সেনগুপ্ত, নরেশচন্দ্র: সংশোধিত সংস্করণের মধ্যে পার্থক্য
NasirkhanBot (আলোচনা | অবদান) অ (Added Ennglish article link) |
সম্পাদনা সারাংশ নেই |
||
১০ নং লাইন: | ১০ নং লাইন: | ||
১৯৩৬ সালে গোর্কির মৃত্যুতে শোক পালনের উদ্দেশ্যে নরেশচন্দ্রের সভাপতিত্বে যে ‘নিখিল ভারত প্রগতি লেখক সঙ্ঘ’ গঠিত হয়, তা পরে বাংলা সাহিত্যে নতুন দৃষ্টিভঙ্গি ও প্রগতিশীল চিন্তা বিস্তারে বিশেষ অবদান রাখে। | ১৯৩৬ সালে গোর্কির মৃত্যুতে শোক পালনের উদ্দেশ্যে নরেশচন্দ্রের সভাপতিত্বে যে ‘নিখিল ভারত প্রগতি লেখক সঙ্ঘ’ গঠিত হয়, তা পরে বাংলা সাহিত্যে নতুন দৃষ্টিভঙ্গি ও প্রগতিশীল চিন্তা বিস্তারে বিশেষ অবদান রাখে। | ||
নরেশচন্দ্র রাজনীতির সঙ্গেও কিছুকাল জড়িত ছিলেন। ১৯০৫ সালে [[আহমেদ, সফিউদ্দীন|বঙ্গভঙ্গ]] | নরেশচন্দ্র রাজনীতির সঙ্গেও কিছুকাল জড়িত ছিলেন। ১৯০৫ সালে [[আহমেদ, সফিউদ্দীন|বঙ্গভঙ্গ]] আন্দোলন শুরু হলে তাতে কংগ্রেসের একজন সক্রিয় কর্মী হিসেবে অংশগ্রহণ করে তিনি ব্যাপক পরিচিতি লাভ করেন। রাজনীতির এই সূত্র ধরে পরবর্তীকালে তিনি ওয়ার্কার্স অ্যান্ড পিজেন্টস পার্টি (১৯২৫-২৬) এবং লেবার পার্টি অব ইন্ডিয়া-র (১৯৩৪) প্রেসিডেন্টের দায়িত্বও পালন করেন। [সমরেশ দেবনাথ] | ||
[সমরেশ দেবনাথ] | |||
[[en:Sengupta, Naresh Chandra]] | [[en:Sengupta, Naresh Chandra]] | ||
[[en:Sengupta, Naresh Chandra]] | [[en:Sengupta, Naresh Chandra]] |
০৯:৫৯, ২৩ মার্চ ২০১৫ তারিখে সম্পাদিত সর্বশেষ সংস্করণ
সেনগুপ্ত, নরেশচন্দ্র (১৮৮২-১৯৬৪) আইনজীবী, সাহিত্যিক। ১৮৮২ সালের ৩ মে বগুড়ায় মাতুলালয়ে তাঁর জন্ম; পৈতৃক নিবাস ছিল টাঙ্গাইলের বাঁশী গ্রামে। পিতা মহেশচন্দ্র সেনগুপ্ত ছিলেন ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেট। ১৯০৩ সালে নরেশচন্দ্র কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে দর্শন শাস্ত্রে এমএ ডিগ্রি লাভ করেন এবং ১৯০৫ সাল পর্যন্ত ‘নব্য জার্মান ও ভারতীয় দর্শন’ বিষয়ে প্রেসিডেন্সি কলেজের সরকারি রিসার্চ স্কলার হিসেবে গবেষণা করেন।
নরেশচন্দ্রের জীবন প্রধানত তিনটি ধারায় প্রবাহিত : আইনচর্চা, অধ্যাপনা ও সাহিত্যচর্চা। ১৯০৬ সালে ওকালতি পাস করার পর তিনি কলকাতা হাইকোর্টে আইন ব্যবসা শুরু করেন এবং একই সঙ্গে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন কলেজে অধ্যাপনা করেন। এ সময় প্রাচীন ভারতের ব্যবহার ও সমাজনীতি সম্পর্কে গবেষণা করে তিনি ডিএল ডিগ্রি (১৯১৪) লাভ করেন। পরে ১৯১৭ সালে তিনি ঢাকা আইন কলেজের প্রিন্সিপাল নিযুক্ত হন এবং ১৯২১-২৪ পর্যন্ত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগে অধ্যাপনা করেন। এ সময় তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন অনুষদে ডীনের দায়িত্বও পালন করেন। ঢাকা থেকে কলকাতায় ফিরে নরেশচন্দ্র পুনরায় আইন ব্যবসা শুরু করেন। ১৯৫০ সালে তিনি কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে ‘ঠাকুর আইন অধ্যাপক’ পদে বৃত হন এবং ১৯৫৬ সালে ভারতীয় আইন কমিশনের সদস্য নির্বাচিত হন।
একজন আইনজ্ঞ হিসেবে নরেশচন্দ্রের খ্যাতি ছিল বহুধা বিস্তৃত, যার সুবাদে ১৯৫১ সালে আইন বিশেষজ্ঞ হিসেবে আমন্ত্রিত হয়ে তিনি আমেরিকায় ইউনেস্কোর এক অধিবেশনে যোগদান করেন। তাঁর Evolution of Law আইনশাস্ত্রের একটি প্রামাণিক গ্রন্থ। নরেশচন্দ্র আইনব্যবসা এবং আইনশাস্ত্র রচনার পাশাপাশি বাংলা সাহিত্যেও উল্লেখযোগ্য অবদান রাখেন। তিনি উৎকৃষ্ট মানের বহু প্রবন্ধ, গল্প, নাটক এবং উপন্যাস রচনা করে সাহিত্যক্ষেত্রে বিশেষ স্থান অধিকার করেন। বাংলা সাহিত্যে জীবনধর্মী উপন্যাস রচনার ক্ষেত্রে তিনি ছিলেন অন্যতম পথিকৃৎ। তিনিই প্রথম বাংলা উপন্যাসে যৌনভাবাশ্রিত অপরাধ মনোবৃত্তি রূপায়িত করেন। তথাকথিত বিশুদ্ধ সতীত্বের চেয়ে নারীর ব্যক্তিস্বাতন্ত্র্যকে তিনি বেশি মর্যাদা দেন। এসব কারণে এক সময় তাঁকে কেন্দ্র করে সাহিত্যের ক্ষেত্রে শ্লীলতা-অশ্লীলতা এবং নীতি-দুর্নীতির বিতর্ক ওঠে। ‘ঠানদিদি’ গল্পটি লিখে একবার তিনি অশ্লীলতার দায়ে অভিযুক্তও হন।
দীর্ঘ ওকালতি জীবনে নরেশচন্দ্র যে বিচিত্র অভিজ্ঞতা অর্জন করেন তা মানবমনের কূটিল গতি-প্রকৃতি উদ্ঘাটনে বিশেষ সহায়ক হয়েছিল, যার প্রতিফলন ঘটেছে তাঁর বিভিন্ন রচনায়। তাঁর রচিত গ্রন্থের সংখ্যা ৬০। তাঁর বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য গ্রন্থ: গল্প রূপের অভিশাপ, ঠানদিদি; উপন্যাস অগ্নিসংস্কার (১৯১৯), শুভা (১৯২০), পাপের ছাপ (১৯২২), অভয়ের বিয়ে ইত্যাদি এবং নাটক আনন্দমন্দির (১৯২৩), ঠকের মেলা (১৯২৫), ঋষির মেয়ে (১৯২৬) ইত্যাদি। শুভা, পাপের ছাপ, অভয়ের বিয়ে ইত্যাদি গ্রন্থে তিনি বিভিন্ন সামাজিক সমস্যা তুলে ধরেন। তাঁছাড়া তাঁর আরও কয়েকটি উপন্যাস পরে চলচ্চিত্রায়িত হয়েছে। নরেশচন্দ্র ১৯১০ সালে Abbye of Bliss নামে বঙ্কিমচন্দ্রের বিখ্যাত উপন্যাস আনন্দমঠের ইংরেজি অনুবাদ করেন।
১৯৩৬ সালে গোর্কির মৃত্যুতে শোক পালনের উদ্দেশ্যে নরেশচন্দ্রের সভাপতিত্বে যে ‘নিখিল ভারত প্রগতি লেখক সঙ্ঘ’ গঠিত হয়, তা পরে বাংলা সাহিত্যে নতুন দৃষ্টিভঙ্গি ও প্রগতিশীল চিন্তা বিস্তারে বিশেষ অবদান রাখে।
নরেশচন্দ্র রাজনীতির সঙ্গেও কিছুকাল জড়িত ছিলেন। ১৯০৫ সালে বঙ্গভঙ্গ আন্দোলন শুরু হলে তাতে কংগ্রেসের একজন সক্রিয় কর্মী হিসেবে অংশগ্রহণ করে তিনি ব্যাপক পরিচিতি লাভ করেন। রাজনীতির এই সূত্র ধরে পরবর্তীকালে তিনি ওয়ার্কার্স অ্যান্ড পিজেন্টস পার্টি (১৯২৫-২৬) এবং লেবার পার্টি অব ইন্ডিয়া-র (১৯৩৪) প্রেসিডেন্টের দায়িত্বও পালন করেন। [সমরেশ দেবনাথ]