খাঁ, মোহাম্মদ আকরম: সংশোধিত সংস্করণের মধ্যে পার্থক্য
NasirkhanBot (আলোচনা | অবদান) অ (Added Ennglish article link) |
সম্পাদনা সারাংশ নেই |
||
১ নং লাইন: | ১ নং লাইন: | ||
[[Category:বাংলাপিডিয়া]] | [[Category:বাংলাপিডিয়া]] | ||
[[Image:KhanMohammadAkram.jpg|thumb|400px|right|মোহাম্মদ আকরম খাঁ]] | |||
'''খাঁ, মোহাম্মদ আকরম''' (১৮৬৮-১৯৬৮) সাংবাদিক, রাজনীতিক, ইসলামিশাস্ত্রজ্ঞ। তিনি পশ্চিমবঙ্গের চবিবশ পরগনা জেলার হাকিমপুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা তেমন ছিল না। কিন্তু জ্ঞানানুসন্ধানী আকরম খাঁ ইসলাম ধর্ম এবং বাংলা ও ভারতের মুসলমানদের ইতিহাস ও সংস্কৃতি সম্পর্কে গভীর জ্ঞান অর্জন করেন। | '''খাঁ, মোহাম্মদ আকরম''' (১৮৬৮-১৯৬৮) সাংবাদিক, রাজনীতিক, ইসলামিশাস্ত্রজ্ঞ। তিনি পশ্চিমবঙ্গের চবিবশ পরগনা জেলার হাকিমপুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা তেমন ছিল না। কিন্তু জ্ঞানানুসন্ধানী আকরম খাঁ ইসলাম ধর্ম এবং বাংলা ও ভারতের মুসলমানদের ইতিহাস ও সংস্কৃতি সম্পর্কে গভীর জ্ঞান অর্জন করেন। | ||
তাঁর পেশাগত ও রাজনৈতিক জীবন খুব অল্প বয়সেই শুরু হয়। সাংবাদিক হিসেবে তিনি প্রথম কাজ করেন আহল-ই-হাদিস ও মোহাম্মদী আখবার পত্রিকায়। মোহাম্মদ আকরম খাঁ ১৯০৮ থেকে ১৯২১ সালের মধ্যে মোহাম্মদী ও আল-এসলাম পত্রিকায় সম্পাদক হিসেবে কাজ করেন। অতঃপর তিনি নিজে কলকাতা হতে ১৯২০ থেকে ১৯২২ সালের মধ্যে জামানা ও সেবক নামে দুটি পত্রিকা প্রকাশ করেন। সেবক [[অসহযোগ আন্দোলন|অসহযোগ]] ও [[স্বদেশী আন্দোলন|স্বদেশী আন্দোলন]]কে সমর্থন যোগায়। সেবক নিষিদ্ধ ঘোষিত হয় এবং সরকার বিরোধী সম্পাদকীয় লেখার জন্য আকরম খাঁ গ্রেপ্তার হন। পরে ১৯৩৬ সালের অক্টোবরে তিনি ওই সময়ের একমাত্র বাংলা দৈনিক পত্রিকা আজাদ প্রকাশ করেন। এ পত্রিকাটি বঙ্গ বিভাগোত্তরকালে মুসলিম লীগের পক্ষে জনসমর্থন সৃষ্টির ক্ষেত্রে যথেষ্ট অবদান রাখে। | তাঁর পেশাগত ও রাজনৈতিক জীবন খুব অল্প বয়সেই শুরু হয়। সাংবাদিক হিসেবে তিনি প্রথম কাজ করেন আহল-ই-হাদিস ও মোহাম্মদী আখবার পত্রিকায়। মোহাম্মদ আকরম খাঁ ১৯০৮ থেকে ১৯২১ সালের মধ্যে মোহাম্মদী ও আল-এসলাম পত্রিকায় সম্পাদক হিসেবে কাজ করেন। অতঃপর তিনি নিজে কলকাতা হতে ১৯২০ থেকে ১৯২২ সালের মধ্যে জামানা ও সেবক নামে দুটি পত্রিকা প্রকাশ করেন। সেবক [[অসহযোগ আন্দোলন|অসহযোগ]] ও [[স্বদেশী আন্দোলন|স্বদেশী আন্দোলন]]কে সমর্থন যোগায়। সেবক নিষিদ্ধ ঘোষিত হয় এবং সরকার বিরোধী সম্পাদকীয় লেখার জন্য আকরম খাঁ গ্রেপ্তার হন। পরে ১৯৩৬ সালের অক্টোবরে তিনি ওই সময়ের একমাত্র বাংলা দৈনিক পত্রিকা আজাদ প্রকাশ করেন। এ পত্রিকাটি বঙ্গ বিভাগোত্তরকালে মুসলিম লীগের পক্ষে জনসমর্থন সৃষ্টির ক্ষেত্রে যথেষ্ট অবদান রাখে। | ||
আকরম খাঁ তাঁর রাজনৈতিক জীবন শুরু করেন ভারতীয় ন্যাশনাল কংগ্রেসের একজন সমর্থক হিসেবে। তাঁর প্রধান লক্ষ্য ছিল বাঙালি মুসলমানদের স্বার্থ ও অধিকার রক্ষা করা। এ উদ্দেশে তিনি ১৯০৬ সালে [[মুসলিম লীগ|মুসলিম লীগ]] গঠনে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করেন। ১৯১৮ থেকে ১৯২৪ সাল পর্যন্ত তিনি [[খিলাফত|খিলাফত]] ও [[অসহযোগ আন্দোলন|অসহযোগ আন্দোলন]]এ অংশগ্রহণ করেন। ১৯২০ সালে ঢাকার আহসান মঞ্জিলে অনুষ্ঠিত অধিবেশনে তিনি খিলাফত কমিটির সেক্রেটারি নির্বাচিত হন। এ সম্মেলনে বিশিষ্ট খেলাফত নেতৃবৃন্দ মওলানা [[আজাদ, মওলানা আবুল কালাম|আবুল কালাম আজাদ]] (১৮৮৫-১৯৫৮), মওলানা [[ইসলামাবাদী, মওলানা মনিরুজ্জামান|মনিরুজ্জামান ইসলামাবাদী]] (১৮৭৫-১৯৫০) এবং মওলানা মুজিবুর রহমান (১৮৭৩-১৯২৪) উপস্থিত ছিলেন। আকরম খাঁকে তুরস্কের উসমানীয় খিলাফতের জন্য অর্থ সংগ্রহের দায়িত্ব দেওয়া হয়। ১৯২০ থেকে ১৯২৩ সাল পর্যন্ত তিনি খিলাফত ও অসহযোগ আন্দোলনের উদ্দেশে জনগণকে অবহিত করার জন্য বাংলার বিভিন্ন এলাকায় জনসভার আয়োজন করেন। | আকরম খাঁ তাঁর রাজনৈতিক জীবন শুরু করেন ভারতীয় ন্যাশনাল কংগ্রেসের একজন সমর্থক হিসেবে। তাঁর প্রধান লক্ষ্য ছিল বাঙালি মুসলমানদের স্বার্থ ও অধিকার রক্ষা করা। এ উদ্দেশে তিনি ১৯০৬ সালে [[মুসলিম লীগ|মুসলিম লীগ]] গঠনে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করেন। ১৯১৮ থেকে ১৯২৪ সাল পর্যন্ত তিনি [[খিলাফত|খিলাফত]] ও [[অসহযোগ আন্দোলন|অসহযোগ আন্দোলন]]এ অংশগ্রহণ করেন। ১৯২০ সালে ঢাকার আহসান মঞ্জিলে অনুষ্ঠিত অধিবেশনে তিনি খিলাফত কমিটির সেক্রেটারি নির্বাচিত হন। এ সম্মেলনে বিশিষ্ট খেলাফত নেতৃবৃন্দ মওলানা [[আজাদ, মওলানা আবুল কালাম|আবুল কালাম আজাদ]] (১৮৮৫-১৯৫৮), মওলানা [[ইসলামাবাদী, মওলানা মনিরুজ্জামান|মনিরুজ্জামান ইসলামাবাদী]] (১৮৭৫-১৯৫০) এবং মওলানা মুজিবুর রহমান (১৮৭৩-১৯২৪) উপস্থিত ছিলেন। আকরম খাঁকে তুরস্কের উসমানীয় খিলাফতের জন্য অর্থ সংগ্রহের দায়িত্ব দেওয়া হয়। ১৯২০ থেকে ১৯২৩ সাল পর্যন্ত তিনি খিলাফত ও অসহযোগ আন্দোলনের উদ্দেশে জনগণকে অবহিত করার জন্য বাংলার বিভিন্ন এলাকায় জনসভার আয়োজন করেন। |
০৬:২৯, ১৪ সেপ্টেম্বর ২০১৪ তারিখে সম্পাদিত সর্বশেষ সংস্করণ
খাঁ, মোহাম্মদ আকরম (১৮৬৮-১৯৬৮) সাংবাদিক, রাজনীতিক, ইসলামিশাস্ত্রজ্ঞ। তিনি পশ্চিমবঙ্গের চবিবশ পরগনা জেলার হাকিমপুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা তেমন ছিল না। কিন্তু জ্ঞানানুসন্ধানী আকরম খাঁ ইসলাম ধর্ম এবং বাংলা ও ভারতের মুসলমানদের ইতিহাস ও সংস্কৃতি সম্পর্কে গভীর জ্ঞান অর্জন করেন।
তাঁর পেশাগত ও রাজনৈতিক জীবন খুব অল্প বয়সেই শুরু হয়। সাংবাদিক হিসেবে তিনি প্রথম কাজ করেন আহল-ই-হাদিস ও মোহাম্মদী আখবার পত্রিকায়। মোহাম্মদ আকরম খাঁ ১৯০৮ থেকে ১৯২১ সালের মধ্যে মোহাম্মদী ও আল-এসলাম পত্রিকায় সম্পাদক হিসেবে কাজ করেন। অতঃপর তিনি নিজে কলকাতা হতে ১৯২০ থেকে ১৯২২ সালের মধ্যে জামানা ও সেবক নামে দুটি পত্রিকা প্রকাশ করেন। সেবক অসহযোগ ও স্বদেশী আন্দোলনকে সমর্থন যোগায়। সেবক নিষিদ্ধ ঘোষিত হয় এবং সরকার বিরোধী সম্পাদকীয় লেখার জন্য আকরম খাঁ গ্রেপ্তার হন। পরে ১৯৩৬ সালের অক্টোবরে তিনি ওই সময়ের একমাত্র বাংলা দৈনিক পত্রিকা আজাদ প্রকাশ করেন। এ পত্রিকাটি বঙ্গ বিভাগোত্তরকালে মুসলিম লীগের পক্ষে জনসমর্থন সৃষ্টির ক্ষেত্রে যথেষ্ট অবদান রাখে।
আকরম খাঁ তাঁর রাজনৈতিক জীবন শুরু করেন ভারতীয় ন্যাশনাল কংগ্রেসের একজন সমর্থক হিসেবে। তাঁর প্রধান লক্ষ্য ছিল বাঙালি মুসলমানদের স্বার্থ ও অধিকার রক্ষা করা। এ উদ্দেশে তিনি ১৯০৬ সালে মুসলিম লীগ গঠনে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করেন। ১৯১৮ থেকে ১৯২৪ সাল পর্যন্ত তিনি খিলাফত ও অসহযোগ আন্দোলনএ অংশগ্রহণ করেন। ১৯২০ সালে ঢাকার আহসান মঞ্জিলে অনুষ্ঠিত অধিবেশনে তিনি খিলাফত কমিটির সেক্রেটারি নির্বাচিত হন। এ সম্মেলনে বিশিষ্ট খেলাফত নেতৃবৃন্দ মওলানা আবুল কালাম আজাদ (১৮৮৫-১৯৫৮), মওলানা মনিরুজ্জামান ইসলামাবাদী (১৮৭৫-১৯৫০) এবং মওলানা মুজিবুর রহমান (১৮৭৩-১৯২৪) উপস্থিত ছিলেন। আকরম খাঁকে তুরস্কের উসমানীয় খিলাফতের জন্য অর্থ সংগ্রহের দায়িত্ব দেওয়া হয়। ১৯২০ থেকে ১৯২৩ সাল পর্যন্ত তিনি খিলাফত ও অসহযোগ আন্দোলনের উদ্দেশে জনগণকে অবহিত করার জন্য বাংলার বিভিন্ন এলাকায় জনসভার আয়োজন করেন।
হিন্দু মুসলিম সম্প্রীতিতে বিশ্বাসী আকরম খাঁ ১৯২২ সালে কলকাতায় চিত্তরঞ্জন দাশ-এর স্বরাজ্য পার্টি এবং ১৯২৩ সালে বেঙ্গল প্যাক্টএর প্রতি সমর্থন জানান। ১৯২৬-১৯২৭ সালের সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা এবং সমসাময়িক অন্যান্য রাজনৈতিক ঘটনাবলির পরিপ্রেক্ষিতে আকরম খাঁ ভারতীয় জাতীয় রাজনীতির প্রতি আস্থা হারিয়ে স্বরাজ্য পার্টি ও কংগ্রেস উভয় দল থেকেই পদত্যাগ করেন। ১৯২৯ থেকে ১৯৩৫ সাল পর্যন্ত তিনি প্রজা বা কৃষক রাজনীতির সঙ্গে গভীরভাবে সম্পৃক্ত হন। ১৯৩৫ সালে বেঙ্গল প্রজা সমিতিতে অনৈক্য দেখা দিলে ১৯৩৬ সালে তিনি কৃষক রাজনীতি ত্যাগ করেন এবং সক্রিয়ভাবে মুসলীম লীগে যোগ দেন। তিনি ১৯৪৭ সাল পর্যন্ত মুসলিম লীগের সেন্ট্রাল ওয়ার্কিং কমিটির সদস্য ছিলেন। ভারত বিভাগের পর (১৯৪৭) তিনি পূর্ববঙ্গে চলে আসেন এবং ঢাকায় স্থায়িভাবে বসবাস করতে থাকেন।
তাঁর উল্লেখযোগ্য গ্রন্থ সমস্যা ও সমাধান, মোস্তফা চরিত, আমপারার বঙ্গানুবাদ। তাঁর মোসলেম বাংলার সামাজিক ইতিহাস-গ্রন্থে তিনি পীরবাদ ও সুফীবাদের প্রভাবসহ বাঙালি সমাজের বিভিন্ন দিক এবং বাঙালি মুসলমানদের অবনতির কারণ আলোচনা করেছেন। তাছাড়া তিনি আকবরএর ‘দীন-ই-ইলাহী’র সমালোচনা করেন এবং আওরঙ্গজেব-এর ধর্মনিষ্ঠা ও তৎকালীন সমন্বয় প্রবণতার বিরুদ্ধে তার জেহাদের প্রশংসা করেন। তিনি ১৯৬৯ সালের ১৮ আগস্ট মৃত্যুবরণ করেন। [রানা রাজ্জাক]