বিটল

বিটল (Beetle)  প্রায় ২ লক্ষ ৮০ হাজারের অধিক বর্ণিত প্রজাতি নিয়ে কীটপতঙ্গের সর্ববৃহৎ বর্গ Coleoptera-এর অন্তর্ভুক্ত প্রাণী। বিটলের প্রধান শনাক্তকারী বৈশিষ্ট্য সম্মুখ ডানা দুটি শক্ত ইলাইট্রায় (elytra) রূপান্তরিত। এগুলি দৃঢ়, পুরু ও চামড়ার মতো হতে পারে এবং মধ্যপৃষ্ঠীয় রেখা বরাবর মিলিত হয়ে পিঠের উপর অবস্থান করে। অধিকাংশ প্রজাতিতে পাতলা পশ্চাৎ ডানা ওড়ার জন্য ব্যবহূত হয়। ওড়ার সময় দেহকে সহায়তা এবং বিশ্রামের সময় পশ্চাৎ ডানার নিরাপত্তায় ইলাইট্রা কাজ করে।

বিটলের দেহ শক্ত, তবে মাথা, বক্ষ ও উদর নিয়ে অন্যান্য সাধারণ পোকার ন্যায় এদের দেহ গঠিত; অবশ্য বিটলের ক্ষেত্রে শেষ দুটি বক্ষদেশীয় খন্ড উদরের সঙ্গে যুক্ত এবং অগ্রবক্ষ প্রোনোটাম নামের একটি রক্ষাত্মক প্লেটের নিচে অবস্থিত। শুঙ্গ সাধারণত ১০-১১ খন্ডে বিভক্ত, কিন্তু তাদের ধরন ব্যাপকভাবে ভিন্ন হতে পারে।

বৃহত্তম বর্গের সদস্য হিসেবে বিটলের দেহের আকার-আকৃতিতে এবং পরিবেশের সঙ্গে খাপ খাওয়ানোর ক্ষেত্রে ব্যাপক বৈচিত্র্য দেখা যায়। অনেক ক্ষেত্রে ইলাইট্রা উজ্জ্বল বর্ণের। গ্রাউন্ড বিটলগুলির (Carabidae) দেহ ডিম্বাকার, চ্যাপ্টা; ওয়াটার বিটলের (Hydrophilidae) দেহের নিচের দিক মসৃণ এবং পেছনের পায়ে দীর্ঘ লোম রয়েছে যা সাঁতার কাটার সময় অধিকতর পৃষ্ঠদেশ তৈরি করে। লেডিবিটলের (Coccinellidae) অবয়ব গোলাকৃতির এবং নিচের দিক সমতল; স্ট্যাগ বিটলের (Lucanidae) ম্যান্ডিবল ব্যাপকভাবে বর্ধিত, শুঁড় লম্বা ও পেছনের দিকে প্রলম্বিত এবং দেহ সরু। জোনাকি পোকার (Lampyridae) ইলাইট্রা নরম এবং আলো দিতে পারে; উইভিল-এর (Curculionidae) মাথার সম্মুখভাগ শুঁড়ের মতো এবং মুখোপাঙ্গ তার শীর্ষে থাকে।

বিটলরা বাস করে বিভিন্ন ধরনের উদ্ভিদে, মাটির নিচে, পানিতে, বিভিন্ন সামাজিক কীটপতঙ্গের বাসায় পরাশ্রয়ীরূপে, কাঠের পচা গুঁড়ি ও অন্যান্য স্থানে। অনেক শিকারি বিটল রয়েছে। বয়স্ক গ্রাউন্ড বিটল নিশাচর এবং বিভিন্ন পোকামাকড় ও শামুক খেয়ে থাকে। ডাইভিং বিটলের (Dytiscidae) লার্ভা ও বয়স্ক পোকা উভয়েই পোকামাকড় ও ছোট মাছ খায়। লেডিবিটল জাবপোকা ও ছাতরা পোকা খায়, আর সোলজার বিটল (Cantharidae) কীট, বিভিন্ন ধরনের পোকামাকড় ও লার্ভা পছন্দ করে। জোনাকিরা প্রধানত শামুক খায়। অন্যদিকে বিপুল সংখ্যক বিটল প্রজাতি বিভিন্ন ধরনের উদ্ভিদ খেয়ে থাকে। কতিপয় বিটল (Scolytidae) গাছপালায় ছত্রাকের সঙ্গে সহাবস্থান করে।

অধিকাংশ বিটল উভলিঙ্গ এবং স্ত্রী পোকা ডিম পাড়ে (oviparous), যদিও কতিপয় অপুংজনি (parthenogenetic species) প্রজাতি রয়েছে। বিটলের পূর্ণাঙ্গ রূপান্তর (complete metamorphosis) হয়ে থাকে। বাংলাদেশে বিটলের যেসব গোত্র রয়েছে তার কতিপয় নিম্নে উল্লেখ করা হলো।

Carabidae (বিভিন্ন ধরনের গ্রাউন্ড বিটল) প্রধানত মাটিতে বসবাস করে; পাথর, গাছের বাকল, পচা কাঠ ও অনুরূপ অন্যান্য পরিবেশে পাওয়া যায়। এসব পোকার লার্ভা ও পূর্ণাঙ্গরূপ উভয়েই মাংসভোজী (carnivorous)। Calosoma বিভিন্ন ধরনের ক্যাটারপিলার (শুঁয়োপোকা) খাদ্য হিসেবে গ্রহণ করে।

Cicindellidae (টাইগার বিটল)-এর ইলাইট্রা সাধারণত উজ্জ্বল বর্ণের; ম্যান্ডিবল ধারালো। লার্ভা ও পূর্ণাঙ্গপোকা উভয়েই শিকারি। Cicindella sexpunctata ধানের গান্ধিপোকা শিকার করে। Hydrophilidae গোত্রের অধিকাংশ সদস্য জলজ, পূর্ণাঙ্গ পোকা পচনশীল উদ্ভিজ্জ দ্রব্য খাদ্য হিসেবে গ্রহণ করে। Hydrophilus  এদেশের একটি সাধারণ গণ।

Histeridae-এর অধিকাংশ শিকারি বা মৃতজীবী। Hister প্রজাতি গোবর ও পচনশীল দ্রব্যে পাওয়া যায়। Lampryidae-এর সদস্যরা জোনাকি নামে পরিচিত। নরম দেহবিশিষ্ট নিশাচর বিটল, উদরের ৬ষ্ঠ ও ৭ম খন্ডে আলোদায়ক অঙ্গ রয়েছে। Buprestidae দেখতে উজ্জ্বল ধাতব সবুজ, সোনালি, ব্রোঞ্জ অথবা নীল। লার্ভার অগ্রবক্ষ বৃহৎ ও সম্প্রসারিত। Charysochroa species এক ধরনের অতি সুন্দর সবুজ বিটল যা সাধারণভাবে পাওয়া যায়। Sphenoptera gossypii তুলার কান্ড ছিদ্রকারী পোকা।

Dermestidae লার্ভা ও পূর্ণাঙ্গ পোকা উভয়ে চামড়া, পশম, উল, শুকনো মাংস প্রভৃতি খাদ্য হিসেবে গ্রহণ করে। Dermestes species শুকনো মাছের বালাই। Trogoderma granarium গুদামজাত ধান-চাল ও গম খেয়ে থাকে। Coccinellidae-এর অধিকাংশ প্রজাতি বিভিন্ন ধরনের জাবপোকা, কক্কিড (coccid) প্রভৃতি আহার করে; অন্যরা উদ্ভিদভোজী। বাংলাদেশে Coccinella, Adatia, Chilomenes, Scymnus এবং Epilachna species উল্লেখযোগ্য।

Tenebrionidae গোত্রের Tribolium আটা, ময়দাসহ বিভিন্ন গুদামজাত শস্য আক্রমণ করে। Tenebrio molitor অত্যন্ত পরিচিত কেড়িপোকা, যা দানাজাতীয় শস্য আক্রমণ করে। Bostrychidae-এর Sinoxylon ও Dinodems-এর প্রজাতিসমূহ বাঁশ ও কর্তিত গাছপালার ব্যাপক ক্ষতিসাধন করে। Rhyzopertha dominica গুদামজাত শস্যের একটি গুরুত্বপূর্ণ বালাই।

Anobiidae গোত্রের Anobium striatum আসবাবপত্র বিনষ্ট করে। Lasioderma sericorne সিগারেট বিটল নামে পরিচিত তামাকের ক্ষতিকর এক বিটল। Scarabaeidae গোত্রের সদস্যরা গোবরেপোকা নামে পরিচিত। অধিকাংশ প্রজাতি সুদৃশ্য, ল্যামিলেট শুঙ্গ ও শিংযুক্ত। Onthophagus, Copris, Heliocopris, Onitis এবং Oxycetonia বাংলাদেশের সাধারণ গণসমূহের অন্তর্ভুক্ত। Oryctes rhinoceros নারিকেল গাছের ক্ষতি করে। Bruchidae গোত্রে রয়েছে Bruchus এবং Callosobruchus। এদের প্রজাতি বিভিন্ন ধরনের ডালের ক্ষতি করে।

Chrysomelidae এবং এর সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত অন্যান্য গোত্র Galerucidae, Hispidae এবং Cassididae-এর প্রায় একই ধরনের বৈশিষ্ট্য রয়েছে এবং প্রকৃতপক্ষে এদের Chrysomelidae-এর উপগোত্র হিসেবে বিবেচনা করা হয়। পূর্ণাঙ্গ পোকা ও তাদের লার্ভা উভয়ে বেশ কিছু গাছের পাতা ব্যাপকভাবে খেয়ে থাকে, কেউ কেউ আবাদকৃত ফসল ও শাকসবজির জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর। লিফ বিটলদের মধ্যে সাধারণত Aulacophora, Altica, Galemcella, Monotepta, Dicladispa এবং Aspidomorpha-এর অনেক প্রজাতি এদেশে পাওয়া যায়।  [মোনাওয়ার আহমাদ]

গোবরে পোকা (Dung beetle)  উপগোত্র Scarabaeinae-এর অতি বৈশিষ্ট্যময় গোবরভুক একদল বিটল-এর সাধারণ নাম। যদিও Scarabaeidae গোত্রের সব সদস্যই সাধারণভাবে গোবরে পোকা অথবা ল্যামেলিকর্ন বিটল (lamellicorn beetle) নামে পরিচিত, গোবরে পোকা নামটি বিশেষ করে নানা প্রাণীর মল বা বিষ্ঠার মধ্যে বাস করে এমন ধরনের প্রজাতিগুলিকে বোঝাতে ব্যবহূত হয়। খাদ্যাভ্যাসের ভিত্তিতে স্ক্যারাব বিটলদের দুটি পৃথক দলে ভাগ করা হয়। এর একটি দল উদ্ভিদভোজী, যে ক্ষেত্রে পরিণত বয়সের পোকা উদ্ভিদজাত খাদ্য খায় এবং লার্ভা দশা পচনশীল জৈব পদার্থ অথবা কোন প্রাণীর মল বা বিষ্ঠার মধ্যে অতিবাহিত করে। অন্য দল একান্তভাবেই আবর্জনাদির মধ্যে বাস করে এবং এদের খাদ্য প্রধানত গোবর অথবা পচা জৈব পদার্থ। নানা ধরনের গোবর, মলমূত্র, শবদেহ, জৈব আবর্জনা, পচা কাঠ এবং ছত্রাক এদের বাসস্থান। দেখা গেছে, বিভিন্ন প্রজাতি বিশেষ ধরনের গোবর বা মলমূত্রকেই পছন্দ করে, আবার কিছু পোকা একাধিক ধরনের বিষ্ঠার মধ্যে বাস করতে অভ্যস্ত। মাটির নিচে বসবাসকারী এসব বিটল মাটির উপরিভাগের জৈব ময়লা আবর্জনা অপসারণ করে ভূ-পৃষ্ঠ পরিষ্কার রাখার কাজে প্রায় সর্বত্রই সব সময় নিজেদের নিয়োজিত রাখে।

এক হিসাবে জানা যায়, এসব উপকারী পতঙ্গ ভারতে মে এবং জুন মাসে প্রতিদিন মাটির উপরিভাগ থেকে ৪০ থেকে ৫০ হাজার মে টন উন্মুক্ত গোবর বা মল মাটির নিচে টেনে নিয়ে যায়। স্বতঃস্ফূর্তভাবে তারা গোবরের দলার নিচে সরু সুড়ঙ্গ পথে গোবরের ছোট ছোট টুকরা মাটির নিচে বয়ে নিয়ে যায়। গোবরের এসব অংশ তারা খাদ্য হিসেবে অথবা প্রজননের কাজে ব্যবহার করে। তাদের এ কাজ মাটির উর্বরতা বাড়িয়ে দেয়। এছাড়া গোবরে পোকা মলমূত্রের মধ্যে বসবাসকারী নানা ধরনের পরজীবী ধ্বংস করে তাদের সংখ্যা বৃদ্ধিকে রোধ করে। কোন কোন গোবরে পোকা প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে মানুষের কিছু ক্ষতিও করে। গবাদিপশুর রোগ সৃষ্টিকারী কয়েকটি পরজীবীর মাধ্যমিক পোষক হিসেবে এদের ভূমিকা আছে। কিছু কিছু পোকা বাগানের ফুলগাছ, লতাগুল্ম অথবা ফসলের ক্ষতি করে।

গোবরে পোকাদের কতকগুলি বিশেষ বৈশিষ্ট্য রয়েছে। এদের শুঙ্গ ৭-১০ খন্ডবিশিষ্ট ল্যামিলেট (lamellate) ধরনের। সামনের পায়ের টিবিয়া (tibia) প্রশস্ত, দাঁতবিশিষ্ট, মাটিতে গর্ত করার উপযোগী। অর্থনৈতিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ এসব পোকাদের নিয়ে বিজ্ঞানীদের গবেষণা শুরু হয়েছে ঊনবিংশ শতাব্দীর শুরু থেকে। সাম্প্রতিক কালের এক জরিপে বাংলাদেশের বিভিন্ন স্থান থেকে ৩৫ প্রজাতির গোবরে পোকার সন্ধান মিলেছে। আটটি গণের অধীনে এদের ২০টি প্রজাতি Onthophagous গণের সদস্য, বাকিগুলির মধ্যে ৫টি Cathersius, ৩টি করে Caccobius ও Oniticellus এবং একটি করে Copris, Heliocopris, Onitis এবং Gymnopleurus গণের অন্তর্ভুক্ত। গাছের পাতা খায় এমন ২৮টি প্রজাতির স্ক্যারাব বিটল বাংলাদেশে পাওয়া গেছে, এর মধ্যে ১৭টি প্রজাতি Rutellinae, ৫টি Dynastinae এবং ৬টি Aphodiinae উপগোত্রের সদস্য।  [এম.জেড.আর মজুমদার]

লীফবিটল (Leaf beetle) Coleoptera বর্গের Chrysomelidae গোত্রের সদস্যদের সাধারণ নাম। এ গোত্রের প্রায় ৩৭,০০০ প্রজাতির সবাই উদ্ভিদভোজী। লীফবিটল কেবল পাতাই খায় না, পাতায় গর্তও বানায় এবং শিকড় ও উদ্ভিদের অন্যান্য অংশে সুড়ঙ্গ তৈরি করে। এরা দৈর্ঘ্যে ০.৫-৩৫ মিমি হতে পারে। দেহ সাধারণত মসৃণ, কখনও রোমশ বা কাঁটাবিশিষ্ট। আকৃতি লম্বা, ডিম্বাকৃতি, উপবৃত্তাকার বা চ্যাপ্টা হতে পারে। দেহের রং ফ্যাকাশে হলুদ থেকে কালো, প্রায়শ পিঠ চকচকে। বাংলাদেশে কয়েক ডজন Chrysomelid বিটল শনাক্ত করা গেছে, যাদের বেশ কয়েকটি মাঠের ফসলের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর। এর মধ্যে পামরিপোকা (Dicladispa armigera) অত্যধিক ক্ষতি করে।

Podontia quatourdecempuncta নামের বিটল আমড়া (Spondias pinnata), বিলাতী আমড়া (S. dulcis) ও রবার (Ficus elastica) গাছের অত্যধিক পাতা ঝরায়। এদের লার্ভা ও প্রাপ্তবয়স্ক কীট পুরো গাছকে পত্রহীন করে ফেলে। এক প্রজাতির বিটল সুন্দরবনের অন্যতম প্রধান বৃক্ষ কেওড়া গাছের মারাত্মক পত্রমোচক।

Aulacophora abdominalis কুমড়াজাতীয় উদ্ভিদের ক্ষতিকর বিটল। কলাগাছের মারাত্মক শত্রু Nodostoma viridipenis পাতা ও ফলে ক্ষত সৃষ্টি করে। কলাপাতা খায় এমন আরও দুটি Chrysomelid বিটল হলো Colopsis hypochlora এবং Sphaeroderma। এই জাতীয় বিটলগুলির মধ্যে বাঁধাকপির পাতাভুক Phyllotrea ও আলুর ক্ষতিকারক Leptinotarsa decimplineata, Typophorous nigritus ও Monoleta signata উল্লেখযোগ্য।  [মোঃ সোহরাব আলী]

লেডিবার্ড বিটল (Ladybird beetle)  Insecta শ্রেণির Coccinellidae গোত্রের সব প্রজাতির সাধারণ নাম। গোটা বিশ্বে প্রায় ৪,২০০ প্রজাতির লেডিবার্ডের বিবরণ লেখা হয়েছে। এগুলি পৃষ্ঠভাগ থেকে দেখতে ডিম্বাকার, অতি ক্ষুদ্র থেকে মাঝারি (০.৮-১৮ মিমি), বেশির ভাগই খুব উজ্জ্বল রঙের, কখনও কখনও শক্ত ডানায় সুন্দর নকশা থাকে। অধিকাংশেরই ১১ খন্ডের শুঙ্গ থাকে, ক্ষেত্রবিশেষে ৮ খন্ডেরও হতে পারে। এসব পতঙ্গ ও তাদের লার্ভা ফসলের ক্ষতিকর পোকা এফিড (Aphid), ককসিড (Coccid), সাইলিড (Psyllid), সাদামাছি (White Fly), সিউডোককসিড (Pseudococcid), উদ্ভিদভোজী মাইট (Phytophagus Mite) ইত্যাদি ধ্বংস করে। Epilachninae উপগোত্রভুক্ত বেশ কিছু প্রজাতি  (৫ শতাধিক) উদ্ভিদভোজী, আবার কয়েকটি ছত্রাক খায়।

ক্ষতিকর কীটপতঙ্গের জীবজ দমন ও লেডিবার্ড বিটল ঐতিহাসিকভাবে পরস্পর জড়িত। ১৮৯৮ সালে যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়ার লেবু খামারে ভেদালিয়া বিটল (Rodolia cardinals) কর্তৃক cottony cushion scale/Iceyra purchasi পোকা দমনের ঘটনা কীটতত্ত্বের নাটকীয়তা, মানব স্বার্থ রক্ষা ও ঐতিহাসিক গুরুত্ব বিচারে এক অনন্য ঘটনা। প্রকৃতিতে এদের কেউ কেউ স্বাভাবিক খাদ্যের অভাবে ফুলের নির্যাস খেয়ে বেঁচে থাকে।

লেডিবার্ড বিটলের প্রাকৃতিক শত্রু হলো পরজীবী hymenopteran, ছত্রাক, প্রোটোজোয়া, নিমাটোড, পরভুক dipteran, মাকড়সা ও কিছু পাখি। বাংলাদেশ লেডিবার্ড বিটলে যথেষ্ট সমৃদ্ধ; এখানে ৫টি উপগোত্রের ৮০টি উপকারী প্রজাতি এবং Epilachninae উপগোত্রের ১৩টি উদ্ভিদভোজী প্রজাতি শনাক্ত করা হয়েছে।

Micraspis, Coccinella, Harmonia, Menochilus, Cheilomenes, Propylea ও Brumus গণভুক্ত কিছু লেডিবার্ড বিটল বাংলাদেশের বিভিন্ন ফসলের মাঠে পর্যাপ্ত সংখ্যায় ছড়িয়ে আছে এবং ফসলের ক্ষতিকর পোকামাকড়, বিশেষত অ্যাফিড ও স্কেলজাতীয় পোকা দমনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।  [মোঃ সোহরাব আলী]