কলা: সংশোধিত সংস্করণের মধ্যে পার্থক্য

সম্পাদনা সারাংশ নেই
 
সম্পাদনা সারাংশ নেই
 
২ নং লাইন: ২ নং লাইন:
'''কলা''' (Banana)  গ্রীষ্মমন্ডলীয় এলাকার এক সুপরিচিত সুস্বাদু  [[ফল|ফল]]। এর আদি নিবাস দক্ষিণ পশ্চিম প্রশান্ত মহাসাগরীয় এলাকায়, যেখান থেকে খ্রিস্টপূর্ব ৬০০ অব্দ নাগাদ ভারতে আসে এবং পরবর্তী সময়ে উষ্ণমন্ডলীয় বিভিন্ন দেশে বিস্তার লাভ করে। এমনকি খ্রিস্টপূর্ব ২০০-৩০০ অব্দে প্রশান্ত মহাসাগরের কতিপয় দ্বীপে এবং আফ্রিকার পশ্চিম উপকূল ভাগ এলাকায় কলা বিস্তার লাভ করেছিল বলে ধারণা করা হয়।
'''কলা''' (Banana)  গ্রীষ্মমন্ডলীয় এলাকার এক সুপরিচিত সুস্বাদু  [[ফল|ফল]]। এর আদি নিবাস দক্ষিণ পশ্চিম প্রশান্ত মহাসাগরীয় এলাকায়, যেখান থেকে খ্রিস্টপূর্ব ৬০০ অব্দ নাগাদ ভারতে আসে এবং পরবর্তী সময়ে উষ্ণমন্ডলীয় বিভিন্ন দেশে বিস্তার লাভ করে। এমনকি খ্রিস্টপূর্ব ২০০-৩০০ অব্দে প্রশান্ত মহাসাগরের কতিপয় দ্বীপে এবং আফ্রিকার পশ্চিম উপকূল ভাগ এলাকায় কলা বিস্তার লাভ করেছিল বলে ধারণা করা হয়।


[[Image:Banana.jpg|thumb|400px|right|কলাগাছ]]
কলা Musaceae গোত্রের Musa গণের কতিপয় প্রজাতির জন্য ব্যবহূত সাধারণ নাম। অপ্রকৃত নরম কান্ডবিশিষ্ট এ গাছ গুল্মজাতীয় উদ্ভিদের (herbaceous plants) মধ্যে বেশ লম্বা। বৃক্ষের মতো দেখতে এর নরম কান্ড পাতার গোড়ার অংশ নিয়ে গঠিত। গুড়িকন্দ (rhizome) থেকে বৃত্তাকারে কান্ডবেষ্টিত অবস্থায় পাতা গজায়। কলাগাছের পাতা একক, সরল, বেশ বড় আকারের এবং প্রশস্ত। মধ্যশিরা সুস্পষ্ট। পাতা দৈর্ঘ্যে ৩৬৫ সেমি এবং প্রস্থে ৬১ সেমি পর্যন্ত হতে পারে। প্রতিটি কলাগাছ একটি মাত্র পুষ্পমঞ্জরি উৎপাদন করে। মঞ্জরিদন্ড মাংসল, উজ্জ্বল বর্ণের নৌকা আকৃতির একাধিক খাপযুক্ত। পুষ্পমঞ্জরির নিচের অংশে স্ত্রী ফুল এবং উপরের অংশে পুরুষ ফুল থাকে। এক সময় নিচের দিকে নোয়ানো পুষ্পমঞ্জরি কলার কাঁদিতে রূপলাভ করে।
কলা Musaceae গোত্রের Musa গণের কতিপয় প্রজাতির জন্য ব্যবহূত সাধারণ নাম। অপ্রকৃত নরম কান্ডবিশিষ্ট এ গাছ গুল্মজাতীয় উদ্ভিদের (herbaceous plants) মধ্যে বেশ লম্বা। বৃক্ষের মতো দেখতে এর নরম কান্ড পাতার গোড়ার অংশ নিয়ে গঠিত। গুড়িকন্দ (rhizome) থেকে বৃত্তাকারে কান্ডবেষ্টিত অবস্থায় পাতা গজায়। কলাগাছের পাতা একক, সরল, বেশ বড় আকারের এবং প্রশস্ত। মধ্যশিরা সুস্পষ্ট। পাতা দৈর্ঘ্যে ৩৬৫ সেমি এবং প্রস্থে ৬১ সেমি পর্যন্ত হতে পারে। প্রতিটি কলাগাছ একটি মাত্র পুষ্পমঞ্জরি উৎপাদন করে। মঞ্জরিদন্ড মাংসল, উজ্জ্বল বর্ণের নৌকা আকৃতির একাধিক খাপযুক্ত। পুষ্পমঞ্জরির নিচের অংশে স্ত্রী ফুল এবং উপরের অংশে পুরুষ ফুল থাকে। এক সময় নিচের দিকে নোয়ানো পুষ্পমঞ্জরি কলার কাঁদিতে রূপলাভ করে।
[[Image:Banana.jpg|thumb|400px|right|কলাগাছ]]


প্রতিটি কাঁদিতে থাকে পাঁচ থেকে ১৫টি গুচ্ছ এবং প্রতিটি গুচ্ছে থাকতে পারে ৬-২০টি একক লম্বাটে ফল। অনেক সময় পাশাপাশি দুটি ফল আংশিক একীভূত অবস্থায় দেখা যায়। কোনো কোনো জাতের কলায় কিছু সংখ্যক ছোট ছোট কালো রঙের বীজ থাকে। ফল পাকার পর গাছ মারা যায় এবং কেটে ফেলা হয়। গাছের গোড়া থেকে আবার নতুন গাছ জন্মায়।
প্রতিটি কাঁদিতে থাকে পাঁচ থেকে ১৫টি গুচ্ছ এবং প্রতিটি গুচ্ছে থাকতে পারে ৬-২০টি একক লম্বাটে ফল। অনেক সময় পাশাপাশি দুটি ফল আংশিক একীভূত অবস্থায় দেখা যায়। কোনো কোনো জাতের কলায় কিছু সংখ্যক ছোট ছোট কালো রঙের বীজ থাকে। ফল পাকার পর গাছ মারা যায় এবং কেটে ফেলা হয়। গাছের গোড়া থেকে আবার নতুন গাছ জন্মায়।


পৃথিবীর নানা দেশে প্রায় ৩০০ জাতের কলা জন্মে, এর সিংহভাগ উৎপাদিত হয় এশিয়ার গ্রীষ্মমন্ডলীয় দেশসমূহে। বাংলাদেশে ২০০৫-০৬ সালে ১,৩৮,৩৬০ একর জমিতে ৯,০৯,০৬০ মে টন কলা উৎপাদিত হয়েছে। এদেশে সর্বত্রই সারা বছর কলা জন্মে। তবে প্রধান কলাচাষ এলাকার মধ্যে রংপুর, দিনাজপুর, বগুড়া, ফরিদপুর, খুলনা, যশোর, নোয়াখালী, রাঙ্গামাটি এবং বরিশাল উল্লেখযোগ্য। যে জাত অথবা প্রজাতিগুলি এদেশে সচরাচর উৎপাদন করা হয় তার মধ্যে রয়েছে সাগরকলা (''Musa cavendishi, M. oranta''), কাঁচাকলা (''M. paradisiaca paradisiaca''), সাধারণ কলা (''M. paradisiaca sapientum'') এবং আইট্যা কলা (''M. sapientum sylvestris'')। স্থানীয় অন্যান্য সুপরিচিত জাতগুলির মধ্যে চাম্পা, সবরি, সিঙ্গাপুরি এবং মাহেরসাগর উল্লেখযোগ্য। বন্য কয়েকটি জাতের মধ্যে পাহাড়ি কলা (M. textilis) ভাল অাঁশদায়ক এক ফসল হিসেবে যথেষ্ট গুরুত্বপূর্ণ।
পৃথিবীর নানা দেশে প্রায় ৩০০ জাতের কলা জন্মে, এর সিংহভাগ উৎপাদিত হয় এশিয়ার গ্রীষ্মমন্ডলীয় দেশসমূহে। বাংলাদেশে ২০০৫-০৬ সালে ১,৩৮,৩৬০ একর জমিতে ৯,০৯,০৬০ মে টন কলা উৎপাদিত হয়েছে। এদেশে সর্বত্রই সারা বছর কলা জন্মে। তবে প্রধান কলাচাষ এলাকার মধ্যে রংপুর, দিনাজপুর, বগুড়া, ফরিদপুর, খুলনা, যশোর, নোয়াখালী, রাঙ্গামাটি এবং বরিশাল উল্লেখযোগ্য। যে জাত অথবা প্রজাতিগুলি এদেশে সচরাচর উৎপাদন করা হয় তার মধ্যে রয়েছে সাগরকলা (''Musa cavendishi'', ''M. oranta''), কাঁচাকলা (''M. paradisiaca paradisiaca''), সাধারণ কলা (''M. paradisiaca sapientum'') এবং আইট্যা কলা (''M. sapientum sylvestris'')। স্থানীয় অন্যান্য সুপরিচিত জাতগুলির মধ্যে চাম্পা, সবরি, সিঙ্গাপুরি এবং মাহেরসাগর উল্লেখযোগ্য। বন্য কয়েকটি জাতের মধ্যে পাহাড়ি কলা (''M. textilis'') ভাল অাঁশদায়ক এক ফসল হিসেবে যথেষ্ট গুরুত্বপূর্ণ।


সুস্বাদু ফল এবং উত্তম সবজি হিসেবে কলার ব্যবহার ব্যাপক। এছাড়া কলা গাছের থোড় সবজি হিসেবেও খাওয়া হয়। এ ফলে শর্করার পরিমাণ যথেষ্ট বেশি এবং এতে সামান্য প্রোটিন এবং চর্বিও রয়েছে। কলা থেকে উৎপন্ন রস অতি পুষ্টিকর ও উপাদেয়। অনেক দেশে পাকা ফল থেকে মদ, বিয়ার, সিরকা ইত্যাদি তৈরি করা হয়। পাকা কলার শুকনা গুঁড়া শিশুখাদ্য হিসেবে এবং চকলেট, বিস্কুট ও চিপ্স তৈরির এক উপাদান হিসেবে ব্যবহূত হয়। কলা গাছের ছোবড়ার ছাই পটাসিয়ামসমৃদ্ধ, তাই সাবান তৈরীতে এর ব্যবহার রয়েছে। কলার খোসায় এবং পাকা কলায় ছত্রাক ও ব্যাকটেরিয়ারোধী দ্রব্য রয়েছে বলে বিশ্বাস করা হয়।
সুস্বাদু ফল এবং উত্তম সবজি হিসেবে কলার ব্যবহার ব্যাপক। এছাড়া কলা গাছের থোড় সবজি হিসেবেও খাওয়া হয়। এ ফলে শর্করার পরিমাণ যথেষ্ট বেশি এবং এতে সামান্য প্রোটিন এবং চর্বিও রয়েছে। কলা থেকে উৎপন্ন রস অতি পুষ্টিকর ও উপাদেয়। অনেক দেশে পাকা ফল থেকে মদ, বিয়ার, সিরকা ইত্যাদি তৈরি করা হয়। পাকা কলার শুকনা গুঁড়া শিশুখাদ্য হিসেবে এবং চকলেট, বিস্কুট ও চিপ্স তৈরির এক উপাদান হিসেবে ব্যবহূত হয়। কলা গাছের ছোবড়ার ছাই পটাসিয়ামসমৃদ্ধ, তাই সাবান তৈরীতে এর ব্যবহার রয়েছে। কলার খোসায় এবং পাকা কলায় ছত্রাক ও ব্যাকটেরিয়ারোধী দ্রব্য রয়েছে বলে বিশ্বাস করা হয়।
২০ নং লাইন: ১৯ নং লাইন:
''Pseudomonas solanacearum''  [[ব্যাকটেরিয়া|ব্যাকটেরিয়া]] উইল্ট রোগের কারণ। রোগের লক্ষণ পানামা উইল্ট রোগের অনুরূপ। অ্যানথ্রাকনোজ মূলত ফলের রোগ, ''Colletotrichum musae'' নামের এক ছত্রাক এ রোগের জীবাণু। ফল পাকার সময় হলে ছত্রাকের আক্রমণ শুরু হয় এবং পাকা ফলের উপরিভাগে বৈশিষ্ট্যময় ক্ষতের সৃষ্টি করে।
''Pseudomonas solanacearum''  [[ব্যাকটেরিয়া|ব্যাকটেরিয়া]] উইল্ট রোগের কারণ। রোগের লক্ষণ পানামা উইল্ট রোগের অনুরূপ। অ্যানথ্রাকনোজ মূলত ফলের রোগ, ''Colletotrichum musae'' নামের এক ছত্রাক এ রোগের জীবাণু। ফল পাকার সময় হলে ছত্রাকের আক্রমণ শুরু হয় এবং পাকা ফলের উপরিভাগে বৈশিষ্ট্যময় ক্ষতের সৃষ্টি করে।


বেশ কয়েক প্রজাতির  [[কীটপতঙ্গ|কীটপতঙ্গ]] কলাগাছ ও ফলের ক্ষতি করে। বাংলাদেশে গুরুত্বপূর্ণ ক্ষতিকর পোকার মধ্যে রয়েছে পাতা ও ফলের  [[বিটল|বিটল]], ''Nodostoma viridipennis'', কান্ডের  [[উইভিল|উইভিল]], ''Cosmopolites sordius'' এবং কান্ডের মাজরাপোকা, ''Odioporus longicollis''। পাতা ও ফলের বিটল সাধারণত পাতার অঙ্কীয়ভাগের সবুজ অংশ খেয়ে অনিয়মিত দাগের সৃষ্টি করে। ফলের উপর সৃষ্ট দাগ ফল বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে বড় হয়। এতে কলার গুণগত মান ব্যাহত হয় এবং বাজারজাত পণ্যের কাঙ্ক্ষিত মূল্য পাওয়া যায় না। কান্ডের মাজরা পোকা দ্বারা বেশি আক্রান্ত কচি কলাগাছ অনেক সময় মারা যায়; বড় গাছ বেঁচে থাকলেও বৃদ্ধির মাত্রা বহুলাংশে কমে যায়।
বেশ কয়েক প্রজাতির  [[কীটপতঙ্গ|কীটপতঙ্গ]] কলাগাছ ও ফলের ক্ষতি করে। বাংলাদেশে গুরুত্বপূর্ণ ক্ষতিকর পোকার মধ্যে রয়েছে পাতা ও ফলের  [[বিটল|বিটল]], ''Nodostoma viridipennis'', কান্ডের  [[উইভিল|উইভিল]], ''Cosmopolites sordius'' এবং কান্ডের মাজরাপোকা, ''Odioporus longicollis''। পাতা ও ফলের বিটল সাধারণত পাতার অঙ্কীয়ভাগের সবুজ অংশ খেয়ে অনিয়মিত দাগের সৃষ্টি করে। ফলের উপর সৃষ্ট দাগ ফল বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে বড় হয়। এতে কলার গুণগত মান ব্যাহত হয় এবং বাজারজাত পণ্যের কাঙ্ক্ষিত মূল্য পাওয়া যায় না। কান্ডের মাজরা পোকা দ্বারা বেশি আক্রান্ত কচি কলাগাছ অনেক সময় মারা যায়; বড় গাছ বেঁচে থাকলেও বৃদ্ধির মাত্রা বহুলাংশে কমে যায়।   [মোঃ মাহফুজুর রহমান এবং এস.এম হুমায়ুন কবির]
 
[মোঃ মাহফুজুর রহমান এবং এস.এম হুমায়ুন কবির]


''আরও দেখুন'' [[ফল|ফল]]।
''আরও দেখুন'' [[ফল|ফল]]।


[[en:Banana]]
[[en:Banana]]

০৯:৩২, ৫ আগস্ট ২০১৪ তারিখে সম্পাদিত সর্বশেষ সংস্করণ

কলা (Banana)  গ্রীষ্মমন্ডলীয় এলাকার এক সুপরিচিত সুস্বাদু  ফল। এর আদি নিবাস দক্ষিণ পশ্চিম প্রশান্ত মহাসাগরীয় এলাকায়, যেখান থেকে খ্রিস্টপূর্ব ৬০০ অব্দ নাগাদ ভারতে আসে এবং পরবর্তী সময়ে উষ্ণমন্ডলীয় বিভিন্ন দেশে বিস্তার লাভ করে। এমনকি খ্রিস্টপূর্ব ২০০-৩০০ অব্দে প্রশান্ত মহাসাগরের কতিপয় দ্বীপে এবং আফ্রিকার পশ্চিম উপকূল ভাগ এলাকায় কলা বিস্তার লাভ করেছিল বলে ধারণা করা হয়।

কলাগাছ

কলা Musaceae গোত্রের Musa গণের কতিপয় প্রজাতির জন্য ব্যবহূত সাধারণ নাম। অপ্রকৃত নরম কান্ডবিশিষ্ট এ গাছ গুল্মজাতীয় উদ্ভিদের (herbaceous plants) মধ্যে বেশ লম্বা। বৃক্ষের মতো দেখতে এর নরম কান্ড পাতার গোড়ার অংশ নিয়ে গঠিত। গুড়িকন্দ (rhizome) থেকে বৃত্তাকারে কান্ডবেষ্টিত অবস্থায় পাতা গজায়। কলাগাছের পাতা একক, সরল, বেশ বড় আকারের এবং প্রশস্ত। মধ্যশিরা সুস্পষ্ট। পাতা দৈর্ঘ্যে ৩৬৫ সেমি এবং প্রস্থে ৬১ সেমি পর্যন্ত হতে পারে। প্রতিটি কলাগাছ একটি মাত্র পুষ্পমঞ্জরি উৎপাদন করে। মঞ্জরিদন্ড মাংসল, উজ্জ্বল বর্ণের নৌকা আকৃতির একাধিক খাপযুক্ত। পুষ্পমঞ্জরির নিচের অংশে স্ত্রী ফুল এবং উপরের অংশে পুরুষ ফুল থাকে। এক সময় নিচের দিকে নোয়ানো পুষ্পমঞ্জরি কলার কাঁদিতে রূপলাভ করে।

প্রতিটি কাঁদিতে থাকে পাঁচ থেকে ১৫টি গুচ্ছ এবং প্রতিটি গুচ্ছে থাকতে পারে ৬-২০টি একক লম্বাটে ফল। অনেক সময় পাশাপাশি দুটি ফল আংশিক একীভূত অবস্থায় দেখা যায়। কোনো কোনো জাতের কলায় কিছু সংখ্যক ছোট ছোট কালো রঙের বীজ থাকে। ফল পাকার পর গাছ মারা যায় এবং কেটে ফেলা হয়। গাছের গোড়া থেকে আবার নতুন গাছ জন্মায়।

পৃথিবীর নানা দেশে প্রায় ৩০০ জাতের কলা জন্মে, এর সিংহভাগ উৎপাদিত হয় এশিয়ার গ্রীষ্মমন্ডলীয় দেশসমূহে। বাংলাদেশে ২০০৫-০৬ সালে ১,৩৮,৩৬০ একর জমিতে ৯,০৯,০৬০ মে টন কলা উৎপাদিত হয়েছে। এদেশে সর্বত্রই সারা বছর কলা জন্মে। তবে প্রধান কলাচাষ এলাকার মধ্যে রংপুর, দিনাজপুর, বগুড়া, ফরিদপুর, খুলনা, যশোর, নোয়াখালী, রাঙ্গামাটি এবং বরিশাল উল্লেখযোগ্য। যে জাত অথবা প্রজাতিগুলি এদেশে সচরাচর উৎপাদন করা হয় তার মধ্যে রয়েছে সাগরকলা (Musa cavendishi, M. oranta), কাঁচাকলা (M. paradisiaca paradisiaca), সাধারণ কলা (M. paradisiaca sapientum) এবং আইট্যা কলা (M. sapientum sylvestris)। স্থানীয় অন্যান্য সুপরিচিত জাতগুলির মধ্যে চাম্পা, সবরি, সিঙ্গাপুরি এবং মাহেরসাগর উল্লেখযোগ্য। বন্য কয়েকটি জাতের মধ্যে পাহাড়ি কলা (M. textilis) ভাল অাঁশদায়ক এক ফসল হিসেবে যথেষ্ট গুরুত্বপূর্ণ।

সুস্বাদু ফল এবং উত্তম সবজি হিসেবে কলার ব্যবহার ব্যাপক। এছাড়া কলা গাছের থোড় সবজি হিসেবেও খাওয়া হয়। এ ফলে শর্করার পরিমাণ যথেষ্ট বেশি এবং এতে সামান্য প্রোটিন এবং চর্বিও রয়েছে। কলা থেকে উৎপন্ন রস অতি পুষ্টিকর ও উপাদেয়। অনেক দেশে পাকা ফল থেকে মদ, বিয়ার, সিরকা ইত্যাদি তৈরি করা হয়। পাকা কলার শুকনা গুঁড়া শিশুখাদ্য হিসেবে এবং চকলেট, বিস্কুট ও চিপ্স তৈরির এক উপাদান হিসেবে ব্যবহূত হয়। কলা গাছের ছোবড়ার ছাই পটাসিয়ামসমৃদ্ধ, তাই সাবান তৈরীতে এর ব্যবহার রয়েছে। কলার খোসায় এবং পাকা কলায় ছত্রাক ও ব্যাকটেরিয়ারোধী দ্রব্য রয়েছে বলে বিশ্বাস করা হয়।

রোগবালাই  কলাগাছ ও ফল উভয়েই কিছু রোগে আক্রান্ত হয়। উল্লেখযোগ্য রোগগুলির মধ্যে রয়েছে পানামা উইল্ট, বানচি টপ, লিফ স্পট, ব্ল্যাক লিফ স্ট্রিক, ব্যাকটেরিয়াল উইল্ট, অ্যানথ্রাকনোজ এবং ব্ল্যাক হেড।

Fusarium oxysporum  ছত্রাক পানামা উইল্ট রোগের জন্য দায়ী। এটি কেবল বাংলাদেশে নয়, পৃথিবীর সব কলা চাষ এলাকার ধ্বংসাত্বক এক রোগ। মাটির মাধ্যমে মূলের ভিতর দিয়ে এ রোগজীবাণু গাছে প্রবেশ করে। এক ধরনের নিমাটোডের (Rhadopholus similis) আক্রমণ এ রোগ ছড়াতে সহায়তা করে বলে জানা গেছে। আক্রান্ত গাছের পাতা ক্রমে শুকিয়ে হলদে হয়ে যায় এবং পাতা নেতিয়ে পড়ে।

বানচি টপ ভাইরাসঘটিত এক রোগ, এ উপমহাদেশের সর্বত্র বিস্তৃত এবং যে কোনো বয়সের কলা গাছ এতে আক্রান্ত হতে পারে। Pentalonia nigronervosa নামের  জাবপোকা এ রোগের বাহক। আক্রান্ত গাছে কান্ডের ভেতর দিকে ধূসর সবুজ রঙের ডোরা দাগ তৈরি হয়। কখনও কখনও এ রোগের পাশাপাশি ছত্রাক ও ব্যাকটেরিয়ার সহযোগে মূলে পচন ধরে।

Pseudomonas solanacearum  ব্যাকটেরিয়া উইল্ট রোগের কারণ। রোগের লক্ষণ পানামা উইল্ট রোগের অনুরূপ। অ্যানথ্রাকনোজ মূলত ফলের রোগ, Colletotrichum musae নামের এক ছত্রাক এ রোগের জীবাণু। ফল পাকার সময় হলে ছত্রাকের আক্রমণ শুরু হয় এবং পাকা ফলের উপরিভাগে বৈশিষ্ট্যময় ক্ষতের সৃষ্টি করে।

বেশ কয়েক প্রজাতির  কীটপতঙ্গ কলাগাছ ও ফলের ক্ষতি করে। বাংলাদেশে গুরুত্বপূর্ণ ক্ষতিকর পোকার মধ্যে রয়েছে পাতা ও ফলের  বিটল, Nodostoma viridipennis, কান্ডের  উইভিল, Cosmopolites sordius এবং কান্ডের মাজরাপোকা, Odioporus longicollis। পাতা ও ফলের বিটল সাধারণত পাতার অঙ্কীয়ভাগের সবুজ অংশ খেয়ে অনিয়মিত দাগের সৃষ্টি করে। ফলের উপর সৃষ্ট দাগ ফল বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে বড় হয়। এতে কলার গুণগত মান ব্যাহত হয় এবং বাজারজাত পণ্যের কাঙ্ক্ষিত মূল্য পাওয়া যায় না। কান্ডের মাজরা পোকা দ্বারা বেশি আক্রান্ত কচি কলাগাছ অনেক সময় মারা যায়; বড় গাছ বেঁচে থাকলেও বৃদ্ধির মাত্রা বহুলাংশে কমে যায়। [মোঃ মাহফুজুর রহমান এবং এস.এম হুমায়ুন কবির]

আরও দেখুন ফল