তিসি: সংশোধিত সংস্করণের মধ্যে পার্থক্য
NasirkhanBot (আলোচনা | অবদান) অ (Added Ennglish article link) |
সম্পাদনা সারাংশ নেই |
||
১ নং লাইন: | ১ নং লাইন: | ||
[[Category:Banglapedia]] | [[Category:Banglapedia]] | ||
'''তিসি '''(Flax) তেল ও অাঁশ উৎপাদনকারী গুল্মজাতীয় উদ্ভিদ, ''Linum usitatissimum''। শণ নামেও পরিচিত Linaceae গোত্রের এ ফসল গ্রীষ্মমন্ডল ও উপগ্রীষ্মমন্ডলের অনেক দেশেই আবাদ হয়। চাষযোগ্য তিসির জাতটি সম্ভবত এদের এক বন্য প্রজাতি ''L. angustifolium'' থেকে প্রাচীনকালে উদ্ভূত হয়েছে। খুব সম্ভব তখন এর বীজের জন্য তেলপ্রদায়ী উদ্ভিদ হিসেবে ব্যবহার করা হতো। পরবর্তীতে মিশরে সুন্দর লিনেনজাতীয় বস্ত্র তৈরিতে এর ব্যবহার শুরু হয়। তবে বর্তমানে তেলের জন্য বীজ এবং অাঁশের জন্য এ উদ্ভিদকে বিভিন্ন পদ্ধতিতে চাষ করা হয়। | '''তিসি''' (Flax) তেল ও অাঁশ উৎপাদনকারী গুল্মজাতীয় উদ্ভিদ, ''Linum usitatissimum''। শণ নামেও পরিচিত Linaceae গোত্রের এ ফসল গ্রীষ্মমন্ডল ও উপগ্রীষ্মমন্ডলের অনেক দেশেই আবাদ হয়। চাষযোগ্য তিসির জাতটি সম্ভবত এদের এক বন্য প্রজাতি ''L. angustifolium'' থেকে প্রাচীনকালে উদ্ভূত হয়েছে। খুব সম্ভব তখন এর বীজের জন্য তেলপ্রদায়ী উদ্ভিদ হিসেবে ব্যবহার করা হতো। পরবর্তীতে মিশরে সুন্দর লিনেনজাতীয় বস্ত্র তৈরিতে এর ব্যবহার শুরু হয়। তবে বর্তমানে তেলের জন্য বীজ এবং অাঁশের জন্য এ উদ্ভিদকে বিভিন্ন পদ্ধতিতে চাষ করা হয়। | ||
[[Image:Flax.jpg|thumb|400px|right|তিসি গাছ]] | |||
তিসি গাছ ৩০ থেকে ৮০ সেমি উঁচু হয়; এর মূল কান্ড স্পষ্ট এবং শিকড় খাড়া। প্রতি ফুলে নীল, সাদা অথবা হালকা গোলাপি রঙের পাঁচটি পাপড়ি থাকে, পরাগধানী থাকে দশটি যা নীল অথবা হলুদ। ভোর বেলায় ফুল ফোটে এবং বিকেলে পাপড়ি ঝরে যায়। চকচকে, উজ্জ্বল চ্যাপটা বীজ বাদামি অথবা হলুদ রঙের, প্রায় এক সেমি লম্বা। কান্ডের বাকল বা ছাল থেকে অাঁশ তৈরি করা হয়। | তিসি গাছ ৩০ থেকে ৮০ সেমি উঁচু হয়; এর মূল কান্ড স্পষ্ট এবং শিকড় খাড়া। প্রতি ফুলে নীল, সাদা অথবা হালকা গোলাপি রঙের পাঁচটি পাপড়ি থাকে, পরাগধানী থাকে দশটি যা নীল অথবা হলুদ। ভোর বেলায় ফুল ফোটে এবং বিকেলে পাপড়ি ঝরে যায়। চকচকে, উজ্জ্বল চ্যাপটা বীজ বাদামি অথবা হলুদ রঙের, প্রায় এক সেমি লম্বা। কান্ডের বাকল বা ছাল থেকে অাঁশ তৈরি করা হয়। | ||
মাঝারি দোঅাঁশ মাটি অথবা ভালভাবে নিষ্কাশিত কাদামাটির জমিতে তিসি ভাল জন্মে। বীজ বপনের প্রায় ১০০ দিন পর অাঁশ সংগ্রহের জন্য ফসল আহরণ করা হয়। ঐ সময় শতকরা প্রায় ৫০ ভাগ বীজ পাকে। বীজের জন্য তাই আরও ১৫-২০ দিন পর ফসল আহরণ করতে হয়। ফসল কাটার পর শুকনা তিসি গাছ থেকে পিটিয়ে বীজ সংগ্রহ করা হয়। তেল নিষ্কাশন, পরবর্তী বছরে বীজ হিসেবে ব্যবহারের জন্য এবং পশুখাদ্য তৈরিতে তিসির ব্যবহার ব্যাপক। অাঁশ সংগ্রহের জন্য উদ্ভিদের কান্ড ৭-২১ দিন পানিতে ডুবিয়ে রাখা হয়। জাগ দেওয়ার এ পদ্ধতি অনেকটা পাট থেকে অাঁশ সংগ্রহের অনুরূপ। ভালভাবে শুকিয়ে এ অাঁশ পরবর্তীতে বস্ত্র তৈরির কাজে লাগানো হয়। | মাঝারি দোঅাঁশ মাটি অথবা ভালভাবে নিষ্কাশিত কাদামাটির জমিতে তিসি ভাল জন্মে। বীজ বপনের প্রায় ১০০ দিন পর অাঁশ সংগ্রহের জন্য ফসল আহরণ করা হয়। ঐ সময় শতকরা প্রায় ৫০ ভাগ বীজ পাকে। বীজের জন্য তাই আরও ১৫-২০ দিন পর ফসল আহরণ করতে হয়। ফসল কাটার পর শুকনা তিসি গাছ থেকে পিটিয়ে বীজ সংগ্রহ করা হয়। তেল নিষ্কাশন, পরবর্তী বছরে বীজ হিসেবে ব্যবহারের জন্য এবং পশুখাদ্য তৈরিতে তিসির ব্যবহার ব্যাপক। অাঁশ সংগ্রহের জন্য উদ্ভিদের কান্ড ৭-২১ দিন পানিতে ডুবিয়ে রাখা হয়। জাগ দেওয়ার এ পদ্ধতি অনেকটা পাট থেকে অাঁশ সংগ্রহের অনুরূপ। ভালভাবে শুকিয়ে এ অাঁশ পরবর্তীতে বস্ত্র তৈরির কাজে লাগানো হয়। | ||
এক সময় সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়নে পৃথিবীর অন্যান্য দেশের তুলনায় বেশি তিসির অাঁশ উৎপন্ন হতো। এখন উৎকৃষ্টমানের অাঁশ পাওয়া যায় বেলজিয়াম ও তার নিকটবর্তী দেশগুলি থেকে। | এক সময় সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়নে পৃথিবীর অন্যান্য দেশের তুলনায় বেশি তিসির অাঁশ উৎপন্ন হতো। এখন উৎকৃষ্টমানের অাঁশ পাওয়া যায় বেলজিয়াম ও তার নিকটবর্তী দেশগুলি থেকে। | ||
প্রতিটি শুঁটিতে ৪০-৫০টি হালকা বাদামি, চ্যাপটা, ডিম্বাকার, চকচকে ও মসৃণ বীজ হয়। বীজ থেকে উৎপন্ন তেলের রং হলুদ থেকে বাদামি। বাংলাদেশে রবি শস্য হিসেবে তিসি চাষের প্রধান এলাকা খুলনা, যশোর, পাবনা, ঢাকা, ময়মনসিংহ, টাঙ্গাইল ও ফরিদপুর জেলা। চাষাধীন জমি প্রায় ৪,৭৭১ হেক্টর এবং বার্ষিক উৎপন্ন বীজ প্রায় ২,৯৭০ মে টন। বীজ থেকে ৩০-৩৮% তেল ও প্রায় ২০% প্রোটিন পাওয়া যায়। বার্নিশ, পেইন্ট ইত্যাদির উপাদান হিসেবে তিসির তেল ব্যবহার হয়। এছাড়া কৃত্রিম চামড়ায় ও ছাপাখানার কালিতেও এর ব্যবহার রয়েছে। বাংলাদেশে অাঁশ হিসেবে তিসির তেমন ব্যবহার নেই। | প্রতিটি শুঁটিতে ৪০-৫০টি হালকা বাদামি, চ্যাপটা, ডিম্বাকার, চকচকে ও মসৃণ বীজ হয়। বীজ থেকে উৎপন্ন তেলের রং হলুদ থেকে বাদামি। বাংলাদেশে রবি শস্য হিসেবে তিসি চাষের প্রধান এলাকা খুলনা, যশোর, পাবনা, ঢাকা, ময়মনসিংহ, টাঙ্গাইল ও ফরিদপুর জেলা। চাষাধীন জমি প্রায় ৪,৭৭১ হেক্টর এবং বার্ষিক উৎপন্ন বীজ প্রায় ২,৯৭০ মে টন। বীজ থেকে ৩০-৩৮% তেল ও প্রায় ২০% প্রোটিন পাওয়া যায়। বার্নিশ, পেইন্ট ইত্যাদির উপাদান হিসেবে তিসির তেল ব্যবহার হয়। এছাড়া কৃত্রিম চামড়ায় ও ছাপাখানার কালিতেও এর ব্যবহার রয়েছে। বাংলাদেশে অাঁশ হিসেবে তিসির তেমন ব্যবহার নেই। [মোস্তাফা কামাল পাশা] | ||
[মোস্তাফা কামাল পাশা] | |||
''আরও দেখুন'' [[চীনাবাদাম|চীনাবাদাম]]; [[তিল|তিল]]; [[সরিষা|সরিষা]]; [[সূর্যমুখী|সূর্যমুখী]]। | ''আরও দেখুন'' [[চীনাবাদাম|চীনাবাদাম]]; [[তিল|তিল]]; [[সরিষা|সরিষা]]; [[সূর্যমুখী|সূর্যমুখী]]। | ||
[[en:Flax]] | [[en:Flax]] |
০৯:৫৪, ৩১ ডিসেম্বর ২০১৪ তারিখে সম্পাদিত সর্বশেষ সংস্করণ
তিসি (Flax) তেল ও অাঁশ উৎপাদনকারী গুল্মজাতীয় উদ্ভিদ, Linum usitatissimum। শণ নামেও পরিচিত Linaceae গোত্রের এ ফসল গ্রীষ্মমন্ডল ও উপগ্রীষ্মমন্ডলের অনেক দেশেই আবাদ হয়। চাষযোগ্য তিসির জাতটি সম্ভবত এদের এক বন্য প্রজাতি L. angustifolium থেকে প্রাচীনকালে উদ্ভূত হয়েছে। খুব সম্ভব তখন এর বীজের জন্য তেলপ্রদায়ী উদ্ভিদ হিসেবে ব্যবহার করা হতো। পরবর্তীতে মিশরে সুন্দর লিনেনজাতীয় বস্ত্র তৈরিতে এর ব্যবহার শুরু হয়। তবে বর্তমানে তেলের জন্য বীজ এবং অাঁশের জন্য এ উদ্ভিদকে বিভিন্ন পদ্ধতিতে চাষ করা হয়।
তিসি গাছ ৩০ থেকে ৮০ সেমি উঁচু হয়; এর মূল কান্ড স্পষ্ট এবং শিকড় খাড়া। প্রতি ফুলে নীল, সাদা অথবা হালকা গোলাপি রঙের পাঁচটি পাপড়ি থাকে, পরাগধানী থাকে দশটি যা নীল অথবা হলুদ। ভোর বেলায় ফুল ফোটে এবং বিকেলে পাপড়ি ঝরে যায়। চকচকে, উজ্জ্বল চ্যাপটা বীজ বাদামি অথবা হলুদ রঙের, প্রায় এক সেমি লম্বা। কান্ডের বাকল বা ছাল থেকে অাঁশ তৈরি করা হয়।
মাঝারি দোঅাঁশ মাটি অথবা ভালভাবে নিষ্কাশিত কাদামাটির জমিতে তিসি ভাল জন্মে। বীজ বপনের প্রায় ১০০ দিন পর অাঁশ সংগ্রহের জন্য ফসল আহরণ করা হয়। ঐ সময় শতকরা প্রায় ৫০ ভাগ বীজ পাকে। বীজের জন্য তাই আরও ১৫-২০ দিন পর ফসল আহরণ করতে হয়। ফসল কাটার পর শুকনা তিসি গাছ থেকে পিটিয়ে বীজ সংগ্রহ করা হয়। তেল নিষ্কাশন, পরবর্তী বছরে বীজ হিসেবে ব্যবহারের জন্য এবং পশুখাদ্য তৈরিতে তিসির ব্যবহার ব্যাপক। অাঁশ সংগ্রহের জন্য উদ্ভিদের কান্ড ৭-২১ দিন পানিতে ডুবিয়ে রাখা হয়। জাগ দেওয়ার এ পদ্ধতি অনেকটা পাট থেকে অাঁশ সংগ্রহের অনুরূপ। ভালভাবে শুকিয়ে এ অাঁশ পরবর্তীতে বস্ত্র তৈরির কাজে লাগানো হয়।
এক সময় সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়নে পৃথিবীর অন্যান্য দেশের তুলনায় বেশি তিসির অাঁশ উৎপন্ন হতো। এখন উৎকৃষ্টমানের অাঁশ পাওয়া যায় বেলজিয়াম ও তার নিকটবর্তী দেশগুলি থেকে।
প্রতিটি শুঁটিতে ৪০-৫০টি হালকা বাদামি, চ্যাপটা, ডিম্বাকার, চকচকে ও মসৃণ বীজ হয়। বীজ থেকে উৎপন্ন তেলের রং হলুদ থেকে বাদামি। বাংলাদেশে রবি শস্য হিসেবে তিসি চাষের প্রধান এলাকা খুলনা, যশোর, পাবনা, ঢাকা, ময়মনসিংহ, টাঙ্গাইল ও ফরিদপুর জেলা। চাষাধীন জমি প্রায় ৪,৭৭১ হেক্টর এবং বার্ষিক উৎপন্ন বীজ প্রায় ২,৯৭০ মে টন। বীজ থেকে ৩০-৩৮% তেল ও প্রায় ২০% প্রোটিন পাওয়া যায়। বার্নিশ, পেইন্ট ইত্যাদির উপাদান হিসেবে তিসির তেল ব্যবহার হয়। এছাড়া কৃত্রিম চামড়ায় ও ছাপাখানার কালিতেও এর ব্যবহার রয়েছে। বাংলাদেশে অাঁশ হিসেবে তিসির তেমন ব্যবহার নেই। [মোস্তাফা কামাল পাশা]