জীবজসার
জীবজসার (Biofertilizer) মাটির উর্বরতা বৃদ্ধিতে ব্যবহার্য জৈবিক পদার্থ। মুক্ত অথবা মিথজীবী কিছু ব্যাকটেরিয়া এবং নীল-সবুজ শৈবাল (সায়ানো ব্যাকটেরিয়া) বায়ুমন্ডলের নাইট্রোজেন গ্যাস সংবন্ধন করে অ্যামোনিয়ায় রূপান্তর করে এবং তা মুক্ত করে মাটি ও পানির উর্বরতা বৃদ্ধি করে। শিমজাতীয় উদ্ভিদে মূলগুটিকা প্রস্ত্ততকারী Rhizobium অথবা Bradyrhizobium এবং অ্যাজোলা (জলজ ফার্ন) এর পাতার কুঠরীতে বসবাসকারী Anabaena azollae নাইট্রোজেন গ্যাস সংবন্ধনে খুবই সহায়ক এবং বছরে প্রতি হেক্টরে প্রায় ৫০০ কেজি নাইট্রোজেন সরবরাহ করতে পারে। আর একটি নাইট্রোজেন সংবন্ধনকারী অনুজীবীয় মিথজীবী হচ্ছে Frankea। সমুদ্র তীরবর্তী কিছু কিছু দেশে সামুদ্রিক শৈবালকে জীবজসার হিসেবে ব্যবহার করা হয়। নাইট্রোজেন সংবন্ধনকারীরা তাদের জীবদ্দশায় নাইট্রোজেন ত্যাগ করে এবং মরে ও পচে অন্যান্য মৌল মাটিতে বা পানিতে যুক্ত হয় যা শস্যের বৃদ্ধির জন্য প্রয়োজন। জীবজসার মাটিতে জৈব পদার্থের পরিমাণ বাড়ায় এবং মাটির বুনট ভাল রাখে। অ্যাজোলাতে এমিনো এসিডের মিশ্রণ ভারসাম্যপূর্ণ এবং বিট-ক্যারোটিনজাতীয় অ্যান্থোসায়ানিন প্রচুর পরিমাণে উৎপাদন করে। এসব পদার্থ শস্যের বৃদ্ধি ও উৎপাদনে ইতিবাচক প্রভাব রাখে।
Rhizobium ও Bradyrhizobium এর প্রচুর বীজ উৎপাদন (প্রায় ২.৫ মে টন প্রতি বছরে) সম্ভব করেছে ময়মনসিংহের বাংলাদেশ পরমাণু কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট। প্রতি হেক্টর জমিতে ১.৫ থেকে ২.০ কেজি Rhizobium বীজ ডালজাতীয় বীজের সঙ্গে মিশিয়ে ব্যবহার করতে হয় এবং এতে ডালের উৎপাদন শতকরা ২০ থেকে ৪০ ভাগ বৃদ্ধি পেতে পারে। বৃহদাকারে অ্যাজোলা উৎপাদন পদ্ধতি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্ভিদবিজ্ঞান বিভাগে উদ্ভাবিত হয়েছে এবং এতে প্রতিদিন প্রতি হেক্টর পুকুরে গড়ে এক মে টন পর্যন্ত উৎপাদন হতে পারে। একে সেচযুক্ত ধানের সঙ্গে জন্মানো যায়। এক হেক্টর জমিকে অ্যাজোলা পুরোপুরি ঢেকে ফেললে তার ওজন হয় প্রায় ১০ মে টন এবং এরকম দুটি অ্যাজোলা ফসল মাটিতে মিশিয়ে দিলে ইউরিয়া সারের ব্যবহার শতকরা ৫০ ভাগ কমানো যায়।
জীবজসারের উপকারিতা রাসায়নিক সারের তুলনায় অনেক বেশি। এটি পরিবেশগতভাবে অনুকূল, কম খরচ (অ্যাজোলা একজন চাষি নিজেই উৎপাদন করতে পারে), মাটির জৈবপদার্থ বাড়ায় এবং এতে গাছের ‘বৃদ্ধি প্রভাবক’ বস্ত্ত থাকে। [আবদুল আজিজ]
আরও দেখুন সার।