কাহার

NasirkhanBot (আলোচনা | অবদান) কর্তৃক ১৯:৩৮, ৪ মে ২০১৪ তারিখে সংশোধিত সংস্করণ (Added Ennglish article link)
পালকি বাহনরত কাহার

কাহার পালকি বাহক। এ সম্প্রদায়ের লোকেরা সাধারণত পালকি বহন করলেও এদের কৃষিকাজ, মাছ ধরা ও ছোটখাটো ব্যবসা-বাণিজ্য ইত্যাদি পেশাও গ্রহণ করতে দেখা যায়। প্রথাগতভাবে বিভিন্ন সাজে সজ্জিত পালকির দু পার্শ্বের প্রতিটিতে দুটো প্রান্ত থাকে। বর্ধিত প্রান্ত কাঁধে নিয়ে দু, চার, ছয়, আট, বারো অথবা ষোল জন কাহার পালকি বহন করে থাকে। বড়জোর দুজন লোক একত্রে পালকির ভিতর বসতে পারে। অবশ্য যাত্রীর সংখ্যা বা পালকির আকৃতি অনুযায়ী কাহারের সংখ্যা নির্ধারিত না হয়ে আরোহীর মর্যাদা ও চলার কাঙ্ক্ষিত গতির ওপরই পালকিবাহী কাহারের সংখ্যা নির্ভর করে। যাযাবর সম্প্রদায়ের মতো কাহারগণ বাদক দলসহ দূর-দূরান্তে চলাচল করে। কখনও তাদের বর ও কনের সহগামী, আবার কোনো কোনো সময়ে তাদের গুরুত্বপূর্ণ কোনো ব্যক্তির সফরসঙ্গী হিসেবে গণ্য করা হয়। অতীতকালে কনের বাড়ি থেকে বরের বাড়ি অথবা বরের বাড়ি থেকে কনের বাড়ি যাতায়াতের জন্য কাহারদের প্রয়োজনীয়তা ছিল অনস্বীকার্য। বর বা কনের পালকি বহনকারী কাহারদের উচ্চহারে পারিশ্রমিক প্রদান করা হতো।  জমিদার এবং ধনবান ভূম্যধিকারীরাও বিশেষভাবে সুসজ্জিত পালকিতে চড়ে ভ্রমণে যেতেন।

হিন্দু ধর্মের একটি তত্ত্বমতে, কাহারদের উৎপত্তি হয়েছে নিম্নবর্ণের এক হিন্দু সম্প্রদায় থেকে এবং এ শ্রেণি  ব্রাহ্মণ পিতা ও  চন্ডাল মাতার বংশোদ্ভূত এক মিশ্রবর্ণের প্রতিনিধিত্বকারী। কাহারগণ অবশ্য নিজেদের মগধের রাজা ‘জরাসন্ধের’ বংশোদ্ভূত বলে দাবি করে। একই সামাজিক মর্যাদার অন্যান্য বর্ণের অনুসৃত ধর্মের মতোই কাহারদের ধর্ম। তাদের অধিকাংশই  শিব বা শক্তির পূজারী এবং তাদের মধ্যে বৈষ্ণবদের সংখ্যা ন্যূন। সামাজিক বিচারে কাহারগণ কুর্মি ও গোয়ালা বর্ণের সমকক্ষ।

কাহারদের বেহারা নামেও অভিহিত করা হয়। অনেকের মতে, ইংরেজি ‘বিয়ারার’ শব্দ থেকে বেহারা নামের উদ্ভব হয়েছে। হিন্দু বেহারাদের মাহারা নামে ডাকা হয় এবং মুসলিম বেহারাদের ডাকা হয় দুলিওয়ালা বা সওয়ারিওয়ালা নামে। পালকি বর্তমানে একেবারেই অপ্রচলিত বাহন এবং কাহার-শ্রম এখন বিলুপ্তপ্রায়। দুলিওয়ালারা কৃষক, গৃহভৃত্য এবং দিনমজুরে রূপান্তরিত হয়েছে। তবে বাংলাদেশের কোথাও কোথাও এখনও কাহারদের দেখা যায়। কোনো কোনো ধনবান গ্রামবাসী ঐতিহ্য বা মর্যাদার প্রতীক হিসেবে এখনও পালকি সংরক্ষণ করে থাকেন এবং কাহার হিসেবে কাজ করার জন্য শ্রমিক ভাড়া করে থাকেন।

[এস.এম মাহফুজুর রহমান]