দত্ত, কানাইলাল: সংশোধিত সংস্করণের মধ্যে পার্থক্য

(Added Ennglish article link)
 
সম্পাদনা সারাংশ নেই
১ নং লাইন: ১ নং লাইন:
[[Category:Banglapedia]]
[[Category:Banglapedia]]
'''দত্ত'''''', ''''''কানাইলাল '''(১৮৮৮-১৯০৮)  ভারতের মুক্তিসংগ্রামের প্রথম যুগের বিপ্লবী। পশ্চিমবঙ্গের চন্দননগরে মাতুলালয়ে তিনি জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পৈতৃক নিবাস ছিল হুগলি জেলার খরসরাই বেগমপুর গ্রামে। পিতা চুনিলাল দত্ত ছিলেন বোম্বাইতে ব্রিটিশ সরকারের নৌবিভাগের একজন হিসাবরক্ষক।
'''দত্ত, কানাইলাল''' (১৮৮৮-১৯০৮)  ভারতের মুক্তিসংগ্রামের প্রথম যুগের বিপ্লবী। পশ্চিমবঙ্গের চন্দননগরে মাতুলালয়ে তিনি জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পৈতৃক নিবাস ছিল হুগলি জেলার খরসরাই বেগমপুর গ্রামে। পিতা চুনিলাল দত্ত ছিলেন বোম্বাইতে ব্রিটিশ সরকারের নৌবিভাগের একজন হিসাবরক্ষক।


কানাইলাল শৈশবে বোম্বাইয়ের গিরগাঁও এরিয়ান এডুকেশন সোসাইটি স্কুলে এবং পরবর্তী সময়ে চন্দননগর দুপ্লেক্স বিদ্যামন্দিরে (বর্তমান কানাইলাল বিদ্যামন্দির) অধ্যয়ন করেন। ১৯০৮ সালে  [[১০৬৪৩৪|হুগলি মহসীন কলেজ]] থেকে বিএ পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হলেও বিপ্লব ও রাজদ্রোহিতার অভিযোগে কারারুদ্ধ হওয়ায় ইংরেজ সরকার তাঁকে ডিগ্রি প্রদানে বাধা দেয়, কিন্তু  [[১০০৮৯১|কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়]] সে বাধা উপেক্ষা করে তাঁকে ডিগ্রি প্রদান করে।
কানাইলাল শৈশবে বোম্বাইয়ের গিরগাঁও এরিয়ান এডুকেশন সোসাইটি স্কুলে এবং পরবর্তী সময়ে চন্দননগর দুপ্লেক্স বিদ্যামন্দিরে (বর্তমান কানাইলাল বিদ্যামন্দির) অধ্যয়ন করেন। ১৯০৮ সালে  [[|হুগলি মহসীন কলেজ|হুগলি মহসীন কলেজ]] থেকে বি.এ পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হলেও বিপ্লব ও রাজদ্রোহিতার অভিযোগে কারারুদ্ধ হওয়ায় ইংরেজ সরকার তাঁকে ডিগ্রি প্রদানে বাধা দেয়, কিন্তু  [[কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়|কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়]] সে বাধা উপেক্ষা করে তাঁকে ডিগ্রি প্রদান করে।


কানাইলাল চন্দননগর যুগান্তর পার্টির প্রতিষ্ঠাতা অধ্যাপক চারুচন্দ্র রায়ের সান্নিধ্য লাভ করেন। তাঁরই অনুপ্রেরণায় কানাইলাল বিপ্লববাদে দীক্ষা নেন এবং ব্রিটিশ-ভারতে বিপ্লবীদের মুখপত্র  [[১০৫০২১|যুগান্তর]] ও অন্যান্য পত্রিকা, বিভিন্ন বৈপ্লবিক আন্দোলনের ইতিহাস এবং দেশপ্রেমিকদের জীবনগাথা পাঠে উদ্বুদ্ধ হন। শ্রীশচন্দ্র ঘোষের সক্রিয় নেতৃত্বাধীনে উপেন্দ্রনাথ, নরেন্দ্রনাথ, বসন্তকুমার প্রমুখের গোন্দলপাড়া গোষ্ঠীর সঙ্গে কানাইলালের ঘনিষ্ঠতা হয়। শ্রীশচন্দ্রেরই ব্যবস্থাপনায় কানাইলাল আগ্নেয়াস্ত্রের ব্যবহারও আয়ত্ত করেন। ১৯০৫ সালের  [[১০৬৪৯৯|বঙ্গভঙ্গ]] আন্দোলন চন্দননগর গোষ্ঠীর মধ্যে এক নব উদ্দীপনার সৃষ্টি করে, যার পুরোভাগে ছিলেন কানাইলাল। এ সময় চন্দননগরে বিলাতি বস্ত্রবর্জন আন্দোলনসহ ইংরেজবিরোধী অসংখ্য স্থানীয় আন্দোলনে নেতৃত্ব দিয়ে কানাইলাল খ্যাতি অর্জন করেন।
কানাইলাল চন্দননগর যুগান্তর পার্টির প্রতিষ্ঠাতা অধ্যাপক চারুচন্দ্র রায়ের সান্নিধ্য লাভ করেন। তাঁরই অনুপ্রেরণায় কানাইলাল বিপ্লববাদে দীক্ষা নেন এবং ব্রিটিশ-ভারতে বিপ্লবীদের মুখপত্র যুগান্তর ও অন্যান্য পত্রিকা, বিভিন্ন বৈপ্লবিক আন্দোলনের ইতিহাস এবং দেশপ্রেমিকদের জীবনগাথা পাঠে উদ্বুদ্ধ হন। শ্রীশচন্দ্র ঘোষের সক্রিয় নেতৃত্বাধীনে উপেন্দ্রনাথ, নরেন্দ্রনাথ, বসন্তকুমার প্রমুখের গোন্দলপাড়া গোষ্ঠীর সঙ্গে কানাইলালের ঘনিষ্ঠতা হয়। শ্রীশচন্দ্রেরই ব্যবস্থাপনায় কানাইলাল আগ্নেয়াস্ত্রের ব্যবহারও আয়ত্ত করেন। ১৯০৫ সালের  বঙ্গভঙ্গ আন্দোলন চন্দননগর গোষ্ঠীর মধ্যে এক নব উদ্দীপনার সৃষ্টি করে, যার পুরোভাগে ছিলেন কানাইলাল। এ সময় চন্দননগরে বিলাতি বস্ত্রবর্জন আন্দোলনসহ ইংরেজবিরোধী অসংখ্য স্থানীয় আন্দোলনে নেতৃত্ব দিয়ে কানাইলাল খ্যাতি অর্জন করেন।


বিএ পরীক্ষা শেষে কলকাতায়  [[১০১৬৪০|বারীন্দ্রকুমার ঘোষ]] পরিচালিত গুপ্ত বিপ্লবী গোষ্ঠীর কার্যকলাপে কানাইলাল সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করেন এবং ভবানীপুরের এক গৃহে গোপনে কর্মময় জীবন অতিবাহিত করেন। পরে তিনি বাগবাজারের ১৫ গোপীমোহন দত্ত লেনে চলে যান, যেখানে ছিল বিপ্লবীদের জন্য অস্ত্র ও বারুদের ভান্ডার।
বিএ পরীক্ষা শেষে কলকাতায়  [[ঘোষ, বারীন্দ্রকুমার|বারীন্দ্রকুমার ঘোষ]] পরিচালিত গুপ্ত বিপ্লবী গোষ্ঠীর কার্যকলাপে কানাইলাল সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করেন এবং ভবানীপুরের এক গৃহে গোপনে কর্মময় জীবন অতিবাহিত করেন। পরে তিনি বাগবাজারের ১৫ গোপীমোহন দত্ত লেনে চলে যান, যেখানে ছিল বিপ্লবীদের জন্য অস্ত্র ও বারুদের ভান্ডার।


১৯০৮ সালের ৩০ এপ্রিল  [[১০১৭৪৯|প্রফুল্ল চাকী]] ও ক্ষুদিরাম বসুর কিংসফোর্ড হত্যাচেষ্টার ঘটনায় ২ মে  [[১০১৬৩৭|অরবিন্দ ঘোষ]], বারীন্দ্রকুমার ও অন্যান্যের সঙ্গে কানাইলালও গ্রেপ্তার হন। তাঁদের আলীপুর জেলে (বর্তমান প্রেসিডেন্সি জেল) রাখা হয়। এ মামলার অন্যতম আসামি নরেন্দ্রনাথ গোস্বামী প্রাণ বাঁচাতে বিপ্লবীদের বিরুদ্ধে রাজসাক্ষী হওয়ায় বিপ্লবীরা ক্ষুব্ধ হয়ে তাঁকে হত্যার সিদ্ধান্ত নেয়। ১৯০৮ সালের ৩১ আগস্ট দলপতির নির্দেশে কানাইলাল অপর বন্দি বিপ্লবী সত্যেন্দ্রনাথ বসুর সহযোগিতায় জেল হাসপাতালের ভেতরই নরেন গোস্বামীকে হত্যা করেন। বিচারে কানাইলালের ফাঁসির আদেশ হয়। এ খবর শুনে তিনি তাঁর জন্য কাউকে আপিল করতে নিষেধ করেন। বিনা আপিলে ১৯০৮ সালের ১০ নভেম্বর ফাঁসিকাষ্ঠে আরোহণ করার পূর্ব পর্যন্ত তিনি ছিলেন নির্বিকার, স্বাভাবিক। তাঁর এ বীরোচিত আচরণ এবং মাতৃভূমির মুক্তির জন্য এ আত্মত্যাগ কারাকর্মীদের পর্যন্ত অভিভূত করে।  [সমবারু চন্দ্র মহন্ত]
১৯০৮ সালের ৩০ এপ্রিল  [[চাকী, প্রফুল্ল|প্রফুল্ল চাকী]] ও ক্ষুদিরাম বসুর কিংসফোর্ড হত্যাচেষ্টার ঘটনায় ২ মে  [[ঘোষ, অরবিন্দ অরবিন্দ ঘোষ]], বারীন্দ্রকুমার ও অন্যান্যের সঙ্গে কানাইলালও গ্রেপ্তার হন। তাঁদের আলীপুর জেলে (বর্তমান প্রেসিডেন্সি জেল) রাখা হয়। এ মামলার অন্যতম আসামি নরেন্দ্রনাথ গোস্বামী প্রাণ বাঁচাতে বিপ্লবীদের বিরুদ্ধে রাজসাক্ষী হওয়ায় বিপ্লবীরা ক্ষুব্ধ হয়ে তাঁকে হত্যার সিদ্ধান্ত নেয়। ১৯০৮ সালের ৩১ আগস্ট দলপতির নির্দেশে কানাইলাল অপর বন্দি বিপ্লবী সত্যেন্দ্রনাথ বসুর সহযোগিতায় জেল হাসপাতালের ভেতরই নরেন গোস্বামীকে হত্যা করেন। বিচারে কানাইলালের ফাঁসির আদেশ হয়। এ খবর শুনে তিনি তাঁর জন্য কাউকে আপিল করতে নিষেধ করেন। বিনা আপিলে ১৯০৮ সালের ১০ নভেম্বর ফাঁসিকাষ্ঠে আরোহণ করার পূর্ব পর্যন্ত তিনি ছিলেন নির্বিকার, স্বাভাবিক। তাঁর এ বীরোচিত আচরণ এবং মাতৃভূমির মুক্তির জন্য এ আত্মত্যাগ কারাকর্মীদের পর্যন্ত অভিভূত করে।  [সমবারু চন্দ্র মহন্ত]
 
<!-- imported from file: দত্ত, কানাইলাল.html-->


[[en:Dutta, Kanailal]]
[[en:Dutta, Kanailal]]

০৪:১৭, ৭ জানুয়ারি ২০১৫ তারিখে সংশোধিত সংস্করণ

দত্ত, কানাইলাল (১৮৮৮-১৯০৮)  ভারতের মুক্তিসংগ্রামের প্রথম যুগের বিপ্লবী। পশ্চিমবঙ্গের চন্দননগরে মাতুলালয়ে তিনি জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পৈতৃক নিবাস ছিল হুগলি জেলার খরসরাই বেগমপুর গ্রামে। পিতা চুনিলাল দত্ত ছিলেন বোম্বাইতে ব্রিটিশ সরকারের নৌবিভাগের একজন হিসাবরক্ষক।

কানাইলাল শৈশবে বোম্বাইয়ের গিরগাঁও এরিয়ান এডুকেশন সোসাইটি স্কুলে এবং পরবর্তী সময়ে চন্দননগর দুপ্লেক্স বিদ্যামন্দিরে (বর্তমান কানাইলাল বিদ্যামন্দির) অধ্যয়ন করেন। ১৯০৮ সালে  [[|হুগলি মহসীন কলেজ|হুগলি মহসীন কলেজ]] থেকে বি.এ পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হলেও বিপ্লব ও রাজদ্রোহিতার অভিযোগে কারারুদ্ধ হওয়ায় ইংরেজ সরকার তাঁকে ডিগ্রি প্রদানে বাধা দেয়, কিন্তু  কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় সে বাধা উপেক্ষা করে তাঁকে ডিগ্রি প্রদান করে।

কানাইলাল চন্দননগর যুগান্তর পার্টির প্রতিষ্ঠাতা অধ্যাপক চারুচন্দ্র রায়ের সান্নিধ্য লাভ করেন। তাঁরই অনুপ্রেরণায় কানাইলাল বিপ্লববাদে দীক্ষা নেন এবং ব্রিটিশ-ভারতে বিপ্লবীদের মুখপত্র যুগান্তর ও অন্যান্য পত্রিকা, বিভিন্ন বৈপ্লবিক আন্দোলনের ইতিহাস এবং দেশপ্রেমিকদের জীবনগাথা পাঠে উদ্বুদ্ধ হন। শ্রীশচন্দ্র ঘোষের সক্রিয় নেতৃত্বাধীনে উপেন্দ্রনাথ, নরেন্দ্রনাথ, বসন্তকুমার প্রমুখের গোন্দলপাড়া গোষ্ঠীর সঙ্গে কানাইলালের ঘনিষ্ঠতা হয়। শ্রীশচন্দ্রেরই ব্যবস্থাপনায় কানাইলাল আগ্নেয়াস্ত্রের ব্যবহারও আয়ত্ত করেন। ১৯০৫ সালের  বঙ্গভঙ্গ আন্দোলন চন্দননগর গোষ্ঠীর মধ্যে এক নব উদ্দীপনার সৃষ্টি করে, যার পুরোভাগে ছিলেন কানাইলাল। এ সময় চন্দননগরে বিলাতি বস্ত্রবর্জন আন্দোলনসহ ইংরেজবিরোধী অসংখ্য স্থানীয় আন্দোলনে নেতৃত্ব দিয়ে কানাইলাল খ্যাতি অর্জন করেন।

বিএ পরীক্ষা শেষে কলকাতায়  বারীন্দ্রকুমার ঘোষ পরিচালিত গুপ্ত বিপ্লবী গোষ্ঠীর কার্যকলাপে কানাইলাল সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করেন এবং ভবানীপুরের এক গৃহে গোপনে কর্মময় জীবন অতিবাহিত করেন। পরে তিনি বাগবাজারের ১৫ গোপীমোহন দত্ত লেনে চলে যান, যেখানে ছিল বিপ্লবীদের জন্য অস্ত্র ও বারুদের ভান্ডার।

১৯০৮ সালের ৩০ এপ্রিল  প্রফুল্ল চাকী ও ক্ষুদিরাম বসুর কিংসফোর্ড হত্যাচেষ্টার ঘটনায় ২ মে  ঘোষ, অরবিন্দ অরবিন্দ ঘোষ, বারীন্দ্রকুমার ও অন্যান্যের সঙ্গে কানাইলালও গ্রেপ্তার হন। তাঁদের আলীপুর জেলে (বর্তমান প্রেসিডেন্সি জেল) রাখা হয়। এ মামলার অন্যতম আসামি নরেন্দ্রনাথ গোস্বামী প্রাণ বাঁচাতে বিপ্লবীদের বিরুদ্ধে রাজসাক্ষী হওয়ায় বিপ্লবীরা ক্ষুব্ধ হয়ে তাঁকে হত্যার সিদ্ধান্ত নেয়। ১৯০৮ সালের ৩১ আগস্ট দলপতির নির্দেশে কানাইলাল অপর বন্দি বিপ্লবী সত্যেন্দ্রনাথ বসুর সহযোগিতায় জেল হাসপাতালের ভেতরই নরেন গোস্বামীকে হত্যা করেন। বিচারে কানাইলালের ফাঁসির আদেশ হয়। এ খবর শুনে তিনি তাঁর জন্য কাউকে আপিল করতে নিষেধ করেন। বিনা আপিলে ১৯০৮ সালের ১০ নভেম্বর ফাঁসিকাষ্ঠে আরোহণ করার পূর্ব পর্যন্ত তিনি ছিলেন নির্বিকার, স্বাভাবিক। তাঁর এ বীরোচিত আচরণ এবং মাতৃভূমির মুক্তির জন্য এ আত্মত্যাগ কারাকর্মীদের পর্যন্ত অভিভূত করে।  [সমবারু চন্দ্র মহন্ত]