হার্ডিঞ্জ, লর্ড
হার্ডিঞ্জ, লর্ড (১৭৮৫-১৮৫৬) ভারতের গভর্ণর জেনারেল (১৮৪৪-১৮৪৮)। তাঁর আত্মীয় লর্ড এলেনবরাকে স্বদেশে ডেকে পাঠানো হলে ঊনষাট বছর বয়স্ক লর্ড হার্ডিঞ্জ তাঁর স্থলাভিষিক্ত হন। পেশাগত সৈনিক হার্ডিঞ্জ ভারতে কার্যভার গ্রহণের পূর্বে ইংল্যান্ডে কয়েকটি উচ্চপদে আসীন ছিলেন। তাঁর শাসনকালের প্রথমার্ধে তিনি ভারতের রেল ব্যবস্থা প্রবর্তন ও গঙ্গা খাল খননের জন্য প্রাথমিক পরিকল্পনা করেছিলেন।
লর্ড বেন্টিঙ্ক-এর পথ অনুসরণ করে তিনি ওই সময়ে বাংলায়, বিশেষত উড়িষ্যার পার্বত্য অঞ্চলে গোড়া হিন্দুদের মধ্যে তখনও বিদ্যমান সতীদাহ প্রথা, শিশুহত্যা ও নরবলি প্রথা বন্ধ করেন। তিনি স্কুল প্রতিষ্ঠা করেন এবং রবিবার সরকারি অফিসের সাপ্তাহিক ছুটি ঘোষণা করেন। লর্ড হার্ডিঞ্জ প্রথম শিখ যুদ্ধে (১৮৪৫-৪৬) জড়িয়ে পড়েন যার পরিসমাপ্তি ঘটে লাহোর চুক্তির মাধ্যমে। এ চুক্তির ধারা অনুযায়ী শিখরা সমগ্র শতদ্রু ভূখন্ড এবং শতদ্রু ও বিপাশা নদীর মধ্যবর্তী অঞ্চল ইংরেজদের নিকট ছেড়ে দেয় এবং যুদ্ধের ক্ষতিপূরণ বাবদ পঞ্চাশ লাখ টাকা দিতে সম্মত হয়। শিখরা কাশ্মীরও সমর্পণ করে যা আশি লাখ টাকার বিনিময়ে জম্মুর গুলাব সিং এর নিকট হস্তান্তর করা হয়। লাহোরে দখলদার সৈন্য বহাল করা হয় এবং শিখ রাষ্ট্রটি ব্রিটিশ রাজ প্রতিনিধির অধীনে ন্যস্ত করা হয়। শিখ সৈন্যসংখ্যা কমিয়ে পদাতিক বাহিনীতে ২০ হাজার ও অশ্বারোহী বাহিনীতে ১২ হাজার করা হয়।
প্রথম শিখ যুদ্ধের সমাপ্তির পর হার্ডিঞ্জকে ভাইকাউন্ট করা হয়। ১৮৪৮ সালে তিনি অবসর গ্রহণ করেন এবং ব্রিটেনে উচ্চপদে নিযুক্ত হন। সেখানে প্রথমে তিনি সামরিক সাজ-সরঞ্জাম ও অস্ত্রশস্ত্র বিভাগের প্রধান ও পরে প্রধান সেনাপতির দায়িত্ব পালন করেন। তিনি অনেকভাবে ব্রিটিশ সেনাবাহিনীর উন্নতি সাধন করেন।
১৮৫৬ সালের ২৪ সেপ্টেম্বর লর্ড হার্ডিঞ্জ এর মৃত্যু হয়। পরবর্তী সময়ে কলকাতায় তাঁর মূর্তি নির্মাণ করে বসানো হয়। [কে.এম মোহসীন]