সেন, ক্ষিতিমোহন
সেন, ক্ষিতিমোহন (১৮৮০-১৯৬০) শিক্ষাবিদ ও লেখক। ১৮৮০ সালের ২ ডিসেম্বর কাশীতে তাঁর জন্ম, কিন্তু তাঁদের আদি নিবাস ছিল ঢাকার বিক্রমপুরে। তাঁর পিতা ভুবনমোহন সেন পেশায় ছিলেন একজন চিকিৎসক। নোবেল পুরস্কার বিজয়ী অমর্ত্য সেন তাঁর দৌহিত্র।
ক্ষিতিমোহন কাশীর কুইনস কলেজ থেকে সংস্কৃতে এমএ (১৯০২) পাস করে ‘শাস্ত্রী’ উপাধি লাভ করেন। পরে তিনি চম্বারাজ এস্টেটের শিক্ষাসচিব হিসেবে পেশাগত জীবন শুরু করেন (১৯০৭)। পরে তিনি রবীন্দ্রনাথের আহবানে শান্তিনিকেতন ব্রহ্মচর্যাশ্রমের অধ্যক্ষ পদে যোগদান করেন (১৯০৮)। তিনি একাধিকবার রবীন্দ্রনাথের সফরসঙ্গী হয়ে ভারতের বিভিন্ন স্থান ও চীনদেশ ভ্রমণ করেন। অধ্যাপনা ছাড়াও ক্ষিতিমোহন কিছুকাল বিশ্বভারতীর অস্থায়ী উপাচার্যের (১৯৫৩-১৯৫৪) দায়িত্ব পালন করেন।
ক্ষিতিমোহন সংস্কৃত, বাংলা, হিন্দি, ইংরেজি, গুজরাতি, রাজস্থানি, আরবি ও ফারসি ভাষায় পারদর্শী ছিলেন। মধ্যযুগের সাধু-সন্তদের এবং বাংলার বাউলদের সম্পর্কে তিনি ব্যাপক অনুসন্ধান, গবেষণা ও গ্রন্থাদি রচনা করেন। বেদ, উপনিষদ, তন্ত্র ও স্মৃতিশাস্ত্রে ক্ষিতিমোহনের পান্ডিত্য ছিল বিস্ময়কর। সঙ্গীতশাস্ত্র এবং আয়ুর্বেদশাস্ত্রেও তাঁর ভাল দখল ছিল। ১৯৪৬ সালে তিনি কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে লীলা বক্তৃতা দেন।
ক্ষিতিমোহন বহু গ্রন্থ রচনা করেছেন। সেগুলির মধ্যে কবীর (১৯১১), ভারতীয় মধ্যযুগের সাধনার ধারা (১৯৩০), ভারতের সংস্কৃতি (১৯৪৩), বাংলার সাধনা (১৯৪৫), যুগগুরু রামমোহন (১৯৪৫), জাতিভেদ (১৯৪৬), বাংলার বাউল (১৯৪৭), হিন্দু সংস্কৃতির স্বরূপ (১৯৪৭), ভারতের হিন্দু-মুসলমান যুক্ত সাধনা (১৯৪৯), প্রাচীন ভারতে নারী (১৯৫০), চিন্ময় বঙ্গ (১৯৫৭), রবীন্দ্র-প্রসঙ্গ (১৯৬১), Hinduism (১৯৬৩), Medieval Mysticism of India (১৯৩৬) প্রভৃতি তাঁর প্রধান রচনা। তিনি হিন্দি ও গুজরাতি ভাষায়ও গ্রন্থ রচনা করেছেন।
ক্ষিতিমোহন বিশ্বভারতী থেকে ‘রবীন্দ্র-স্মৃতি স্বর্ণপদক’ (১৯৪২) ও প্রথম ‘দেশিকোত্তম’ (১৯৫২), ওয়ার্ধার হিন্দি ভাষা প্রচার সমিতি থেকে ‘মহাত্মা গান্ধী পুরস্কার’ (১৯৫৩), প্রয়াগের হিন্দি সাহিত্য সম্মেলন থেকে ‘মুরারকা পুরস্কার’ (১৯৫৩) এবং কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ‘সরোজিনী বসু স্বর্ণপদক’ (১৯৫৪) লাভ করেন। ১৯৬০ সালের ১২ মার্চ তাঁর মৃত্যু হয়।
[মানস মজুমদার]