বুদ্ধিজীবী হত্যা: সংশোধিত সংস্করণের মধ্যে পার্থক্য
NasirkhanBot (আলোচনা | অবদান) অ (Added Ennglish article link) |
সম্পাদনা সারাংশ নেই |
||
২ নং লাইন: | ২ নং লাইন: | ||
'''বুদ্ধিজীবী হত্যা''' ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময় পূর্ব পাকিস্তানে বাঙালি বুদ্ধিজীবী নিধন ইতিহাসের নৃশংসতম ও বর্বরোচিত হত্যাযজ্ঞ। বাঙালি বুদ্ধিজীবী, শিক্ষাবিদ, সাংবাদিক, সাহিত্যিক, চিকিৎসক, বিজ্ঞানি, আইনজীবী, শিল্পী, দার্শনিক ও রাজনৈতিক চিন্তাবিদগণ এই সুপরিকল্পিত নিধনযজ্ঞের শিকার হন। পাকিস্তানি সামরিক শাসকগোষ্ঠীর নির্দেশনা ও মদদে একশ্রেণীর দালালরা এই হত্যাযজ্ঞ সংঘটিত করে। | '''বুদ্ধিজীবী হত্যা''' ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময় পূর্ব পাকিস্তানে বাঙালি বুদ্ধিজীবী নিধন ইতিহাসের নৃশংসতম ও বর্বরোচিত হত্যাযজ্ঞ। বাঙালি বুদ্ধিজীবী, শিক্ষাবিদ, সাংবাদিক, সাহিত্যিক, চিকিৎসক, বিজ্ঞানি, আইনজীবী, শিল্পী, দার্শনিক ও রাজনৈতিক চিন্তাবিদগণ এই সুপরিকল্পিত নিধনযজ্ঞের শিকার হন। পাকিস্তানি সামরিক শাসকগোষ্ঠীর নির্দেশনা ও মদদে একশ্রেণীর দালালরা এই হত্যাযজ্ঞ সংঘটিত করে। | ||
[[Image:KillingOfIntellectuals.jpg|thumb|right|400px|বুদ্ধিজীবী হত্যার দৃশ্য, মিরপুর বধ্যভূমি]] | |||
বুদ্ধিজীবীরা পূর্ববাংলার জনগণকে বাঙালি জাতীয়তাবাদে উদ্বুদ্ধ করার কাজে বরাবরই ছিলেন তৎপর এবং তাঁরা পশ্চিম পাকিস্তানি শাসকদের স্বৈরাচার ও নিপীড়নের বিরুদ্ধে জনগণকে আন্দোলনে অনুপ্রাণিত করেন। এ কারণে পূর্ববাংলার বুদ্ধিজীবীরা বরাবরই ছিলেন পাকিস্তানি শাসকদের বিরাগভাজন। বুদ্ধিজীবী হত্যা স্পষ্টতই ছিল সামরিক জান্তার নীলনকশার বাস্তবায়ন, যে নীলনকশার লক্ষ্য ছিল বুদ্ধিজীবীদের নিশ্চিহ্ন করে বাঙালি জাতিকে নেতৃত্বহীন এবং বুদ্ধিবৃত্তিক দেউলিয়ায় পরিণত করা। জানা যায় যে, বুদ্ধিজীবী নিধনের নীলনকশা পূর্ব পাকিস্তানের গভর্নরের সামরিক উপদেষ্টা মেজর জেনারেল রাও ফরমান আলীর নেতৃত্বে অন্যূন দশ জনের একটি কমিটি কর্তৃক প্রণীত হয়। এমনও ধারণা রয়েছে যে, ১৪ ডিসেম্বরের নিধনযজ্ঞ সরাসরি রাও ফরমান আলী কর্তৃক পরিচালিত হয়। বাংলাদেশের স্বাধীনতার পর গভর্নর হাউজে ফেলে যাওয়া রাও ফরমান আলীর ডায়েরীর পাতায় বাঙালি বুদ্ধিজীবীদের একটি তালিকা পাওয়া যায় (যাঁদের অধিকাংশই ১৪ ডিসেম্বরে নিহত হন)। ডায়েরীর পাতায় এই তালিকার কথা ফরমান আলী নিজেও স্বীকার করেছেন, যদিও তিনি অস্বীকার করেছেন বুদ্ধিজীবী হত্যার উদ্দেশ্য। পাকবাহিনীর ইস্টার্ন কমান্ডের অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট জেনারেল আমীর আবদুল্লাহ খান নিয়াজীর সার্বিক নির্দেশনায় নীলনকশা বাস্তবায়নে নেতৃত্ব দেন ব্রিগেডিয়ার বশির, লেফটেন্যান্ট কর্নেল হেজাজী, মেজর জহুর, মেজর আসলাম, ক্যাপ্টেন নাসির ও ক্যাপ্টেন কাইউম। অভিযোগ রয়েছে যে, চরম ডানপন্থী ইসলামী আধাসামরিক [[আল-বদর|আল]][[আল-বদর|-বদর]] ও [[আল-শামস|আল]][[আল-শামস|-শামস]] বাহিনীর সশস্ত্র ক্যাডাররা পাকবাহিনীর অস্ত্র সাহায্য নিয়ে তাদেরই ছত্রছায়ায় এই বর্বরোচিত হত্যাযজ্ঞ সংঘটিত করে। | বুদ্ধিজীবীরা পূর্ববাংলার জনগণকে বাঙালি জাতীয়তাবাদে উদ্বুদ্ধ করার কাজে বরাবরই ছিলেন তৎপর এবং তাঁরা পশ্চিম পাকিস্তানি শাসকদের স্বৈরাচার ও নিপীড়নের বিরুদ্ধে জনগণকে আন্দোলনে অনুপ্রাণিত করেন। এ কারণে পূর্ববাংলার বুদ্ধিজীবীরা বরাবরই ছিলেন পাকিস্তানি শাসকদের বিরাগভাজন। বুদ্ধিজীবী হত্যা স্পষ্টতই ছিল সামরিক জান্তার নীলনকশার বাস্তবায়ন, যে নীলনকশার লক্ষ্য ছিল বুদ্ধিজীবীদের নিশ্চিহ্ন করে বাঙালি জাতিকে নেতৃত্বহীন এবং বুদ্ধিবৃত্তিক দেউলিয়ায় পরিণত করা। জানা যায় যে, বুদ্ধিজীবী নিধনের নীলনকশা পূর্ব পাকিস্তানের গভর্নরের সামরিক উপদেষ্টা মেজর জেনারেল রাও ফরমান আলীর নেতৃত্বে অন্যূন দশ জনের একটি কমিটি কর্তৃক প্রণীত হয়। এমনও ধারণা রয়েছে যে, ১৪ ডিসেম্বরের নিধনযজ্ঞ সরাসরি রাও ফরমান আলী কর্তৃক পরিচালিত হয়। বাংলাদেশের স্বাধীনতার পর গভর্নর হাউজে ফেলে যাওয়া রাও ফরমান আলীর ডায়েরীর পাতায় বাঙালি বুদ্ধিজীবীদের একটি তালিকা পাওয়া যায় (যাঁদের অধিকাংশই ১৪ ডিসেম্বরে নিহত হন)। ডায়েরীর পাতায় এই তালিকার কথা ফরমান আলী নিজেও স্বীকার করেছেন, যদিও তিনি অস্বীকার করেছেন বুদ্ধিজীবী হত্যার উদ্দেশ্য। পাকবাহিনীর ইস্টার্ন কমান্ডের অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট জেনারেল আমীর আবদুল্লাহ খান নিয়াজীর সার্বিক নির্দেশনায় নীলনকশা বাস্তবায়নে নেতৃত্ব দেন ব্রিগেডিয়ার বশির, লেফটেন্যান্ট কর্নেল হেজাজী, মেজর জহুর, মেজর আসলাম, ক্যাপ্টেন নাসির ও ক্যাপ্টেন কাইউম। অভিযোগ রয়েছে যে, চরম ডানপন্থী ইসলামী আধাসামরিক [[আল-বদর|আল]][[আল-বদর|-বদর]] ও [[আল-শামস|আল]][[আল-শামস|-শামস]] বাহিনীর সশস্ত্র ক্যাডাররা পাকবাহিনীর অস্ত্র সাহায্য নিয়ে তাদেরই ছত্রছায়ায় এই বর্বরোচিত হত্যাযজ্ঞ সংঘটিত করে। | ||
৭ নং লাইন: | ৮ নং লাইন: | ||
হত্যাকারীরা চিহ্নিত বুদ্ধিজীবীদের তাঁদের নিজ নিজ বাড়ি থেকে গেস্টাপো কায়দায় তুলে নিয়ে কালো কাপড়ে চোখ বেঁধে কোনো বিশেষ নির্যাতন কেন্দ্রে নিয়ে যেত। এসব নির্যাতন কেন্দ্র ছিল মিরপুর, মোহাম্মদপুর, নাখালপাড়া, রাজারবাগ, ফিজিক্যাল ট্রেনিং সেন্টার (মোহাম্মদপুর) এবং শহরের অন্যান্য এলাকায়। বেশিরভাগ সময় তারা শহরে জারীকৃত কার্ফু্যর সুযোগে বুদ্ধিজীবীদের বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে যেত। তাঁদের উপর চলত নির্মম দৈহিক নির্যাতন। তারপর বেশিরভাগ ক্ষেত্রে বেয়নেটের আঘাতে তাঁদের দেহ ক্ষতিবিক্ষত করে হত্যা করা হতো। ঢাকা শহরের প্রধান প্রধান বধ্যভূমি ছিল আলেকদি, কালাপানি, রাইনখোলা, মিরপুর বাংলা কলেজের পশ্চাদ্ভাগ, হরিরামপুর গোরস্তান, মিরপুরের শিয়ালবাড়ি, মোহাম্মদপুর থানার পূর্বপ্রান্ত ও রায়ের বাজার। রায়ের বাজার ও মিরপুরের জলাভূমিতে ডোবানালা, নিচু জমি ও ইটের পাঁজার মধ্যে বুদ্ধিজীবীদের বহুসংখ্যক মৃতদেহ বিক্ষিপ্ত অবস্থায় পড়ে থাকতে দেখা যায়। কালো কাপড়ে চোখ বাঁধা এবং পেছনে হাত বাঁধা অবস্থায় ক্ষতবিক্ষত এই লাশগুলোর অধিকাংশেরই দেহ ফুলে উঠেছিল। তাঁদের বুকে মাথায় ও পিঠে ছিল বুলেটের আঘাত এবং সারাদেহে বেয়নেটের ক্ষতচিহ্ন। | হত্যাকারীরা চিহ্নিত বুদ্ধিজীবীদের তাঁদের নিজ নিজ বাড়ি থেকে গেস্টাপো কায়দায় তুলে নিয়ে কালো কাপড়ে চোখ বেঁধে কোনো বিশেষ নির্যাতন কেন্দ্রে নিয়ে যেত। এসব নির্যাতন কেন্দ্র ছিল মিরপুর, মোহাম্মদপুর, নাখালপাড়া, রাজারবাগ, ফিজিক্যাল ট্রেনিং সেন্টার (মোহাম্মদপুর) এবং শহরের অন্যান্য এলাকায়। বেশিরভাগ সময় তারা শহরে জারীকৃত কার্ফু্যর সুযোগে বুদ্ধিজীবীদের বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে যেত। তাঁদের উপর চলত নির্মম দৈহিক নির্যাতন। তারপর বেশিরভাগ ক্ষেত্রে বেয়নেটের আঘাতে তাঁদের দেহ ক্ষতিবিক্ষত করে হত্যা করা হতো। ঢাকা শহরের প্রধান প্রধান বধ্যভূমি ছিল আলেকদি, কালাপানি, রাইনখোলা, মিরপুর বাংলা কলেজের পশ্চাদ্ভাগ, হরিরামপুর গোরস্তান, মিরপুরের শিয়ালবাড়ি, মোহাম্মদপুর থানার পূর্বপ্রান্ত ও রায়ের বাজার। রায়ের বাজার ও মিরপুরের জলাভূমিতে ডোবানালা, নিচু জমি ও ইটের পাঁজার মধ্যে বুদ্ধিজীবীদের বহুসংখ্যক মৃতদেহ বিক্ষিপ্ত অবস্থায় পড়ে থাকতে দেখা যায়। কালো কাপড়ে চোখ বাঁধা এবং পেছনে হাত বাঁধা অবস্থায় ক্ষতবিক্ষত এই লাশগুলোর অধিকাংশেরই দেহ ফুলে উঠেছিল। তাঁদের বুকে মাথায় ও পিঠে ছিল বুলেটের আঘাত এবং সারাদেহে বেয়নেটের ক্ষতচিহ্ন। | ||
শহীদ বুদ্ধিজীবীদের স্মৃতির উদ্দেশে বাংলাদেশে ১৪ ডিসেম্বর শোকাবহ শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস পালিত হয়। সব শহীদ বুদ্ধিজীবীর পরিচয় দূরের কথা, তাঁদের প্রকৃত সংখ্যাই অদ্যাবধি নিরূপণ করা সম্ভব হয় নি। প্রাপ্ত তথ্যসূত্র থেকে শহীদদের মোটামুটি একটা সংখ্যা দাঁড় করানো যায়। এঁদের মধ্যে ছিলেন ৯৯১ জন শিক্ষাবিদ, ১৩ জন সাংবাদিক, ৪৯ জন চিকিৎসক, ৪২ জন আইনজীবী, ৯ জন সাহিত্যিক ও শিল্পী, ৫ জন প্রকৌশলী,এবং অন্যান্য ২ জন। | শহীদ বুদ্ধিজীবীদের স্মৃতির উদ্দেশে বাংলাদেশে ১৪ ডিসেম্বর শোকাবহ শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস পালিত হয়। সব শহীদ বুদ্ধিজীবীর পরিচয় দূরের কথা, তাঁদের প্রকৃত সংখ্যাই অদ্যাবধি নিরূপণ করা সম্ভব হয় নি। প্রাপ্ত তথ্যসূত্র থেকে শহীদদের মোটামুটি একটা সংখ্যা দাঁড় করানো যায়। এঁদের মধ্যে ছিলেন ৯৯১ জন শিক্ষাবিদ, ১৩ জন সাংবাদিক, ৪৯ জন চিকিৎসক, ৪২ জন আইনজীবী, ৯ জন সাহিত্যিক ও শিল্পী, ৫ জন প্রকৌশলী,এবং অন্যান্য ২ জন। | ||
''সারণি'' শহীদ বুদ্ধিজীবীদের সংখ্যা (জেলাভিত্তিক)। | |||
{| class="table table-bordered table-hover" | |||
জেলা || শিক্ষাবিদ || সাংবাদিক || আইনজীবী || চিকিৎসক || সাহিত্যিক ও শিল্পী || প্রকৌশলী || অন্যান্য || মোট | |- | ||
| জেলা || শিক্ষাবিদ || সাংবাদিক || আইনজীবী || চিকিৎসক || সাহিত্যিক ও শিল্পী || প্রকৌশলী || অন্যান্য || মোট | |||
ঢাকা || ৭৩ || ১১ || ৬ || ৪৬ || ৯ || ৩ || ১ || ১৪৯ | |- | ||
| ঢাকা || ৭৩ || ১১ || ৬ || ৪৬ || ৯ || ৩ || ১ || ১৪৯ | |||
ফরিদপুর || ৪৩ || || ২ || || || || || ৪৫ | |- | ||
| ফরিদপুর || ৪৩ || || ২ || || || || || ৪৫ | |||
টাঙ্গাইল || ২৯ || || || || || || ১ || ৩০ | |- | ||
| টাঙ্গাইল || ২৯ || || || || || || ১ || ৩০ | |||
ময়মনসিংহ || ৭৫ || || ২ || || || || || ৭৭ | |- | ||
| ময়মনসিংহ || ৭৫ || || ২ || || || || || ৭৭ | |||
চট্টগ্রাম || ৬২ || || ১ || || || ১ || || ৬৪ | |- | ||
| চট্টগ্রাম || ৬২ || || ১ || || || ১ || || ৬৪ | |||
পার্বত্য চট্টগ্রাম || ১৪ || || ১ || || || || || ১৫ | |- | ||
| পার্বত্য চট্টগ্রাম || ১৪ || || ১ || || || || || ১৫ | |||
সিলেট || ২৬ || || ২ || || || || || ২৮ | |- | ||
| সিলেট || ২৬ || || ২ || || || || || ২৮ | |||
কুমিল্লা || ৮০ || || ৫ || ১ || || || || ৮৬ | |- | ||
| কুমিল্লা || ৮০ || || ৫ || ১ || || || || ৮৬ | |||
নোয়াখালি || ৪৩ || || ২ || || || || || ৪৫ | |- | ||
| নোয়াখালি || ৪৩ || || ২ || || || || || ৪৫ | |||
খুলনা || ৬৫ || ১ || ২ || || || || || ৬৮ | |- | ||
| খুলনা || ৬৫ || ১ || ২ || || || || || ৬৮ | |||
যশোর || ৯১ || || ৪ || ২ || || || || ৯৭ | |- | ||
| যশোর || ৯১ || || ৪ || ২ || || || || ৯৭ | |||
বরিশাল || ৭৫ || || || || || || || ৭৫ | |- | ||
| বরিশাল || ৭৫ || || || || || || || ৭৫ | |||
পটুয়াখালি || ৪ || || || || || || || ৪ | |- | ||
| পটুয়াখালি || ৪ || || || || || || || ৪ | |||
কুষ্টিয়া || ৪৫ || || || || || || || ৪৫ | |- | ||
| কুষ্টিয়া || ৪৫ || || || || || || || ৪৫ | |||
রাজশাহী || ৫৪ || ১ || ৫ || || || ১ || || ৬১ | |- | ||
| রাজশাহী || ৫৪ || ১ || ৫ || || || ১ || || ৬১ | |||
রংপুর || ৭২ || || ৪ || || || || || ৭৬ | |- | ||
| রংপুর || ৭২ || || ৪ || || || || || ৭৬ | |||
দিনাজপুর || ৬১ || || ২ || || || || || ৬৩ | |- | ||
| দিনাজপুর || ৬১ || || ২ || || || || || ৬৩ | |||
বগুড়া || ২৬ || || ২ || || || || || ২৮ | |- | ||
| বগুড়া || ২৬ || || ২ || || || || || ২৮ | |||
পাবনা || ৫৩ || || ২ || || || || || ৫৫ | |- | ||
| পাবনা || ৫৩ || || ২ || || || || || ৫৫ | |||
মোট || ৯৯১ || ১৩ || ৪২ || ৪৯ || ৯ || ৫ || ২ || ১১১১ | |- | ||
| মোট || ৯৯১ || ১৩ || ৪২ || ৪৯ || ৯ || ৫ || ২ || ১১১১ | |||
[মুয়াযযম হুসায়ন খান] | [মুয়াযযম হুসায়ন খান] | ||
[[en:Killing of Intellectuals]] | [[en:Killing of Intellectuals]] |
০৫:০৫, ২৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৫ তারিখে সংশোধিত সংস্করণ
বুদ্ধিজীবী হত্যা ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময় পূর্ব পাকিস্তানে বাঙালি বুদ্ধিজীবী নিধন ইতিহাসের নৃশংসতম ও বর্বরোচিত হত্যাযজ্ঞ। বাঙালি বুদ্ধিজীবী, শিক্ষাবিদ, সাংবাদিক, সাহিত্যিক, চিকিৎসক, বিজ্ঞানি, আইনজীবী, শিল্পী, দার্শনিক ও রাজনৈতিক চিন্তাবিদগণ এই সুপরিকল্পিত নিধনযজ্ঞের শিকার হন। পাকিস্তানি সামরিক শাসকগোষ্ঠীর নির্দেশনা ও মদদে একশ্রেণীর দালালরা এই হত্যাযজ্ঞ সংঘটিত করে।
বুদ্ধিজীবীরা পূর্ববাংলার জনগণকে বাঙালি জাতীয়তাবাদে উদ্বুদ্ধ করার কাজে বরাবরই ছিলেন তৎপর এবং তাঁরা পশ্চিম পাকিস্তানি শাসকদের স্বৈরাচার ও নিপীড়নের বিরুদ্ধে জনগণকে আন্দোলনে অনুপ্রাণিত করেন। এ কারণে পূর্ববাংলার বুদ্ধিজীবীরা বরাবরই ছিলেন পাকিস্তানি শাসকদের বিরাগভাজন। বুদ্ধিজীবী হত্যা স্পষ্টতই ছিল সামরিক জান্তার নীলনকশার বাস্তবায়ন, যে নীলনকশার লক্ষ্য ছিল বুদ্ধিজীবীদের নিশ্চিহ্ন করে বাঙালি জাতিকে নেতৃত্বহীন এবং বুদ্ধিবৃত্তিক দেউলিয়ায় পরিণত করা। জানা যায় যে, বুদ্ধিজীবী নিধনের নীলনকশা পূর্ব পাকিস্তানের গভর্নরের সামরিক উপদেষ্টা মেজর জেনারেল রাও ফরমান আলীর নেতৃত্বে অন্যূন দশ জনের একটি কমিটি কর্তৃক প্রণীত হয়। এমনও ধারণা রয়েছে যে, ১৪ ডিসেম্বরের নিধনযজ্ঞ সরাসরি রাও ফরমান আলী কর্তৃক পরিচালিত হয়। বাংলাদেশের স্বাধীনতার পর গভর্নর হাউজে ফেলে যাওয়া রাও ফরমান আলীর ডায়েরীর পাতায় বাঙালি বুদ্ধিজীবীদের একটি তালিকা পাওয়া যায় (যাঁদের অধিকাংশই ১৪ ডিসেম্বরে নিহত হন)। ডায়েরীর পাতায় এই তালিকার কথা ফরমান আলী নিজেও স্বীকার করেছেন, যদিও তিনি অস্বীকার করেছেন বুদ্ধিজীবী হত্যার উদ্দেশ্য। পাকবাহিনীর ইস্টার্ন কমান্ডের অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট জেনারেল আমীর আবদুল্লাহ খান নিয়াজীর সার্বিক নির্দেশনায় নীলনকশা বাস্তবায়নে নেতৃত্ব দেন ব্রিগেডিয়ার বশির, লেফটেন্যান্ট কর্নেল হেজাজী, মেজর জহুর, মেজর আসলাম, ক্যাপ্টেন নাসির ও ক্যাপ্টেন কাইউম। অভিযোগ রয়েছে যে, চরম ডানপন্থী ইসলামী আধাসামরিক আল-বদর ও আল-শামস বাহিনীর সশস্ত্র ক্যাডাররা পাকবাহিনীর অস্ত্র সাহায্য নিয়ে তাদেরই ছত্রছায়ায় এই বর্বরোচিত হত্যাযজ্ঞ সংঘটিত করে।
২৫ মার্চ রাতে ঢাকায় নিরীহ জনগণের উপর পাকবাহিনীর আক্রমণের সময় থেকেই শুরু হয় বুদ্ধিজীবী নিধনযজ্ঞ। পাকিস্তানি সেনারা তাদের অপারেশন সার্চলাইট কর্মসূচির আওতায় চিহ্নিত বুদ্ধিজীবীদের খুঁজে বের করে হত্যা করে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েকজন শিক্ষককে ২৫ মার্চ রাতেই হত্যা করা হয়। তবে বুদ্ধিজীবীদের পরিকল্পিত হত্যাযজ্ঞ ১৬ ডিসেম্বর পাকবাহিনীর আত্মসমর্পণের তিন চার দিন আগে বিশেষত ঢাকায় ভয়াবহ রূপ পরিগ্রহ করে। ১৪ ডিসেম্বর রাতে ঢাকায় দুই শতেরও বেশি বুদ্ধিজীবীকে তাঁদের বাড়ি থেকে তুলে নেয়া হয়। ঢাকায় এ হত্যাকান্ড শুরু হয় এবং ক্রমে ক্রমে তা সমগ্র পূর্ব পাকিস্তানে, বিশেষত জেলা ও মহকুমা শহরে সম্প্রসারিত হয়।
হত্যাকারীরা চিহ্নিত বুদ্ধিজীবীদের তাঁদের নিজ নিজ বাড়ি থেকে গেস্টাপো কায়দায় তুলে নিয়ে কালো কাপড়ে চোখ বেঁধে কোনো বিশেষ নির্যাতন কেন্দ্রে নিয়ে যেত। এসব নির্যাতন কেন্দ্র ছিল মিরপুর, মোহাম্মদপুর, নাখালপাড়া, রাজারবাগ, ফিজিক্যাল ট্রেনিং সেন্টার (মোহাম্মদপুর) এবং শহরের অন্যান্য এলাকায়। বেশিরভাগ সময় তারা শহরে জারীকৃত কার্ফু্যর সুযোগে বুদ্ধিজীবীদের বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে যেত। তাঁদের উপর চলত নির্মম দৈহিক নির্যাতন। তারপর বেশিরভাগ ক্ষেত্রে বেয়নেটের আঘাতে তাঁদের দেহ ক্ষতিবিক্ষত করে হত্যা করা হতো। ঢাকা শহরের প্রধান প্রধান বধ্যভূমি ছিল আলেকদি, কালাপানি, রাইনখোলা, মিরপুর বাংলা কলেজের পশ্চাদ্ভাগ, হরিরামপুর গোরস্তান, মিরপুরের শিয়ালবাড়ি, মোহাম্মদপুর থানার পূর্বপ্রান্ত ও রায়ের বাজার। রায়ের বাজার ও মিরপুরের জলাভূমিতে ডোবানালা, নিচু জমি ও ইটের পাঁজার মধ্যে বুদ্ধিজীবীদের বহুসংখ্যক মৃতদেহ বিক্ষিপ্ত অবস্থায় পড়ে থাকতে দেখা যায়। কালো কাপড়ে চোখ বাঁধা এবং পেছনে হাত বাঁধা অবস্থায় ক্ষতবিক্ষত এই লাশগুলোর অধিকাংশেরই দেহ ফুলে উঠেছিল। তাঁদের বুকে মাথায় ও পিঠে ছিল বুলেটের আঘাত এবং সারাদেহে বেয়নেটের ক্ষতচিহ্ন।
শহীদ বুদ্ধিজীবীদের স্মৃতির উদ্দেশে বাংলাদেশে ১৪ ডিসেম্বর শোকাবহ শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস পালিত হয়। সব শহীদ বুদ্ধিজীবীর পরিচয় দূরের কথা, তাঁদের প্রকৃত সংখ্যাই অদ্যাবধি নিরূপণ করা সম্ভব হয় নি। প্রাপ্ত তথ্যসূত্র থেকে শহীদদের মোটামুটি একটা সংখ্যা দাঁড় করানো যায়। এঁদের মধ্যে ছিলেন ৯৯১ জন শিক্ষাবিদ, ১৩ জন সাংবাদিক, ৪৯ জন চিকিৎসক, ৪২ জন আইনজীবী, ৯ জন সাহিত্যিক ও শিল্পী, ৫ জন প্রকৌশলী,এবং অন্যান্য ২ জন।
সারণি শহীদ বুদ্ধিজীবীদের সংখ্যা (জেলাভিত্তিক)।
জেলা | শিক্ষাবিদ | সাংবাদিক | আইনজীবী | চিকিৎসক | সাহিত্যিক ও শিল্পী | প্রকৌশলী | অন্যান্য | মোট |
ঢাকা | ৭৩ | ১১ | ৬ | ৪৬ | ৯ | ৩ | ১ | ১৪৯ |
ফরিদপুর | ৪৩ | ২ | ৪৫ | |||||
টাঙ্গাইল | ২৯ | ১ | ৩০ | |||||
ময়মনসিংহ | ৭৫ | ২ | ৭৭ | |||||
চট্টগ্রাম | ৬২ | ১ | ১ | ৬৪ | ||||
পার্বত্য চট্টগ্রাম | ১৪ | ১ | ১৫ | |||||
সিলেট | ২৬ | ২ | ২৮ | |||||
কুমিল্লা | ৮০ | ৫ | ১ | ৮৬ | ||||
নোয়াখালি | ৪৩ | ২ | ৪৫ | |||||
খুলনা | ৬৫ | ১ | ২ | ৬৮ | ||||
যশোর | ৯১ | ৪ | ২ | ৯৭ | ||||
বরিশাল | ৭৫ | ৭৫ | ||||||
পটুয়াখালি | ৪ | ৪ | ||||||
কুষ্টিয়া | ৪৫ | ৪৫ | ||||||
রাজশাহী | ৫৪ | ১ | ৫ | ১ | ৬১ | |||
রংপুর | ৭২ | ৪ | ৭৬ | |||||
দিনাজপুর | ৬১ | ২ | ৬৩ | |||||
বগুড়া | ২৬ | ২ | ২৮ | |||||
পাবনা | ৫৩ | ২ | ৫৫ | |||||
মোট | ৯৯১ | ১৩ | ৪২ | ৪৯ | ৯ | ৫ | ২ | ১১১১
[মুয়াযযম হুসায়ন খান] |