হাসন রাজা: সংশোধিত সংস্করণের মধ্যে পার্থক্য

(Added Ennglish article link)
 
সম্পাদনা সারাংশ নেই
 
১ নং লাইন: ১ নং লাইন:
[[Category:বাংলাপিডিয়া]]
[[Category:বাংলাপিডিয়া]]
'''হাসন রাজা '''(১৮৫৪-১৯২২)  মরমি কবি, সাধক। তাঁর প্রকৃত নাম দেওয়ান হাসন রজা চৌধুরী। ১২৬১ বঙ্গাব্দের ৭ পৌষ (১৮৫৪ সালের ২৪ জনিুয়ারি) সিলেট জেলার সুনামগঞ্জে লক্ষ্মণশ্রী গ্রামের এক জমিদার পরিবারে তিনি জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতার নাম দেওয়ান আলী রজা চৌধুরী। হাসন রাজার পিতৃকুল ও মাতৃকুল উভয়ই ছিল অযোধ্যাবাসী এবং হিন্দু ধর্মাবলম্বী। পরে  [[ইসলাম|ইসলাম]] ধর্ম গ্রহণ করে তাঁরা সুনামগঞ্জ আসেন এবং সেখানেই স্থায়িভাবে বসবাস শুরু করেন।
'''হাসন রাজা''' (১৮৫৪-১৯২২)  মরমি কবি, সাধক। তাঁর প্রকৃত নাম দেওয়ান হাসন রজা চৌধুরী। ১২৬১ বঙ্গাব্দের ৭ পৌষ (১৮৫৪ সালের ২৪ জনিুয়ারি) সিলেট জেলার সুনামগঞ্জে লক্ষ্মণশ্রী গ্রামের এক জমিদার পরিবারে তিনি জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতার নাম দেওয়ান আলী রজা চৌধুরী। হাসন রাজার পিতৃকুল ও মাতৃকুল উভয়ই ছিল অযোধ্যাবাসী এবং হিন্দু ধর্মাবলম্বী। পরে  [[ইসলাম|ইসলাম]] ধর্ম গ্রহণ করে তাঁরা সুনামগঞ্জ আসেন এবং সেখানেই স্থায়িভাবে বসবাস শুরু করেন।


[[Image:HasanRaja.jpg|thumb|400px|হাসন রাজা]]
হাসন রাজার কোনো প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা ছিল না। পনেরো বছর বয়সে পিতৃবিয়োগ হলে সংসার ও জমিদারি পরিচালনার দায়িত্ব তাঁর ওপর ন্যস্ত হয়। যৌবনে তিনি ছিলেন অত্যন্ত সৌখিন ও ভোগবিলাসী, কিন্তু পরিণত বয়সে সব বিষয়-সম্পত্তি বিলিবণ্টন করে দরবেশ জীবন যাপন করেন। তাঁরই উদ্যোগে সুনামগঞ্জ হাসন এম ই স্কুল, অনেক ধর্ম-প্রতিষ্ঠান ও  [[আখড়া|আখড়া]] স্থাপিত হয়। বিদ্যালয়ের অনেক মেধাবী ছাত্রের থাকা-খাওয়ার ব্যবস্থাও তিনি করতেন।
হাসন রাজার কোনো প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা ছিল না। পনেরো বছর বয়সে পিতৃবিয়োগ হলে সংসার ও জমিদারি পরিচালনার দায়িত্ব তাঁর ওপর ন্যস্ত হয়। যৌবনে তিনি ছিলেন অত্যন্ত সৌখিন ও ভোগবিলাসী, কিন্তু পরিণত বয়সে সব বিষয়-সম্পত্তি বিলিবণ্টন করে দরবেশ জীবন যাপন করেন। তাঁরই উদ্যোগে সুনামগঞ্জ হাসন এম ই স্কুল, অনেক ধর্ম-প্রতিষ্ঠান ও  [[আখড়া|আখড়া]] স্থাপিত হয়। বিদ্যালয়ের অনেক মেধাবী ছাত্রের থাকা-খাওয়ার ব্যবস্থাও তিনি করতেন।


প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা না থাকলেও হাসন রাজা ছিলেন একজন স্বশিক্ষিত ব্যক্তি। তিনি সহজ-সরল সুরে আঞ্চলিক ভাষায় প্রায় এক হাজার আধ্যাত্মিক গান রচনা করেন। স্থানীয় বাউল-ফকিরেরা সেসব গান গেয়ে তাঁকে পরিচিত করে তোলে। হাসন রাজা ছিলেন একজন ঐশীপ্রেমী এবং সেই প্রেমে মাতোয়ারা হয়েই তিনি গান রচনা কতেন। তাঁর গানে প্রেম ও বৈরাগ্যময় আধ্যাত্মিক চেতনার প্রকাশ ঘটেছে। তাঁর গানগুলি যেন হিন্দু ও মুসলমান উভয় সম্প্রদায়ের একটি মিলন ক্ষেত্র। তিনি গানের ভণিতায় নিজেকে ‘পাগলা হাসন রাজা’, ‘উদাসী’, ‘দেওয়ানা’,  ‘বাউলা’ ইত্যাদি বলে অভিহিত করেছেন। তিনি কৈশোর ও যৌবনে শ্রীকৃষ্ণের নানাবিধ লীলায় অভিনয়ও করেছেন।  
প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা না থাকলেও হাসন রাজা ছিলেন একজন স্বশিক্ষিত ব্যক্তি। তিনি সহজ-সরল সুরে আঞ্চলিক ভাষায় প্রায় এক হাজার আধ্যাত্মিক গান রচনা করেন। স্থানীয় বাউল-ফকিরেরা সেসব গান গেয়ে তাঁকে পরিচিত করে তোলে। হাসন রাজা ছিলেন একজন ঐশীপ্রেমী এবং সেই প্রেমে মাতোয়ারা হয়েই তিনি গান রচনা কতেন। তাঁর গানে প্রেম ও বৈরাগ্যময় আধ্যাত্মিক চেতনার প্রকাশ ঘটেছে। তাঁর গানগুলি যেন হিন্দু ও মুসলমান উভয় সম্প্রদায়ের একটি মিলন ক্ষেত্র। তিনি গানের ভণিতায় নিজেকে ‘পাগলা হাসন রাজা’, ‘উদাসী’, ‘দেওয়ানা’,  ‘বাউলা’ ইত্যাদি বলে অভিহিত করেছেন। তিনি কৈশোর ও যৌবনে শ্রীকৃষ্ণের নানাবিধ লীলায় অভিনয়ও করেছেন।  
[[Image:HasanRaja.jpg|thumb|400px|হাসন রাজা]]


হাসন রাজার মুখ্য পরিচয় একজন মরমি কবি হিসেবে। তাঁর সম্পর্কে  [[ঠাকুর, রবীন্দ্রনাথ|রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর]] একবার ভারতীয় দর্শন কংগ্রেসের অধিবেশনে সভাপতির ভাষণে বলেছিলেন: ‘পূর্ববঙ্গের একজন গ্রাম্য কবির গানে দর্শনের একটি বড় তত্ত্ব পাই সেটি এই যে, ব্যক্তিস্বরূপের সহিত সম্বন্ধসূত্রেই বিশ্ব সত্য।’ হাছন উদাস (১৯০৭), শৌখিন বাহার, হাছন বাহার ইত্যাদি গ্রন্থে তাঁর গানগুলি সংকলিত হয়েছে। ১৯২২ সালের ৭ ডিসেম্বর তাঁর মৃত্যু হয়।  [তসিকুল ইসলাম]
হাসন রাজার মুখ্য পরিচয় একজন মরমি কবি হিসেবে। তাঁর সম্পর্কে  [[ঠাকুর, রবীন্দ্রনাথ|রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর]] একবার ভারতীয় দর্শন কংগ্রেসের অধিবেশনে সভাপতির ভাষণে বলেছিলেন: ‘পূর্ববঙ্গের একজন গ্রাম্য কবির গানে দর্শনের একটি বড় তত্ত্ব পাই সেটি এই যে, ব্যক্তিস্বরূপের সহিত সম্বন্ধসূত্রেই বিশ্ব সত্য।’ হাছন উদাস (১৯০৭), শৌখিন বাহার, হাছন বাহার ইত্যাদি গ্রন্থে তাঁর গানগুলি সংকলিত হয়েছে। ১৯২২ সালের ৭ ডিসেম্বর তাঁর মৃত্যু হয়।  [তসিকুল ইসলাম]


[[en:Hasan Raja]]
[[en:Hasan Raja]]

০৭:০৩, ২৯ মার্চ ২০১৫ তারিখে সম্পাদিত সর্বশেষ সংস্করণ

হাসন রাজা (১৮৫৪-১৯২২)  মরমি কবি, সাধক। তাঁর প্রকৃত নাম দেওয়ান হাসন রজা চৌধুরী। ১২৬১ বঙ্গাব্দের ৭ পৌষ (১৮৫৪ সালের ২৪ জনিুয়ারি) সিলেট জেলার সুনামগঞ্জে লক্ষ্মণশ্রী গ্রামের এক জমিদার পরিবারে তিনি জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতার নাম দেওয়ান আলী রজা চৌধুরী। হাসন রাজার পিতৃকুল ও মাতৃকুল উভয়ই ছিল অযোধ্যাবাসী এবং হিন্দু ধর্মাবলম্বী। পরে  ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করে তাঁরা সুনামগঞ্জ আসেন এবং সেখানেই স্থায়িভাবে বসবাস শুরু করেন।

হাসন রাজা

হাসন রাজার কোনো প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা ছিল না। পনেরো বছর বয়সে পিতৃবিয়োগ হলে সংসার ও জমিদারি পরিচালনার দায়িত্ব তাঁর ওপর ন্যস্ত হয়। যৌবনে তিনি ছিলেন অত্যন্ত সৌখিন ও ভোগবিলাসী, কিন্তু পরিণত বয়সে সব বিষয়-সম্পত্তি বিলিবণ্টন করে দরবেশ জীবন যাপন করেন। তাঁরই উদ্যোগে সুনামগঞ্জ হাসন এম ই স্কুল, অনেক ধর্ম-প্রতিষ্ঠান ও  আখড়া স্থাপিত হয়। বিদ্যালয়ের অনেক মেধাবী ছাত্রের থাকা-খাওয়ার ব্যবস্থাও তিনি করতেন।

প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা না থাকলেও হাসন রাজা ছিলেন একজন স্বশিক্ষিত ব্যক্তি। তিনি সহজ-সরল সুরে আঞ্চলিক ভাষায় প্রায় এক হাজার আধ্যাত্মিক গান রচনা করেন। স্থানীয় বাউল-ফকিরেরা সেসব গান গেয়ে তাঁকে পরিচিত করে তোলে। হাসন রাজা ছিলেন একজন ঐশীপ্রেমী এবং সেই প্রেমে মাতোয়ারা হয়েই তিনি গান রচনা কতেন। তাঁর গানে প্রেম ও বৈরাগ্যময় আধ্যাত্মিক চেতনার প্রকাশ ঘটেছে। তাঁর গানগুলি যেন হিন্দু ও মুসলমান উভয় সম্প্রদায়ের একটি মিলন ক্ষেত্র। তিনি গানের ভণিতায় নিজেকে ‘পাগলা হাসন রাজা’, ‘উদাসী’, ‘দেওয়ানা’,  ‘বাউলা’ ইত্যাদি বলে অভিহিত করেছেন। তিনি কৈশোর ও যৌবনে শ্রীকৃষ্ণের নানাবিধ লীলায় অভিনয়ও করেছেন।

হাসন রাজার মুখ্য পরিচয় একজন মরমি কবি হিসেবে। তাঁর সম্পর্কে  রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর একবার ভারতীয় দর্শন কংগ্রেসের অধিবেশনে সভাপতির ভাষণে বলেছিলেন: ‘পূর্ববঙ্গের একজন গ্রাম্য কবির গানে দর্শনের একটি বড় তত্ত্ব পাই সেটি এই যে, ব্যক্তিস্বরূপের সহিত সম্বন্ধসূত্রেই বিশ্ব সত্য।’ হাছন উদাস (১৯০৭), শৌখিন বাহার, হাছন বাহার ইত্যাদি গ্রন্থে তাঁর গানগুলি সংকলিত হয়েছে। ১৯২২ সালের ৭ ডিসেম্বর তাঁর মৃত্যু হয়।  [তসিকুল ইসলাম]