কাউনিয়া উপজেলা

কাউনিয়া উপজেলা (রংপুর জেলা)  আয়তন: ১৪৭.৬ বর্গ কিমি। অবস্থান: ২৫°৪২´ থেকে ২৫°৫০´ উত্তর অক্ষাংশ এবং ৮৯°১৮´ থেকে ৮৯°৩০´ পূর্ব দ্রাঘিমাংশ। সীমানা: উত্তরে গঙ্গাচড়া ও লালমনিরহাট সদর উপজেলা, দক্ষিণে পীরগাছা উপজেলা, পূর্বে লালমনিরহাট সদর ও রাজারহাট উপজেলা, পশ্চিমে রংপুর সদর উপজেলা।

জনসংখ্যা ২১৪৩১৭; পুরুষ ১০৯৫৬৪, মহিলা ১০৪৭৫৩। মুসলিম ১৯৯৮৫১, হিন্দু ১৪৩৭৬, বৌদ্ধ ৪৫ এবং অন্যান্য ৪৫।

জলাশয় তিস্তা ও বুড়াইল নদী উল্লেখযোগ্য।

প্রশাসন কাউনিয়া থানা গঠিত হয় ১৯১৬ সালে এবং থানাকে উপজেলায় রূপান্তর করা হয় ১৯৮৪ সালে।

উপজেলা
পৌরসভা ইউনিয়ন মৌজা গ্রাম জনসংখ্যা ঘনত্ব (প্রতি বর্গ কিমি) শিক্ষার হার (%)
শহর গ্রাম শহর গ্রাম
৮০ ৭৯ ৮৩০৫৪ ১৩১২৬৩ ১৪৬২ ৩৮.৯৭ ৩৫.৬৯
পৌরসভা
আয়তন (বর্গ কিমি) ওয়ার্ড মহল্লা লোকসংখ্যা ঘনত্ব (প্রতি বর্গ কিমি) শিক্ষার হার (%)
১৬.১৩ ৮২ ৬৪৫১৬ ৩৯৯৯ ৩৭.৮২
ইউনিয়ন
ইউনিয়নের নাম ও জিও কোড আয়তন (একর) লোকসংখ্যা শিক্ষার হার (%)
পুরুষ মহিলা
কাউনিয়া বালাপাড়া ২৭ ৭৩৭৪ ১৫৫৮২ ১৫১৫৮ ৪২.৫০
টেপামধুপুর ৪১ ৮১৪৯ ১৫৭৩২ ১৫৪৩৬ ৩৫.৫৪
শহীদবাগ ৬৭ ৩২০৭ ৮২৮৬ ৭৯৪০ ৩৩.৬৫
কুরশা ৪০ ৭৩০৫ ১৭২৬২ ১৬৩৯৫ ৪২.৬০
সারাই ৫৪ ৩২৪২ ১০৫১৩ ৯৮৭০ ৩০.১৯
হারাগাছ ১৩ ৩২০৯ ৯১০৩ ৮৫২৪ ২৬.১৩

সূত্র   আদমশুমারি রিপোর্ট ২০০১, বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো।

প্রাচীন নিদর্শনাদি ও প্রত্নসম্পদ ঐতিহাসিক সাদা মসজিদ, ভায়ারহাট শিব মন্দির, টেপার জমিদার বাড়ি, টেপামধুপুরের ঐতিহাসিক মন্দির, বুড়িরদিঘী, শহীদবাগ ও তিস্তা নদীর উপর নির্মিত রেলওয়ে সেতু।

মুক্তিযুদ্ধের ঘটনাবলি ১৯৭১ সালের ১ এপ্রিল মুক্তিযোদ্ধারা থানার ওসিকে গুলি করে হত্যা করে। ২৮ জুন ২ জন পাকসেনা গ্রামে ঢুকে নারী ধর্ষণের চেষ্টা করলে এলাকাবাসী তাদের হত্যা করে। এরই জের ধরে পাকবাহিনী ৩০ জুন তিস্তা ব্রিজ থেকে পশ্চিম দিকের গ্রামে ঢুকে ব্যাপক অগ্নিসংযোগ ও হত্যাযজ্ঞ চালায়। এতে প্রায় ২০০ নিরীহ লোক নিহত হয়।

ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান মসজিদ ২৩৯, মন্দির ৬৭।

শিক্ষার হার, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড় হার ৩৬.৯৭%; পুরুষ ৪২.১৩%, মহিলা ৩১.৬১%। কলেজ ৮, কারিগরি কলেজ ৩, মাধ্যমিক বিদ্যালয় ৩৮, প্রাথমিক ও স্যাটলাইট স্কুল ১১৩, প্রাথমিক শিক্ষাকেন্দ্র ১১৫, মাদ্রাসা ১৬। উল্লেখযোগ্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠান: কাউনিয়া ডিগ্রি কলেজ (১৯৭২), হারাগাছ ডিগ্রি কলেজ (১৯৭৩), বড়ুয়ারহাট কারিগরি কলেজ (২০০৩), গাজীরহাট ভকেশনাল কলেজ (২০০১), বেইলি ব্রিজ কৃষি ডিপ্লোমা ইন্সটিটিউট (২০০৩), হারাগাছ উচ্চ বিদ্যালয় (১৯২৩), টেপামধুপুর উচ্চ বিদ্যালয় (১৯৩৮), মোফাজ্জল হোসেন উচ্চ বিদ্যালয় (১৯৫৭), দরদী উচ্চ বিদ্যালয় (১৯৬২), ধুমেরপাড়া সিনিয়র মাদ্রাসা (১৯৪৮), আওলিয়া ফাজিল মাদ্রাসা (১৯৫৭)।

পত্র-পত্রিকা  ও সাময়িকী দৈনিক যুগের আলো।

সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠান লাইব্রেরি ৪, ক্লাব ৩৬, সিনেমা হল ২, সাহিত্য সমিতি ১।

জনগোষ্ঠীর আয়ের প্রধান উৎস কৃষি ৫১.০৮%, অকৃষি শ্রমিক ১২.৫২%, শিল্প ২.৮৬%, ব্যবসা ১৩.১৮%, পরিবহণ ও যোগাযোগ ৩.৫০%, চাকরি ৫.৩০%, নির্মাণ ১.১১%, ধমীয় সেবা ০.২৫, রেন্ট অ্যান্ড রেমিটেন্স ০.১৬% এবং অন্যান্য ১০.০৪%।

প্রধান কৃষি ফসল ধান, তামাক, বাদাম, কাউন, আলু, শাকসবজি।

বিলুপ্ত বা বিলুপ্তপ্রায় ফসলাদি পাট, তিল, তিসি।

প্রধান ফল-ফলাদিব আম, কাঁঠাল, কলা, জাম, পেয়ারা।

পানীয়জলের উৎস নলকূপ ৯৩.৪৮%, ট্যাপ ০.২৮%, পুকুর ০.২৬% এবং অন্যান্য ৫.৯৮%।

স্যানিটেশন ব্যবস্থা এ উপজেলায় ২০.৮১% (গ্রামে ১৬.৮৯%  এবং শহরে ২৭.৫৬%) পরিবার স্বাস্থ্যকর এবং ২৪.৬৬% (গ্রামে ২৭.৬৩% এবং শহরে ১৯.৫৬%) পরিবার অস্বাস্থ্যকর ল্যাট্রিন ব্যবহার করে। ৫৪.৫৩% পরিবারের কোনো ল্যাট্রিন সুবিধা নেই।

বিদ্যুৎ ব্যবহার এ উপজেলার সবক’টি ওয়ার্ড ও ইউনিয়ন পল্লিবিদ্যুতায়ন কর্মসূচির আওতাধীন। তবে ২২.৯৭% পরিবারের বিদ্যুৎ ব্যবহারের সুযোগ রয়েছে।

কৃষিভূমির মালিকানা ভূমিমালিক ৭৪.২৩%, ভূমিহীন ২৫.৭৭%। শহরে ৬০.৭৯% এবং গ্রামে ৭৬.৬১% পরিবারের কৃষিজমি রয়েছে।

যোগাযোগ বিশেষত্ব পাকারাস্তা ৪৪.২৫ কিমি, আধা-পাকারাস্তা ১৪.৪৫ কিমি, কাঁচারাস্তা ২০৪ কিমি; রেলপথ ১১ কিমি।

বিলুপ্ত বা বিলুপ্তপ্রায় সনাতন বাহন পালকি, গরুর গাড়ি।

শিল্প ও কলকারখানা চালকল, লেদমেশিন, ইটভাটা, চামড়া প্রক্রিয়াজাতকরণ কারখানা, বিড়ি কারখানা, সাবান তৈরির কারখানা।

কুটিরশিল্প তাঁতশিল্প, লৌহশিল্প, মৃৎশিল্প, তৈল ঘানি, বাঁশের কাজ।

হাটবাজার ও মেলা হাট ১৪। সারাই হাট, শহীদবাগ হাট, বড়য়ার হাট, ভাইয়ার হাট, সিঙ্গার কুড়া হাট ও বুড়ির হাট; কাউনিয়া বাজার, হারাগাছ বাজার ও মীরবাগ বাজার এবং বুড়িরহাটে শিব মন্দিরে বুড়ির মেলা, তিস্তার ধারে অষ্টমী বারুণী স্নণান উপলক্ষে মেলা এবং মহররম উপলক্ষে হারাগাছ, খানসামার, কাউনিয়া ও টেপামধুপুরের মেলা উল্লেখযোগ্য।

প্রধান রপ্তানিদ্রব্য   বিড়ি, তামাক, বাদাম, ধান, আলু, গম।

খনিজ সম্পদ  এ্যালুমিনিয়াম সিলিকেট।

স্বাস্থ্যকেন্দ্র উপজেলা স্বাস্থ্যকমপ্লেক্স ২, ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণকেন্দ্র ৬, দাতব্য চিকিৎসালয় ৩।

এনজিও  ব্র্যাক, প্রশিকা, |আশা, আর্তের আশা।  [আবদুস সাত্তার]

তথ্যসূত্র  আদমশুমারি রিপোর্ট ২০০১, বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো; কাউনিয়া উপজেলার সাংস্কৃতিক সমীক্ষা প্রতিবেদন ২০০৭।