ইউসুফ, মনিরউদ্দীন
ইউসুফ, মনিরউদ্দীন (১৯১৯-১৯৮৭) লেখক, সম্পাদক ও অনুবাদক। ১৯১৯ সালের ১৩ ফেব্রুয়ারি কিশোরগঞ্জ জেলার বৌলাই জমিদার পরিবারে তাঁর জন্ম। পিতা মৌলবি মিসবাহ। তাঁদের পূর্বপুরুষ মুগল শাসকদের বংশধর ছিলেন বলে কথিত হয়। পারিবারিক ভাষা উর্দু হওয়ায় মনিরউদ্দীনের লেখাপড়া শুরু হয় একজন উর্দুভাষী ওস্তাদের নিকট; পরে তিনি স্থানীয় মধ্য ইংরেজি স্কুলে ভর্তি হন। এরপর তিনি কিশোরগঞ্জের রামানন্দ হাইস্কুল ও ময়মনসিংহ জেলা স্কুলে লেখাপড়া করেন। জেলা স্কুল থেকে এন্ট্রান্স (১৯৩৮) ও ঢাকা ইন্টারমিডিয়েট কলেজ থেকে আইএ (১৯৪০) পাস করে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগে ভর্তি হন, কিন্তু ফাইনাল পরীক্ষা না দিয়ে কলকাতা হয়ে দিল্লি এবং পরে চাকরি নিয়ে মুম্বাই চলে যান। নয় মাস পর দেশে ফিরে তিনি কিছুদিন ব্যবসা করেন। ঢাকায় এসে প্রথমে The Daily Observer এবং পরে দৈনিক সংবাদ পত্রিকায় চাকরি নেন। সবশেষে কৃষি উন্নয়ন কর্পোরেশনের জনসংযোগ বিভাগে এ.ডি.সি পদে যোগদান করেন এবং ১৯৭৯ সালে অবসরে যান। এ সংস্থা থেকে প্রকাশিত কৃষি সমাচার পত্রিকাটি তিনিই সম্পাদনা করতেন।
মনিরউদ্দীন কবিতা, উপন্যাস, নাটক, প্রবন্ধ, জীবনী, কিশোরপাঠ্য, অনুবাদ ও আত্মজীবনী মিলিয়ে ২৮ খানা গ্রন্থ রচনা করেন। তাঁর উল্লেখযোগ্য রচনাগুলি হলো: উপন্যাস ঝড়ের রাতের শেষে, পনসের কাঁটা, ওর বয়েস যখন এগারো; নাটক ঈশা খাঁ; প্রবন্ধ রুমীর মসনবী (১৯৬৬), উর্দু সাহিত্যের ইতিহাস (১৯৬৮), বাংলা সাহিত্যে সূফী প্রভাব (১৯৬৯), আমাদের ঐতিহ্য ও সংস্কৃতি (১৯৭৮), কারবালা: একটি সামাজিক ঘূর্ণাবর্ত, সংস্কৃতি চর্চা (১৯৮০), বাংলাদেশের সার্বিক অগ্রগতির লক্ষ্যে একটি প্রস্তাব (১৯৮৪), নব মূল্যায়নে রবীন্দ্রনাথ (১৯৮৯); জীবনী হযরত ফাতেমা ও হযরত আয়েশা; কিশোর সাহিত্য ছোটদের ইসলাম পরিচয় ও মহাকবি ফেরদৌসী; আত্মজীবনী আমার জীবন আমার অভিজ্ঞতা (১৯৯২)।
বাংলা সাহিত্যের পাশাপাশি তিনি উর্দু ও ফারসি সাহিত্য নিয়েও গবেষণা করেন। উর্দু সাহিত্যের দীর্ঘ ইতিহাস রচনা এবং ছয় খন্ডে ফেরদৌসীর কালজয়ী কাব্যগ্রন্থ শাহনামার অনুবাদ (১৯৯১) তাঁর প্রশংসনীয় কীর্তি। তাঁর অন্যান্য অনুবাদকর্ম হলো: ইকবালের কাব্য সঞ্চয়ন (১৯৬০), দীওয়ান-ই-গালিব (১৯৬৪), কালামে রাগিব (১৯৬৬) ইত্যাদি।
তাঁর বেশকিছু অপ্রকাশিত রচনাও আছে। সাহিত্যচর্চা ছাড়াও চলচ্চিত্র শিল্পের প্রতিও মনিরউদ্দীনের আকর্ষণ ছিল। তিনি মধুরাতি নামে একটি ছবি পরিচালনার কাজ শুরু করেছিলেন, কিন্তু শেষ করতে পারেননি।
মনিরউদ্দীন সাহিত্যক্ষেত্রে বিশেষ অবদানের জন্য পাঁচটি পুরস্কার লাভ করেন। সেগুলি হলো: গভর্নর স্বর্ণপদক, হাবিব ব্যাংক সাহিত্য পুরস্কার, বাংলা একাডেমী সাহিত্য পুরস্কার (১৯৭৮), আবুল মনসুর আহমদ সাহিত্য পুরস্কার ও একুশে পদক (১৯৯৩, মরণোত্তর)। ১৯৮৭ সালের ১১ ফেব্রুয়ারি ঢাকায় তাঁর মৃত্যু হয়। [আইয়ুব হোসেন]