কত্রাবো

NasirkhanBot (আলোচনা | অবদান) কর্তৃক ১৯:১৭, ৪ মে ২০১৪ তারিখে সংশোধিত সংস্করণ (Added Ennglish article link)

কত্রাবো  মধ্যযুগীয় বাংলার একটি পরগণা ও নগরের নাম। ১৫৮৫ খ্রিস্টাব্দের পূর্বেই এ নগর প্রতিষ্ঠিত হয় যখন কত্রাবো ছিল ঈসা খান এর সুরক্ষিত বাসস্থান ও রাজধানী। বাংলার বারো ভূঁইয়াদের বিরুদ্ধে মুগলদের যুদ্ধের সময় মুগল সুবাহদার শাহবাজ খান এ নগর ধ্বংস করেন। পরবর্তী সময়ে আফগান নেতা মাসুম খান কাবুলি নগরের অংশ বিশেষ পুনঃনির্মাণ করেন। ১৫৯৮ খ্রিস্টাব্দে মাসুম খান কাবুলির মৃত্যু পর্যন্ত কত্রাবো তাঁর দখলে ছিল। মুগল সুবাহদার ইসলাম খান এর শাসনামলে ঈসা খানের পুত্র  মুসা খান তাঁর সেনাধ্যক্ষ দাউদ খানকে কত্রাবোতে মোতায়েন করেন। ১৬১১ খ্রিস্টাব্দের ১২ মার্চ মুগল সেনাপতি মির্জা নাথান, দাউদ খানকে পরাজিত ও কত্রাবো দুর্গ ধ্বংস করেন।

কত্রাবো দুর্গের ধ্বংসাবশেষ শীতলক্ষ্যা নদীর পূর্ব তীরে বাহাদুর খান বিলের নিকটে মাসুমাবাদ গ্রামে (নারায়ণগঞ্জ জেলার রূপগঞ্জ উপজেলাধীন) আজও পরিদৃষ্ট হয়। এ নগরের ধ্বংসাবশেষ বলতে এখন রয়েছে দেওয়ান বাড়ির অংশ বিশেষ, এ বাড়ির প্রাঙ্গণে মিঠা পুষ্করিণী নামে একটি পুকুর, দেওয়ান বাড়ির উত্তর-পূর্ব কোণে অবস্থিত দেওয়ান দিঘি এবং এ দিঘির উত্তর পাড়ে একটি ধ্বংসপ্রাপ্ত সমাধিসৌধ।

দেওয়ান বাড়ির (প্রায় ৪৩৪ মি × ৩৩৫ মি) দক্ষিণ-পূর্ব ও পশ্চিম দিক ০.৬৭ মি পুরু ইটের দেয়াল দ্বারা পরিবেষ্টিত। এ বেষ্টন-প্রাকারের চারকোণে অষ্টকোণী ক্ষুদ্র বুরুজের ধ্বংসাবশেষ এখনও দেখা যায়। বর্তমানে ধ্বংসপ্রায় স্তম্ভাবলম্বিত তোরণদ্বারটি পূর্ব দেয়ালে অবস্থিত। তোরণদ্বার দিয়ে প্রবেশ করলেই চোখে পড়বে এক খন্ড আয়তাকার উঁচুভূমি যা সম্ভবত আবাসিক স্থান ছিল। তোরণের দক্ষিণ পাশে দেয়াল সংলগ্ন অপর একটি উঁচুভূমি রয়েছে। এখানে সম্ভবত একটি বুরুজ ছিল। দক্ষিণ ও পশ্চিম দিকের চৌহদ্দি দেয়ালের বাইরে রয়েছে প্রায় ৬৮ মিটার চওড়া জলাভূমি। দেওয়ান বাড়ির উত্তর দিকে এখন কোনো দেয়াল নেই। তবে ধ্বংসপ্রাপ্ত কিছু স্তম্ভ এর উত্তর দিকের সীমানা নির্দেশ করে। এখনও যে বর্গাকার স্তম্ভটি দাঁড়িয়ে আছে সেটির ব্যাস ২.৩৩ মিটার ও উচ্চতা ৩.৩৩ মিটার। স্তম্ভের ভেতরে একটি পোড়ামাটির নল খাড়াভাবে বসানো আছে। দেওয়ান বাড়ি প্রাঙ্গণের অভ্যন্তরভাগে দক্ষিণ দিকে রয়েছে ৫৩.৩৪ মি. × ৫০ মি. পরিমাপের ইট দ্বারা আচ্ছাদিত সমতল একটি মেঝে।

ভূমি নকশা, কত্রাবো


মিঠা পুষ্করিণী নামে পরিচিত জলাশয়টি মোটামুটিভাবে বর্গাকার ও প্রায় ৭ মিটার গভীর। জলাশয়ের চারদিক ইটের দেয়াল দ্বারা বাঁধাইকৃত। এ জলাশয় বাসিন্দাদের খাবার পানি সরবরাহের কাজে ব্যবহূত হতো। স্থানীয় জনশ্রুতি অনুযায়ী এ পুকুরের উত্তর পাড়ে এক সময় একটি তিন গম্বুজ বিশিষ্ট মসজিদ ছিল। পুকুরের পশ্চিম তীরে ইটের একটি দেয়াল রয়েছে। বর্তমানে এটি গাছপালা ও ঝোপঝাড় দ্বারা আবৃত।

দেওয়ান বাড়ির উত্তর দিকস্থ চৌহদ্দির বাইরে কাজী বাড়ি পর্যন্ত এলাকায় ইট নির্মিত দেয়ালের ধ্বংসাবশেষ পরিলক্ষিত হয়।  এলাকাটি সম্ভবত দেওয়ানের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের আবাসস্থল ছিল। এর পূর্ব দিকে এবং দেওয়ান বাড়ির উত্তরপূর্ব চৌহদ্দির বাইরে একটি বৃহৎ পুকুর দেখা যায়। এ পুকুরের মধ্যখানে রয়েছে সুদৃশ্য ছবির মতো একটি দ্বীপ। স্থানীয় বাসিন্দাদের নিকট এটি দেওয়ান দিঘি (৪৮০ মি. × ২৪০ মি.) নামে পরিচিত। বর্গাকার দ্বীপটি ১৯৭২ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত পুকুরের পশ্চিম পাড়ের সঙ্গে একটি পথ দ্বারা সংযুক্ত ছিল।

দেওয়ান দিঘির পশ্চিম তীরে রয়েছে একটি উঁচু ঢিবি (১৯ মি × ১৬ মি)। এর উপর বিচ্ছিন্নভাবে ছড়িয়ে আছে অসংখ্য ইটের টুকরা। কাছেই রয়েছে পাথরে বাঁধানো ঘাটের সারিবদ্ধ সিঁড়ি। এ সিঁড়ির ধাপ পুকুরের নিচ পর্যন্ত নেমে গেছে। এটি রাজঘাট নামে পরিচিত। সম্ভবত এ ঢিবিতে একটি স্নানাগার ছিল। দেওয়ান দিঘির উত্তর পাড়ে রয়েছে একটি প্রাচীরবেষ্টিত গোরস্থান। এ গোরস্থানের দক্ষিণ অংশের মধ্যবর্তী স্থানে তোরণ-দ্বারসহ একটি ধ্বংসপ্রাপ্ত সমাধিসৌধ রয়েছে। এখানে কে সমাহিত আছেন তা অবশ্য জানা যায় না।  [শাহনাজ হুসনে জাহান]