চক মসজিদ, ঢাকা: সংশোধিত সংস্করণের মধ্যে পার্থক্য
NasirkhanBot (আলোচনা | অবদান) অ (Added Ennglish article link) |
সম্পাদনা সারাংশ নেই |
||
১ নং লাইন: | ১ নং লাইন: | ||
[[Category:বাংলাপিডিয়া]] | [[Category:বাংলাপিডিয়া]] | ||
[[Image:ChawkMosqueDhaka.jpg|thumb|400px|right|চক মসজিদ, ঢাকা]] | |||
'''চক মসজিদ, ঢাকা''' পুরনো ঢাকার চকবাজার এলাকায় অবস্থিত মসজিদটি এত বার সংস্কার ও সম্প্রসারণ করা হয়েছে যে, বর্তমানে তার আদি পরিকল্পনা ও রূপ চিহ্নিত করা প্রায় অসম্ভব। মূল মসজিদের উত্তর দেয়াল অপসারণ করা হয়েছে ও পূর্ব দিকের সম্প্রসারিত অংশে বহুতল ভবন নির্মাণ করা হয়েছে। মসজিদের তিন গম্বুজ বিশিষ্ট মূল আচ্ছাদন ভেঙে তার উপর নির্মাণ করা হয়েছে আরেকটি তল এবং এর ছাদে তিনটি নতুন গম্বুজ নির্মাণ করা হয়েছে। তবে এক্ষেত্রে মাঝের গম্বুজটি করা হয়েছে বেশ বড়। দেয়ালগুলির পুরুত্ব হ্রাস করা হয়েছে, মিহরাব ও প্রবেশপথগুলিকে করা হয়েছে প্রশস্ত আর উত্তর ও দক্ষিণ দিকের প্রবেশপথ দুটি বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। বিদ্যমান বৈশিষ্ট্য এবং ইতিপূর্বে বিভিন্ন লেখকের দেওয়া বর্ণনা মিলিয়ে আদি মসজিদ এবং এর নিচের ভল্ট আচ্ছাদিত ভিত্তির (Plinth) বর্ণনা দেওয়ার যেতে পারে। | '''চক মসজিদ, ঢাকা''' পুরনো ঢাকার চকবাজার এলাকায় অবস্থিত মসজিদটি এত বার সংস্কার ও সম্প্রসারণ করা হয়েছে যে, বর্তমানে তার আদি পরিকল্পনা ও রূপ চিহ্নিত করা প্রায় অসম্ভব। মূল মসজিদের উত্তর দেয়াল অপসারণ করা হয়েছে ও পূর্ব দিকের সম্প্রসারিত অংশে বহুতল ভবন নির্মাণ করা হয়েছে। মসজিদের তিন গম্বুজ বিশিষ্ট মূল আচ্ছাদন ভেঙে তার উপর নির্মাণ করা হয়েছে আরেকটি তল এবং এর ছাদে তিনটি নতুন গম্বুজ নির্মাণ করা হয়েছে। তবে এক্ষেত্রে মাঝের গম্বুজটি করা হয়েছে বেশ বড়। দেয়ালগুলির পুরুত্ব হ্রাস করা হয়েছে, মিহরাব ও প্রবেশপথগুলিকে করা হয়েছে প্রশস্ত আর উত্তর ও দক্ষিণ দিকের প্রবেশপথ দুটি বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। বিদ্যমান বৈশিষ্ট্য এবং ইতিপূর্বে বিভিন্ন লেখকের দেওয়া বর্ণনা মিলিয়ে আদি মসজিদ এবং এর নিচের ভল্ট আচ্ছাদিত ভিত্তির (Plinth) বর্ণনা দেওয়ার যেতে পারে। | ||
উত্তর দক্ষিণে ২৮.৬৫ মি দীর্ঘ এবং পূর্ব পশ্চিমে ২৪.৩৮ মি প্রশস্ত ৩.০৫ মি উচুঁ একটি ভল্ট আচ্ছাদিত ভিত্তির পশ্চিম অর্ধাংশ জুড়ে ছিল তিন গম্বুজ আচ্ছাদিত মূল মসজিদটির অবস্থান। বাইরের দিকের চারকোণে অবস্থিত অষ্টভূজাকৃতির পার্শতবুরুজগুলিসহ বাইর থেকে এর পরিমাপ ১৬.১৫ মি × ৭.৯২ মি। পূর্ব দিকে রয়েছে তিনটি চতুর্কেন্দ্রিক খিলান-পথ, সবগুলিই উন্মুক্ত হয়েছে অর্ধগম্বুজাকৃতির ভল্টের নিচে। কেন্দ্রীয় প্রবেশপথটি একটি আয়তাকার প্রক্ষেপণের মধ্যে স্থাপিত। এ প্রক্ষেপণের দুপ্রান্তে প্রচলিত রীতি অনুযায়ী ছিল আলংকারিক ক্ষুদ্রাকৃতির মিনার। কেন্দ্রীয় প্রবেশ পথের সামনের অর্ধগম্বুজ ভল্টে স্টাকো (Stucco) করা দৃষ্টিনন্দন মুকারনাস নকশা এখনও দেখা যায়। পূর্ব দিকের তিনটি প্রবেশপথ বরাবর পশ্চিমদিকের দেওয়ালের ভেতরের দিকে রয়েছে তিনটি মিহরাব। তবে এর সব কটিই নতুন করে পুনর্নির্মিত। কেন্দ্রীয় মিহরাবটি এখনও অর্ধ অষ্টকোণাকৃতির, তবে বাকি দুটি আয়তাকার। বর্তমানে এগুলি চকচকে টালি দিয়ে সাজানো। আর মিহরাবগুলির আয়তাকার ফ্রেমের ওপর রয়েছে চিত্রিত শিখর নকশার (Cresting) একটি সারি। মসজিদের মেঝেতে বর্তমানে রয়েছে মার্বেল পাথর। | উত্তর দক্ষিণে ২৮.৬৫ মি দীর্ঘ এবং পূর্ব পশ্চিমে ২৪.৩৮ মি প্রশস্ত ৩.০৫ মি উচুঁ একটি ভল্ট আচ্ছাদিত ভিত্তির পশ্চিম অর্ধাংশ জুড়ে ছিল তিন গম্বুজ আচ্ছাদিত মূল মসজিদটির অবস্থান। বাইরের দিকের চারকোণে অবস্থিত অষ্টভূজাকৃতির পার্শতবুরুজগুলিসহ বাইর থেকে এর পরিমাপ ১৬.১৫ মি × ৭.৯২ মি। পূর্ব দিকে রয়েছে তিনটি চতুর্কেন্দ্রিক খিলান-পথ, সবগুলিই উন্মুক্ত হয়েছে অর্ধগম্বুজাকৃতির ভল্টের নিচে। কেন্দ্রীয় প্রবেশপথটি একটি আয়তাকার প্রক্ষেপণের মধ্যে স্থাপিত। এ প্রক্ষেপণের দুপ্রান্তে প্রচলিত রীতি অনুযায়ী ছিল আলংকারিক ক্ষুদ্রাকৃতির মিনার। কেন্দ্রীয় প্রবেশ পথের সামনের অর্ধগম্বুজ ভল্টে স্টাকো (Stucco) করা দৃষ্টিনন্দন মুকারনাস নকশা এখনও দেখা যায়। পূর্ব দিকের তিনটি প্রবেশপথ বরাবর পশ্চিমদিকের দেওয়ালের ভেতরের দিকে রয়েছে তিনটি মিহরাব। তবে এর সব কটিই নতুন করে পুনর্নির্মিত। কেন্দ্রীয় মিহরাবটি এখনও অর্ধ অষ্টকোণাকৃতির, তবে বাকি দুটি আয়তাকার। বর্তমানে এগুলি চকচকে টালি দিয়ে সাজানো। আর মিহরাবগুলির আয়তাকার ফ্রেমের ওপর রয়েছে চিত্রিত শিখর নকশার (Cresting) একটি সারি। মসজিদের মেঝেতে বর্তমানে রয়েছে মার্বেল পাথর। | ||
মসজিদের অভ্যন্তরভাগ তিনটি বে’তে বিভক্ত ছিল, যার মাঝেরটি ছিল বর্গাকার আর দুপার্শ্বস্থ দুটি আয়তাকার। তিনটি ‘বে’র উপরেই ছিল গম্বুজের আচ্ছাদন, যার মধ্যে মাঝেরটি ছিল অন্য দুটি অপেক্ষা বড়। আদি প্রার্থনা কক্ষটির ঠিক উপরে নির্মিত দ্বিতীয় তলের ছাদ দেখে সেটা অনুমান করে নেওয়া যায়। এখানেও কেন্দ্রীয় গম্বুজটি অপেক্ষাকৃত বড় করে নির্মিত। | মসজিদের অভ্যন্তরভাগ তিনটি বে’তে বিভক্ত ছিল, যার মাঝেরটি ছিল বর্গাকার আর দুপার্শ্বস্থ দুটি আয়তাকার। তিনটি ‘বে’র উপরেই ছিল গম্বুজের আচ্ছাদন, যার মধ্যে মাঝেরটি ছিল অন্য দুটি অপেক্ষা বড়। আদি প্রার্থনা কক্ষটির ঠিক উপরে নির্মিত দ্বিতীয় তলের ছাদ দেখে সেটা অনুমান করে নেওয়া যায়। এখানেও কেন্দ্রীয় গম্বুজটি অপেক্ষাকৃত বড় করে নির্মিত। |
০৫:৪৪, ২ অক্টোবর ২০১৪ তারিখে সম্পাদিত সর্বশেষ সংস্করণ
চক মসজিদ, ঢাকা পুরনো ঢাকার চকবাজার এলাকায় অবস্থিত মসজিদটি এত বার সংস্কার ও সম্প্রসারণ করা হয়েছে যে, বর্তমানে তার আদি পরিকল্পনা ও রূপ চিহ্নিত করা প্রায় অসম্ভব। মূল মসজিদের উত্তর দেয়াল অপসারণ করা হয়েছে ও পূর্ব দিকের সম্প্রসারিত অংশে বহুতল ভবন নির্মাণ করা হয়েছে। মসজিদের তিন গম্বুজ বিশিষ্ট মূল আচ্ছাদন ভেঙে তার উপর নির্মাণ করা হয়েছে আরেকটি তল এবং এর ছাদে তিনটি নতুন গম্বুজ নির্মাণ করা হয়েছে। তবে এক্ষেত্রে মাঝের গম্বুজটি করা হয়েছে বেশ বড়। দেয়ালগুলির পুরুত্ব হ্রাস করা হয়েছে, মিহরাব ও প্রবেশপথগুলিকে করা হয়েছে প্রশস্ত আর উত্তর ও দক্ষিণ দিকের প্রবেশপথ দুটি বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। বিদ্যমান বৈশিষ্ট্য এবং ইতিপূর্বে বিভিন্ন লেখকের দেওয়া বর্ণনা মিলিয়ে আদি মসজিদ এবং এর নিচের ভল্ট আচ্ছাদিত ভিত্তির (Plinth) বর্ণনা দেওয়ার যেতে পারে।
উত্তর দক্ষিণে ২৮.৬৫ মি দীর্ঘ এবং পূর্ব পশ্চিমে ২৪.৩৮ মি প্রশস্ত ৩.০৫ মি উচুঁ একটি ভল্ট আচ্ছাদিত ভিত্তির পশ্চিম অর্ধাংশ জুড়ে ছিল তিন গম্বুজ আচ্ছাদিত মূল মসজিদটির অবস্থান। বাইরের দিকের চারকোণে অবস্থিত অষ্টভূজাকৃতির পার্শতবুরুজগুলিসহ বাইর থেকে এর পরিমাপ ১৬.১৫ মি × ৭.৯২ মি। পূর্ব দিকে রয়েছে তিনটি চতুর্কেন্দ্রিক খিলান-পথ, সবগুলিই উন্মুক্ত হয়েছে অর্ধগম্বুজাকৃতির ভল্টের নিচে। কেন্দ্রীয় প্রবেশপথটি একটি আয়তাকার প্রক্ষেপণের মধ্যে স্থাপিত। এ প্রক্ষেপণের দুপ্রান্তে প্রচলিত রীতি অনুযায়ী ছিল আলংকারিক ক্ষুদ্রাকৃতির মিনার। কেন্দ্রীয় প্রবেশ পথের সামনের অর্ধগম্বুজ ভল্টে স্টাকো (Stucco) করা দৃষ্টিনন্দন মুকারনাস নকশা এখনও দেখা যায়। পূর্ব দিকের তিনটি প্রবেশপথ বরাবর পশ্চিমদিকের দেওয়ালের ভেতরের দিকে রয়েছে তিনটি মিহরাব। তবে এর সব কটিই নতুন করে পুনর্নির্মিত। কেন্দ্রীয় মিহরাবটি এখনও অর্ধ অষ্টকোণাকৃতির, তবে বাকি দুটি আয়তাকার। বর্তমানে এগুলি চকচকে টালি দিয়ে সাজানো। আর মিহরাবগুলির আয়তাকার ফ্রেমের ওপর রয়েছে চিত্রিত শিখর নকশার (Cresting) একটি সারি। মসজিদের মেঝেতে বর্তমানে রয়েছে মার্বেল পাথর।
মসজিদের অভ্যন্তরভাগ তিনটি বে’তে বিভক্ত ছিল, যার মাঝেরটি ছিল বর্গাকার আর দুপার্শ্বস্থ দুটি আয়তাকার। তিনটি ‘বে’র উপরেই ছিল গম্বুজের আচ্ছাদন, যার মধ্যে মাঝেরটি ছিল অন্য দুটি অপেক্ষা বড়। আদি প্রার্থনা কক্ষটির ঠিক উপরে নির্মিত দ্বিতীয় তলের ছাদ দেখে সেটা অনুমান করে নেওয়া যায়। এখানেও কেন্দ্রীয় গম্বুজটি অপেক্ষাকৃত বড় করে নির্মিত।
প্লাটফর্মটির নিচের অংশে রয়েছে ভল্ট আচ্ছাদিত কতগুলি বর্গাকার ও আয়তাকার কক্ষ। এগুলির মাথার উপরে রয়েছে নলাকৃতির খিলান ছাদ, তবে এ ছাদের উপরের অংশ সমান্তরাল।
এটিই সম্ভবত বাংলায় উঁচু প্লাটফর্মের উপর নির্মিত প্রাচীনতম ইমারত। ঢাকার করতলব খান মসজিদ (১৭০১-১৭০৪) ও মির্ধা মসজিদ-এর (১১১৬ হিজরি/ ১৭০৪-০৫ খ্রি) মসজিদের মতো এখানেও প্লাটফরমের নিচের কক্ষগুলিতে নিশ্চয়ই এ মসজিদকে কেন্দ্র করে গড়ে ওঠা মাদ্রাসার ছাত্র ও শিক্ষকদের আবাসনের ব্যবস্থা ছিল। এধরনের মসজিদগুলিকে তাই বলা যায় ‘আবাসিক মাদ্রাসা-মসজিদ’।
কেন্দ্রীয় প্রবেশপথের উপর স্থাপিত একটি ফারসি শিলালিপিতে লেখা রয়েছে সুবাহদার শায়েস্তা খান ১০৮৬ হিজরি সনে (১৬৭৫-১৬৭৬ খ্রি) মসজিদটি নির্মাণ করেন। [এম.এ বারি]