স্তরবিদ্যা: সংশোধিত সংস্করণের মধ্যে পার্থক্য

(Added Ennglish article link)
 
সম্পাদনা সারাংশ নেই
 
২ নং লাইন: ২ নং লাইন:
'''স্তরবিদ্যা''' (Stratigraphy)  স্তরিভূত শিলা (পাললিক ও আগ্নেয়), বিশেষ করে তাদের কাল অনুক্রম, শিলাসমূহের চরিত্র এবং বিভিন্ন অঞ্চলে স্তরসমূহের পারম্পরিক সম্পর্কিত অধ্যয়ন। স্তরবিদ্যার বিভিন্ন ভাগ যথাক্রমে শিলাস্তরীয় একক, জীবস্তরীয় একক, ভূ-কম্পনীয় স্তরবিদ্যা, কালস্তরীয় একক ইত্যাদি।
'''স্তরবিদ্যা''' (Stratigraphy)  স্তরিভূত শিলা (পাললিক ও আগ্নেয়), বিশেষ করে তাদের কাল অনুক্রম, শিলাসমূহের চরিত্র এবং বিভিন্ন অঞ্চলে স্তরসমূহের পারম্পরিক সম্পর্কিত অধ্যয়ন। স্তরবিদ্যার বিভিন্ন ভাগ যথাক্রমে শিলাস্তরীয় একক, জীবস্তরীয় একক, ভূ-কম্পনীয় স্তরবিদ্যা, কালস্তরীয় একক ইত্যাদি।


'''শিলাস্তরীয় একক''' (Lithostratigraphy) স্তরবিদ্যার যে উপাদান স্তরের শিলালক্ষণ, শিলাবৈশিষ্ট্যের ভিত্তিতে তাদের এককে সঙ্ঘটন এবং তাদের পারম্পর্য নিয়ে আলোচনা করে তাকে শিলাস্তরীয় একক বলে। অন্যকথায়, শিলালক্ষণ ও অন্যান্য বৈশিষ্ট্য, যেমন, পাললিক গঠন (sedimentary structure), ভূরূপতাত্ত্বিক বৈশিষ্ট্য ও ভূপদার্থবিদ্যার ভিত্তিতে বিভক্ত ও স্বীকৃত শিলারাশি নিয়ে এই বিদ্যায় গবেষণা করা হয়। অবশ্য এই সব একক নির্ধারণে অন্যান্য বৈশিষ্ট্যসমূহও ব্যবহার করা যেতে পারে, বিশেষ করে যেখানে শৈল প্রান্তসমূহ ক্রমমাত্রিক (gradational) অথবা অন্যভাবে অস্পষ্ট। এককসমূহের উল­ম্ব ও পার্শ্বিক উভয় প্রান্ত এইসব বৈশিষ্ট্যের গুরুত্বপূর্ণ অসঙ্গতির ভিত্তিতে শনাক্তযোগ্য।  [[জিওলজিক্যাল সার্ভে অব বাংলাদেশ|বাংলাদেশ ভূতাত্ত্বিক জরিপ অধিদপ্তর]]-জিএসবি (Geological Survey of Bangladesh-GSB) বাংলাদেশের শিলাস্তরীয় একক সংক্রান্ত সংক্ষিপ্ত বর্ণনা মুদ্রিত করেছে। সম্প্রতি জিএসবি বাংলাদেশের স্তরবিদ্যার শব্দকোষ প্রণয়ন করেছে। এ পর্যন্ত প্রাপ্ত মাঠ পর্যায়ের কর্মীদের প্রকাশিত ও অপ্রকাশিত তথ্য, উপাত্ত ও অভিধান প্রণেতাদের উপাত্তের ভিত্তিতে এই সংকলন প্রস্ত্তত করা হয়েছে। এতে পূর্বেকার কাজের ওপর অভিধান প্রণেতাদের বিশে­ষণ ও তাদের দৃষ্টিভঙ্গিও অন্তর্ভুক্ত আছে।
''শিলাস্তরীয় একক'' (Lithostratigraphy) স্তরবিদ্যার যে উপাদান স্তরের শিলালক্ষণ, শিলাবৈশিষ্ট্যের ভিত্তিতে তাদের এককে সঙ্ঘটন এবং তাদের পারম্পর্য নিয়ে আলোচনা করে তাকে শিলাস্তরীয় একক বলে। অন্যকথায়, শিলালক্ষণ ও অন্যান্য বৈশিষ্ট্য, যেমন, পাললিক গঠন (sedimentary structure), ভূরূপতাত্ত্বিক বৈশিষ্ট্য ও ভূপদার্থবিদ্যার ভিত্তিতে বিভক্ত ও স্বীকৃত শিলারাশি নিয়ে এই বিদ্যায় গবেষণা করা হয়। অবশ্য এই সব একক নির্ধারণে অন্যান্য বৈশিষ্ট্যসমূহও ব্যবহার করা যেতে পারে, বিশেষ করে যেখানে শৈল প্রান্তসমূহ ক্রমমাত্রিক (gradational) অথবা অন্যভাবে অস্পষ্ট। এককসমূহের উল­ম্ব ও পার্শ্বিক উভয় প্রান্ত এইসব বৈশিষ্ট্যের গুরুত্বপূর্ণ অসঙ্গতির ভিত্তিতে শনাক্তযোগ্য।  [[জিওলজিক্যাল সার্ভে অব বাংলাদেশ|বাংলাদেশ ভূতাত্ত্বিক জরিপ অধিদপ্তর]]-জিএসবি (Geological Survey of Bangladesh-GSB) বাংলাদেশের শিলাস্তরীয় একক সংক্রান্ত সংক্ষিপ্ত বর্ণনা মুদ্রিত করেছে। সম্প্রতি জিএসবি বাংলাদেশের স্তরবিদ্যার শব্দকোষ প্রণয়ন করেছে। এ পর্যন্ত প্রাপ্ত মাঠ পর্যায়ের কর্মীদের প্রকাশিত ও অপ্রকাশিত তথ্য, উপাত্ত ও অভিধান প্রণেতাদের উপাত্তের ভিত্তিতে এই সংকলন প্রস্ত্তত করা হয়েছে। এতে পূর্বেকার কাজের ওপর অভিধান প্রণেতাদের বিশে­ষণ ও তাদের দৃষ্টিভঙ্গিও অন্তর্ভুক্ত আছে।
 
''সারণি''  স্তরীয় এককসমূহের প্রকার ও শ্রেণীবিন্যাস।


সারণি  স্তরীয় এককসমূহের প্রকার ও শ্রেণীবিন্যাস
{| class="table table-bordered"
{| class="table table-bordered"
|-
|-
| প্রকার || ভিত্তি  || এককসমূহ
| প্রকার || ভিত্তি  || এককসমূহ
|-
|-
| শিলাস্তরীয় এককসমূহ সদস্য, (শিলা এককসমূহ) || শিলালক্ষণ   || সুপার গ্রুপ, গ্রুপ, স্তরসমষ্টি স্তরসমূহ
| শিলাস্তরীয় এককসমূহ সদস্য, (শিলা এককসমূহ) || শিলালক্ষণ   || সুপার গ্রুপ, গ্রুপ, স্তরসমষ্টি স্তরসমূহ
|-
|-
| জীবস্তরীয় এককসমূহ  || জীবাশ্ম বস্ত্ত  || সমাবেশ অঞ্চল (Cenozone)রেঞ্জ জোন (Acrozone) একমে জোন (Epibole) অভ্যন্তরীণ জোন (Internal zones)
| জীবস্তরীয় এককসমূহ  || জীবাশ্ম বস্ত্ত  || সমাবেশ অঞ্চল (Cenozone) রেঞ্জ জোন (Acrozone) একমে জোন (Epibole) অভ্যন্তরীণ জোন (Internal zones)
 
|-
|-
| পরিবেশস্তরীয় একক  || উৎপত্তির পরিবেশ || পর্বসমূহ
| পরিবেশস্তরীয় একক  || উৎপত্তির পরিবেশ || পর্বসমূহ
|-
|-
| কালস্তরীয় এককসমূহ (কাল-শিলা একক) || উৎপত্তির কাল || ইউনোথেম (Eonothem)  ইরাথেম (Erathem) সিস্টেম (System) সিরিজ (Series) স্টেজ (Stage)সাবস্টেজ (Substage)
| কালস্তরীয় এককসমূহ (কাল-শিলা একক) || উৎপত্তির কাল || ইউনোথেম (Eonothem)  ইরাথেম (Erathem) সিস্টেম (System) সিরিজ (Series) স্টেজ (Stage)সাবস্টেজ (Substage)
২৩ নং লাইন: ২০ নং লাইন:
| ভূকাল নিরূপক একক (সময় এককসমূহ)  ||  || ভূতাত্ত্বিক সময় ইউন (Eon) এরা (Era)পিরিয়ড (Period) ইপক (Epoch) এজ (Age) ক্রন (Chron)
| ভূকাল নিরূপক একক (সময় এককসমূহ)  ||  || ভূতাত্ত্বিক সময় ইউন (Eon) এরা (Era)পিরিয়ড (Period) ইপক (Epoch) এজ (Age) ক্রন (Chron)
|}
|}
'''জীবস্তরীয় একক''' (Biostratigraphic unit)  জীবাশ্ম উপাদান বা প্রত্নজীববিদ্যাগত চরিত্রের ভিত্তিতে বিভাজিত ও চিহ্নিত শিলারাশি এবং এতদনুসারে সংলগ্নশিলা রাশি থেকে পৃথকীকৃত। বাংলাদেশের ভূগর্ভস্থ ও ভূ-পৃষ্ঠস্থ টারশিয়ারী (Tertiary) অবক্ষেপের ওপর ইতোমধ্যেই কয়েকটি অনুজীবাশ্মমূলক ও পরাগ স্তরবিদ্যা (palynostratigraphy) সংক্রান্ত গবেষণা কাজ সম্পন্ন হয়েছে। সম্প্রতি কোয়াটারনারি (Quaternary) অবক্ষেপের ওপরও একই কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে। অবশ্য কিছু গবেষক পার্মীয় যুগের কয়লাবাহী অবক্ষেপের ওপরও কাজ করছেন।


'''পরাগ স্তরবিদ্যা''' (Palynostratigraphyস্তরবিদ্যা গবেষণায় পরাগতত্ত্ব পদ্ধতির প্রয়োগ। পরাগ স্তরবিদ্যায় প্রধানত স্তরবিদ্যা এবং প্রত্নপ্রতিবেশ (palaeoecology) তত্ত্ব গবেষণায় পরাগ রেণুর প্রয়োগ অন্তর্ভুক্ত। বঙ্গীয় অববাহিকার টারশিয়ারি স্তরসমষ্টির জীবস্তরবিদ্যা নির্ণয়ে পরাগ স্তরবিদ্যা সম্পর্কীয় অধ্যয়ন একটি অপরিহার্য বিষয়। পার্বত্য চট্টগ্রামের লিচুবাগান-শিলছড়ি সড়ক বরাবর অবস্থিত সীতাপাহাড় উত্তলভঙ্গের (''Sitapahar anticline'') পশ্চিম বাহুতে প্রকটিত নিওজিন পললের পরাগ স্তরবিদ্যা গবেষণা হয়েছে। বগুড়া-১১ নং কূপে অনুজীবাশ্ম বিজ্ঞান (micropalaeontology) পদ্ধতিতে ওলিগোসিন স্তরকে শনাক্ত করা সম্ভব ছিল না, কেননা সেক্ষেত্রে প্রাণিকুল সূচক জীবাশ্ম (faunal index fossils) এবং শিলাস্তর শনাক্তকারী বিশেষ ক্ষিতিজের (lithologic marker horizons) স্তর ছিল না। পরবর্তীতে নিকটবর্তী কুচমা-১১ কূপের সংগৃহীত নমুনার পরাগ স্তরবিদ্যা গবেষণার মাধ্যমে ওলিগোসিন স্তরের উপস্থিতি সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়া সম্ভব হয়। যদিও গাইবান্ধা এলাকার ওলিগোসিন শিলাস্তর ও পর্বের (facies) সঙ্গে সিংড়া-৯ কূপ এলাকার শিলাস্তর ও পর্বের সঙ্গে তাৎপর্যপূর্ণ অমিল রয়েছে, তবুও গাইবান্ধার ভূতাত্ত্বিক খননকূপ-৩১-এর ওলিগোসিন পরাগরূপ (palynomorphs) সমাবেশের (assemblage) সঙ্গে সিংড়া-৯ কূপে প্রাপ্ত উক্ত সমাবেশের সাদৃশ্য রয়েছে। গাইবান্ধার ভূতাত্ত্বিক কূপ থেকে সংগৃহীত নমুনার পরাগ স্তরবিদ্যাগত গবেষণা অনুসারে বলা যায় সেখানে ওলিগোসিন শিলাস্তরের পুরুত্ব ১৩৪ মিটার। এস.কে বকশী বঙ্গীয় অববাহিকার পরাগতাত্ত্বিক জীব স্তরবিদ্যাগত মন্ডলে বিভক্তীকরণের কাজ সম্পন্ন করেন। পরবর্তীতে এস.কে বকশী এবং ইউ দেব যৌথভাবে পরাগ স্তরবিদ্যাগত স্কীম উপস্থাপন করেন, যেটি সমগ্র বঙ্গীয় অববাহিকার আপার ক্রিটেসিয়াস-প্যালিওসিন ধারাক্রমের জন্য প্রযোজ্য।  [সিফাতুল কাদের চৌধুরী]
''জীবস্তরীয় একক'' (Biostratigraphic unitজীবাশ্ম উপাদান বা প্রত্নজীববিদ্যাগত চরিত্রের ভিত্তিতে বিভাজিত ও চিহ্নিত শিলারাশি এবং এতদনুসারে সংলগ্নশিলা রাশি থেকে পৃথকীকৃত। বাংলাদেশের ভূগর্ভস্থ ও ভূ-পৃষ্ঠস্থ টারশিয়ারী (Tertiary) অবক্ষেপের ওপর ইতোমধ্যেই কয়েকটি অনুজীবাশ্মমূলক ও পরাগ স্তরবিদ্যা (palynostratigraphy) সংক্রান্ত গবেষণা কাজ সম্পন্ন হয়েছে। সম্প্রতি কোয়াটারনারি (Quaternary) অবক্ষেপের ওপরও একই কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে। অবশ্য কিছু গবেষক পার্মীয় যুগের কয়লাবাহী অবক্ষেপের ওপরও কাজ করছেন।


'''ভূকম্পনীয় স্তরবিদ্যা''' (Seismostratigraphyস্তরবিদ্যার এই শাখায় অবক্ষেপ পাললিক শিলাসমূহকে ভূকম্পনীয় প্রতিফলকের দ্বারা একটি জ্যামিতিক প্রকরণের ব্যাখ্যা করা হয়। ভূকম্পনীয় প্রতিফলকের অদ্বিতীয় বৈশিষ্ট্যসমূহ প্রাকৃতিক স্তরবিদ্যাভিত্তিক ভূতাত্ত্বিক ধ্যানধারণার প্রত্যক্ষ প্রয়োগ অনুমোদন করে।
''পরাগ স্তরবিদ্যা'' (Palynostratigraphyস্তরবিদ্যা গবেষণায় পরাগতত্ত্ব পদ্ধতির প্রয়োগ। পরাগ স্তরবিদ্যায় প্রধানত স্তরবিদ্যা এবং প্রত্নপ্রতিবেশ (palaeoecology) তত্ত্ব গবেষণায় পরাগ রেণুর প্রয়োগ অন্তর্ভুক্ত। বঙ্গীয় অববাহিকার টারশিয়ারি স্তরসমষ্টির জীবস্তরবিদ্যা নির্ণয়ে পরাগ স্তরবিদ্যা সম্পর্কীয় অধ্যয়ন একটি অপরিহার্য বিষয়। পার্বত্য চট্টগ্রামের লিচুবাগান-শিলছড়ি সড়ক বরাবর অবস্থিত সীতাপাহাড় উত্তলভঙ্গের (''Sitapahar anticline'') পশ্চিম বাহুতে প্রকটিত নিওজিন পললের পরাগ স্তরবিদ্যা গবেষণা হয়েছে। বগুড়া-১১ নং কূপে অনুজীবাশ্ম বিজ্ঞান (micropalaeontology) পদ্ধতিতে ওলিগোসিন স্তরকে শনাক্ত করা সম্ভব ছিল না, কেননা সেক্ষেত্রে প্রাণিকুল সূচক জীবাশ্ম (faunal index fossils) এবং শিলাস্তর শনাক্তকারী বিশেষ ক্ষিতিজের (lithologic marker horizons) স্তর ছিল না। পরবর্তীতে নিকটবর্তী কুচমা-১১ কূপের সংগৃহীত নমুনার পরাগ স্তরবিদ্যা গবেষণার মাধ্যমে ওলিগোসিন স্তরের উপস্থিতি সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়া সম্ভব হয়। যদিও গাইবান্ধা এলাকার ওলিগোসিন শিলাস্তর ও পর্বের (facies) সঙ্গে সিংড়া-৯ কূপ এলাকার শিলাস্তর ও পর্বের সঙ্গে তাৎপর্যপূর্ণ অমিল রয়েছে, তবুও গাইবান্ধার ভূতাত্ত্বিক খননকূপ-৩১-এর ওলিগোসিন পরাগরূপ (palynomorphs) সমাবেশের (assemblage) সঙ্গে সিংড়া-৯ কূপে প্রাপ্ত উক্ত সমাবেশের সাদৃশ্য রয়েছে। গাইবান্ধার ভূতাত্ত্বিক কূপ থেকে সংগৃহীত নমুনার পরাগ স্তরবিদ্যাগত গবেষণা অনুসারে বলা যায় সেখানে ওলিগোসিন শিলাস্তরের পুরুত্ব ১৩৪ মিটার। এস.কে বকশী বঙ্গীয় অববাহিকার পরাগতাত্ত্বিক জীব স্তরবিদ্যাগত মন্ডলে বিভক্তীকরণের কাজ সম্পন্ন করেন। পরবর্তীতে এস.কে বকশী এবং ইউ দেব যৌথভাবে পরাগ স্তরবিদ্যাগত স্কীম উপস্থাপন করেন, যেটি সমগ্র বঙ্গীয় অববাহিকার আপার ক্রিটেসিয়াস-প্যালিওসিন ধারাক্রমের জন্য প্রযোজ্য।  [সিফাতুল কাদের চৌধুরী]


'''কালস্তরীয় একক''' (Chronostratigraphic unitভূতাত্তিক বয়স বা উদ্ভবকালভিত্তিক একক। সময় স্তরবিদ্যা একক হিসেবেও এটি পরিচিত। জাতীয় কালস্তরীয় একক-এর আওতায় রয়েছে একটি শিলাস্তরীয় একক, যার প্রান্তসমূহ ওই অঞ্চলে সমকালীন জীবাশ্ম ও অন্যান্য বৈশিষ্ট্যের ভিত্তিতে বিবেচিত হতে পারে।  [মোঃ আবু বকর]
''ভূকম্পনীয় স্তরবিদ্যা'' (Seismostratigraphyস্তরবিদ্যার এই শাখায় অবক্ষেপ ও পাললিক শিলাসমূহকে ভূকম্পনীয় প্রতিফলকের দ্বারা একটি জ্যামিতিক প্রকরণের ব্যাখ্যা করা হয়। ভূকম্পনীয় প্রতিফলকের অদ্বিতীয় বৈশিষ্ট্যসমূহ প্রাকৃতিক স্তরবিদ্যাভিত্তিক ভূতাত্ত্বিক ধ্যানধারণার প্রত্যক্ষ প্রয়োগ অনুমোদন করে।


''আরও দেখুন'' [[ভূঅবনমন|ভূঅবনমন]]; [[কোকিনা স্তর|কোকিনা স্তর]]; [[ভূ-কম্পন বলয়|ভূ]][[ভূ-কম্পন বলয়|-কম্পন বলয়]]; [[সেন্টমার্টিনস দ্বীপ|সেন্টমার্টিনস দ্বীপ]]
''কালস্তরীয় একক'' (Chronostratigraphic unit)  ভূতাত্তিক বয়স বা উদ্ভবকালভিত্তিক একক। সময় স্তরবিদ্যা একক হিসেবেও এটি পরিচিত। জাতীয় কালস্তরীয় একক-এর আওতায় রয়েছে একটি শিলাস্তরীয় একক, যার প্রান্তসমূহ ওই অঞ্চলে সমকালীন জীবাশ্ম ও অন্যান্য বৈশিষ্ট্যের ভিত্তিতে বিবেচিত হতে পারে।  [মোঃ আবু বকর]


[[Category:Table]]
''আরও দেখুন''  [[ভূঅবনমন|ভূঅবনমন]]; [[কোকিনা স্তর|কোকিনা স্তর]]; [[ভূ-কম্পন বলয়|ভূ-কম্পন বলয়]]; [[সেন্টমার্টিনস দ্বীপ|সেন্টমার্টিনস দ্বীপ]]।


[[en:Stratigraphy]]
[[en:Stratigraphy]]


[[en:Stratigraphy]]
[[en:Stratigraphy]]

০৫:৫৩, ২৫ মার্চ ২০১৫ তারিখে সম্পাদিত সর্বশেষ সংস্করণ

স্তরবিদ্যা (Stratigraphy)  স্তরিভূত শিলা (পাললিক ও আগ্নেয়), বিশেষ করে তাদের কাল অনুক্রম, শিলাসমূহের চরিত্র এবং বিভিন্ন অঞ্চলে স্তরসমূহের পারম্পরিক সম্পর্কিত অধ্যয়ন। স্তরবিদ্যার বিভিন্ন ভাগ যথাক্রমে শিলাস্তরীয় একক, জীবস্তরীয় একক, ভূ-কম্পনীয় স্তরবিদ্যা, কালস্তরীয় একক ইত্যাদি।

শিলাস্তরীয় একক (Lithostratigraphy) স্তরবিদ্যার যে উপাদান স্তরের শিলালক্ষণ, শিলাবৈশিষ্ট্যের ভিত্তিতে তাদের এককে সঙ্ঘটন এবং তাদের পারম্পর্য নিয়ে আলোচনা করে তাকে শিলাস্তরীয় একক বলে। অন্যকথায়, শিলালক্ষণ ও অন্যান্য বৈশিষ্ট্য, যেমন, পাললিক গঠন (sedimentary structure), ভূরূপতাত্ত্বিক বৈশিষ্ট্য ও ভূপদার্থবিদ্যার ভিত্তিতে বিভক্ত ও স্বীকৃত শিলারাশি নিয়ে এই বিদ্যায় গবেষণা করা হয়। অবশ্য এই সব একক নির্ধারণে অন্যান্য বৈশিষ্ট্যসমূহও ব্যবহার করা যেতে পারে, বিশেষ করে যেখানে শৈল প্রান্তসমূহ ক্রমমাত্রিক (gradational) অথবা অন্যভাবে অস্পষ্ট। এককসমূহের উল­ম্ব ও পার্শ্বিক উভয় প্রান্ত এইসব বৈশিষ্ট্যের গুরুত্বপূর্ণ অসঙ্গতির ভিত্তিতে শনাক্তযোগ্য।  বাংলাদেশ ভূতাত্ত্বিক জরিপ অধিদপ্তর-জিএসবি (Geological Survey of Bangladesh-GSB) বাংলাদেশের শিলাস্তরীয় একক সংক্রান্ত সংক্ষিপ্ত বর্ণনা মুদ্রিত করেছে। সম্প্রতি জিএসবি বাংলাদেশের স্তরবিদ্যার শব্দকোষ প্রণয়ন করেছে। এ পর্যন্ত প্রাপ্ত মাঠ পর্যায়ের কর্মীদের প্রকাশিত ও অপ্রকাশিত তথ্য, উপাত্ত ও অভিধান প্রণেতাদের উপাত্তের ভিত্তিতে এই সংকলন প্রস্ত্তত করা হয়েছে। এতে পূর্বেকার কাজের ওপর অভিধান প্রণেতাদের বিশে­ষণ ও তাদের দৃষ্টিভঙ্গিও অন্তর্ভুক্ত আছে।

সারণি  স্তরীয় এককসমূহের প্রকার ও শ্রেণীবিন্যাস।

প্রকার ভিত্তি  এককসমূহ
শিলাস্তরীয় এককসমূহ সদস্য, (শিলা এককসমূহ) শিলালক্ষণ  সুপার গ্রুপ, গ্রুপ, স্তরসমষ্টি স্তরসমূহ
জীবস্তরীয় এককসমূহ  জীবাশ্ম বস্ত্ত  সমাবেশ অঞ্চল (Cenozone) রেঞ্জ জোন (Acrozone) একমে জোন (Epibole) অভ্যন্তরীণ জোন (Internal zones)
পরিবেশস্তরীয় একক  উৎপত্তির পরিবেশ পর্বসমূহ
কালস্তরীয় এককসমূহ (কাল-শিলা একক) উৎপত্তির কাল ইউনোথেম (Eonothem)  ইরাথেম (Erathem) সিস্টেম (System) সিরিজ (Series) স্টেজ (Stage)সাবস্টেজ (Substage)
ভূকাল নিরূপক একক (সময় এককসমূহ)  ভূতাত্ত্বিক সময় ইউন (Eon) এরা (Era)পিরিয়ড (Period) ইপক (Epoch) এজ (Age) ক্রন (Chron)

জীবস্তরীয় একক (Biostratigraphic unit)  জীবাশ্ম উপাদান বা প্রত্নজীববিদ্যাগত চরিত্রের ভিত্তিতে বিভাজিত ও চিহ্নিত শিলারাশি এবং এতদনুসারে সংলগ্নশিলা রাশি থেকে পৃথকীকৃত। বাংলাদেশের ভূগর্ভস্থ ও ভূ-পৃষ্ঠস্থ টারশিয়ারী (Tertiary) অবক্ষেপের ওপর ইতোমধ্যেই কয়েকটি অনুজীবাশ্মমূলক ও পরাগ স্তরবিদ্যা (palynostratigraphy) সংক্রান্ত গবেষণা কাজ সম্পন্ন হয়েছে। সম্প্রতি কোয়াটারনারি (Quaternary) অবক্ষেপের ওপরও একই কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে। অবশ্য কিছু গবেষক পার্মীয় যুগের কয়লাবাহী অবক্ষেপের ওপরও কাজ করছেন।

পরাগ স্তরবিদ্যা (Palynostratigraphy)  স্তরবিদ্যা গবেষণায় পরাগতত্ত্ব পদ্ধতির প্রয়োগ। পরাগ স্তরবিদ্যায় প্রধানত স্তরবিদ্যা এবং প্রত্নপ্রতিবেশ (palaeoecology) তত্ত্ব গবেষণায় পরাগ ও রেণুর প্রয়োগ অন্তর্ভুক্ত। বঙ্গীয় অববাহিকার টারশিয়ারি স্তরসমষ্টির জীবস্তরবিদ্যা নির্ণয়ে পরাগ স্তরবিদ্যা সম্পর্কীয় অধ্যয়ন একটি অপরিহার্য বিষয়। পার্বত্য চট্টগ্রামের লিচুবাগান-শিলছড়ি সড়ক বরাবর অবস্থিত সীতাপাহাড় উত্তলভঙ্গের (Sitapahar anticline) পশ্চিম বাহুতে প্রকটিত নিওজিন পললের পরাগ স্তরবিদ্যা গবেষণা হয়েছে। বগুড়া-১১ নং কূপে অনুজীবাশ্ম বিজ্ঞান (micropalaeontology) পদ্ধতিতে ওলিগোসিন স্তরকে শনাক্ত করা সম্ভব ছিল না, কেননা সেক্ষেত্রে প্রাণিকুল সূচক জীবাশ্ম (faunal index fossils) এবং শিলাস্তর শনাক্তকারী বিশেষ ক্ষিতিজের (lithologic marker horizons) স্তর ছিল না। পরবর্তীতে নিকটবর্তী কুচমা-১১ কূপের সংগৃহীত নমুনার পরাগ স্তরবিদ্যা গবেষণার মাধ্যমে ওলিগোসিন স্তরের উপস্থিতি সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়া সম্ভব হয়। যদিও গাইবান্ধা এলাকার ওলিগোসিন শিলাস্তর ও পর্বের (facies) সঙ্গে সিংড়া-৯ কূপ এলাকার শিলাস্তর ও পর্বের সঙ্গে তাৎপর্যপূর্ণ অমিল রয়েছে, তবুও গাইবান্ধার ভূতাত্ত্বিক খননকূপ-৩১-এর ওলিগোসিন পরাগরূপ (palynomorphs) সমাবেশের (assemblage) সঙ্গে সিংড়া-৯ কূপে প্রাপ্ত উক্ত সমাবেশের সাদৃশ্য রয়েছে। গাইবান্ধার ভূতাত্ত্বিক কূপ থেকে সংগৃহীত নমুনার পরাগ স্তরবিদ্যাগত গবেষণা অনুসারে বলা যায় সেখানে ওলিগোসিন শিলাস্তরের পুরুত্ব ১৩৪ মিটার। এস.কে বকশী বঙ্গীয় অববাহিকার পরাগতাত্ত্বিক জীব স্তরবিদ্যাগত মন্ডলে বিভক্তীকরণের কাজ সম্পন্ন করেন। পরবর্তীতে এস.কে বকশী এবং ইউ দেব যৌথভাবে পরাগ স্তরবিদ্যাগত স্কীম উপস্থাপন করেন, যেটি সমগ্র বঙ্গীয় অববাহিকার আপার ক্রিটেসিয়াস-প্যালিওসিন ধারাক্রমের জন্য প্রযোজ্য।  [সিফাতুল কাদের চৌধুরী]

ভূকম্পনীয় স্তরবিদ্যা (Seismostratigraphy)  স্তরবিদ্যার এই শাখায় অবক্ষেপ ও পাললিক শিলাসমূহকে ভূকম্পনীয় প্রতিফলকের দ্বারা একটি জ্যামিতিক প্রকরণের ব্যাখ্যা করা হয়। ভূকম্পনীয় প্রতিফলকের অদ্বিতীয় বৈশিষ্ট্যসমূহ প্রাকৃতিক স্তরবিদ্যাভিত্তিক ভূতাত্ত্বিক ধ্যানধারণার প্রত্যক্ষ প্রয়োগ অনুমোদন করে।

কালস্তরীয় একক (Chronostratigraphic unit)  ভূতাত্তিক বয়স বা উদ্ভবকালভিত্তিক একক। সময় স্তরবিদ্যা একক হিসেবেও এটি পরিচিত। জাতীয় কালস্তরীয় একক-এর আওতায় রয়েছে একটি শিলাস্তরীয় একক, যার প্রান্তসমূহ ওই অঞ্চলে সমকালীন জীবাশ্ম ও অন্যান্য বৈশিষ্ট্যের ভিত্তিতে বিবেচিত হতে পারে।  [মোঃ আবু বকর]

আরও দেখুন ভূঅবনমন; কোকিনা স্তর; ভূ-কম্পন বলয়; সেন্টমার্টিনস দ্বীপ