কুমুদিনী হাসপাতাল
কুমুদিনী হাসপাতাল দাতব্য চিকিৎসালয়। সমাজসেবক রায়বাহাদুর রণদাপ্রসাদ সাহা ১৯৩৮ সালে মির্জাপুরে লৌহজং নদীর তীরে হাসপাতালটি স্থাপন করেন এবং তাঁর মাতার নামে এটির নামকরণ করেন ‘কুমুদিনী হাসপাতাল’। ১৯৪৪ সালের ২৭ জুলাই বাংলার তদানীন্তন গভর্নর লর্ড আর. জি কেসী ২০ শয্যার এ হাসপাতালের উদ্বোধন করেন। পরবর্তীকালে হাসপাতালটি ৭৫০ শয্যায় উন্নীত হয়। বেসরকারি উদ্যোগে পরিচালিত কুমুদিনী হাসপাতাল বাংলাদেশের অন্যতম বৃহৎ হাসপাতাল। এখানে দৈনিক চার শতাধিক রোগীকে চিকিৎসা সেবা দেওয়া হয়। রোজকার সাধারণ রোগী ছাড়াও গর্ভবতী মায়েদের নিয়মিত চেকআপ, প্রসবকালীন সেবা এবং মাতা ও শিশুর স্বাস্থ্য পরিচর্যা ও চিকিৎসার ব্যবস্থা রয়েছে। পরিবার পরিকল্পনা সেবা প্রদানের পাশাপাশি স্ত্রীরোগ, ডায়রিয়া, যক্ষ্মা প্রভৃতি রোগের চিকিৎসা করা হয়। দেশের অন্যান্য বেসরকারি হাসপাতালে প্রায় সব চিকিৎসকই খন্ডকালীন, কিন্তু এখানকার চিকিৎসকগণ হাসপাতালের সার্বক্ষণিক কর্মী। এখানে কুমুদিনী নার্সিং স্কুলে শিক্ষাপ্রাপ্ত নার্সদের এক বিশাল টিম রয়েছে। নার্সিং স্কুলে চার বছর মেয়াদি নার্সিং শিক্ষা ও প্রশিক্ষণ কোর্স চালু আছে।
১৯৭০ সালে কুমুদিনী হাসপাতালে ৫০ শয্যাবিশিষ্ট টি.বি ওয়ার্ড যুক্ত হয়। এটি ছিল একটি উল্লেখযোগ্য ঘটনা কারণ, সে সময় দেশে মরণব্যাধি যক্ষ্মার চিকিৎসার তেমন ব্যবস্থা ছিল না, একমাত্র যক্ষ্মা হাসপাতালটি ছিল ঢাকায়, গ্রামের মানুষ সাধারণত যক্ষ্মা রোগীর সংস্পর্শ এড়িয়ে চলত। ফলে অনাকাঙ্খিত মর্মান্তিক মৃত্যুই ছিল যক্ষ্মা রোগীর একমাত্র পরিণতি। হাসপাতালে যক্ষ্মা রোগের স্বতন্ত্র ওয়ার্ড নির্মাণের পূর্বে যক্ষ্মা রোগীদের নদীতে আচ্ছাদিত নৌকায় তৈরী ভাসমান ওয়ার্ডে চিকিৎসা সেবা প্রদান করা হতো।
কুমুদিনী হাসপাতালের চিকিৎসা ব্যবস্থায় কোনো শ্রেণিভেদ নেই। এখানে কোনো কেবিন নেই। সবাইকে সমান গুরুত্বসহকারে চিকিৎসা সেবা প্রদান করা হয়। ২০০০ সালে এখানে কুমুদিনী মেডিক্যাল কলেজ প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। [হেনা সুলতানা]