ধাঁধাঁ, ছড়া উল্লেখযোগ্য।
দর্শনীয় স্থান জগদল জমিদার বাড়ি, টংকনাথ রাজার বাড়ি (রানীশংকৈল উপজেলা); সাগুনী শালবন ও থুমনিয়া শালবন (পীরগঞ্জ উপজেলা)। [আবু মো. ইকবাল রুমী শাহ]
আরও দেখুন সংশিষ্ট উপজেলা।
তথ্যসূত্র আদমশুমারি রিপোর্ট ২০০১, বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো; ঠাকুরগাঁও জেলা সাংস্কৃতিক সমীক্ষা প্রতিবেদন ২০০৭, ঠাকুরগাঁও জেলার উপজেলাসমূহের সাংস্কৃতিক সমীক্ষা প্রতিবেদন ২০০৭।