চৌধুরী, আলী নওয়াব: সংশোধিত সংস্করণের মধ্যে পার্থক্য

(Added Ennglish article link)
 
সম্পাদনা সারাংশ নেই
১ নং লাইন: ১ নং লাইন:
[[Category:বাংলাপিডিয়া]]
[[Category:বাংলাপিডিয়া]]
'''চৌধুরী, আলী নওয়াব'''  কুমিল্লা জেলার লাকসাম উপজেলার অন্তর্গত পশ্চিম গাঁয়ে উনিশ শতকের ষাটের দশকে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতা নওয়াব ইউসুফ আলী চৌধুরী এবং নওয়াব [[চৌধুরানী, নবাব ফয়জুন্নেসা|ফয়জুন্নেসা চৌধুরানী]] (১৮৩৪-১৯০৩) ছিলেন তাঁর ফুফু। আলী নওয়াব চৌধুরী ছিল তাঁর ডাক নাম, তাঁর প্রকৃত নাম শাহজাদা মির্জা আওরঙ্গজেব। [[কর্নওয়ালিস, লর্ড চার্লস|লডট্ট  ]][[কর্নওয়ালিস, লর্ড চার্লস|কর্নওয়ালিস]]-এর [[চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত|চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত]] এর সময় (১৭৯৩) তাঁর পূর্বপুরুষদের [[%E0%A7%A7%E0%A7%A6%E0%A7%A7%E0%A7%AE%E0%A7%A9%E0%A7%A6|চৌধুরী]] উপাধিতে ভূষিত করা হয়, যা বংশানুক্রমে ওই  পরিবারে চলে আসছে। তাঁর সামাজিক কার্যাবলির স্বীকৃতিরূপে ইংরেজ সরকার ১৮৯৭ সালে তাঁকে ‘খান বাহাদুর’ উপাধিতে ভূষিত করেন। ত্রিপুরার ইতিহাস ‘রাজমালা’ গ্রন্থে এ প্রাচীন বংশকে হোমনাবাদের দানশীল ও জনকল্যাণকামী বংশ বলে অভিহিত করা হয়।
'''চৌধুরী, আলী নওয়াব'''  কুমিল্লা জেলার লাকসাম উপজেলার অন্তর্গত পশ্চিম গাঁয়ে উনিশ শতকের ষাটের দশকে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতা নওয়াব ইউসুফ আলী চৌধুরী এবং নওয়াব [[চৌধুরানী, নবাব ফয়জুন্নেসা|ফয়জুন্নেসা চৌধুরানী]] (১৮৩৪-১৯০৩) ছিলেন তাঁর ফুফু। আলী নওয়াব চৌধুরী ছিল তাঁর ডাক নাম, তাঁর প্রকৃত নাম শাহজাদা মির্জা আওরঙ্গজেব। [[কর্নওয়ালিস, লর্ড চার্লস||লর্ড কর্নওয়ালিস]]-এর [[চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত|চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত]] এর সময় (১৭৯৩) তাঁর পূর্বপুরুষদের [[চৌধুরী|চৌধুরী]] উপাধিতে ভূষিত করা হয়, যা বংশানুক্রমে ওই  পরিবারে চলে আসছে। তাঁর সামাজিক কার্যাবলির স্বীকৃতিরূপে ইংরেজ সরকার ১৮৯৭ সালে তাঁকে ‘খান বাহাদুর’ উপাধিতে ভূষিত করেন। ত্রিপুরার ইতিহাস ‘রাজমালা’ গ্রন্থে এ প্রাচীন বংশকে হোমনাবাদের দানশীল ও জনকল্যাণকামী বংশ বলে অভিহিত করা হয়।


আলী নওয়াব চৌধুরী জনকল্যাণ ও সমাজ সেবায় জীবন অতিবাহিত করেন। যুগের চাহিদা তাঁর সমাজ সেবার চিন্তাকে প্রভাবিত করে। যুগের ধারার প্রতি তাঁর সজাগ দৃষ্টি ছিল। তখন মুসলিম জাতির সামাজিক অবস্থা ছিল খুবই করুণ। শিক্ষা-দীক্ষা ক্ষেত্রে মুসলমানরা ছিল অনেক পশ্চাৎপদ। তিনি উপলদ্ধি করেন যে, শিক্ষা ছাড়া জাতির উন্নতি সম্ভব নয়। তাই তিনি ১৮৭৭ সালে পিতা ইউসুফ আলীর নামে কুমিল্লায় স্থাপন করেন ‘ইউসুফ হাই স্কুল’ এবং মুজাফ্ফরগঞ্জ বাজারে ১৮৭৯ সালে নিজের নামে প্রতিষ্ঠা করেন ‘আলী নওয়াব হাই স্কুল’।
আলী নওয়াব চৌধুরী জনকল্যাণ ও সমাজ সেবায় জীবন অতিবাহিত করেন। যুগের চাহিদা তাঁর সমাজ সেবার চিন্তাকে প্রভাবিত করে। যুগের ধারার প্রতি তাঁর সজাগ দৃষ্টি ছিল। তখন মুসলিম জাতির সামাজিক অবস্থা ছিল খুবই করুণ। শিক্ষা-দীক্ষা ক্ষেত্রে মুসলমানরা ছিল অনেক পশ্চাৎপদ। তিনি উপলদ্ধি করেন যে, শিক্ষা ছাড়া জাতির উন্নতি সম্ভব নয়। তাই তিনি ১৮৭৭ সালে পিতা ইউসুফ আলীর নামে কুমিল্লায় স্থাপন করেন ‘ইউসুফ হাই স্কুল’ এবং মুজাফ্ফরগঞ্জ বাজারে ১৮৭৯ সালে নিজের নামে প্রতিষ্ঠা করেন ‘আলী নওয়াব হাই স্কুল’।
১০ নং লাইন: ১০ নং লাইন:
১৯০৫ সালের ১০ জুলাই লর্ড কার্জনের বঙ্গ-ভঙ্গ পরিকল্পনা প্রকাশিত হয়। কুমিল্লার অন্যান্য মুসলমান নেতার মধ্যে আলী নওয়াব চৌধুরী ও হুসসাম হায়দর চৌধুরী ছিলেন ঢাকার নওয়াব [[সলিমুল্লাহ, খাজা|খাজা সলিমুল্লাহ]] এর ন্যায় বঙ্গ বিভাগের সমর্থক।
১৯০৫ সালের ১০ জুলাই লর্ড কার্জনের বঙ্গ-ভঙ্গ পরিকল্পনা প্রকাশিত হয়। কুমিল্লার অন্যান্য মুসলমান নেতার মধ্যে আলী নওয়াব চৌধুরী ও হুসসাম হায়দর চৌধুরী ছিলেন ঢাকার নওয়াব [[সলিমুল্লাহ, খাজা|খাজা সলিমুল্লাহ]] এর ন্যায় বঙ্গ বিভাগের সমর্থক।


শিক্ষা ও রাজনৈতিক আন্দোলনে আলী নওয়াব চৌধুরী সর্বদা স্যার সলিমুল্লাহর পাশেই ছিলেন। তিনি ১৯০৬ সালে [[মুসলিম লীগ|মুসলিম লীগ]] গঠনের সময় উৎসাহ ও উদ্দীপনার পরিচয় দেন। লর্ড [[কার্জন, লর্ড|কার্জন]] এর ভারত ত্যাগের সময় তাঁর প্রতি শুভেচ্ছা প্রকাশের জন্য নওয়াব সলিমুল্লাহ ১৯০৫ সালের ৪ নভেম্বর ঢাকায় মুসলমান নেতাদের যে সভা আহবান করেন, তাতে আলী নওয়াব চৌধুরীও যোগ দিয়েছিলেন।
শিক্ষা ও রাজনৈতিক আন্দোলনে আলী নওয়াব চৌধুরী সর্বদা স্যার সলিমুল্লাহর পাশেই ছিলেন। তিনি ১৯০৬ সালে [[মুসলিম লীগ|মুসলিম লীগ]] গঠনের সময় উৎসাহ ও উদ্দীপনার পরিচয় দেন। [[কার্জন, লর্ড|লর্ড কার্জন]] এর ভারত ত্যাগের সময় তাঁর প্রতি শুভেচ্ছা প্রকাশের জন্য নওয়াব সলিমুল্লাহ ১৯০৫ সালের ৪ নভেম্বর ঢাকায় মুসলমান নেতাদের যে সভা আহবান করেন, তাতে আলী নওয়াব চৌধুরীও যোগ দিয়েছিলেন।


আলী নওয়াব চৌধুরী অমায়িক সদাচরণের জন্য সুপরিচিত ছিলেন। আদর্শ জমিদার হিসেবে ন্যায় পরায়ণতার সাথে তিনি প্রজা পালন করতেন। ফারসি ভাষায় তিনি ছিলেন একজন সুপন্ডিত। তিনি কুমিল্লা টাউন হল প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। [[ক্যাম্পবেল, স্যার জর্জ|ক্যাম্পবেল]] আলী নওয়াব চৌধুরীর সামাজিক ও ব্যক্তি জীবনের ভূয়সী প্রশংসা করেছেন।
আলী নওয়াব চৌধুরী অমায়িক সদাচরণের জন্য সুপরিচিত ছিলেন। আদর্শ জমিদার হিসেবে ন্যায় পরায়ণতার সাথে তিনি প্রজা পালন করতেন। ফারসি ভাষায় তিনি ছিলেন একজন সুপন্ডিত। তিনি কুমিল্লা টাউন হল প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। [[ক্যাম্পবেল, স্যার জর্জ|জর্জ ক্যাম্পবেল]] আলী নওয়াব চৌধুরীর সামাজিক ও ব্যক্তি জীবনের ভূয়সী প্রশংসা করেছেন।


১৩২৭ সনের ৩ মাঘ (১৬ জানুয়ারি, ১৯২১) আলী নওয়াব চৌধুরী মারা যান। পারিবারিক গোরস্থানে (লাকসাম) তাঁকে দাফন করা হয়।  [কানিজ-ই-বুতুল]
১৩২৭ সনের ৩ মাঘ (১৬ জানুয়ারি, ১৯২১) আলী নওয়াব চৌধুরী মারা যান। পারিবারিক গোরস্থানে (লাকসাম) তাঁকে দাফন করা হয়।  [কানিজ-ই-বুতুল]


[[en:Chowdhury, Ali Nawab]]
[[en:Chowdhury, Ali Nawab]]

০৬:৩১, ২৩ নভেম্বর ২০১৪ তারিখে সংশোধিত সংস্করণ

চৌধুরী, আলী নওয়াব  কুমিল্লা জেলার লাকসাম উপজেলার অন্তর্গত পশ্চিম গাঁয়ে উনিশ শতকের ষাটের দশকে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতা নওয়াব ইউসুফ আলী চৌধুরী এবং নওয়াব ফয়জুন্নেসা চৌধুরানী (১৮৩৪-১৯০৩) ছিলেন তাঁর ফুফু। আলী নওয়াব চৌধুরী ছিল তাঁর ডাক নাম, তাঁর প্রকৃত নাম শাহজাদা মির্জা আওরঙ্গজেব। |লর্ড কর্নওয়ালিস-এর চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত এর সময় (১৭৯৩) তাঁর পূর্বপুরুষদের চৌধুরী উপাধিতে ভূষিত করা হয়, যা বংশানুক্রমে ওই  পরিবারে চলে আসছে। তাঁর সামাজিক কার্যাবলির স্বীকৃতিরূপে ইংরেজ সরকার ১৮৯৭ সালে তাঁকে ‘খান বাহাদুর’ উপাধিতে ভূষিত করেন। ত্রিপুরার ইতিহাস ‘রাজমালা’ গ্রন্থে এ প্রাচীন বংশকে হোমনাবাদের দানশীল ও জনকল্যাণকামী বংশ বলে অভিহিত করা হয়।

আলী নওয়াব চৌধুরী জনকল্যাণ ও সমাজ সেবায় জীবন অতিবাহিত করেন। যুগের চাহিদা তাঁর সমাজ সেবার চিন্তাকে প্রভাবিত করে। যুগের ধারার প্রতি তাঁর সজাগ দৃষ্টি ছিল। তখন মুসলিম জাতির সামাজিক অবস্থা ছিল খুবই করুণ। শিক্ষা-দীক্ষা ক্ষেত্রে মুসলমানরা ছিল অনেক পশ্চাৎপদ। তিনি উপলদ্ধি করেন যে, শিক্ষা ছাড়া জাতির উন্নতি সম্ভব নয়। তাই তিনি ১৮৭৭ সালে পিতা ইউসুফ আলীর নামে কুমিল্লায় স্থাপন করেন ‘ইউসুফ হাই স্কুল’ এবং মুজাফ্ফরগঞ্জ বাজারে ১৮৭৯ সালে নিজের নামে প্রতিষ্ঠা করেন ‘আলী নওয়াব হাই স্কুল’।

১৩১০ বাংলা সনের ২০ ও ২১ চৈত্র রাজশাহী কলেজ প্রাঙ্গণে বঙ্গীয় প্রাদেশিক শিক্ষা সমিতির প্রথম বার্ষিক অধিবেশন অনুষ্ঠিত হয়। এ অধিবেশনে সমিতির পৃষ্ঠপোষক ছিলেন মুর্শিদাবাদের নওয়াব বেগম ও ঢাকার নওয়াব  সলিমুল্লাহ। সভাপতি ছিলেন সৈয়দ শামসুল হুদা ও খান বাহাদুর শুজাআত আলী বেগ। এ সম্মেলনে খান বাহাদুর  দেলওয়ার হোসেন, ওয়াজেদ আলী খান পন্নী (করটিয়া), খান বাহাদুর আবদুল মজীদ চৌধুরী (রংপুর) প্রমুখের সাথে খান বাহাদুর আলী নওয়াব চৌধুরী সক্রিয় ভূমিকা পালন করেন।

বঙ্গীয় প্রাদেশিক মুসলমান শিক্ষা সমিতির দ্বিতীয় অধিবেশন ১৯০৫ সালের ২২ ও ২৩ এপ্রিল লাকসামে অনুষ্ঠিত হয়। অনুষ্ঠানটি খান বাহাদুর আলী নওয়াব চৌধুরীর ‘খোরশেদ মঞ্জিল’ নামক প্রাসাদের সম্মুখভাগে সুসজ্জিত চাঁদোয়া তলায় অনুষ্ঠিত হয়। আলী নওয়াব চৌধুরী ছিলেন অভ্যর্থনা কমিটির সভাপতি। ১৩১২ সনের ১৭ বৈশাখের ঢাকা প্রকাশ পত্রিকায় প্রকাশিত খবরে বলা হয় যে, উক্ত অনুষ্ঠানে আলী নওয়াব চৌধুরী উর্দু ভাষাতে ডেলিগেট মেম্বার ও দর্শকবৃন্দকে সাদর সম্ভাষণ ও তাঁদেরকে ধন্যবাদ জানান। ওই সভায় কুমিল্লায় একটি মুসলমান বোর্ডিং স্থাপনের জন্য চাঁদা সংগ্রহ করা হয়। আলী নওয়াব চৌধুরী ২,০০০ টাকা দান করার প্রতিশ্রুতি দেন। দুদিনের মোট চারটি অধিবেশনে শিক্ষা বিস্তার সম্পর্কিত প্রায় ১৫টি প্রস্তাব গ্রহণ করা হয়।

১৯০৫ সালের ১০ জুলাই লর্ড কার্জনের বঙ্গ-ভঙ্গ পরিকল্পনা প্রকাশিত হয়। কুমিল্লার অন্যান্য মুসলমান নেতার মধ্যে আলী নওয়াব চৌধুরী ও হুসসাম হায়দর চৌধুরী ছিলেন ঢাকার নওয়াব খাজা সলিমুল্লাহ এর ন্যায় বঙ্গ বিভাগের সমর্থক।

শিক্ষা ও রাজনৈতিক আন্দোলনে আলী নওয়াব চৌধুরী সর্বদা স্যার সলিমুল্লাহর পাশেই ছিলেন। তিনি ১৯০৬ সালে মুসলিম লীগ গঠনের সময় উৎসাহ ও উদ্দীপনার পরিচয় দেন। লর্ড কার্জন এর ভারত ত্যাগের সময় তাঁর প্রতি শুভেচ্ছা প্রকাশের জন্য নওয়াব সলিমুল্লাহ ১৯০৫ সালের ৪ নভেম্বর ঢাকায় মুসলমান নেতাদের যে সভা আহবান করেন, তাতে আলী নওয়াব চৌধুরীও যোগ দিয়েছিলেন।

আলী নওয়াব চৌধুরী অমায়িক সদাচরণের জন্য সুপরিচিত ছিলেন। আদর্শ জমিদার হিসেবে ন্যায় পরায়ণতার সাথে তিনি প্রজা পালন করতেন। ফারসি ভাষায় তিনি ছিলেন একজন সুপন্ডিত। তিনি কুমিল্লা টাউন হল প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। জর্জ ক্যাম্পবেল আলী নওয়াব চৌধুরীর সামাজিক ও ব্যক্তি জীবনের ভূয়সী প্রশংসা করেছেন।

১৩২৭ সনের ৩ মাঘ (১৬ জানুয়ারি, ১৯২১) আলী নওয়াব চৌধুরী মারা যান। পারিবারিক গোরস্থানে (লাকসাম) তাঁকে দাফন করা হয়।  [কানিজ-ই-বুতুল]