বেদে: সংশোধিত সংস্করণের মধ্যে পার্থক্য
NasirkhanBot (আলোচনা | অবদান) অ (Added Ennglish article link) |
সম্পাদনা সারাংশ নেই |
||
২ নং লাইন: | ২ নং লাইন: | ||
'''বেদে''' সাধারণভাবে বাদিয়া বা বাইদ্যা নামে পরিচিত একটি ভ্রাম্যমাণ জনগোষ্ঠী। কথিত আছে যে, ১৬৩৮ খ্রিস্টাব্দে শরণার্থী আরাকানরাজ বল্লাল রাজার সাথে এরা ঢাকায় আসে। পরবর্তীকালে তারা ইসলাম ধর্মে দীক্ষা নেয়। এরা প্রথমে বিক্রমপুরে বসবাস শুরু করে এবং পরে সেখান থেকে বাংলাদেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে, এমনকি ভারতের পশ্চিমবঙ্গ ও আসামেও তারা ছড়িয়ে পড়ে। বেদের আদি নাম মনতং। বেদে নামটি অবজ্ঞাসূচক বাইদ্যা (হাতুড়ে ডাক্তার), পরিমার্জিত ‘বৈদ্য’ (চিকিৎসক) থেকে উদ্ভূত। অধিকাংশ বেদেই চিকিৎসার সাথে সম্পৃক্ত বলে মনতংরা কালক্রমে বেদে নামে অভিহিত হয়। বেদেরা আরাকান রাজ্যের মনতং আদিবাসী (Mon-tong) গোত্রের দেশত্যাগী অংশ। তাই এরা নিজেদের মনতং বলে পরিচয় দিতে বেশি আগ্রহী। যুদ্ধ ও শিকারে অতিশয় দক্ষ বেদেরা কষ্টসহিষ্ণু ও সাহসী। এদের গাত্রবর্ণ ও আকৃতি বাঙালিদের মতোই। | '''বেদে''' সাধারণভাবে বাদিয়া বা বাইদ্যা নামে পরিচিত একটি ভ্রাম্যমাণ জনগোষ্ঠী। কথিত আছে যে, ১৬৩৮ খ্রিস্টাব্দে শরণার্থী আরাকানরাজ বল্লাল রাজার সাথে এরা ঢাকায় আসে। পরবর্তীকালে তারা ইসলাম ধর্মে দীক্ষা নেয়। এরা প্রথমে বিক্রমপুরে বসবাস শুরু করে এবং পরে সেখান থেকে বাংলাদেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে, এমনকি ভারতের পশ্চিমবঙ্গ ও আসামেও তারা ছড়িয়ে পড়ে। বেদের আদি নাম মনতং। বেদে নামটি অবজ্ঞাসূচক বাইদ্যা (হাতুড়ে ডাক্তার), পরিমার্জিত ‘বৈদ্য’ (চিকিৎসক) থেকে উদ্ভূত। অধিকাংশ বেদেই চিকিৎসার সাথে সম্পৃক্ত বলে মনতংরা কালক্রমে বেদে নামে অভিহিত হয়। বেদেরা আরাকান রাজ্যের মনতং আদিবাসী (Mon-tong) গোত্রের দেশত্যাগী অংশ। তাই এরা নিজেদের মনতং বলে পরিচয় দিতে বেশি আগ্রহী। যুদ্ধ ও শিকারে অতিশয় দক্ষ বেদেরা কষ্টসহিষ্ণু ও সাহসী। এদের গাত্রবর্ণ ও আকৃতি বাঙালিদের মতোই। | ||
[[Image:Bedey1.jpg|thumb|right|400px|বেদে মেয়ের সাপ নিয়ে খেলা]] | |||
বেদেরা কৌমসমাজের রীতিনীতি মেনে চলে ও দলবদ্ধ হয়ে থাকে। গোত্রপ্রীতি প্রবল বলে সদস্যরা প্রত্যেকে একে অন্যকে নানাভাবে সাহায্য ও সহযোগিতা করে থাকে। আপাতদৃষ্টিতে বেদেরা পিতৃপ্রধান সমাজ হলেও মেয়েরা যথেষ্ট গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। বেদে ছেলেরা অলস প্রকৃতির। সব রকমের কঠোর পরিশ্রম মেয়েরাই করে থাকে। বেদেরা সাধারণত সমতল ভূমিতে নদী-নালার আশপাশে দলবদ্ধভাবে মাচা তৈরি করে অথবা নৌকায় বাস করে। তাই [[নৌকা|নৌকা]] এদের অত্যন্ত মূল্যবান সম্পদ। বছরের অধিকাংশ সময় বিশেষ করে ফসল তোলার মৌসুমে ব্যবসায়ের উদ্দেশ্যে এরা বাংলাদেশের গ্রামে-গঞ্জে পরিভ্রমণ করে। এই পরিভ্রমণকে বেদেদের ভাষায় গাওয়াল বলে। মহিলারাই বেশি গাওয়ালে যায়। তাদের সাথে থাকে সাপের ঝাঁপি বা ঔষধের ঝুলি। এরা সপরিবারে গাওয়ালে যায় শীতের শুরুতে অগ্রহায়ণ মাসের শেষের দিকে ও আষাঢ় মাসের দ্বিতীয়ার্ধে। | বেদেরা কৌমসমাজের রীতিনীতি মেনে চলে ও দলবদ্ধ হয়ে থাকে। গোত্রপ্রীতি প্রবল বলে সদস্যরা প্রত্যেকে একে অন্যকে নানাভাবে সাহায্য ও সহযোগিতা করে থাকে। আপাতদৃষ্টিতে বেদেরা পিতৃপ্রধান সমাজ হলেও মেয়েরা যথেষ্ট গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। বেদে ছেলেরা অলস প্রকৃতির। সব রকমের কঠোর পরিশ্রম মেয়েরাই করে থাকে। বেদেরা সাধারণত সমতল ভূমিতে নদী-নালার আশপাশে দলবদ্ধভাবে মাচা তৈরি করে অথবা নৌকায় বাস করে। তাই [[নৌকা|নৌকা]] এদের অত্যন্ত মূল্যবান সম্পদ। বছরের অধিকাংশ সময় বিশেষ করে ফসল তোলার মৌসুমে ব্যবসায়ের উদ্দেশ্যে এরা বাংলাদেশের গ্রামে-গঞ্জে পরিভ্রমণ করে। এই পরিভ্রমণকে বেদেদের ভাষায় গাওয়াল বলে। মহিলারাই বেশি গাওয়ালে যায়। তাদের সাথে থাকে সাপের ঝাঁপি বা ঔষধের ঝুলি। এরা সপরিবারে গাওয়ালে যায় শীতের শুরুতে অগ্রহায়ণ মাসের শেষের দিকে ও আষাঢ় মাসের দ্বিতীয়ার্ধে। | ||
প্রথম দফায় চৈত্র মাসের মাঝামাঝি পর্যন্ত ও দ্বিতীয় দফায় আশ্বিন মাসের মাঝামাঝি সময় পর্যন্ত এরা গাওয়াল করে। গাওয়ালের সময় এরা স্থানীয়ভাবে মূলত নৌকা, তাঁবু বা কোন স্কুল ঘরের বারান্দায় সপরিবারে থাকে। গাওয়াল শেষে দলবদ্ধভাবে আবার স্থায়ী ঠিকানায় ফিরে আসে। গাওয়ালে এরা হেঁটে যায় কিংবা নৌকা ব্যবহার করে। | প্রথম দফায় চৈত্র মাসের মাঝামাঝি পর্যন্ত ও দ্বিতীয় দফায় আশ্বিন মাসের মাঝামাঝি সময় পর্যন্ত এরা গাওয়াল করে। গাওয়ালের সময় এরা স্থানীয়ভাবে মূলত নৌকা, তাঁবু বা কোন স্কুল ঘরের বারান্দায় সপরিবারে থাকে। গাওয়াল শেষে দলবদ্ধভাবে আবার স্থায়ী ঠিকানায় ফিরে আসে। গাওয়ালে এরা হেঁটে যায় কিংবা নৌকা ব্যবহার করে। | ||
১০ নং লাইন: | ৯ নং লাইন: | ||
স্থায়ী আবাসে ফিরে বেদেরা সাধারণত বিভিন্ন আনন্দ-উৎসবের আয়োজন করে। এসব উৎসবেই বর-কনে পরস্পরকে পছন্দ ও অভিভাবকের সম্মতিতে বিয়ে করে। বিয়ের ব্যাপারে যুবক-যুবতীর পূর্ণ স্বাধীনতা থাকে। বিয়ের পর স্বামী স্ত্রীর ঘরে যায় এবং স্ত্রীকে স্বামী ও সন্তানের লালন-পালনের জন্য ওয়াদা করতে হয়। বেদেদের নাচ-গানের আসরে বহিরাগত কেউ উপস্থিত থাকলে তাকে প্রলুব্ধ করে বেদে তরুণীকে বিয়ে করার জন্য উৎসাহিত করা হয়। বিয়ে হয়ে গেলে তাকে নিজেদের গোত্রে রেখে দেওয়ার চেষ্টা করা হয়। বহিরাগত কোন যুবক বেদে যুবতীকে ফুঁসলিয়ে বিয়ে করলে তাকে ক্ষতিপূরণ দিতে হয়। এদের সমাজে বহুবিবাহ, বাল্যবিবাহ ও যৌথপরিবার প্রথা নেই। বিধবা বিবাহে কোন বাধা নেই। মুসলমান হলেও বেদে মেয়েরা পর্দা করে না। মহিলারা অত্যন্ত স্বাধীনচেতা ও স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে ছাড়াছাড়ি হলে সম্পত্তি এমনকি পুত্র-কন্যারও বিভাজন হয়, যার বেশির ভাগ পায় স্ত্রী। | স্থায়ী আবাসে ফিরে বেদেরা সাধারণত বিভিন্ন আনন্দ-উৎসবের আয়োজন করে। এসব উৎসবেই বর-কনে পরস্পরকে পছন্দ ও অভিভাবকের সম্মতিতে বিয়ে করে। বিয়ের ব্যাপারে যুবক-যুবতীর পূর্ণ স্বাধীনতা থাকে। বিয়ের পর স্বামী স্ত্রীর ঘরে যায় এবং স্ত্রীকে স্বামী ও সন্তানের লালন-পালনের জন্য ওয়াদা করতে হয়। বেদেদের নাচ-গানের আসরে বহিরাগত কেউ উপস্থিত থাকলে তাকে প্রলুব্ধ করে বেদে তরুণীকে বিয়ে করার জন্য উৎসাহিত করা হয়। বিয়ে হয়ে গেলে তাকে নিজেদের গোত্রে রেখে দেওয়ার চেষ্টা করা হয়। বহিরাগত কোন যুবক বেদে যুবতীকে ফুঁসলিয়ে বিয়ে করলে তাকে ক্ষতিপূরণ দিতে হয়। এদের সমাজে বহুবিবাহ, বাল্যবিবাহ ও যৌথপরিবার প্রথা নেই। বিধবা বিবাহে কোন বাধা নেই। মুসলমান হলেও বেদে মেয়েরা পর্দা করে না। মহিলারা অত্যন্ত স্বাধীনচেতা ও স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে ছাড়াছাড়ি হলে সম্পত্তি এমনকি পুত্র-কন্যারও বিভাজন হয়, যার বেশির ভাগ পায় স্ত্রী। | ||
[[Image:Bedey2.jpg|thumb| | [[Image:Bedey2.jpg|thumb|left|400px|বেদে বহর-১]] | ||
প্রতিটি পরিবারে নিজস্ব নৌকা থাকে। কয়েকটি পরিবার ও নৌকা নিয়ে হয় দল আর কয়েকটি দল নিয়ে হয় বহর। কয়েকটি বহর নিয়ে গঠিত হয় উপগোত্র। বহরের দলপতি সর্দার নামে পরিচিত। প্রতি বহরের জন্য আছেন একজন করে দলপতি যিনি সর্দার নামে পরিচিত। সর্দার তার বহরকে ছোট ছোট দলে ভাগ করে প্রতিটি দলে একজন করে পরিচালকের মাধ্যমে তার কাজ পরিচালনা করেন। সর্দার প্রতিটি দলের বাণিজ্যপথ ও এলাকা নির্ধারণ করেন যাতে দলের অন্যান্য সদস্য প্রয়োজনের সময় তার সাথে যোগাযোগ করতে পারে। বহরের প্রশাসনিক ও নিয়ম-শৃঙ্খলা রক্ষার সকল দায়িত্ব সর্দারের। সর্দার নিয়মভঙ্গকারীকে শাস্তি দেন ও বিভিন্ন বিরোধের সাক্ষ্যপ্রমাণ বিশ্লেষণ করে রায় দেন। বিচার কার্যের শুরুতেই বাদি-বিবাদি উভয় পক্ষকেই জামানত হিসেবে সর্দারের কাছে নির্দিষ্ট পরিমাণ অর্থ গচ্ছিত রাখতে হয়। বিচারে যে হেরে যায় তার জামানত বাজেয়াপ্ত হয়। এই বাজেয়াপ্ত অর্থ খরচ করে বহরের লোকদের খাওয়ানো হয়। পূর্বনির্ধারিত সময়ের মধ্যে কোন দল গাওয়াল থেকে স্থায়ী ঠিকানায় ফিরে আসতে ব্যর্থ হলে সর্দার কৈফিয়ৎ তলব করে শাস্তি দিতে পারেন। সর্দারের ভরণপোষণের দায়িত্ব বহরের। বিয়ের সময় সর্দারকে বিশেষ ফিস দিতে হয়। বিভিন্ন উৎসব-অনুষ্ঠান উপলক্ষেও সর্দার উপহার পেয়ে থাকেন। | প্রতিটি পরিবারে নিজস্ব নৌকা থাকে। কয়েকটি পরিবার ও নৌকা নিয়ে হয় দল আর কয়েকটি দল নিয়ে হয় বহর। কয়েকটি বহর নিয়ে গঠিত হয় উপগোত্র। বহরের দলপতি সর্দার নামে পরিচিত। প্রতি বহরের জন্য আছেন একজন করে দলপতি যিনি সর্দার নামে পরিচিত। সর্দার তার বহরকে ছোট ছোট দলে ভাগ করে প্রতিটি দলে একজন করে পরিচালকের মাধ্যমে তার কাজ পরিচালনা করেন। সর্দার প্রতিটি দলের বাণিজ্যপথ ও এলাকা নির্ধারণ করেন যাতে দলের অন্যান্য সদস্য প্রয়োজনের সময় তার সাথে যোগাযোগ করতে পারে। বহরের প্রশাসনিক ও নিয়ম-শৃঙ্খলা রক্ষার সকল দায়িত্ব সর্দারের। সর্দার নিয়মভঙ্গকারীকে শাস্তি দেন ও বিভিন্ন বিরোধের সাক্ষ্যপ্রমাণ বিশ্লেষণ করে রায় দেন। বিচার কার্যের শুরুতেই বাদি-বিবাদি উভয় পক্ষকেই জামানত হিসেবে সর্দারের কাছে নির্দিষ্ট পরিমাণ অর্থ গচ্ছিত রাখতে হয়। বিচারে যে হেরে যায় তার জামানত বাজেয়াপ্ত হয়। এই বাজেয়াপ্ত অর্থ খরচ করে বহরের লোকদের খাওয়ানো হয়। পূর্বনির্ধারিত সময়ের মধ্যে কোন দল গাওয়াল থেকে স্থায়ী ঠিকানায় ফিরে আসতে ব্যর্থ হলে সর্দার কৈফিয়ৎ তলব করে শাস্তি দিতে পারেন। সর্দারের ভরণপোষণের দায়িত্ব বহরের। বিয়ের সময় সর্দারকে বিশেষ ফিস দিতে হয়। বিভিন্ন উৎসব-অনুষ্ঠান উপলক্ষেও সর্দার উপহার পেয়ে থাকেন। | ||
[[Image:Bedey3.jpg|thumb|right|বেদে বহর- | [[Image:Bedey3.jpg|thumb|right|400px|বেদে বহর-২]] | ||
বহরের জন্য যেমন সর্দার আছেন ঠিক তেমনি আছেন উপগোত্রীয় ও গোত্রীয় সর্দার। বছরে একটি নির্দিষ্ট সময়ে পূর্বনির্ধারিত স্থানে বহরের সর্দাররা মিলিত হয়ে উপগোত্রীয় ও গোত্রীয় সর্দার নির্বাচন করেন। পূর্বে মুন্সিগঞ্জের নিকট গঙ্গা-ব্রহ্মপুত্রের সঙ্গমস্থলে কার্তিক বারুণীর স্নান উপলক্ষে যখন এক মাস স্থায়ী মেলা বসত তখন বিভিন্ন অঞ্চল থেকে সব বহরের সর্দাররা এখানে এসে মিলিত হতেন এবং উপগোত্রীয় ও গোত্রীয় সর্দার নির্বাচিত করতেন। বর্তমানে বেদেরা প্রতিবছর কার্তিকের ৫ তারিখ থেকে অগ্রহায়ণ মাসের ১৫ তারিখের মধ্যে কেন্দ্রীয়ভাবে একত্রিত হয় মুন্সিগঞ্জ ও চট্টগ্রামে।তখন নির্বাচন হয় ও সারা বছরের জমে থাকা সমস্ত বিবাদ-বিসম্বাদ মিটিয়ে ফেলা হয়। | |||
সহজ-সরল জীবনযাপনকারী বেদেরা খুবই সৎ প্রকৃতির। অপরাধ করে গুরুতর শাস্তির ভয় থাকলেও সর্দারের কাছে তারা অপরাধ স্বীকার করতে কুণ্ঠিত হয় না। এদের জীবন ধারণের মান অত্যন্ত নিম্ন ও অপরিচ্ছন্ন। এদের খাদ্য তালিকায় বাছবিচার নেই। বিভিন্ন ধরনের মাদকেও এরা আসক্ত। বাঙালি মুসলমানদের সাথে এদের সামাজিক সম্পর্ক খুব কম। মুসলমান হওয়া সত্ত্বেও তারা হিন্দু দেবদেবীর প্রশস্তি রচনা করে, বিশেষত রাম-লক্ষ্মণ-বিক্রমাদিত্যের গুণকীর্তন করে। | সহজ-সরল জীবনযাপনকারী বেদেরা খুবই সৎ প্রকৃতির। অপরাধ করে গুরুতর শাস্তির ভয় থাকলেও সর্দারের কাছে তারা অপরাধ স্বীকার করতে কুণ্ঠিত হয় না। এদের জীবন ধারণের মান অত্যন্ত নিম্ন ও অপরিচ্ছন্ন। এদের খাদ্য তালিকায় বাছবিচার নেই। বিভিন্ন ধরনের মাদকেও এরা আসক্ত। বাঙালি মুসলমানদের সাথে এদের সামাজিক সম্পর্ক খুব কম। মুসলমান হওয়া সত্ত্বেও তারা হিন্দু দেবদেবীর প্রশস্তি রচনা করে, বিশেষত রাম-লক্ষ্মণ-বিক্রমাদিত্যের গুণকীর্তন করে। | ||
৩৮ নং লাইন: | ৩২ নং লাইন: | ||
বাংলাদেশের বেদেরা এদেশেরই নাগরিক। ভোটাধিকারসহ সব ধরনের নাগরিক সুবিধা তাদের প্রাপ্য। বাংলাদেশে এরা বরাবরই ক্রমহ্রাসমান একটি জনগোষ্ঠী। সময়ের পরিবর্তনে বেদেদের মধ্যে কেউ কেউ শিক্ষা ও অর্থ উপার্জনের মাধ্যমে পেশা বদল করছে বা অন্য সম্প্রদায়ের সাথে বৈবাহিক সম্পর্ক স্থাপন করে স্বকীয় কৌম পরিচয় হারিয়ে ফেলছে। [জয়নাল আবেদিন খান] | বাংলাদেশের বেদেরা এদেশেরই নাগরিক। ভোটাধিকারসহ সব ধরনের নাগরিক সুবিধা তাদের প্রাপ্য। বাংলাদেশে এরা বরাবরই ক্রমহ্রাসমান একটি জনগোষ্ঠী। সময়ের পরিবর্তনে বেদেদের মধ্যে কেউ কেউ শিক্ষা ও অর্থ উপার্জনের মাধ্যমে পেশা বদল করছে বা অন্য সম্প্রদায়ের সাথে বৈবাহিক সম্পর্ক স্থাপন করে স্বকীয় কৌম পরিচয় হারিয়ে ফেলছে। [জয়নাল আবেদিন খান] | ||
''আরও দেখুন'' [[সাপ|সাপ]]; [[সাপুড়ে|সাপুড়ে]]। | |||
[[en:Bedey]] | [[en:Bedey]] |
০৬:৪৭, ২৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৫ তারিখে সম্পাদিত সর্বশেষ সংস্করণ
বেদে সাধারণভাবে বাদিয়া বা বাইদ্যা নামে পরিচিত একটি ভ্রাম্যমাণ জনগোষ্ঠী। কথিত আছে যে, ১৬৩৮ খ্রিস্টাব্দে শরণার্থী আরাকানরাজ বল্লাল রাজার সাথে এরা ঢাকায় আসে। পরবর্তীকালে তারা ইসলাম ধর্মে দীক্ষা নেয়। এরা প্রথমে বিক্রমপুরে বসবাস শুরু করে এবং পরে সেখান থেকে বাংলাদেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে, এমনকি ভারতের পশ্চিমবঙ্গ ও আসামেও তারা ছড়িয়ে পড়ে। বেদের আদি নাম মনতং। বেদে নামটি অবজ্ঞাসূচক বাইদ্যা (হাতুড়ে ডাক্তার), পরিমার্জিত ‘বৈদ্য’ (চিকিৎসক) থেকে উদ্ভূত। অধিকাংশ বেদেই চিকিৎসার সাথে সম্পৃক্ত বলে মনতংরা কালক্রমে বেদে নামে অভিহিত হয়। বেদেরা আরাকান রাজ্যের মনতং আদিবাসী (Mon-tong) গোত্রের দেশত্যাগী অংশ। তাই এরা নিজেদের মনতং বলে পরিচয় দিতে বেশি আগ্রহী। যুদ্ধ ও শিকারে অতিশয় দক্ষ বেদেরা কষ্টসহিষ্ণু ও সাহসী। এদের গাত্রবর্ণ ও আকৃতি বাঙালিদের মতোই।
বেদেরা কৌমসমাজের রীতিনীতি মেনে চলে ও দলবদ্ধ হয়ে থাকে। গোত্রপ্রীতি প্রবল বলে সদস্যরা প্রত্যেকে একে অন্যকে নানাভাবে সাহায্য ও সহযোগিতা করে থাকে। আপাতদৃষ্টিতে বেদেরা পিতৃপ্রধান সমাজ হলেও মেয়েরা যথেষ্ট গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। বেদে ছেলেরা অলস প্রকৃতির। সব রকমের কঠোর পরিশ্রম মেয়েরাই করে থাকে। বেদেরা সাধারণত সমতল ভূমিতে নদী-নালার আশপাশে দলবদ্ধভাবে মাচা তৈরি করে অথবা নৌকায় বাস করে। তাই নৌকা এদের অত্যন্ত মূল্যবান সম্পদ। বছরের অধিকাংশ সময় বিশেষ করে ফসল তোলার মৌসুমে ব্যবসায়ের উদ্দেশ্যে এরা বাংলাদেশের গ্রামে-গঞ্জে পরিভ্রমণ করে। এই পরিভ্রমণকে বেদেদের ভাষায় গাওয়াল বলে। মহিলারাই বেশি গাওয়ালে যায়। তাদের সাথে থাকে সাপের ঝাঁপি বা ঔষধের ঝুলি। এরা সপরিবারে গাওয়ালে যায় শীতের শুরুতে অগ্রহায়ণ মাসের শেষের দিকে ও আষাঢ় মাসের দ্বিতীয়ার্ধে।
প্রথম দফায় চৈত্র মাসের মাঝামাঝি পর্যন্ত ও দ্বিতীয় দফায় আশ্বিন মাসের মাঝামাঝি সময় পর্যন্ত এরা গাওয়াল করে। গাওয়ালের সময় এরা স্থানীয়ভাবে মূলত নৌকা, তাঁবু বা কোন স্কুল ঘরের বারান্দায় সপরিবারে থাকে। গাওয়াল শেষে দলবদ্ধভাবে আবার স্থায়ী ঠিকানায় ফিরে আসে। গাওয়ালে এরা হেঁটে যায় কিংবা নৌকা ব্যবহার করে।
স্থায়ী আবাসে ফিরে বেদেরা সাধারণত বিভিন্ন আনন্দ-উৎসবের আয়োজন করে। এসব উৎসবেই বর-কনে পরস্পরকে পছন্দ ও অভিভাবকের সম্মতিতে বিয়ে করে। বিয়ের ব্যাপারে যুবক-যুবতীর পূর্ণ স্বাধীনতা থাকে। বিয়ের পর স্বামী স্ত্রীর ঘরে যায় এবং স্ত্রীকে স্বামী ও সন্তানের লালন-পালনের জন্য ওয়াদা করতে হয়। বেদেদের নাচ-গানের আসরে বহিরাগত কেউ উপস্থিত থাকলে তাকে প্রলুব্ধ করে বেদে তরুণীকে বিয়ে করার জন্য উৎসাহিত করা হয়। বিয়ে হয়ে গেলে তাকে নিজেদের গোত্রে রেখে দেওয়ার চেষ্টা করা হয়। বহিরাগত কোন যুবক বেদে যুবতীকে ফুঁসলিয়ে বিয়ে করলে তাকে ক্ষতিপূরণ দিতে হয়। এদের সমাজে বহুবিবাহ, বাল্যবিবাহ ও যৌথপরিবার প্রথা নেই। বিধবা বিবাহে কোন বাধা নেই। মুসলমান হলেও বেদে মেয়েরা পর্দা করে না। মহিলারা অত্যন্ত স্বাধীনচেতা ও স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে ছাড়াছাড়ি হলে সম্পত্তি এমনকি পুত্র-কন্যারও বিভাজন হয়, যার বেশির ভাগ পায় স্ত্রী।
প্রতিটি পরিবারে নিজস্ব নৌকা থাকে। কয়েকটি পরিবার ও নৌকা নিয়ে হয় দল আর কয়েকটি দল নিয়ে হয় বহর। কয়েকটি বহর নিয়ে গঠিত হয় উপগোত্র। বহরের দলপতি সর্দার নামে পরিচিত। প্রতি বহরের জন্য আছেন একজন করে দলপতি যিনি সর্দার নামে পরিচিত। সর্দার তার বহরকে ছোট ছোট দলে ভাগ করে প্রতিটি দলে একজন করে পরিচালকের মাধ্যমে তার কাজ পরিচালনা করেন। সর্দার প্রতিটি দলের বাণিজ্যপথ ও এলাকা নির্ধারণ করেন যাতে দলের অন্যান্য সদস্য প্রয়োজনের সময় তার সাথে যোগাযোগ করতে পারে। বহরের প্রশাসনিক ও নিয়ম-শৃঙ্খলা রক্ষার সকল দায়িত্ব সর্দারের। সর্দার নিয়মভঙ্গকারীকে শাস্তি দেন ও বিভিন্ন বিরোধের সাক্ষ্যপ্রমাণ বিশ্লেষণ করে রায় দেন। বিচার কার্যের শুরুতেই বাদি-বিবাদি উভয় পক্ষকেই জামানত হিসেবে সর্দারের কাছে নির্দিষ্ট পরিমাণ অর্থ গচ্ছিত রাখতে হয়। বিচারে যে হেরে যায় তার জামানত বাজেয়াপ্ত হয়। এই বাজেয়াপ্ত অর্থ খরচ করে বহরের লোকদের খাওয়ানো হয়। পূর্বনির্ধারিত সময়ের মধ্যে কোন দল গাওয়াল থেকে স্থায়ী ঠিকানায় ফিরে আসতে ব্যর্থ হলে সর্দার কৈফিয়ৎ তলব করে শাস্তি দিতে পারেন। সর্দারের ভরণপোষণের দায়িত্ব বহরের। বিয়ের সময় সর্দারকে বিশেষ ফিস দিতে হয়। বিভিন্ন উৎসব-অনুষ্ঠান উপলক্ষেও সর্দার উপহার পেয়ে থাকেন।
বহরের জন্য যেমন সর্দার আছেন ঠিক তেমনি আছেন উপগোত্রীয় ও গোত্রীয় সর্দার। বছরে একটি নির্দিষ্ট সময়ে পূর্বনির্ধারিত স্থানে বহরের সর্দাররা মিলিত হয়ে উপগোত্রীয় ও গোত্রীয় সর্দার নির্বাচন করেন। পূর্বে মুন্সিগঞ্জের নিকট গঙ্গা-ব্রহ্মপুত্রের সঙ্গমস্থলে কার্তিক বারুণীর স্নান উপলক্ষে যখন এক মাস স্থায়ী মেলা বসত তখন বিভিন্ন অঞ্চল থেকে সব বহরের সর্দাররা এখানে এসে মিলিত হতেন এবং উপগোত্রীয় ও গোত্রীয় সর্দার নির্বাচিত করতেন। বর্তমানে বেদেরা প্রতিবছর কার্তিকের ৫ তারিখ থেকে অগ্রহায়ণ মাসের ১৫ তারিখের মধ্যে কেন্দ্রীয়ভাবে একত্রিত হয় মুন্সিগঞ্জ ও চট্টগ্রামে।তখন নির্বাচন হয় ও সারা বছরের জমে থাকা সমস্ত বিবাদ-বিসম্বাদ মিটিয়ে ফেলা হয়।
সহজ-সরল জীবনযাপনকারী বেদেরা খুবই সৎ প্রকৃতির। অপরাধ করে গুরুতর শাস্তির ভয় থাকলেও সর্দারের কাছে তারা অপরাধ স্বীকার করতে কুণ্ঠিত হয় না। এদের জীবন ধারণের মান অত্যন্ত নিম্ন ও অপরিচ্ছন্ন। এদের খাদ্য তালিকায় বাছবিচার নেই। বিভিন্ন ধরনের মাদকেও এরা আসক্ত। বাঙালি মুসলমানদের সাথে এদের সামাজিক সম্পর্ক খুব কম। মুসলমান হওয়া সত্ত্বেও তারা হিন্দু দেবদেবীর প্রশস্তি রচনা করে, বিশেষত রাম-লক্ষ্মণ-বিক্রমাদিত্যের গুণকীর্তন করে।
বেদে পুরুষরা লুঙ্গি পরে। মহিলারা দশহাত কাপড় দুই টুকরা করে এক টুকরা কোমরের নিচে দুপ্যাঁচ দিয়ে পরে, অন্য টুকরা গলায় ওড়নার মতো ঝুলিয়ে রাখে এবং গায়ে দেয় ফতুয়া অর্থাৎ আঙ্গি। বর্তমানে অনেক মনতং নারী ও পুরুষ বাঙালি নারী-পুরুষের মতো পোশাক পরতে শুরু করেছে।
বাংলাদেশের বেদেরা মোট নয়টি শাখায় বিভক্ত। এগুলি হলো লাউয়ো বা বাবাজিয়া, চাপাইল্যা, বাজিকর, বেজ বা মিচ্ছিগিরি, গাইন, মেল্লছ, বান্দাইরা, মাল এবং সাপুড়িয়া। এরা সকলেই জমিতে কায়িক পরিশ্রম করাকে অমর্যাদার কাজ বলে মনে করে। এদের সার্বজনীন পেশা হলো চিকিৎসা ব্যবসা ও ওষুধ বিক্রয়। নানারকমের বুনো লতাপাতা আর শেকড়বাকড় এরা ভেষজ হিসেবে ব্যবহার করে। এদের চিকিৎসা পদ্ধতিতে মন্ত্র অর্থাৎ ঝাড়ফুঁকের প্রয়োগ অত্যন্ত বেশি। এরা জড়িবুটি দিয়ে শিশু চিকিৎসা, বাত ও দাঁতের ব্যথা, মালিশ প্রভৃতিতে অভিজ্ঞ বলে বিশ্বাস প্রচলিত আছে। এরা নানাধরনের খেলা দেখায়, উল্কি পরায় ও দৈহিক কসরত প্রদর্শন করে। এরা কোন বৈজ্ঞানিক ও লিখিত চিকিৎসা পদ্ধতি অনুসরণ করে না। চিকিৎসার কাজে মন্ত্র, গাছের শিকড়বাকড়, পশুপাখির হাড়, ধনেশ পাখির তেল, গরু বা মহিষের শিং, কাঁচ ভাঙ্গা, কাকিলা মাছের ধারালো দাঁত ইত্যাদি প্রকারের লোকজ ওষুধ ও জীবের অঙ্গপ্রত্যঙ্গ ব্যবহার করে। এরা মূলত টোটকা চিকিৎসার কাজ করে থাকে। বিভিন্ন ধরনের আকর্ষণীয় খেলা দেখিয়ে এরা লোকজন জড়ো করে ঔষধের ওপর মানুষের বিশ্বাস বৃদ্ধি করে ওষুধ বিক্রয় করে।
বেদেদের বিভিন্ন শাখার চিকিৎসা পদ্ধতি ও ওষুধপত্রের ব্যবস্থা পদ্ধিতি ভিন্ন রকমের। লাউয়ো বেদে বা বাবাজিয়ারা বড়শি দিয়ে মাছ ধরে, মাছ ও মাছের হাড়ের মালা বিক্রয় করে। এদের নিবাস মূলত বিক্রমপুরের বিয়ানিয়া, নারায়ণগঞ্জের চারার ঘোপ, কুমিল্লার আমিরাবাদ, মাইছাখালী, হুরাইল, নারগাঁও, নারায়ণপুর, হাজীগঞ্জ, লাকসাম ও মেহের কালীবাড়ি।
গাইন বেদেরা সুগন্ধি মশলা বিক্রয় করে, এদের নিবাস নেত্রকোনায়। বেজ বেদেরা (মিচ্ছিগিরি) বরিশাল, পিরোজপুর ও চাঁপাই নবাবগঞ্জে থাকে। এদের পেশা চোখের চিকিৎসা করা। এরা ভাঙ্গা কাচ দিয়ে চোখে অস্ত্রোপচার করে। চাপাইল্যা বেদেদের (সাজদার) পেশা হচ্ছে বিষ-ব্যথা নিরাময়কারী মাছের কাঁটা, বাঘের থাবা ও পাখির হাঁড়ের মালা বিক্রয়। এছাড়া এরা আফিম, মুক্তার অলঙ্কার, চুড়ি, শাঁখা, হাঁসুলি ও ঝিনুক বিক্রয় করে। এরা তাঁতি ও জোলাদের জন্য খুব সস্তায় সুন্দর সুন্দর সানা (বুনানি শলা) তৈরিতে পারদর্শী। এরা দক্ষ ডুবুরিও। এদের নিবাস ঢাকার টঙ্গী, ডেমরা ও বাড্ডা, মানিকগঞ্জের সাটুরিয়া, মির্জাপুরের চা বাগান এবং কুমিল্লার আমিরাবাদ। বাজিকর বেদেরা (মেল্লছ) শিয়ালের হাড় ও ধনেশ পাখির তেল বিক্রয় করে। শিয়াইল্যা বেদেরা সর্বভুক বলে অন্য বেদেদের সাথে তাদের লেনদেন হয় না। এরা গরু, শূকর, সাপ খায় এবং হিন্দু দেবদেবীর উপাসনা করে। এরা থাকে লালমনিরহাট ও ভারতের সীমান্ত এলাকায়। বান্দাইরা বেদে ওষুধ বিক্রয় করে ও বানরের খেলা দেখায়, বিভিন্ন ভোজবাজি ও শারীরিক কসরত উপস্থাপন করে। এরা রাম-লক্ষ্মণের বন্দনা-গীত গায় এবং রাম-রাবণের শৌর্যবীর্য ও হনুমানের কীর্তির বর্ণনা করে। লালমনিরহাট ও ভারতের কলকাতায় এদের বসবাস।
মাল বেদেদের (মাল বৈদ্য) পেশা সাপের বিষ ঝাড়া, দাঁতের পোকা ফেলা, রসবাতের তেল বেচা এবং শিঙা ফুঁকা। এরা সাপ ধরে বিক্রয় করে কিন্তু সাপের খেলা দেখায় না। এদের নিবাস মাদারীপুর, বিক্রমপুর, ঢাকা, রাজশাহী, কুমিল্লা, নোয়াখালী এবং ভারতের পশ্চিমবঙ্গ ও আসাম।
সাপুড়িয়া বেদেরা (সাপুড়ে) সাপের তাবিজ কবজ ও ওষুধ বিক্রয় করে ও সাপ ধরে। এরা সাপের খেলা দেখায় কিন্তু সাপ বিক্রয় করে না। এরা মনসা দেবীকে এখনও খুব শ্রদ্ধা করে। বিক্রমপুর, ঢাকা, সুনামগঞ্জ ও ভারতের পশ্চিমবঙ্গ ও আসামে এদের বসবাস।
বেদেদের নিজস্ব ভাষা আছে। এই ভাষার নাম ঠেট বা ঠের। স্বগোত্রীয়দের সাথে কথা বলার সময় এরা এই ভাষা ব্যবহার করে থাকে। তবে বাংলা-ভাষাভাষীর সাথে এরা বাংলা ভাষা ব্যবহার করে। উল্লেখ্য, এই ঠেট ভাষার সাথে আরাকানিদের ভাষার প্রভূত মিল আছে। তাদের ভাষায় ব্যবহূত অধিকাংশ শব্দই বাংলা ভাষার আদিরূপ প্রাকৃত থেকে উদ্ভূত।
বাংলাদেশের বেদেরা এদেশেরই নাগরিক। ভোটাধিকারসহ সব ধরনের নাগরিক সুবিধা তাদের প্রাপ্য। বাংলাদেশে এরা বরাবরই ক্রমহ্রাসমান একটি জনগোষ্ঠী। সময়ের পরিবর্তনে বেদেদের মধ্যে কেউ কেউ শিক্ষা ও অর্থ উপার্জনের মাধ্যমে পেশা বদল করছে বা অন্য সম্প্রদায়ের সাথে বৈবাহিক সম্পর্ক স্থাপন করে স্বকীয় কৌম পরিচয় হারিয়ে ফেলছে। [জয়নাল আবেদিন খান]