হাইকোর্ট ভবন, পুরাতন
হাইকোর্ট ভবন, পুরাতন ঔপনিবেশিক আমলে ঢাকায় নির্মিত একটি ভবন। এটি রমনা গ্রীনের প্রান্ত ঘেঁষে সুদৃশ্য কার্জন হলের বিপরীতে কাজী নজরুল ইসলাম অ্যাভিনিউতে অবস্থিত। বঙ্গভঙ্গ-এর (১৯০৫) পর নব প্রতিষ্ঠিত পূর্ববাংলা ও আসাম প্রদেশের গভর্নরের সরকারি বাসভবন হিসেবে জমকালো দ্বিতল ভবনের পরিকল্পনা করা হয়। ভবনটির নির্মাণ কাজ সমাপ্তির পর ভারত সরকারের নিযুক্ত স্থপতি মনে করেন যে, এটি গভর্নর হাউস হিসেবে বেমানান এবং সেকারণে এটি খালি পড়ে থাকে। পরবর্তীকালে এটিকে ঢাকা উচ্চ মাধ্যমিক কলেজ ভবন করা হয় এবং আরও পরে এটিকে পূর্ব পাকিস্তানের হাইকোর্টে রূপান্তর করা হয়। পাশে আর একটি ভবন (যা বর্তমানে বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট ভবন) নির্মাণ করে সেখানে হাইকোর্ট স্থানান্তর করা হয় (১৯৬৭)। তখন থেকে ভবনটিকে সরকারি বিভিন্ন দপ্তরের অফিস হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে।
ভবনটি বিভিন্ন আকারের সারি-বাঁধা কক্ষসমূহসহ বিশাল চতুর্ভুজাকার বেষ্টনীর দ্বারা পরিবেষ্টিত। কক্ষগুলি সামঞ্জস্যরূপে স্থাপিত চারটি অংশে বিন্যস্ত। সারিবদ্ধ ভবনটির অঙ্গনে প্রবেশের জন্য দক্ষিণ দিকে রয়েছে তিন খিলানবিশিষ্ট একটি স্মারক প্রবেশদ্বার।
ঢালুকৃত তিনটি স্তরে উত্থিত এর সম্মুখভাগ কোরিনথিয়ান (Corinthian) স্তম্ভের উপর স্থাপিত। ত্রিভুজাকৃতির ঝুলন্ত ছাদের নিচে স্থাপিত প্রবেশপথসহ ভবনটিতে ইউরোপীয় রেনেসাঁ রীতি লক্ষ্য করা যায়। একটি বৃত্তের উপর সরু থাম এবং সংযুক্ত স্তম্ভের উপর স্থাপিত একটি শোভন গম্বুজ ভবনটির শোভা বৃদ্ধি করেছে।
সাদা মার্বেলে শোভিত একটি প্রশস্ত সিড়ি বর্গাকার প্রবেশকক্ষ থেকে বারান্দার পেছন দিক দিয়ে উপর তলায় উঠে গেছে। উত্তর অংশের মধ্যবর্তী স্থানে নির্মিত অন্য সিঁড়িটিও চতুর্ভুজের অভ্যন্তরে দুই কোণায় অবস্থিত দুটি সম্পূরক প্যাঁচানো সিঁড়ির পাশ দিয়ে উপর তলায় উঠে গেছে। আয়তাকার ভবনটির চারটি বাহুতে দুই তলায় বিভিন্ন আকারের পঞ্চাশটিরও অধিক কক্ষ রয়েছে। এগুলির মধ্যে রয়েছে বৈঠকখানা, খাবার ঘর, শয়ন কক্ষ, ড্রেসিং ও প্রসাধন কক্ষ, বাতিঘর, গুদামঘর, ভাঁড়ার ঘর ইত্যাদি। প্রত্যেক পার্শ্বকাঠামোর কেন্দ্রে রয়েছে একটি বৃত্তাকার বর্ধিত অংশ। পূর্ব দিকের পার্শ্বকাঠামোতে বারান্দার সম্মুখে আছে একটি নাচঘর (১৮.৩০ মি ১৬.৭৬ মি)। পূর্বদিকের নাচঘর ব্যতীত সমগ্র নিচ তলার মেঝে সাদা মার্বেল পাথরে শোভিত। নাচঘরের মেঝেতে বসানো হয়েছিল মসৃণ সেগুন কাঠ। [নাজিমউদ্দীন আহমেদ]
Back to: হাইকোর্ট