কন্দর্পনারায়ণ রায়
কন্দর্পনারায়ণ রায় বৃহত্তর বরিশাল জেলার অংশবিশেষে অবস্থিত চন্দ্রদ্বীপ বা বাকলার জমিদার। কন্দর্পনারায়ণ ছিলেন বাংলার বিখ্যাত বারো ভূঁইয়াদের অন্যতম। বসু পরিবারের এ রাজকুমার ষোল শতকের শেষভাগে চন্দ্রদ্বীপ শাসন করেন। দনুজমর্দন রায় চন্দ্রদ্বীপ রাজ্য প্রতিষ্ঠা করেন। দনৌজ রায় এর পঞ্চম অধঃস্তন বংশধর ছিলেন কমলা দেবী। কমলা দেবীর পুত্র পরমানন্দ বসু ছিলেন চন্দ্রদ্বীপে বসু পরিবারের প্রথম রাজা। পরমানন্দ কন্দর্পনারায়ণের মাতামহ।
চন্দ্রদ্বীপের রাজাদের মধ্যে কন্দর্পনারায়ণ ছিলেন সর্বাধিক বিখ্যাত। ১৫৮৪ থেকে ১৫৯৮ পর্যন্ত তিনি রাজত্ব করেন এবং তাঁর শৌর্যবীর্য ও শাসন দক্ষতার জন সুখ্যাতি অর্জন করেন। তাঁর প্রধানমন্ত্রী সরাই আচার্য, প্রধান সেনাপতি রঘুনন্দন এবং দেহরক্ষী রামমোহন মাল তাঁকে এ ব্যাপারে যথেষ্ট সহায়তা করেন। ইংরেজ পরিব্রাজক রালফ ফিচ ১৫৮৬ খ্রিস্টাব্দে বাকলা পরিভ্রমণ করেন। তিনি এ রাজ্যের প্রাচুর্যের সুখ্যাতি করেন। তাঁর বর্ণনায়, কন্দর্পনারায়ণ ছিলেন একজন হাসিখুশি প্রাণখোলা প্রকৃতির লোক এবং তিনি বন্দুক চালাতে খুবই আনন্দ পেতেন। এ পরিব্রাজক বাকলাকে বৃহৎ সড়ক, সুদৃশ্য ও সুউচ্চ সৌধমালা এবং ফলফলাদি, চাল, সুতি ও রেশমি বস্ত্রের মজুতসমৃদ্ধ একটি উন্নত রাজ্যরূপে বর্ণনা করেছেন।
তাঁর রাজ্য পশ্চিমে বাগেরহাট, উত্তরে গোপালগঞ্জ এবং পূর্বে হাতিয়া-সন্দ্বীপ পর্যন্ত বিস্তৃত ছিল। মগ ও পর্তুগিজ জলদস্যুগণ তাঁর রাজ্যে সর্বক্ষণ অশান্তি সৃষ্টি করত এবং প্রজাদের অবর্ণনীয় দুঃখকষ্টের কারণ ঘটাত। এ জলদস্যুদের বিতাড়নের উদ্দেশ্যে তিনি রাজা প্রতাপাদিত্য এর সঙ্গে মৈত্রী স্থাপন করেন। প্রথমে তাঁর রাজধানী ছিল কচুয়া। মগ ও পর্তুগিজদের পুনঃপুন আক্রমণে অতিষ্ঠ হয়ে তিনি প্রথমে রাজনগরে, পরে বিশাড়িকাঠিতে এবং অবশেষে ক্ষুদ্রকাঠিতে (বাবুগঞ্জ থানায়) রাজধানী স্থানান্তর করেন।
বারো ভুঁইয়াদের অন্যতম কন্দর্পনারায়ণ মুগলদের বিরুদ্ধে সাহসিকতার সঙ্গে যুদ্ধ করেন। কিন্তু শেষপর্যন্ত তাঁকে ১৫৯৪ খ্রিস্টাব্দে মুগল আধিপত্য স্বীকার করতে হয়। ১৫৯৮ খ্রিস্টাব্দে কন্দর্পনারায়ণের মৃত্যু হয়। [শাহনাজ হোসনে জাহান]