শাহ নিয়ামতউল্লাহ (রঃ)১
'শাহ নিয়ামতউল্লাহ .রঃ') সতেরো শতকে বাংলার কাদেরিয়া গোষ্ঠীর একজন সুফি। তাঁর প্রকৃত নাম ছিল সৈয়দ জামালুদ্দীন মুহম্মদ। তাঁর পিতা সৈয়দ আতাউল্লাহ ছিলেন অত্যন্ত ধার্মিক ব্যক্তি। তাঁর পিতামহ সৈয়দ মোশাররফ হোসেন আকবরের রাজত্বকালে পারস্যের হানসি থেকে ভারতে এসে কার্নালে বসতি স্থাপন করেন। এখানেই শাহ নিয়ামতউল্লাহর জন্ম। তাঁর সঠিক জন্ম তারিখ জানা যায় না। মওলানা ওবায়দুল হক তাঁর বাংলাদেশের পীর আওলিয়াগণ নামক গ্রন্থে তাঁর জন্ম ১৫৬৫ থেকে ১৫৭০ খ্রিস্টাব্দের মধ্যে বলে অনুমান করেছেন। কর্মজীবনের প্রারম্ভিক পর্যায়ে তিনি মুগল সেনাবাহিনীতে যোগ দেন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত আধ্যাত্মিক সাধনায় নিজেকে পরিপূর্ণভাবে উৎসর্গ করার লক্ষ্যে তিনি চাকরি ত্যাগ করেন এবং দরবেশ মুহম্মদ শাহের অনুসারী হওয়ার জন্য হায়দ্রাবাদে যান। তিনি প্রায় ১৬ বছর ধরে নির্জনে ধ্যান করেন, ব্যাপকভাবে পরিভ্রমণ করেন এবং হজ্জব্রত পালন করেন। ভারতে ফিরে তিনি রাজমহলে বসতি স্থাপন করেন। বাংলার শাসনকর্তা শাহজাদা শাহ সুজা তাঁকে অত্যন্ত সম্মান প্রদর্শন করেন। অতঃপর দরবেশ ছোট সোনা মসজিদের আধা-মাইল উত্তর-পশ্চিমে বন্য প্রাণী অধ্যুষিত ফিরুজপুর চলে যান। সেখানে একটি উঁচু ভূমিতে তিনি তাঁর বাসস্থান গড়ে তোলেন।
শাহ নিয়ামতউল্লাহ (রঃ) সাধারণভাবে জীবন যাপন করতেন। তিনি সন্ন্যাসীর ন্যায় ভ্রমণ করতেন এবং তাঁর সাধনা ও জ্ঞান সম্পর্কে জনগণের তেমন ধারণা ছিল না। দরবারী জীবনের প্রতি তাঁর কোন আকর্ষণ ছিল না। দরবেশের বিশ্বস্ত মুরীদ (অনুসারী) শাহ সুজা তাঁর মুর্শেদের (গুরু) জন্য ফিরুজপুরে খানকাহ-র নিকটে তাহ-খানাহ (Hot Weather Building) নির্মাণ করেন। সম্রাট শাহজাহান দরবেশের জন্য মদদ-ই-মাস হিসেবে চারশ বিঘা জমি প্রদান করে একটি ফরমান জারি করেন, যার দ্বারা তিনি একটি মসজিদ এবং একটি খানকাহ পরিচালনা করতেন। ১০৭৬ হিজরি/১৬৬৫ খ্রিস্টাব্দে সম্রাট আওরঙ্গজেব আরেকটি ফরমান জারি করে জান্নাতাবাদ সরকারের দারসারাক পরগনা থেকে তাঁকে পাঁচ হাজার রুপি অনুদান প্রদান করেন। ১০৭৭ হিজরিতে/১৬৬৬ খ্রিস্টাব্দে তিনি মারা যান।
ফারসি ভাষায় নিয়মাতউল্লাহকে ‘বাহার-ই-উলুম’ (বিদ্যার সাগর) বলা হতো। তিনি পবিত্র কুরআনের একটি ফারসি সংস্করণ তৈরি করে এর নামকরণ করেছিলেন তাফসির-ই-জাহাঙ্গীরী। তিনি একজন খ্যাতিমান কবিও ছিলেন। [মোশারফ হোসেন ভূঁইয়া]