বিশ্বনাথ উপজেলা
বিশ্বনাথ উপজেলা (সিলেট জেলা) আয়তন: ২১৪.৫০ বর্গ কিমি। অবস্থান: ২৪°৪৪´ থেকে ২৪°৫৬´ উত্তর অক্ষাংশ এবং ৯১°৩৯´ থেকে ৯১°৫০´ পূর্ব দ্রাঘিমাংশ। সীমানা: উত্তরে সিলেট সদর ও ছাতক উপজেলা, দক্ষিণে বালাগঞ্জ, পূর্বে দক্ষিণ সুরমা উপজেলা, পশ্চিমে ছাতক ও জগন্নাথপুর উপজেলা।
জনসংখ্যা ১৮৯৭৭৫; পুরুষ ৯৬৭৪১, মহিলা ৯৩০৩৪। মুসলিম ১৮০৯৬১, হিন্দু ৮৭৩১, বৌদ্ধ ৫, খ্রিস্টান ১৪ এবং অন্যান্য ৬৪। এ উপজেলায় ৩১ জন আদিবাসীর বসবাস রয়েছে।
জলাশয় সুরমা নদী এবং কোনাউড়া, নলডুবি ও চাউলবুনি বিল উল্লেখযোগ্য।
প্রশাসন বিশ্বনাথ থানা গঠিত হয় ১৯২২ সালে এবং থানাকে উপজেলায় রূপান্তর করা হয় ১৯৮৩ সালে।
উপজেলা | ||||||||
পৌরসভা | ইউনিয়ন | মৌজা | গ্রাম | জনসংখ্যা | ঘনত্ব(প্রতি বর্গ কিমি) | শিক্ষার হার (%) | ||
শহর | গ্রাম | শহর | গ্রাম | |||||
- | ৮ | ১১৮ | ৪৪৮ | ১৪০৪২ | ১৭৫৭৩৩ | ৮৮৪ | ৪৫.৬২ | ৩৯.৪৭ |
উপজেলা শহর | ||||
আয়তন (বর্গ কিমি) | মৌজা | লোকসংখ্যা | ঘনত্ব (প্রতি বর্গ কিমি) | শিক্ষার হার (%) |
১৩.০৬ | ৪ | ১৪০৪২ | ৯৭৯ | ৪৫.৬২ |
ইউনিয়ন | ||||
ইউনিয়নের নাম ও জিও কোড | আয়তন (একর) | লোকসংখ্যা | শিক্ষার হার (%) | |
পুরুষ | মহিলা | |||
অলংকারী ১০ | ৬৪০৬ | ১২৩৬৭ | ১২৫৪৭ | ৪৩.৭২ |
বিশ্বনাথ ২১ | ৮২৩১ | ১৪৬৬১ | ১৩৪৫৪ | ৪৮.২১ |
দৌলতপুর ৩১ | ৮৩৬৬ | ২১৭৪১ | ১২৩৯৩ | ৩৮.০০ |
দেওকলস ৪২ | ৫৭৭৮ | ৮৩৫০ | ৭৮৯৪ | ৪০.০৭ |
দশঘর ৫২ | ৫০২২ | ৯০৫৫ | ৮৪৭৩ | ৩৮.৯৮ |
খাজাঞ্চিগাঁও ৬৩ | ৬৭৫৪ | ১৩৪১৩ | ১৩১৭৬ | ৪০.৭১ |
লামাকাজী ৭৩ | ৬১৪৬ | ১১৯৪২ | ১১৪৯৭ | ৩৫.৮১ |
রামপাশা ৮৪ | ৫৯০৪ | ১৪২১২ | ১৩৬০০ | ৩২.৭৫ |
সূত্র আদমশুমারি রিপোর্ট ২০০১, বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো।
প্রাচীন নিদর্শনাদি ও প্রত্নসম্পদ সিতুলী দেবীর মন্দির, হাসনরাজার বাড়ি, গৌড় গোবিন্দের সাতপাড়ি দিঘি ও জাহাজের মঞ্জিল।
মুক্তিযুদ্ধের ঘটনাবলি ১৯৭১ সালে পাকবাহিনী এ উপজেলায় ব্যাপক গণহত্যা, লুটপাট ও অগ্নিসংযোগ করে। পাকবাহিনী নারায়ণ সেন, জিতেন্দ্র দাশ, ব্যোমকেশ চৌধুরী, বসন্ত কুমার দাস ও ধীরেন্দ্র কুমার দাস সহ অনেক নিরীহ লোককে নির্মমভাবে হত্যা করে।
ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান মসজিদ ৩৪৬, মন্দির ১১, মাযার ১।
শিক্ষার হার, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড় হার ৩৯.৯৪%; পুরুষ ৪৩.৪৯%, মহিলা ৩৬.৩১%। কলেজ ৩, মাধ্যমিক বিদ্যালয় ২৮, প্রাথমিক বিদ্যালয় ১১১, কিন্ডার গার্ডেন ২৩, মাদ্রাসা ২০। উল্লেখযোগ্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠান: রামসুন্দর উচ্চ বিদ্যালয় (১৯০৯), চান্দভরাং উচ্চ বিদ্যালয় (১৯১৫), দশঘর এন ইউ উচ্চ বিদ্যালয় (১৯৬৭), বিশ্বনাথ আলীয়া মাদ্রাসা (১৯৬০), সৎপুর দারুল হাদীস আলীয়া মাদ্রাসা (১৯৪৮)।
পত্র-পত্রিকা ও সাময়িকী সাপ্তাহিক: বিশ্বনাথ; মাসিক: উদ্ভাস, বিশ্বনাথ ডাইজেস্ট; ত্রৈমাসিক: প্রগতি।
সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠান লাইব্রেরি ১, ক্লাব ১৫, খেলার মাঠ ৫।
দর্শনীয় স্থান দশঘরের শ্রী বৈষ্ণবরায়ের সিদ্ধ বকুলতলা, শাহ কালুর মাযার, হাসন রাজার বাড়ি।
জনগোষ্ঠীর আয়ের প্রধান উৎস কৃষি ৪৩.৮৫%, অকৃষি শ্রমিক ৪.২৮%, শিল্প ০.৬৩%, ব্যবসা ১৩.৩৭%, পরিবহণ ও যোগাযোগ ২.১১%, চাকরি ৪.১৬%, নির্মাণ ১.৬৪%, ধর্মীয় সেবা ০.৩৬%, রেন্ট অ্যান্ড রেমিটেন্স ১৫.৮৫% এবং অন্যান্য ১৩.৭৫%।
কৃষিভূমির মালিকানা ভূমিমালিক ৪৪.৭৯%, ভূমিহীন ৫৫.২১%। শহরে ৪৪.২৪% এবং গ্রামে ৪৪.৮৪% পরিবারের কৃষিজমি রয়েছে।
প্রধান কৃষি ফসল ধান, গম, আলু, আখ, পেঁয়াজ, আদা, ছোলা, শাকসবজি।
বিলুপ্ত বা বিলুপ্তপ্রায় ফসলাদি তামাক, পাট, মাসকলাই।
প্রধান ফল-ফলাদিব আম, কাঁঠাল, লিচু, জাম, আনারস, সুপারি।
মৎস্য, গবাদিপশু ও হাঁস-মুরগির খামার মৎস্য ৩০, গবাদিপশু ২২, হাঁস-মুরগি ৩৮।
যোগাযোগ বিশেষত্ব পাকারাস্তা ২১ কিমি, কাঁচারাস্তা ৪২২ কিমি; রেলপথ ১৪ কিমি। রেলস্টেশন ২।
বিলুপ্ত বা বিলুপ্তপ্রায় সনাতন বাহন পাল্কি, গরুর গাড়ি, ঘোড়ার গাড়ি।
কুটিরশিল্প স্বর্ণশিল্প, লৌহশিল্প, মৃৎশিল্প, শীতল পাটি, সেলাইয়ের কাজ, বাঁশের কাজ, বেতের কাজ।
হাটবাজার ও মেলা হাটবাজার ৩৮, মেলা ৬। রামপাশা বাজার, বিশ্বনাথ বাজার ও লামাকাজী বাজার উল্লেখযোগ্য।
প্রধান রপ্তানিদ্রব্য ধান, মাছ, শাকসবজি।
বিদ্যুৎ ব্যবহার এ উপজেলার সবক’টি ইউনিয়ন পল্লিবিদ্যুতায়ন কর্মসূচির আওতাধীন। তবে ৩৫.৩১% পরিবারের বিদ্যুৎ ব্যবহারের সুযোগ রয়েছে।
পানীয়জলের উৎস নলকূপ ৬৫.৪৭%, ট্যাপ ১.৬১%, পুকুর ২৬.৯২% এবং অন্যান্য ৬%।
স্যানিটেশন ব্যবস্থা এ উপজেলার ২৮.৫৫% (শহরে ৪৫.৫৭% এবং গ্রামে ২৭.৬৪%) পরিবার স্বাস্থ্যকর এবং ৬২.৩৬% (শহরে ৩৭.৬৭% এবং গ্রামে ৬৩.৬৮%) পরিবার অস্বাস্থ্যকর ল্যাট্রিন ব্যবহার করে। তবে ৯.০৯% পরিবারের কোনো ল্যাট্রিন সুবিধা নেই।
স্বাস্থ্যকেন্দ্র উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ১, পরিবার পরিকল্পনা কেন্দ্র ৮, উপস্বাস্থ্য কেন্দ্র ৩।
এনজিও আশা, ব্র্যাক, ভার্ড। [জয়ন্ত সিংহ রায়]
তথ্যসূত্র আদমশুমারি রিপোর্ট ২০০১, বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো; বিশ্বনাথ উপজেলা সাংস্কৃতিক সমীক্ষা প্রতিবেদন ২০০৭।