লারমা, মানবেন্দ্র নারায়ণ
লারমা, মানবেন্দ্র নারায়ণ (১৯৪১-১৯৮৩) আইনজীবী, রাজনীতিক, জুমিয়া জাতীয়তাবাদের প্রবক্তা ও পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির প্রতিষ্ঠাতা। তিনি ১৯৫৮ সালে রাঙ্গামাটি সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় থেকে প্রবেশিকা এবং চট্টগ্রাম সরকারি কলেজ থেকে ১৯৬৩ সালে বি.এ পাস করেন। ১৯৬৮ সালে কুমিল্লা টিচার্স ট্রেনিং কলেজ থেকে বি.এড এবং ১৯৭০ সালে চট্টগ্রাম আইন কলেজ থেকে এল.এলবি ডিগ্রি লাভ করে তিনি চট্টগ্রামে আইনপেশায় নিয়োজিত হন।
ছাত্রজীবন থেকেই মানবেন্দ্র রাজনৈতিক আন্দোলনের সঙ্গে জড়িত ছিলেন। তিনি ১৯৫৬ সালে জুমিয়া ছাত্র আন্দোলনে অংশগ্রহণ করেন এবং ১৯৬২ সালে পাহাড়ি ছাত্র সম্মেলনে নেতৃত্ব দেন। ১৯৬০ সালে কাপ্তাই হাইড্রোইলেক্ট্রিক প্রজেক্ট বাস্তবায়নের ফলে শত শত পাহাড়ি পরিবার তাদের জমিজমা ও বসতবাড়ি থেকে উৎখাত হয়। লারমা তাদের উপযুক্ত ক্ষতিপূরণ দান ও পুনর্বাসন আন্দোলনে নেতৃত্ব দেন। ১৯৬৩ সালের ১০ ফেব্রুয়ারি পূর্বপাকিস্তান জননিরাপত্তা অর্ডিন্যান্সের অধীনে তাঁকে গ্রেফতার করা হয়। ১৯৬৫ সালের ৮ মার্চ কারাগার থেকে মুক্তি পেয়ে তিনি জুমিয়া সমাজকে রাজনৈতিকভাবে সচেতন করার কাজে আত্মনিয়োগ করেন। তিনি পার্বত্য চট্টগ্রামের ভিন্ন ভাষাভাষী দশটি সম্প্রদায় সমন্বয়ে একটি সমিতি গঠন করেন। মানবেন্দ্র লারমা স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে ১৯৭০ সালে পূর্বপাকিস্তান প্রাদেশিক পরিষদের সদস্য নির্বাচিত হন।
মানবেন্দ্র নারায়ণ লারমা বাঙালি জাতীয়তাবাদের পাশাপাশি জুমিয়া জাতীয়তাবাদের স্বীকৃতির দাবি জানান এবং এ উদ্দেশ্যে ১৯৭২ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি গঠন করেন পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতি। ১৯৭৩ সালে তিনি জনসংহতি সমিতির পক্ষে পার্বত্য চট্টগ্রাম-১ আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে সংসদ-সদস্য নির্বাচিত হন।
নিয়মতান্ত্রিক উপায়ে পাহাড়ি জনগণের অধিকার আদায় সম্ভব না হওয়ায় মানবেন্দ্র জুমিয়া জনগণের স্বতন্ত্র পরিচিতি অক্ষুণ্ণ রাখার লক্ষ্যে সশস্ত্র সংগ্রামের পথ বেছে নেন। ১৯৭৩ সালে জনসংহতি সমিতির পৃষ্ঠপোষকতায় গড়ে ওঠে শান্তিবাহিনী। কিন্তু শেষ পর্যন্ত শান্তিবাহিনীতে অন্তর্দ্বন্দ্ব দেখা দেয় এবং জনসংহতি সমিতির পাশাপাশি জাতীয় গণপরিষদ নামে একটি নতুন দল গঠিত হয়। এ উপদলীয় কোন্দল ক্রমশ বাড়তে থাকে এবং পরিণামে ১৯৮৩ সালের ১০ নভেম্বর লারমা আততায়ীর হাতে নিহত হন। [রোজিনা কাদের]