হামিদ, মো. আবদুল: সংশোধিত সংস্করণের মধ্যে পার্থক্য
সম্পাদনা সারাংশ নেই |
সম্পাদনা সারাংশ নেই |
||
১৬ নং লাইন: | ১৬ নং লাইন: | ||
মো. আবদুল হামিদের স্ত্রীর নাম রাশিদা খানম। এ দম্পত্তির ১ কন্যা ও ৩ পুত্র সন্তান রয়েছে। [হারুন-অর-রশিদ] | মো. আবদুল হামিদের স্ত্রীর নাম রাশিদা খানম। এ দম্পত্তির ১ কন্যা ও ৩ পুত্র সন্তান রয়েছে। [হারুন-অর-রশিদ] | ||
''তথ্যসূত্র'' সরকারি ওয়েব | '''তথ্যসূত্র''' সরকারি ওয়েব সাইট। | ||
[[en: Hamid, Md. Abdul]] | [[en: Hamid, Md. Abdul]] |
১৪:১৭, ২৪ সেপ্টেম্বর ২০২৩ তারিখে সংশোধিত সংস্করণ
হামিদ, মো. আবদুল (জন্ম ১৯৪৪) বীর মুক্তিযোদ্ধা, সমাজসেবক, শিক্ষা-সংস্কৃতির পৃষ্ঠপোষক ও গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের মহামান্য রাষ্ট্রপতি (২০১৩-২০২৩)। ১৯৪৪ সালের ১ জানুয়ারি মো. আবদুল হামিদ বৃহত্তর ময়মনসিংহ জেলার কিশোরগঞ্জ মহাকুমা (বর্তমানে জেলা)-র মিটামইন উপজেলার কামালপুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতার নাম হাজী মো. তায়েব উদ্দিন এবং মাতার নাম তমিজা খাতুন।
মো. আবদুল হামিদ নিকলী জি.সি পাইলট হাইস্কুল থেকে ম্যাট্রিকুলেশন, কিশোরগঞ্জ সরকারি গুরুদয়াল কলেজ থেকে ইন্টারমেডিয়েট ও বি.এ পাস করার পর ঢাকা সেন্ট্রাল ল’ কলেজ থেকে এল.এল.বি ডিগ্রি লাভ করেন। অতঃপর তিনি আইন পেশায় নিয়োজিত হন।
আবদুল হামিদ এক বর্ণাঢ্য ও সংগ্রামী রাজনৈতিক জীবনের অধিকারী। ১৯৫৯ সালে স্কুলের ছাত্র থাকাকালীন পূর্ব পাকিস্তান ছাত্রলীগে যোগদানের মধ্য দিয়ে তাঁর রাজনৈতিক জীবনের শুরু। ১৯৬২-র ছাত্র আন্দোলনে তিনি সক্রিয়ভাবে যুক্ত ছিলেন। তখন কলেজের ছাত্র। কার্যত তখনকার শরীফ শিক্ষা কমিশন রিপোর্টবিরোধী আন্দোলনে শামিল হন। এ সময় তিনি কারাবরণ করেন। ১৯৬২-১৯৬৩ সালে তিনি গুরুদয়াল কলেজ ছাত্র সংসদের সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। ১৯৬৪ সালে তিনি কিশোরগঞ্জ মহকুমা ছাত্রলীগ প্রতিষ্ঠা করেন এবং তিনি ছিলেন এর প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি। ১৯৬৫-১৯৬৬ সালে তিনি কিশোরগঞ্জ গুরুদয়াল কলেজ ছাত্র সংসদের ভিপি নির্বাচিত হন। ১৯৬৬-১৯৬৭ সময়ে তিনি ময়মনসিংহ জেলা ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি ছিলেন। ছাত্র আন্দোলনে নেতৃত্বদানের কারণে ১৯৬৮ সালে তিনি পুনরায় গ্রেপ্তার হন। মুক্তিলাভের পর ১৯৬৯ সালে তিনি আওয়ামী লীগে যোগদান করেন। ১৯৭০ সালের নির্বাচনে ময়মনসিংহ-১৮ নির্বাচনী এলাকা থেকে তিনি আওয়ামী লীগ প্রার্থী হিসেবে জাতীয় পরিষদের সদস্য নির্বাচিত হন। ৭১-এর মার্চের উত্তাল দিনগুলোতে তিনি বঙ্গবন্ধুর নির্দেশে কিশোরগঞ্জে অসহযোগ আন্দোলন সফল করা এবং স্বাধীনতার পক্ষে জনমত গঠনে বিশিষ্ট ভূমিকা পালন করেন। ১৭ই মার্চ কিশোরগঞ্জ শহরের রথখোলা মাঠে হাজার-হাজার ছাত্রজনতার উপস্থিতিতে তিনি বাংলাদেশের মানচিত্রখচিত পতাকা উত্তোলন করেন। ২৬শে মার্চ প্রথম প্রহরে বঙ্গবন্ধুর স্বাধীনতা ঘোষণা এবং টেলিগ্রাফের মাধ্যমে তা প্রাপ্ত হয়ে তিনি স্থানীয় পর্যায়ে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর সম্ভাব্য আক্রমণ প্রতিরোধে জনগণ, পুলিশ, বাঙালি সেনা সদস্যদের নিয়ে রাস্তায় ব্যারিকেড দেওয়াসহ অন্যান্য পদক্ষেপ গ্রহণ করেন। মুক্তিযুদ্ধের ব্যয় নির্বাহের কথা ভেবে তাঁর নেতৃত্বে ন্যাশনাল ব্যাংক অব পাকিস্তান-এর কিশোরগঞ্জ, ভৈরব ও বাজিতপুর এই ৩ শাখা থেকে ১১ কোটির অধিক রুপি উদ্ধার করে নিরাপদ স্থানে সরিয়ে রাখা হয়। অতঃপর মুক্তিযুদ্ধে সক্রিয় অংশগ্রহণের জন্য তিনি ভারতের আগরতলা যান। সেখানে বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে আগত জনপ্রতিনিধিদের সঙ্গে তাঁর সাক্ষাৎ ঘটে। যুদ্ধের কৌশল নিয়ে তাঁরা একাধিক বৈঠক করেন। সেখানে ভারতের রাজ্য সরকার ও জনপ্রতিনিধিদের সঙ্গে তাঁদের বৈঠক হয়। এপ্রিল মাসের শেষ দিকে মো. আবদুল হামিদ মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণে যুবকদের সংগ্রহ করতে বাংলাদেশের অভ্যন্তরে প্রবেশ করেন এবং একদল যুবকসহ মেঘালয়ের বালাট পৌঁছান। তিনি সেখানে প্রতিষ্ঠিত ইয়ুথ রিসিপশন ক্যাম্পের চেয়ারম্যান নিযুক্ত হন। এ ক্যাম্পে মুক্তিযোদ্ধাদের প্রাথমিক বাছাই কার্য হতো। এছাড়া মেঘালয়ভিত্তিক মুক্তিযুদ্ধ পরিচালনা ও শরণার্থী ব্যবস্থাপনায় গঠিত জোনাল এডমিনিস্ট্রেটিভ কাউন্সিলের তিনি অন্যতম সদস্য ছিলেন। মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে সুনামগঞ্জ-কিশোরগঞ্জ নিয়ে গঠিত বাংলাদেশ লিবারেশন ফোর্স (বিএলএফ; যা মুজিব বাহিনী হিসেবে পরিচিত ছিল)-এর সাব-সেক্টর কমান্ডার নিযুক্ত হন। ১৬ই ডিসেম্বর দেশ শত্রুমুক্ত ও মুক্তিযুদ্ধে বিজয় অর্জিত হলেও, তাঁর ওপর অর্পিত সকল দায়িত্ব সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করে ১৯৭২ সালের ১০ই জানুয়ারি তিনি স্বাধীন বাংলাদেশে ফিরে আসেন।
দেশে ফিরে এসে তিনি যুদ্ধবিধ্বস্ত বাংলাদেশের পুনর্গঠনে আত্মনিয়োগ করেন। তিনি কিশোরগঞ্জ মহকুমা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কমিটির চেয়ারম্যান নিযুক্ত হন। ১৯৭৪ সালে তিনি মহকুমা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি নির্বাচিত হন। ১৯৭৫ সালে বঙ্গবন্ধুকে নির্মম হত্যার পর ক্ষমতাসীন জেনারেল জিয়ার শাসনকালে তিনি প্রায় ৪ বছরের জন্য কারারুদ্ধ হন। ১৯৭৮ সালে তিনি মুক্তিলাভ করেন। ১৯৭৮ থেকে ২০০৯ পর্যন্ত তিনি কিশোরগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি এবং ১৯৯০ থেকে ১৯৯৬ পর্যন্ত জেলা বার এসোসিয়েশনের সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।
মো. আবদুল হামিদ ১৯৭০, ১৯৭৩, ১৯৮৬, ১৯৯১, ১৯৯৬, ২০০১, ২০০৮ মোট ৭ বার জাতীয় সংসদের সদস্য নির্বাচিত হন। ১৯৯৬ সালের নির্বাচনে বিজয় লাভ করে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ সরকার গঠিত হলে প্রথমে তিনি জাতীয় সংসদের ডেপুটি স্পিকার (১৯৯৬-২০০১) এবং পরে স্পিকার নির্বাচিত হন। ২০০১ সালের নির্বাচনের পর তিনি জাতীয় সংসদে বিরোধী দলের উপনেতা হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। তখন বিরোধী দলের নেতা ছিলেন শেখ হাসিনা। ২০০৮ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগ বিজয়ী হলে তিনি সর্বসম্মতক্রমে দ্বিতীয়বার জাতীয় সংসদ-এর স্পিকার নির্বাচিত হন এবং ২০১৩ সাল পর্যন্ত সুনামের সঙ্গে দায়িত্ব পালন করেন। ২০১৩ সালের ২০শে মার্চ রাষ্ট্রপতি মোহাম্মদ জিল্লুর রহমান মৃত্যুবরণ করলে মো. আবদুল হামিদ একই দিন বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের ২০তম রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হন। ৫ বছরের প্রথম টার্ম শেষে ২০১৮ সালের ২৪শে এপ্রিল তিনি দ্বিতীয়বারের মতো রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হন। ২০২৩ সালের এপ্রিল মাসে রাষ্ট্রপতি হিসেবে তাঁর দ্বিতীয় মেয়াদ শেষ হয়।
মো. আবদুল হামিদ জাতীয় সংসদের ডেপুটি স্পিকার ও স্পিকার থাকাকালীন Inter Parliamentary Union (IPU) এবং Commonwealth Parliamentary Association (IPA)-এর কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য ছিলেন।
সমাজসেবক ও শিক্ষানুরাগী মো. আবদুল হামিদ তাঁর জন্মস্থান ও তদসংলগ্ন অঞ্চলে ৭৫টি প্রাথমিক বিদ্যালয়, ২৪টি উচ্চ বিদ্যালয় ও ৩টি কলেজ প্রতিষ্ঠা করেন। তাঁর প্রতিষ্ঠিত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের মধ্যে অষ্টগ্রাম রোটারি ডিগ্রি কলেজ, মিটামইন ডিগ্রি কলেজ, ইটনা ডিগ্রি কলেজ, মিটামইন হাইস্কুল, তমিজা খাতুন গার্লস হাইস্কুল, ইটনা গার্লস হাইস্কুল, অষ্টগ্রাম গার্লস হাইস্কুল, কিশোরগঞ্জ গার্লস হাইস্কুল, শহীদ স্মৃতি হাইস্কুল, মোহনতলা হাইস্কুল, ঘাগড়া আ. গনি হাইস্কুল উল্লেখযোগ্য।
মো. আবদুল হামিদের স্ত্রীর নাম রাশিদা খানম। এ দম্পত্তির ১ কন্যা ও ৩ পুত্র সন্তান রয়েছে। [হারুন-অর-রশিদ]
তথ্যসূত্র সরকারি ওয়েব সাইট।