কীটনাশক

Mukbil (আলোচনা | অবদান) কর্তৃক ০৬:০৩, ১৮ আগস্ট ২০১৪ তারিখে সংশোধিত সংস্করণ
(পরিবর্তন) ← পূর্বের সংস্করণ | সর্বশেষ সংস্করণ (পরিবর্তন) | পরবর্তী সংস্করণ → (পরিবর্তন)

কীটনাশক (Insecticide)  রাসায়নিক ক্রিয়ার মাধ্যমে জীবন প্রক্রিয়ায় বিপর্যয় ঘটিয়ে ক্ষতিকর কীটপতঙ্গ দমনে ব্যবহার্য দ্রব্য। কীটনাশক অজৈব কিংবা জৈব পদার্থ হতে পারে এবং এগুলি তিনটি সাধারণ শ্রেণিতে বিভাজ্য- খাদ্যবিষ, স্পর্শবিষ ও ধোয়া বিষ (fumigant)। বাড়িঘর, শস্যগুদাম বা গ্রীনহাউজের মতো আবদ্ধ স্থানে রক্ষিত পণ্য দ্রব্যের ক্ষতিকারক কীটপতঙ্গের ক্ষেত্রে সাধারণত ধোয়াবিষ বা বিষগ্যাস সর্বাধিক কার্যকর। বিকর্ষক (repellants), আকর্ষক (attractants), রাসায়নিক বন্ধ্যাকর (chemosterilants), ফেরোমোন (phermones) ইত্যাদি কিছু পদার্থও কীটপতঙ্গ নিয়ন্ত্রণে ব্যবহূত হয়, কিন্তু এগুলির কার্যকারিতার ধরন ভিন্নতর। সাধারণত এসব রাসায়নিক পদার্থ বিষাক্ত নয়।

সাধারণভাবে অজৈব কীটনাশকগুলি কেবল খাদ্যবিষ উদরবিষ হিসেবেই কার্যকর এবং বর্তমানে এগুলি প্রধানত টোপ হিসেবে ব্যবহূত হয়। অধিকাংশ জৈব কীটনাশক সংশ্লেষিত বা উদ্ভিদজাত এবং স্পর্শবিষ, উদরবিষ এবং কিছু নির্দিষ্ট ক্ষেত্রে ধোয়া বিষ হিসেবে কার্যকর। কীটনাশক আবির্ভাবের ইতিহাস খুব দীর্ঘ নয়। উনিশ শতকের ষাটের দশকে আমেরিকার মিসিসিপিতে আলুক্ষেত কলোরাড়ো আলু-বিটল দ্বারা আক্রান্ত হলে প্রথম কীটনাশকের সাধারণ ব্যবহার শুরু হয়। প্যারিস গ্রিন নামে আর্সেনিকঘটিত একটি পদার্থ উদ্ভিদ সংরক্ষক হিসেবে এতটাই ফলদায়ক হয়েছিল যে চাষীরা অতঃপর আপেলের ক্ষতিকর  মথ ধ্বংসের জন্য সেটি ব্যবহার শুরু করে, যেগুলির শুঁয়াপোকা আপেল ও নাশপাতি গাছ নষ্ট করত। প্যারিস গ্রিন ১৯০০ সালের মধ্যেই খুব জনপ্রিয়  হয়ে ওঠে এবং ইউরোপ ও আমেরিকার সর্বত্র ছড়িয়ে পড়ে। প্যারিস গ্রিন ছাড়াও অন্যান্য অজৈব লবণ, যেমন লেড আরসেনেট (lead arsenate), ক্রায়োলাইট (cryolite), মারকিউরাস ক্লোরাইড (mercurous chloride), সোডিয়াম ফ্লুরাইড (sodium fluoride) ও গন্ধক সম্ভবত কীটপতঙ্গ দমনে ব্যবহূত প্রাচীনতম দ্রব্য। এগুলির কোনো কোনোটি এখনও ব্যবহূত হয়। গ্রীষ্মমন্ডলীয় আদিবাসীরা কিছু নির্দিষ্ট উদ্ভিদ, যেমন টেফ্রোসিয়া (Tephrosia), ডেরিস (Derris), লংকোকার্পাস (Lonchocarpus) ইত্যাদি গাছের শিকড় ও বিভিন্ন অংশের বিষাক্ততা জানত যেগুলি তারা শত শত বছর ধরে মাছের বিষ হিসেবে মাছ মারা ও ধরায় ব্যবহার করেছে। এ থেকেই পরবর্তীকালে উদ্ভিজ্জ জৈব কীটনাশকের উৎপত্তি যা সচরাচর বোটানিক্যাল বা অ্যালকালয়েড নামে পরিচিত, যেমন রোটিনোন (rotenone), নিকোটিন সালফেট (nicotine sulphate), এবং পাইরিথ্রয়েড্স্ (pyrethroid)। জানা যায় কীটনাশক হিসেবে রোটিনোন ১৮৪৮ সালে পাতাভুক শুঁয়াপোকা দমনে প্রথম ব্যবহূত হয়েছিল। তবে, ১৯০২ সালের পূর্বে রোটিনোনের কার্যকর উপাদানটি পৃথক করা সম্ভব হয় নি।

নতুন কীটনাশকের আবিষ্কারের বর্তমান ঝোঁকটি প্রায় পুরোপুরিই কৃত্রিম জৈব-রাসায়নিক পদার্থ তৈরির দিকে। ১৮৯২ সালে সম্ভবত এ জাতীয় রাসায়নিক পদার্থের প্রাথমিক ব্যবহার শুরু, যখন জার্মানিতে ৪,৬-ডাইনাইট্রো-অর্থো-ক্রিসোল (4.6-dinitro-o-cresol)–এর পটাশিয়াম লবণ কীটনাশক হিসেবে বাজারজাত করা হয়। ১৯৩২ সালে â-বিউটক্সি- â থায়োসায়ানোডাইইথাইল ইথার (â-butoxy- â thiocyanodiethyl ether) দিয়েই সর্বপ্রথম পর্যাপ্ত পরিমাণে কৃত্রিম জৈব-কীটনাশকের ব্যবহার শুরু হয়। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময়ে ১৯৪০ সালে DDT আবিষ্কৃত হলে সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত হয় যে কৃত্রিম রাসায়নিক পদার্থ কীটনাশক হিসেবে অজৈব ও উদ্ভিদজাত পদার্থ থেকে গুণগত মানের দিক থেকে উন্নত।

বিশ শতকের মধ্য-দশকের বছরগুলি ছিল কীটপতঙ্গ নিয়ন্ত্রণে কৃত্রিম কীটনাশক আবিষ্কারের বিপ্লবকাল। DDT আবিষ্কার এবং মাছিমশাসহ ব্যাপক কীটপতঙ্গ নিয়ন্ত্রনে এটির সফল ব্যবহার রসায়নবিদ ও রাসায়নিক শিল্পগুলিকে বিভিন্ন প্রকারের শত শত নতুন কীটনাশক আবিষ্কার ও বাজারজাত করতে অনুপ্রাণিত করে।

রাসায়নিক সংযুক্তির ভিত্তিতে কৃত্রিম জৈব-কীটনাশকগুলি বিভিন্নভাবে শ্রেণিবদ্ধ হতে পারে যেমন, ক্লোরিনেটেড হাইড্রোকার্বন (chlorinated hydrocarbon), সাইক্লোডাইন যৌগ (cyclodienes), কার্বামেটস (carbamates), অরগানোফসফেটস (organophosphates) ইত্যাদি। ক্লোরিনেটেড হাইড্রোকার্বনের মধ্যে DDT, মিথোক্সিক্লোর (methoxychlor) ও লিনডেন (Lindane) বহু বছর ধরে ব্যাপকভাবে ব্যবহূত হয়ে আসছে। DDT প্রয়োগের পর তার অবশিষ্টাংশ (residue) দীর্ঘকাল সক্রিয় থাকায় বাংলাদেশসহ অনেক দেশে এটির ব্যবহার এখন নিষিদ্ধ করা হয়েছে।

সাইক্লোডাইন যৌগগুলি হলো অত্যধিক ক্লোরিনযুক্ত সাইক্লিক হাইড্রোকার্বন। এগুলির মধ্যে আছে ক্লোরডেন (Chlordane), হেপ্টাক্লোর (Heptachlor), অলড্রিন (Aldrin), ডাইয়েলড্রিন (Dieldrin), এন্ড্রিন (Endrin) ইত্যাদি। এসব কীটনাশকের অধিকাংশই মাটির কীটপতঙ্গের বিরুদ্ধে অধিকতর কার্যকর। এন্ড্রিন মাছের জন্য অত্যধিক বিষাক্ত বিধায় ১৯৬২ সাল থেকে বাংলাদেশে এনড্রিনের ব্যবহার নিষিদ্ধ। পর্যাপ্ত প্রকারভেদসহ কার্বামেট বস্ত্তত কীটনাশকের একটি অনন্য শ্রেণি। অরগানোফসফেটের মতো এগুলি স্নায়ুপেশীতন্ত্রের কোলিনেসটেরেস (Cholinestarase) উৎসেচকের একমুখী রোধক। সাধারণভাবে ব্যবহূত কার্বামেটগুলির মধ্যে উল্লেখযোগ্য সেভিন ও বায়গন। আমাদের দেশে ব্যবহূত সাধারণ দানাদার কীটনাশক সেভিডল হলো সেভিন ও লিনডেনের (gamma BHC) মিশ্রণ।

ক্ষতিকর কীটপতঙ্গ নিয়ন্ত্রণে অরগানোফসফরাস কীটনাশকগুলি প্রায় সব ধরনের কীটপতঙ্গ নিধনের জন্য ব্যাপকভাবে ব্যবহূত হয়। এক্ষেত্রে গবেষণার ফলে সকল বৈশিষ্ট্যের হাজার হাজার কীটনাশক আবিষ্কৃত হয়েছে। ম্যালাথিয়ন, ডায়াজিনন (বাসুডিন), বাইড্রিন, ডাইমেক্রন, এজোড্রিন, নগোস, নেক্সিওন ইত্যাদি হলো সর্বাধিক পরিচিত কয়েকটি অরগানোফসফেট। এসব কীটনাশকের মধ্যে অধিকাংশরই একাধিক ট্রেডমার্ক সম্বলিত নাম রয়েছে।

অধিকাংশ অরগানোফসফরাস কীটনাশকের ক্রিয়াই প্রণালীবদ্ধ (systemic)। এটি এক অসামান্য বৈশিষ্ট্য, কেননা তা উদ্ভিদের বিভিন্ন অংশে প্রাণঘাতী মাত্রায় শোষিত ও পরিবাহিত হয় এবং উদ্ভিদভুক কীটপতঙ্গ সেগুলি খাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে মারা যায়। কান্ড-ছিদ্রকারী মাজরাপোকা এবং অভ্যন্তরীণ কোষকলাভুক ধরনের কীটপতঙ্গ নিয়ন্ত্রণের জন্য উক্ত গুণাবলীর এসব কীটনাশক এখন অত্যাবশ্যকীয়।

বাংলাদেশে ক্ষতিকর কীটপতঙ্গ নিয়ন্ত্রণের জন্য ১৯৫৬ সালের পূর্বে তেমন কীটনাশক ব্যবহার হয় নি। ওই বছরই প্রথম সরকার ৩ মে টন কীটনাশক আমদানি করে। ১৯৭৪ সাল পর্যন্ত সরকার বিনামূল্যে কৃষকদের মধ্যে ১০০% ভর্তুকিসহ কীটনাশক বিতরণ করত। ১৯৭৪ সালে এ ভর্তুকি ৫০% কমিয়ে এবং ১৯৭৯ সালে ভর্তুকি সম্পূর্ণ প্রত্যাহার করে কীটনাশক ব্যবসা বেসরকারি খাতে হস্তান্তরিত হয়। তথাপি সরকার জরুরি অবস্থার মোকাবিলার জন্য সবসময়ই ১৫-২০ মে টন কীটনাশক মজুদ রাখে।

ভর্তুকি প্রত্যাহারের পর বিশ শতকের আশির দশকের প্রথম দিকে কীটনাশকের ব্যবহার হ্রাস পায়। কিন্তু ১৯৯৯ সালে ব্যবহার বৃদ্ধি পেয়ে ১৩,০০০ মে টনে দাঁড়ায়। বর্তমানে ২০০৬-০৭ সালের তথ্য এ বছরগুলিতে কীটনাশকের ব্যবহার বৃদ্ধির প্রধান কারণ উচ্চফলনশীল ধান চাষের জন্য ব্যবহূত জমির পরিমাণ বৃদ্ধি, কীটনাশক ব্যবসায়ীরা কৃষকের মধ্যে কীটপতঙ্গ নিয়ন্ত্রণে কীটনাশক ব্যবহারে উৎসাহ বৃদ্ধি এবং অজ্ঞতাবশত কৃষক কর্তৃক অতিরিক্ত পরিমাণে এবং মাঝেমধ্যে অপ্রয়োজনীয় ক্ষেত্রেও কীটনাশক ব্যবহার।

বর্তমানে প্রায় ৪৮টি কীটনাশক অন্যূন ১৫০টি ট্রেডমার্ক সম্বলিত নামে বাংলাদেশে তালিকাভুক্ত আছে। অনেকগুলি কীটনাশক বিভিন্ন ধরনে বাজারজাত করা হয়, যেমন দানাদার (Gr), তরল (EC), গুঁড়া (WP, dust, SP) ও অ্যারোসল।

সাধারণভাবে ব্যবহূত বিভিন্ন ট্রেডমার্কের কীটনাশকের মধ্যে রয়েছে ১. দানাদার: কার্বোফিউরান (carbofuran), ডায়াজিনন (Diazinon), ফিপ্রোনিল (Fipronil), কার্বোসালফান (corbosulfan) ও ক্লোরোপাইরিফস (Chloropyriphos); ২. তরল: সাইপারমেথ্রিন (Cypermethrin), ডিডিভিপি (DDVP), ডায়াজিনন (Diazinon), ডাইমিথোয়েট (Dimethoate), মনোক্রোটোফস (Monocrotophos), ম্যালাথিওন (Malathion), ফসফামিডন (Phosphamidon), ফেনথোয়েট (Phenthoate), ফেনিট্রোথিওন (Fenitrothion) ও বাইড্রিন (Bidrin); ৩. গুঁড়া: কার্বারিল (Carbaryl), কার্টাপ (Cartap) ও এমআইপিসি (MIPC); এবং ৪. ইঁদুরনাশক: ব্রোমাডিওলোন (Bromadiolone), ব্রোডিওফ্যাকাম (Brodiofacum) ও জিংক ফসফাইড (Zinc phosphide)।

সারণি ১৯৯৮ ও ১৯৯৯ সালে কীটনাশকের ব্যবহার (মে টন)।

কীটনাশক ধরন ১৯৯৮ ১৯৯৯
মোট ব্যবহূত কীটনাশক উপাদান মোট ব্যবহূত কীটনাশক উপাদান
দানাদার ৯,১৩৯.১০ ৫৩৪.৬৩ ১১,১৯২.৬১ ৬৮৪.৩৫
তরল ১,২৯৮.৮৫ ৭৬৬.১৪ ১,৫২৩.৯৭ ৮৪২.৮৯
গুঁড়া ৭৫.৭৩ ৫০.৭০ ৯৭.৬৫ ৬৬.৭৬
মাইটিসাইড ৩১.৩৮ ১৬.৫২ ২৫.৬৭ ১২.৫৪

উৎস পেস্টিসাইড অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ।

পেস্টিসাইড অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ-এর তত্ত্বাবধানে বর্তমানে কীটনাশক ব্যবসা বেসরকারি খাতের তদারকিতে পরিচালিত হলেও একটি টেকনিক্যাল উপদেষ্টা কমিটি কীটনাশক অধ্যাদেশ ১৯৭১-এর শর্তানুযায়ী আমদানি, ফর্মুলেশন বা সংশ্লেষণ, পুনঃমোড়ককরণ, বিক্রয় ও বিতরণ সংশ্লিষ্ট টেকনিক্যাল বিষয়ে সরকারকে পরামর্শ দিয়ে থাকে। প্রায় ৩০টি কোম্পানি/প্রতিষ্ঠান গোটা বাংলাদেশে রাসায়নিক সামগ্রী বাজারজাত করে। এগুলির মধ্যে রয়েছে এসিআই লিমিটেড, আলফা অ্যাগ্রো লিমিটেড, যমুনা অয়েল কোম্পানি লিমিটেড, BASF বাংলাদেশ লিমিটেড, দাতা এন্টারপ্রাইজেস, ম্যাকডোনাল্ড বাংলাদেশ (প্রা.) লিমিটেড, পদ্মা অয়েল কোম্পানি লিমিটেড, নোভার্টিস বাংলাদেশ লিমিটেড, রোন-পুলাংক (Rhone Poulenc) অ্যাগ্রোভেট বাংলাদেশ লিমিটেড, সেতু কর্পোরেশন লিমিটেড, এবং লিমিট অ্যাগ্রোপ্রোডাক্টস লিমিটেড।  [এস.এম হুমায়ুন কবির]

জীবাণুঘটিত কীটনাশক (Microbial insecticide)  রোগজীবাণু ও সেগুলির উপজাতের সাহায্যে রোগসংক্রমণ ঘটিয়ে ক্ষতিকর কীটপতঙ্গ নিয়ন্ত্রণ। রাসায়নিক কীটনাশকের মতো এগুলিও কিছুকাল সংরক্ষণ, ড্রামবদ্ধ অবস্থায় বিপণন, পানি মিশিয়ে তরল করা ও স্প্রেয়িং মেশিনের সাহায্যে ছিটানো যায়।

রাসায়নিক কীটনাশকের তুলনায় জীবাণুঘটিত কীটনাশকের কিছু লক্ষণীয় সুবিধা রয়েছে। এগুলি নির্দিষ্ট কীটপতঙ্গের উপর কার্যকর, নিরাপদ ও বিষাক্ত অবশেষমুক্ত। তদুপরি ক্ষতিকর কীটপতঙ্গের সাধারণ শত্রুদের বাঁচিয়ে রাখে ও ক্ষতিকর কীটদের মধ্যে প্রতিরোধক্ষমতা গড়ে তোলে না। কিছু জীবাণুঘটিত কীটনাশক রাসায়নিক কীটনাশকের প্রতিপক্ষ নয়, বরং সহায়ক এবং প্রায়শ একত্রে ব্যবহার্য। তবে জীবাণুঘটিত কীটনাশকের কিছু অসুবিধাও আছে। অত্যধিক সুনির্দিষ্টতার দরুন এগুলির উৎপাদন ও বিপণন সীমাবদ্ধ হয়ে পড়ে। pH, তাপমাত্রা ও আলোর তীব্রতার নিরিখে এগুলি অকার্যকর প্রমাণিত হতে পারে। এ জাতীয় রোগজীবাণু সাধারণত পোষক সংখ্যার অত্যধিক ঘনত্বেই কার্যকর, তাই প্রায়শই কৃষকদের কাছে ততটা গ্রহণযোগ্য হয়ে ওঠে না।

ছত্রাক হল স্পর্শক জীবাণু যা পতঙ্গের ত্বকে অণুবীজ বা স্পোর মুক্ত করে এবং অঙ্কুরিত স্পোরের অনুসূত্র ত্বক ভেদ করে ভিতরে ঢোকে। Beuveria bassiana এবং Metarhizium anisopliae যথাক্রমে বাঁধাকপির শুঁয়াপোকা ও মাটিতে বসবাসকারী ক্ষতিকর কীটপতঙ্গের বিরুদ্ধে খুবই ফলপ্রসূ। কয়েক জাতের  ভাইরাসব্যাকটেরিয়াপ্রোটোজোয়া ও গুঁড়াকৃমি তাদের আহার্য জীবাণু ও পোষক পতঙ্গের পাকস্থলীতে ঢুকে কার্যকর সংক্রমণ ঘটায়। নিউক্লিয়ার পলিহেড্রোসিস ও গ্র্যানুলোসিস (lepidopteran ও hymenopteran পতঙ্গের বিরুদ্ধে) এবং সাইটোপ্লাজমিক ভাইরাস (lepidopteran ও dipteran পতঙ্গের বিরুদ্ধে) যথেষ্ট কার্যকর। পতঙ্গদেহে স্পোর গঠনকারী সর্বোত্তম ব্যাকটেরিয়া হল Bacillus popilliae (scarab গোবরে পোকাকে আক্রমণ করে) ও B. thuringiensis ( মথমশা ও blackfly-এর লার্ভা আক্রমণ করে)। কতক মথের বিরুদ্ধে প্রোটোজোয়া, বিশেষত Nosema সাফল্যের সঙ্গে ব্যবহূত হচ্ছে।

বাংলাদেশে ক্ষতিকর কীটপতঙ্গ নিয়ন্ত্রণে জীবাণুঘটিত কীটনাশকের ব্যবহার খুবই সীমিত। ধানের শিষকাটা লেদাপোকার বিরুদ্ধে Bacillus thuringiensis কার্যকর প্রমাণিত হয়েছে। বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের বিজ্ঞানীরা এ জাতীয় অনেকগুলি জীবাণু শনাক্ত এবং সেগুলির একটি তালিকা প্রস্ত্তত করেছেন।

সব কীটনাশক সব পোকার জন্য সমভাবে কার্যকরী নয়। বিশেষ বিশেষ ঔষধ অনেকসময় বিশেষ ধরনের পোকা দমনের জন্য উপযোগী। কীটপতঙ্গ দমনে কীটনাশক ঔষধের সাফল্য নির্ভর করে কতকগুলি শর্তের উপর। উপযুক্ত ঔষধ উপযুক্ত সময়ে সঠিক মাত্রায় প্রয়োগ করলেই তবে আশানুরূপ ফল পাওয়া যায়। তবে মনে রাখতে হবে যে, সব কীটনাশকই মারাত্মক বিষ। তাই সতর্কতা ও বিজ্ঞতার সঙ্গে এদের ব্যবহার করতে হবে।

আজকাল কেবল ঔষধের উপর নির্ভর না করে বিভিন্ন দমন পদ্ধতির সমন্বয় সাধন করে ক্ষতিকারক কীটপতঙ্গের ব্যবস্থাপনার প্রতি গুরুত্ব আরোপ করা হয়েছে। এ ধরনের পদ্ধতিকে সমন্বিত দমন পদ্ধতি (integrated control) বলা হয়। যেহেতু কীটনাশকের ব্যবহার নিশ্চিতরূপে পরিবেশকে দূষিত করে এবং পরিবেশের ভারসাম্য নষ্ট করে, সেহেতু এর ব্যবহার কমিয়ে বিকল্প ব্যবস্থা যত তাড়াতাড়ি গ্রহণ করা যায় ততই মানুষের জন্য মঙ্গলকর।  [মোঃ জিন্নাতুল আলম]

আরও দেখুন সমন্বিত ক্ষতিকর কীটপতঙ্গ ব্যবস্থাপনা; কীটপতঙ্গ