পানিবাহিত রোগ: সংশোধিত সংস্করণের মধ্যে পার্থক্য

(Added Ennglish article link)
 
সম্পাদনা সারাংশ নেই
১৪ নং লাইন: ১৪ নং লাইন:
পানিবাহিত রোগের বিস্তার দমনের জন্য পরিশ্রুত পানির সরবরাহ একটি পূর্বশর্ত। পরিশ্রুত পানির ব্যবস্থা করে এবং মলের নিরাপদ নিষ্কাশনের মাধ্যমে এসব রোগ সীমিত রাখা যায়। বাংলাদেশ একটি ব্যাপারে সৌভাগ্যবান যে প্রায় শতকরা ৮০ ভাগের উপর গ্রামে হস্তচালিত নলকূপের ব্যবস্থা রয়েছে। এই কার্যক্রম যা কয়েক দশক আগে থেকে হাতে নেয়া হয়েছিল, জাতিসংঘের দাতাগোষ্ঠী কর্তৃক একটি বিরাট সাফল্যরূপে এটি চিহ্নিত হয়েছে। এছাড়া যন্ত্রচালিত গভীর নলকূপ গ্রামে খুবই সাধারণ, যেগুলি ধানক্ষেতে সেচ কার্যে ব্যবহার করা হয়ে থাকে। এগুলিও পরিশ্রুত পানীয় জল সরবরাহ করে থাকে। কিন্তু পানিবাহিত রোগের উপর যথেষ্ট প্রভাব শুধু পরিশ্রুত পানি সরবরাহের ব্যবস্থা করলেই হবে না, এর সাথে সাথে মল নিষ্কাশনের ব্যবস্থাও খুবই জরুরি। এ কারণে সরকার একটি প্রকল্প গ্রহণ করেছে যার উদ্দেশ্য হচ্ছে গ্রামাঞ্চলে কম খরচের স্যানিটারি পায়খানা তৈরি ও ব্যবহার। এই সাহসী উদ্যোগ ইতোমধ্যেই বহুলাংশে সাফল্য অর্জন করেছে। জনসংখ্যার ঘনত্বের কারণে এবং ঝোপ-জঙ্গলের ও স্বতন্ত্র বাস্ত্তভিটের গাছগাছালি অপসারণের ফলে, যেগুলি পরিবারের সুবিধাজনক মলত্যাগের স্থানরূপে ব্যবহার হতো, তা এখন না থাকায় এটা আশা করা যাচ্ছে যে স্যানিটারি পায়খানা গ্রামে দ্রুত জনপ্রিয়তা অর্জন করবে।  [জিয়া উদ্দিন আহমেদ]
পানিবাহিত রোগের বিস্তার দমনের জন্য পরিশ্রুত পানির সরবরাহ একটি পূর্বশর্ত। পরিশ্রুত পানির ব্যবস্থা করে এবং মলের নিরাপদ নিষ্কাশনের মাধ্যমে এসব রোগ সীমিত রাখা যায়। বাংলাদেশ একটি ব্যাপারে সৌভাগ্যবান যে প্রায় শতকরা ৮০ ভাগের উপর গ্রামে হস্তচালিত নলকূপের ব্যবস্থা রয়েছে। এই কার্যক্রম যা কয়েক দশক আগে থেকে হাতে নেয়া হয়েছিল, জাতিসংঘের দাতাগোষ্ঠী কর্তৃক একটি বিরাট সাফল্যরূপে এটি চিহ্নিত হয়েছে। এছাড়া যন্ত্রচালিত গভীর নলকূপ গ্রামে খুবই সাধারণ, যেগুলি ধানক্ষেতে সেচ কার্যে ব্যবহার করা হয়ে থাকে। এগুলিও পরিশ্রুত পানীয় জল সরবরাহ করে থাকে। কিন্তু পানিবাহিত রোগের উপর যথেষ্ট প্রভাব শুধু পরিশ্রুত পানি সরবরাহের ব্যবস্থা করলেই হবে না, এর সাথে সাথে মল নিষ্কাশনের ব্যবস্থাও খুবই জরুরি। এ কারণে সরকার একটি প্রকল্প গ্রহণ করেছে যার উদ্দেশ্য হচ্ছে গ্রামাঞ্চলে কম খরচের স্যানিটারি পায়খানা তৈরি ও ব্যবহার। এই সাহসী উদ্যোগ ইতোমধ্যেই বহুলাংশে সাফল্য অর্জন করেছে। জনসংখ্যার ঘনত্বের কারণে এবং ঝোপ-জঙ্গলের ও স্বতন্ত্র বাস্ত্তভিটের গাছগাছালি অপসারণের ফলে, যেগুলি পরিবারের সুবিধাজনক মলত্যাগের স্থানরূপে ব্যবহার হতো, তা এখন না থাকায় এটা আশা করা যাচ্ছে যে স্যানিটারি পায়খানা গ্রামে দ্রুত জনপ্রিয়তা অর্জন করবে।  [জিয়া উদ্দিন আহমেদ]


''আরও দেখুন'' উদরাময় রোগ; আমাশয়, কলেরা।
''আরও দেখুন'' [[উদরাময় রোগ|উদরাময় রোগ]]; [[আমাশয়|আমাশয়''; [[কলেরা|কলেরা]]।


[[en:Water-borne Disease]]
[[en:Water-borne Disease]]
[[en:Water-borne Disease]]


[[en:Water-borne Disease]]
[[en:Water-borne Disease]]

১০:৩২, ৯ ফেব্রুয়ারি ২০১৫ তারিখে সংশোধিত সংস্করণ

পানিবাহিত রোগ (Water-borne Disease)  যে কোন রোগ যা দূষিত পানির মাধ্যমে সংক্রমিত হয় বা ছড়িয়ে থাকে। মানুষ ও অন্যান্য জীবজন্তুর বিভিন্ন রোগের জন্য প্রধানত দায়ী রোগ সৃষ্টিকারী অণুজীব (ব্যাকটেরিয়া এবং ভাইরাস) এবং কয়েক রকমের পরজীবী। এ ধরনের সংক্রামক রোগ সৃষ্টিকারী অণুজীবেরা নানা রকমের কৌশলের সাহায্যে পরিবেশে বেঁচে থাকে বা বিস্তার লাভ করে। বিস্তার লাভের জন্য তিনটি প্রধান পন্থা হচ্ছে- বাতাস, পানি এবং শারীরিক সংস্পর্শ। শ্বাসনালীর মাধ্যমে দেহে প্রবেশের জন্য বাতাসই মাধ্যম রূপে কাজ করে। অপর পক্ষে পরিপাক তন্ত্রের সংক্রমণের মাধ্যম হলো পানি। অনেক সংক্রামক, উদাহরণস্বরূপ ভাইরাস শরীরে প্রবেশ করতে পাকস্থলীকে পথ হিসেবে ব্যবহার করে। শীঘ্রই অভিষ্ট অঙ্গে পৌঁছে পাকস্থলীকে পরিত্যাগ করে। আর একটি উদাহরণ হচ্ছে পলি ভাইরাস, যা খাদ্য ও পানীয়ের সাথে দেহ অভ্যন্তরে প্রবেশ করে এবং আক্রমণ করে অন্যান্য অঙ্গ যেমন স্নায়ুতন্ত্রকে, এবং এর বৈশিষ্ট্যমূলক পক্ষাঘাতের সৃষ্টি করে।

মানুষের পৌষ্টিকনালী একটি প্রবেশপথ, যার মাধ্যমে বাইরের অনেক পদার্থ খাদ্যের সঙ্গে দেহে প্রবেশ করার সুযোগ পায়। রোগ সৃষ্টিকারী পরজীবীরা মানুষের পাকস্থলীতে পানির মাধ্যমেই অধিকাংশ ক্ষেত্রে প্রবেশ করে থাকে।

পানিবাহিত রোগের মধ্যে ডায়রিয়া, আমাশয়, পোলিও, হিপাটাইটিস এ ও ই, টাইপয়েড, প্যারাটাইপয়েড ইত্যাদি অন্যতম। এটি দুই ধরনের, তরল ডায়রিয়া এবং আমাশয়। কলেরা মারাত্মক ধরনের ডায়রিয়ার একটি আদিরূপ; এটি Vibrio cholerae নামক জীবাণুর কারণে ঘটে থাকে। আর এক রকমের জীবাণু (ব্যাসিলাসসমূহ) যেমন শিগেলা, আমাশয় সংঘটিত করে থাকে। এটি এক ধরনের ডায়রিয়া যাকে সচরাচর ব্যাসিলারি ডিসেন্ট্রি বলা হয়ে থাকে। সালমোনেলা নামক একদল জীবাণু অন্ত্রে পানির সাথে প্রবেশ করে সংক্রমণের প্রথম পর্যায়ে ডায়রিয়া না ঘটাতেও পারে, কিন্তু তাদের আসল রোগ প্রকাশ পায় এক রকমের জ্বর দিয়ে, যাকে বলে আন্ত্রিক জ্বর বা টাইফয়েড।

ডায়রিয়া এবং অন্যান্য পাকস্থলীর পীড়া যে সব পরজীবীর কারণে ঘটে তাদেরকে পানিবাহিত বলে এবং এরা পানির মাধ্যমেই সংক্রামিত হয়। বাংলাদেশে সংঘটিত রোগব্যাধির শতকরা প্রায় পঁচিশ ভাগের কারণ এসব রোগ, এর প্রায় শতকরা ১২ ভাগ ডায়রিয়া, এবং শতকরা ১০ ভাগ আন্ত্রিক জ্বরসহ পাকস্থলীর রোগ। এ কারণে এদেশের সামগ্রিক রোগ চিত্রের মধ্যে পানি একটি মুখ্য ভূমিকা পালন করে।

ডায়রিয়া এবং পাকস্থলীর অন্যান্য রোগজীবাণু মুখের মাধ্যমে দেহে প্রবেশ করে। রোগজীবাণুরা পায়ুপথ দিয়ে পুনরায় পরিবেশে বিমুক্ত হয়, সেখানে এগুলি অবস্থান করে, পরে মুখপথে দূষিত খাদ্য ও পানির মাধ্যমে পুনঃপ্রবেশের সুযোগ পায়। দেশের জনসাধারণের সামগ্রিক নিকাশ ব্যবস্থা ও ব্যক্তিগত পরিচ্ছন্নতার মানের উপর অধিকাংশক্ষেত্রে রোগজীবাণুর দেহ অভ্যন্তরে পুনঃপ্রবেশের ব্যাপ্তি নির্ধারিত হয়ে থাকে। যেখানে মল নিঃষ্কাশনের ব্যবস্থা অস্বাস্থ্যকর সেখানে জীবাণু বিমুক্ত হয়ে পানিকে দূষিত করে। এই অবস্থা পায়ুপথ থেকে মুখে সংক্রমণের খুব উচ্চমাত্রার সংক্রমণে পর্যবসিত হয়। ব্যাকটেরিয়া, এককোষী আন্ত্রিক পরজীবী যেমন অ্যামিবা এবং Giardia এবং আন্ত্রিক কৃমিসমূহের সংক্রমণ (যেমন ডিম এবং সিস্ট) এই পথে ঘটে থাকে।

শতকরা ৮০ ভাগেরও বেশি জনসংখ্যা এই কৃষি ভূমিময় বাংলাদেশের গ্রামে বসবাস করে। গ্রামগুলিতে ভাল পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থা এবং নিরাপদ পানীয় জলের অভাব আছে। এছাড়া এগুলি নানারকমের সমস্যায় জর্জরিত যেমন যোগাযোগ ব্যবস্থার দুরবস্থা, বিদ্যুতের অপ্রতুলতা, অপর্যাপ্ত স্বাস্থ্য সেবা ইত্যাদি। বাংলাদেশে উন্মুক্ত স্থানে মলত্যাগ করা খুবই সাধারণ ঘটনা। গ্রামাঞ্চলে সামগ্রিক অবস্থা আন্ত্রিক রোগজীবাণুসমূহের বিশেষ করে মুখ ও পায়ুপথে দ্রুত সঞ্চারণের জন্য খুবই সুবিধাজনক, যা দেশের রোগচিত্র থেকে খুব ভাল ফুটে ওঠে। শহরগুলিতে সাধারণত কিছু পয়ঃনিষ্কাশনের ব্যবস্থা আছে, কিন্তু সে ব্যবস্থাও নানা রকমের অপর্যাপ্ততায় সংকীর্ণ এবং তা অন্তর্নিহিতভাবেই যথেষ্ট ভাল বলা যায় না। যদিও নগরগুলিতে অধিবাসীদের পানীয় জল সরবরাহ করা হয়ে থাকে যা নিরাপদ হবার কথা, কিন্তু নিম্ন-রক্ষণাবেক্ষণকৃত পয়ঃনিষ্কাশনের কারণে প্রায়শই এই পানি সরবরাহের সময় দূষিত হয়ে যায় এবং বৃষ্টির সময় পানিতে ও বন্যার প্লাবনের ফলে প্রচুর পরিমাণে জীবাণুর অবমুক্তি একটি নিয়মিত ঘটনা।

পানিবাহিত রোগের বিস্তার দমনের জন্য পরিশ্রুত পানির সরবরাহ একটি পূর্বশর্ত। পরিশ্রুত পানির ব্যবস্থা করে এবং মলের নিরাপদ নিষ্কাশনের মাধ্যমে এসব রোগ সীমিত রাখা যায়। বাংলাদেশ একটি ব্যাপারে সৌভাগ্যবান যে প্রায় শতকরা ৮০ ভাগের উপর গ্রামে হস্তচালিত নলকূপের ব্যবস্থা রয়েছে। এই কার্যক্রম যা কয়েক দশক আগে থেকে হাতে নেয়া হয়েছিল, জাতিসংঘের দাতাগোষ্ঠী কর্তৃক একটি বিরাট সাফল্যরূপে এটি চিহ্নিত হয়েছে। এছাড়া যন্ত্রচালিত গভীর নলকূপ গ্রামে খুবই সাধারণ, যেগুলি ধানক্ষেতে সেচ কার্যে ব্যবহার করা হয়ে থাকে। এগুলিও পরিশ্রুত পানীয় জল সরবরাহ করে থাকে। কিন্তু পানিবাহিত রোগের উপর যথেষ্ট প্রভাব শুধু পরিশ্রুত পানি সরবরাহের ব্যবস্থা করলেই হবে না, এর সাথে সাথে মল নিষ্কাশনের ব্যবস্থাও খুবই জরুরি। এ কারণে সরকার একটি প্রকল্প গ্রহণ করেছে যার উদ্দেশ্য হচ্ছে গ্রামাঞ্চলে কম খরচের স্যানিটারি পায়খানা তৈরি ও ব্যবহার। এই সাহসী উদ্যোগ ইতোমধ্যেই বহুলাংশে সাফল্য অর্জন করেছে। জনসংখ্যার ঘনত্বের কারণে এবং ঝোপ-জঙ্গলের ও স্বতন্ত্র বাস্ত্তভিটের গাছগাছালি অপসারণের ফলে, যেগুলি পরিবারের সুবিধাজনক মলত্যাগের স্থানরূপে ব্যবহার হতো, তা এখন না থাকায় এটা আশা করা যাচ্ছে যে স্যানিটারি পায়খানা গ্রামে দ্রুত জনপ্রিয়তা অর্জন করবে।  [জিয়া উদ্দিন আহমেদ]

আরও দেখুন উদরাময় রোগ; [[আমাশয়|আমাশয়; কলেরা