পঞ্চানন কর্মকার: সংশোধিত সংস্করণের মধ্যে পার্থক্য
NasirkhanBot (আলোচনা | অবদান) অ (Added Ennglish article link) |
সম্পাদনা সারাংশ নেই |
||
১ নং লাইন: | ১ নং লাইন: | ||
[[Category:বাংলাপিডিয়া]] | [[Category:বাংলাপিডিয়া]] | ||
'''পঞ্চানন কর্মকার '''(?-১৮০৪) [[মুদ্রণ শিল্প|মুদ্রণ | '''পঞ্চানন কর্মকার''' (?-১৮০৪) [[মুদ্রণ শিল্প|মুদ্রণ শিল্প]]-এ বাংলা হরফের জনক ও মুদ্রণ প্রযুক্তিবিদ। তাঁর জন্ম পশ্চিমবঙ্গের হুগলি জেলার ত্রিবেণী গ্রামে। পূর্বপুরুষদের উপাধি ছিল মল্লিক; তাঁরা লিপিকরের কাজ করতেন। তাম্রপট, অস্ত্রশস্ত্র, ধাতুপাত্র ইত্যাদিতে নামাঙ্কন ও অলঙ্করণ করাই ছিল তাঁদের পেশা। বংশপরম্পরায় এই শৈল্পিক প্রতিভা ও কলাবৃত্তি পঞ্চানন লাভ করেন। পঞ্চানন যখন ত্রিবেণীতে কর্মকারের কাজ করতেন তখন হুগলিতে একটি ছাপাখানা প্রতিষ্ঠিত হয়। এর প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন খ্রিস্টান মিশনারির ফাদার এন্ড্রুজ। ১৭৭৮ সালে [[হ্যালহেড, ন্যাথানিয়েল ব্র্যাসি|ন্যাথানিয়েল ব্রাসি হ্যালহেড]] লিখিত এ গ্রামার অব দ্য বেঙ্গল ল্যাঙ্গুয়েজ পুস্তকটি এন্ড্রুজের প্রেসে ছাপানোর সময় বাংলা টাইপের আবশ্যক হয়। স্যার চার্লস উইলকিন্সের তত্ত্বাবধানে পঞ্চানন তাঁর ব্যবহারিক প্রযুক্তিজ্ঞান নিয়ে ধাতব হরফ তৈরি করেন। তাঁদের যৌথ প্রচেষ্টায় প্রথম বাংলা মুদ্রণাক্ষরের প্রচলন হয়। পরে তিনি প্রেসে হরফ তৈরি ও মুদ্রণকাজে জড়িত থেকে জীবন অতিবাহিত করেন। ১৭৭৯ সালে তদানীন্তন গভর্নর ওয়ারেন হেস্টিংস-এর উৎসাহ এবং উইলকিন্সের পরিচালনায় কলকাতায় [[ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি|ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি]]র ছাপাখানা প্রতিষ্ঠিত হলে উইলকিন্স পঞ্চাননকে কলকাতায় নিয়ে যান এবং সেই ছাপাখানায় কাজ করার সুযোগ করে দেন। এই শতকের শেষদিকে [[কেরী, উইলিয়ম|উইলিয়ম কেরী]] ও পঞ্চাননের মধ্যে যোগাযোগ স্থাপিত হয়। পঞ্চানন ১৭৯৯ সালে কেরীর শ্রীরামপুরের ব্যাপ্টিস্ট মিশন প্রেসে যোগ দেন। একটি পুরাতন প্রেস ও পঞ্চাননকে নিয়ে শ্রীরামপুর মিশনের ছাপাখানার পত্তন হয় এবং কালক্রমে তা এশিয়ার বৃহত্তম অক্ষর নির্মাণ কারখানার মর্যাদা লাভ করে। পঞ্চাননের তৈরি হরফে কেরীর নিউ টেস্টামেন্ট-এর বাংলা অনুবাদ (১৮০১) মুদ্রিত হয়। এছাড়া ১৮০৩ সালে শ্রীরামপুর মিশন প্রেসে তিনি কেরীর সংস্কৃত ব্যাকরণের জন্য এক সাঁট নাগরী হরফ তৈরি করেন। ভারতবর্ষে নাগরী ভাষায় হরফ তৈরি এটাই প্রথম। এরপর পঞ্চানন বাংলা ভাষায় আরও ছোট এবং সুন্দরতম এক সাঁট বাংলা হরফ নির্মাণ করেন। [[শ্রীরামপুর মিশন|শ্রীরামপুর মিশন]] তাঁকে নিয়ে শ্রীরামপুরে একটি টাইপ-ঢালাইয়ের কারখানা প্রতিষ্ঠা করে। বৃদ্ধ বয়সে পঞ্চানন কলকাতার [[বটতলা|বটতলা]] পুস্তক প্রকাশনার জন্য ছবি কাটতে যান। শেষ বয়সে তিনি জামাতা মনোহর কর্মকারকে এ বিদ্যায় প্রশিক্ষণ দেন। দীর্ঘ ১৮ বছর মেধা ও নিষ্ঠা দ্বারা বাংলা, আরবি, ফারসি, গুরুমুখী, মারাঠি, তেলেগু, বর্মি, চীনা ইত্যাদি ১৪টি ভাষার বর্ণমালার হরফ তৈরি করে তিনি এ শিল্পকে সমৃদ্ধ ও সম্প্রসারিত করেন। তাঁর প্রস্ত্ততকৃত হরফের ব্যবহার বহুদিন পর্যন্ত প্রচলিত ছিল। ১৮০৪ সালে তিনি মৃত্যুবরণ করেন। [আইয়ুব হোসেন] | ||
[[en:Panchanan Karmakar]] | [[en:Panchanan Karmakar]] |
০৪:৫৭, ৫ আগস্ট ২০১৪ তারিখে সম্পাদিত সর্বশেষ সংস্করণ
পঞ্চানন কর্মকার (?-১৮০৪) মুদ্রণ শিল্প-এ বাংলা হরফের জনক ও মুদ্রণ প্রযুক্তিবিদ। তাঁর জন্ম পশ্চিমবঙ্গের হুগলি জেলার ত্রিবেণী গ্রামে। পূর্বপুরুষদের উপাধি ছিল মল্লিক; তাঁরা লিপিকরের কাজ করতেন। তাম্রপট, অস্ত্রশস্ত্র, ধাতুপাত্র ইত্যাদিতে নামাঙ্কন ও অলঙ্করণ করাই ছিল তাঁদের পেশা। বংশপরম্পরায় এই শৈল্পিক প্রতিভা ও কলাবৃত্তি পঞ্চানন লাভ করেন। পঞ্চানন যখন ত্রিবেণীতে কর্মকারের কাজ করতেন তখন হুগলিতে একটি ছাপাখানা প্রতিষ্ঠিত হয়। এর প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন খ্রিস্টান মিশনারির ফাদার এন্ড্রুজ। ১৭৭৮ সালে ন্যাথানিয়েল ব্রাসি হ্যালহেড লিখিত এ গ্রামার অব দ্য বেঙ্গল ল্যাঙ্গুয়েজ পুস্তকটি এন্ড্রুজের প্রেসে ছাপানোর সময় বাংলা টাইপের আবশ্যক হয়। স্যার চার্লস উইলকিন্সের তত্ত্বাবধানে পঞ্চানন তাঁর ব্যবহারিক প্রযুক্তিজ্ঞান নিয়ে ধাতব হরফ তৈরি করেন। তাঁদের যৌথ প্রচেষ্টায় প্রথম বাংলা মুদ্রণাক্ষরের প্রচলন হয়। পরে তিনি প্রেসে হরফ তৈরি ও মুদ্রণকাজে জড়িত থেকে জীবন অতিবাহিত করেন। ১৭৭৯ সালে তদানীন্তন গভর্নর ওয়ারেন হেস্টিংস-এর উৎসাহ এবং উইলকিন্সের পরিচালনায় কলকাতায় ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির ছাপাখানা প্রতিষ্ঠিত হলে উইলকিন্স পঞ্চাননকে কলকাতায় নিয়ে যান এবং সেই ছাপাখানায় কাজ করার সুযোগ করে দেন। এই শতকের শেষদিকে উইলিয়ম কেরী ও পঞ্চাননের মধ্যে যোগাযোগ স্থাপিত হয়। পঞ্চানন ১৭৯৯ সালে কেরীর শ্রীরামপুরের ব্যাপ্টিস্ট মিশন প্রেসে যোগ দেন। একটি পুরাতন প্রেস ও পঞ্চাননকে নিয়ে শ্রীরামপুর মিশনের ছাপাখানার পত্তন হয় এবং কালক্রমে তা এশিয়ার বৃহত্তম অক্ষর নির্মাণ কারখানার মর্যাদা লাভ করে। পঞ্চাননের তৈরি হরফে কেরীর নিউ টেস্টামেন্ট-এর বাংলা অনুবাদ (১৮০১) মুদ্রিত হয়। এছাড়া ১৮০৩ সালে শ্রীরামপুর মিশন প্রেসে তিনি কেরীর সংস্কৃত ব্যাকরণের জন্য এক সাঁট নাগরী হরফ তৈরি করেন। ভারতবর্ষে নাগরী ভাষায় হরফ তৈরি এটাই প্রথম। এরপর পঞ্চানন বাংলা ভাষায় আরও ছোট এবং সুন্দরতম এক সাঁট বাংলা হরফ নির্মাণ করেন। শ্রীরামপুর মিশন তাঁকে নিয়ে শ্রীরামপুরে একটি টাইপ-ঢালাইয়ের কারখানা প্রতিষ্ঠা করে। বৃদ্ধ বয়সে পঞ্চানন কলকাতার বটতলা পুস্তক প্রকাশনার জন্য ছবি কাটতে যান। শেষ বয়সে তিনি জামাতা মনোহর কর্মকারকে এ বিদ্যায় প্রশিক্ষণ দেন। দীর্ঘ ১৮ বছর মেধা ও নিষ্ঠা দ্বারা বাংলা, আরবি, ফারসি, গুরুমুখী, মারাঠি, তেলেগু, বর্মি, চীনা ইত্যাদি ১৪টি ভাষার বর্ণমালার হরফ তৈরি করে তিনি এ শিল্পকে সমৃদ্ধ ও সম্প্রসারিত করেন। তাঁর প্রস্ত্ততকৃত হরফের ব্যবহার বহুদিন পর্যন্ত প্রচলিত ছিল। ১৮০৪ সালে তিনি মৃত্যুবরণ করেন। [আইয়ুব হোসেন]