রূপকথা: সংশোধিত সংস্করণের মধ্যে পার্থক্য
সম্পাদনা সারাংশ নেই |
সম্পাদনা সারাংশ নেই |
||
১ নং লাইন: | ১ নং লাইন: | ||
[[Category:বাংলাপিডিয়া]] | [[Category:বাংলাপিডিয়া]] | ||
'''রূপকথা''' শিশুতোষ কল্পকাহিনী এবং লোকসাহিত্যের একটি জনপ্রিয় শাখা। ইউরোপ ও মধ্যপ্রাচ্যের রূপকথায় প্রায়শ পরীর প্রসঙ্গ থাকলেও বাংলা রূপকথায় সব সময় তা থাকে না। রূপকথা দেশ, কাল ও সমাজের বাইরের কোনো কল্পলোককে পাঠকের সামনে উপস্থিত করা হয়। এ থেকে সংশ্লিষ্ট দেশের লোকসমাজের বিশ্বাস, আচার, সংস্কার প্রভৃতি সম্পর্কে অনেক তথ্য পাওয়া যায়। | '''রূপকথা''' শিশুতোষ কল্পকাহিনী এবং লোকসাহিত্যের একটি জনপ্রিয় শাখা। ইউরোপ ও মধ্যপ্রাচ্যের রূপকথায় প্রায়শ পরীর প্রসঙ্গ থাকলেও বাংলা রূপকথায় সব সময় তা থাকে না। রূপকথা দেশ, কাল ও সমাজের বাইরের কোনো কল্পলোককে পাঠকের সামনে উপস্থিত করা হয়। এ থেকে সংশ্লিষ্ট দেশের লোকসমাজের বিশ্বাস, আচার, সংস্কার প্রভৃতি সম্পর্কে অনেক তথ্য পাওয়া যায়। | ||
প্রকার: লৌকিক ও সাহিত্যিক। বংশপরম্পরায় প্রচলিত রূপকথাগুলি লৌকিক; আর সাহিত্যিক রূপকথা হলো লেখকসৃষ্ট। বাংলায় সাহিত্যিক রূপকথার স্রষ্টা [[রায়চৌধুরী, উপেন্দ্রকিশোর|উপেন্দ্রকিশোর রায়চৌধুরী]] | প্রকার: লৌকিক ও সাহিত্যিক। বংশপরম্পরায় প্রচলিত রূপকথাগুলি লৌকিক; আর সাহিত্যিক রূপকথা হলো লেখকসৃষ্ট। বাংলায় সাহিত্যিক রূপকথার স্রষ্টা [[রায়চৌধুরী, উপেন্দ্রকিশোর|উপেন্দ্রকিশোর রায়চৌধুরী]] (১৮৬৩-১৯১৫)। পরবর্তীকালের জনপ্রিয় লেখক হলেন আশরাফ সিদ্দিকী (জ. ১৯২৭)। | ||
অনেক বাংলা রূপকথা সংস্কৃত পঞ্চতন্ত্র ও পালি [[জাতক|জাতক]] থেকে এসেছে। মধ্যপ্রাচ্যের আরব্য উপন্যাস ও পারস্য উপন্যাস থেকেও বেশকিছু রূপকথার আগমন ঘটেছে। বাংলা রূপকথায় পরীর ভূমিকা রচিত হয়েছে সর্বদা সাহায্যকারী হিসেবে। এছাড়া রাক্ষস-খোক্কস, সন্ন্যাসী-ডাইনি, দৈত্য-দানব, জাদুকর, বীর-পালোয়ান, রাজা-রাণী, রাজপুত্র-রাজকন্যা, উজিরপুত্র-কোটালপুত্র এসব হচ্ছে রূপকথার পাত্রপাত্রী। রূপকথায় পাওয়া যায় নানা অলৌকিক ঘটনা, যেমন: নিঃসন্তান বাদশার সন্তান লাভ, জীবজন্তু কর্তৃক মনুষ্যজাতির ভবিষ্যৎ গণনা, বিপদসঙ্কুল পরিস্থিতিতে সন্ন্যাসীর আগমন, রাজকন্যার প্রতি দৈবসাহায্য, রাজপুত্রের অসাধ্য সাধন ও বিভিন্ন দুঃসাহসিক কাজের পরিচয়, বিপদে সাহায্যের জন্য বনজঙ্গলের পশুপাখি ও গাছপালার এগিয়ে আসা ইত্যাদি। | অনেক বাংলা রূপকথা সংস্কৃত পঞ্চতন্ত্র ও পালি [[জাতক|জাতক]] থেকে এসেছে। মধ্যপ্রাচ্যের আরব্য উপন্যাস ও পারস্য উপন্যাস থেকেও বেশকিছু রূপকথার আগমন ঘটেছে। বাংলা রূপকথায় পরীর ভূমিকা রচিত হয়েছে সর্বদা সাহায্যকারী হিসেবে। এছাড়া রাক্ষস-খোক্কস, সন্ন্যাসী-ডাইনি, দৈত্য-দানব, জাদুকর, বীর-পালোয়ান, রাজা-রাণী, রাজপুত্র-রাজকন্যা, উজিরপুত্র-কোটালপুত্র এসব হচ্ছে রূপকথার পাত্রপাত্রী। রূপকথায় পাওয়া যায় নানা অলৌকিক ঘটনা, যেমন: নিঃসন্তান বাদশার সন্তান লাভ, জীবজন্তু কর্তৃক মনুষ্যজাতির ভবিষ্যৎ গণনা, বিপদসঙ্কুল পরিস্থিতিতে সন্ন্যাসীর আগমন, রাজকন্যার প্রতি দৈবসাহায্য, রাজপুত্রের অসাধ্য সাধন ও বিভিন্ন দুঃসাহসিক কাজের পরিচয়, বিপদে সাহায্যের জন্য বনজঙ্গলের পশুপাখি ও গাছপালার এগিয়ে আসা ইত্যাদি। |
০৪:২৪, ১০ মার্চ ২০১৫ তারিখে সংশোধিত সংস্করণ
রূপকথা শিশুতোষ কল্পকাহিনী এবং লোকসাহিত্যের একটি জনপ্রিয় শাখা। ইউরোপ ও মধ্যপ্রাচ্যের রূপকথায় প্রায়শ পরীর প্রসঙ্গ থাকলেও বাংলা রূপকথায় সব সময় তা থাকে না। রূপকথা দেশ, কাল ও সমাজের বাইরের কোনো কল্পলোককে পাঠকের সামনে উপস্থিত করা হয়। এ থেকে সংশ্লিষ্ট দেশের লোকসমাজের বিশ্বাস, আচার, সংস্কার প্রভৃতি সম্পর্কে অনেক তথ্য পাওয়া যায়।
প্রকার: লৌকিক ও সাহিত্যিক। বংশপরম্পরায় প্রচলিত রূপকথাগুলি লৌকিক; আর সাহিত্যিক রূপকথা হলো লেখকসৃষ্ট। বাংলায় সাহিত্যিক রূপকথার স্রষ্টা উপেন্দ্রকিশোর রায়চৌধুরী (১৮৬৩-১৯১৫)। পরবর্তীকালের জনপ্রিয় লেখক হলেন আশরাফ সিদ্দিকী (জ. ১৯২৭)।
অনেক বাংলা রূপকথা সংস্কৃত পঞ্চতন্ত্র ও পালি জাতক থেকে এসেছে। মধ্যপ্রাচ্যের আরব্য উপন্যাস ও পারস্য উপন্যাস থেকেও বেশকিছু রূপকথার আগমন ঘটেছে। বাংলা রূপকথায় পরীর ভূমিকা রচিত হয়েছে সর্বদা সাহায্যকারী হিসেবে। এছাড়া রাক্ষস-খোক্কস, সন্ন্যাসী-ডাইনি, দৈত্য-দানব, জাদুকর, বীর-পালোয়ান, রাজা-রাণী, রাজপুত্র-রাজকন্যা, উজিরপুত্র-কোটালপুত্র এসব হচ্ছে রূপকথার পাত্রপাত্রী। রূপকথায় পাওয়া যায় নানা অলৌকিক ঘটনা, যেমন: নিঃসন্তান বাদশার সন্তান লাভ, জীবজন্তু কর্তৃক মনুষ্যজাতির ভবিষ্যৎ গণনা, বিপদসঙ্কুল পরিস্থিতিতে সন্ন্যাসীর আগমন, রাজকন্যার প্রতি দৈবসাহায্য, রাজপুত্রের অসাধ্য সাধন ও বিভিন্ন দুঃসাহসিক কাজের পরিচয়, বিপদে সাহায্যের জন্য বনজঙ্গলের পশুপাখি ও গাছপালার এগিয়ে আসা ইত্যাদি।
রূপকথাগুলির কাহিনী সাধারণত দীর্ঘ এবং বিচিত্র বিষয় ও শাখা-প্রশাখায় বিভক্ত। নির্দিষ্ট কোনো স্থান বা চরিত্রকে অবলম্বন করে এর কাহিনী নির্মিত হয় না। অবিশ্বাস্য, উদ্ভট, অর্থহীন, কল্পিত এবং রোমাঞ্চকর ঘটনা রূপকথার উপজীব্য, যেমন: ‘মধুমালা’ গল্পে দেখা যায় সোনার পাখির মাংস খেয়ে মদনকুমারের জন্ম হয়েছে; আবার ‘কাজলরেখা’ গল্পে দেখা যায় কাজলরেখার হাতের ছোঁয়ায় মন্দিরের বন্ধ দরজা তৎক্ষণাৎ খুলে গেছে। তবে এসব অবাস্তব ও অসম্ভব উপাদান রূপকথার গল্পে ব্যবহূত হলেও তার একটি অন্তর্নিহিত সর্বজনীন আবেদন রয়েছে, যে কারণে এগুলি কালজয়ী হয়।
বাংলা রূপকথার প্রথম সংগ্রাহক লালবিহারী দে (১৮২৪-১৮৯৪)। তিনি ১৮৭৫ সালে Folk Tales of Bengal নামে বাংলা রূপকথার একটি ইংরেজি অনুবাদ প্রকাশ করেন। তাঁরই উত্তরসূরি দক্ষিণারঞ্জন মিত্রমজুমদার (১৮৭৭-১৯৫৭)। তিনি বাংলার বিভিন্ন অঞ্চল থেকে রূপকথাগুলি সংগ্রহ করে ঠাকুরদাদার ঝুলি ও ঠাকুরমার ঝুলি নামে দুই খন্ডে প্রকাশ করেন। [শাহিদা খাতুন]
গ্রন্থপঞ্জি M Stokes, Indian Fairy Tales, Calcutta, 1879; Ashraf Siddiqui, Tales from Bangladesh: Collected by a Britisher, Dhaka, 1976; F Bradley-Birt, Bengal Fairy Tales, London, 1920.
আরও দেখুন লোককাহিনী।