একবীজপত্রী উদ্ভিদ
একবীজপত্রী উদ্ভিদ (Monocot Plant) একক বীজপত্রধর সপুষ্পক উদ্ভিদ। গুচ্ছমূল এবং পাতায় সমান্তরাল শিরাবিন্যাস (কিছু ব্যতিক্রম ছাড়া) দেখে মাঠপর্যায়ে একবীজপত্রী উদ্ভিদ সহজেই শনাক্ত করা যায়। জাতিবিচারে একবীজপত্রীরা অত্যন্ত আদিম রেনেলীয় (Ranalian) বংশধারা থেকে উদ্ভূত বলে মনে করা হয় এবং তদনুসারে এ বর্গ দ্বিবীজপত্রীর তুলনায় উন্নত।
অধিকাংশ একবীজপত্রী উদ্ভিদ গুল্মজাতীয় ওষুধি, ব্যতিক্রম Arecaceae গোত্র, যেখানে আছে বৃক্ষসম কিছু প্রজাতি (তাল, রয়েল পাম, নারিকেল, খেজুর ইত্যাদি), আর এগুলি সাধারণত শাখাবিহীন, অগ্রভাগের পাতাগুলি গুচ্ছবদ্ধ যা দ্বিবীজপত্রীতে থাকে না।
একবীজপত্রীদের ভাসকুলার বান্ডল আবদ্ধ ও আদিকলায় ছড়ানো। একবীজপত্রীরা Liliopsida শ্রেণির অন্তর্ভুক্ত। এ শ্রেণি পাঁচটি উপশ্রেণী ও ৬৫টি গোত্রে বিভক্ত। এদের আদিমতম গোত্র হলো Alismataceae, Butomaceae ইত্যাদি এবং সবচেয়ে উন্নত গোত্র Orchidaceae। এটি একবীজপত্রীর বৃহত্তম গোত্র, প্রজাতি সংখ্যা ১৫,০০০-১৮,০০০ (একবীজপত্রীর মোট প্রজাতি সংখ্যা আনুমানিক ৫৫,০০০)। একবীজপত্রীর সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ Poaceae গোত্রে রয়েছে ধান, গম, ভুট্টা, জোয়ার, বার্লি, আখ ও অধিকাংশ পশুখাদ্য। নারিকেল, খেজুর ও কলা এ বর্গের অনেকগুলি মূল্যবান ফলের অন্যতম।
ডেভিড প্রেইন (Bengal Plants, ১৯০৩) বর্তমান বাংলাদেশের ভূখন্ডে প্রায় ৫৫৭ প্রজাতির একবীজপত্রী শনাক্ত করেন। আরও প্রজাতির সন্ধান পাওয়ায় এ সংখ্যা এখন বেড়েছে। একবীজপত্রী উদ্ভিদেই আছে বৃহত্তম মঞ্জরি (Corypha umbraculifera, তাতে ফুলের সংখ্যা প্রায় ১০ লক্ষ), বৃহত্তম বীজ (Lodoicea maldivica) ও বৃহত্তম পাতা (Raphia vinifera), আর এগুলি সবই Arecaceae (Palmae) গোত্রে অন্তর্ভুক্ত। একবীজপত্রী Arecaceae গোত্রভুক্ত বেত (Calamus) ২০০ মিটার পর্যন্ত লম্বা হতে পারে, তাই এটি পৃথিবীর দীর্ঘতম কান্ড।
[মোঃ আবুল হাসান]