দরসবাড়ি মাদ্রাসা: সংশোধিত সংস্করণের মধ্যে পার্থক্য
NasirkhanBot (আলোচনা | অবদান) অ (Added Ennglish article link) |
সম্পাদনা সারাংশ নেই |
||
২ নং লাইন: | ২ নং লাইন: | ||
'''দরসবাড়ি মাদ্রাসা''' গৌড়-লখনৌতির বাংলাদেশ অংশে ঘোষপুর মৌজায় [[কোতোয়ালী দরওয়াজা|কোতোয়ালী দরওয়াজা]] থেকে দক্ষিণ-পশ্চিমে এক কিলোমিটার দূরে এবং ছোট সোনা কোতোয়ালী সড়কের আধা কিলোমিটার দূরে অবস্থিত। পূর্ব ও পশ্চিমে অবস্থিত দুটি পুকুরের মাঝখানে মাদ্রাসাটি স্থাপিত হয়েছিল। | '''দরসবাড়ি মাদ্রাসা''' গৌড়-লখনৌতির বাংলাদেশ অংশে ঘোষপুর মৌজায় [[কোতোয়ালী দরওয়াজা|কোতোয়ালী দরওয়াজা]] থেকে দক্ষিণ-পশ্চিমে এক কিলোমিটার দূরে এবং ছোট সোনা কোতোয়ালী সড়কের আধা কিলোমিটার দূরে অবস্থিত। পূর্ব ও পশ্চিমে অবস্থিত দুটি পুকুরের মাঝখানে মাদ্রাসাটি স্থাপিত হয়েছিল। | ||
[[Image:DarashBariMadrsha.jpg|thumb|400px|right|দরসবাড়ি মাদ্রাসা, গৌড়]] | |||
এখানে নির্মিত একই নামের মসজিদ থেকে মাদ্রাসাটি পৃথক ছিল। শিলালিপির সাক্ষ্য থেকে জানা যায় যে, ৯০৯ হিজরিতে (১৫০৪ খ্রি.) আলাউদ্দীন [[হোসেন শাহ|হোসেন শাহ]] এ মসজিদটি নির্মাণ করেন। বিশ শতকের সত্তরের দশকে প্রত্নতাত্ত্বিক উৎখননের পর সম্পূর্ণ ভূমি-পরিকল্পনা উন্মোচিত হওয়ায় মাদ্রাসাটি সবার নজরে আসে। এ আবিষ্কারের ফলে দুবছর আগে নির্মিত বেলবারি মাদ্রাসার সঙ্গে দরসবাড়ি মাদ্রাসার অবস্থান সংক্রান্ত বিভ্রান্তি দূরীভূত হয়। | এখানে নির্মিত একই নামের মসজিদ থেকে মাদ্রাসাটি পৃথক ছিল। শিলালিপির সাক্ষ্য থেকে জানা যায় যে, ৯০৯ হিজরিতে (১৫০৪ খ্রি.) আলাউদ্দীন [[হোসেন শাহ|হোসেন শাহ]] এ মসজিদটি নির্মাণ করেন। বিশ শতকের সত্তরের দশকে প্রত্নতাত্ত্বিক উৎখননের পর সম্পূর্ণ ভূমি-পরিকল্পনা উন্মোচিত হওয়ায় মাদ্রাসাটি সবার নজরে আসে। এ আবিষ্কারের ফলে দুবছর আগে নির্মিত বেলবারি মাদ্রাসার সঙ্গে দরসবাড়ি মাদ্রাসার অবস্থান সংক্রান্ত বিভ্রান্তি দূরীভূত হয়। | ||
পরিকল্পনা অনুযায়ী মাদ্রাসাটি ছিল বর্গাকৃতির। এর প্রতিপার্শ্বের পরিমাপ ছিল ৫৫.৫০ মিটার। মাদ্রাসায় মোট চল্লিশটি কক্ষ ছিল। কক্ষের প্রতিপার্শেতর পরিমাপ ছিল ৩ মিটার। ৪১.৫ মিটার বর্গাকৃতির আঙিনার চারদিক ঘিরে এ কক্ষগুলির অবস্থান ছিল। পশ্চিম দিকে কক্ষগুলির মাঝামাঝি মাদ্রাসা ঘেঁষে নির্মিত হয়েছিল একটি মসজিদ। এর দেয়ালের ৪.৯ মিটার পরিমাপ এক পার্শ্ব থেকে অন্য পার্শেত সামান্য বড় ছিল। পশ্চিম দেয়ালে তিনটি মিহরাবের উপস্থিতি মসজিদের অবস্থানকে নিশ্চিত করেছে। মসজিদে ছিল তিনটি প্রবেশপথ। | পরিকল্পনা অনুযায়ী মাদ্রাসাটি ছিল বর্গাকৃতির। এর প্রতিপার্শ্বের পরিমাপ ছিল ৫৫.৫০ মিটার। মাদ্রাসায় মোট চল্লিশটি কক্ষ ছিল। কক্ষের প্রতিপার্শেতর পরিমাপ ছিল ৩ মিটার। ৪১.৫ মিটার বর্গাকৃতির আঙিনার চারদিক ঘিরে এ কক্ষগুলির অবস্থান ছিল। পশ্চিম দিকে কক্ষগুলির মাঝামাঝি মাদ্রাসা ঘেঁষে নির্মিত হয়েছিল একটি মসজিদ। এর দেয়ালের ৪.৯ মিটার পরিমাপ এক পার্শ্ব থেকে অন্য পার্শেত সামান্য বড় ছিল। পশ্চিম দেয়ালে তিনটি মিহরাবের উপস্থিতি মসজিদের অবস্থানকে নিশ্চিত করেছে। মসজিদে ছিল তিনটি প্রবেশপথ। | ||
প্রত্যেকটি পূর্ব, উত্তর ও দক্ষিণ দেয়ালের মাঝামাঝিতে নির্মিত হয়েছিল। আঙিনার মাঝামাঝি একটি কাঠামোর ধ্বংসাবশেষ পড়ে আছে। এ স্থাপনাটির পরিচিতি স্পষ্ট না থাকলেও অনুমান করা হয় যে, এটি ছিল লাইব্রেরি এবং হলঘর অথবা একটি বিশাল অলঙ্কৃত জলাধার যেখানে ভেতরের দিকে পানি নির্গমনের ব্যবস্থা ছিল। মাদ্রাসার দেয়ালের বাইরে ও ভেতরে অংলকরণে শোভিত ছিল। এর সম্মুখভাগ পোড়ামাটির অলঙ্করণ ও ছাঁচে তৈরি নকশায় ছিল আবৃত। | প্রত্যেকটি পূর্ব, উত্তর ও দক্ষিণ দেয়ালের মাঝামাঝিতে নির্মিত হয়েছিল। আঙিনার মাঝামাঝি একটি কাঠামোর ধ্বংসাবশেষ পড়ে আছে। এ স্থাপনাটির পরিচিতি স্পষ্ট না থাকলেও অনুমান করা হয় যে, এটি ছিল লাইব্রেরি এবং হলঘর অথবা একটি বিশাল অলঙ্কৃত জলাধার যেখানে ভেতরের দিকে পানি নির্গমনের ব্যবস্থা ছিল। মাদ্রাসার দেয়ালের বাইরে ও ভেতরে অংলকরণে শোভিত ছিল। এর সম্মুখভাগ পোড়ামাটির অলঙ্করণ ও ছাঁচে তৈরি নকশায় ছিল আবৃত। | ||
১৯৭৩-৭৫ সালে সংঘটিত প্রত্নতাত্ত্বিক উৎখননের সময় এখানে প্রচুর পোড়ামাটির ফলক পাওয়া যায়। এগুলি বর্তমানে [[ছোট সোনা মসজিদ|ছোট সোনা মসজিদ ]]এর নিকট স্থাপিত প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের গেস্ট হাউসের একটি কক্ষে সংরক্ষিত আছে। মাদ্রাসাটির আবিষ্কার ছিল যথেষ্ট গুরুত্ববহ। মধ্যযুগের বাংলায় এ ধরনের স্থাপত্যের এটিই ছিল একমাত্র উদাহরণ। ময়নামতী, পাহাড়পুরসহ অন্যান্য অঞ্চলে প্রাচীনকালে নির্মিত বৌদ্ধবিহার থেকে শুরু করে বর্তমান সময়ে শিক্ষার্থীদের জন্য নির্মিত আবাসিক হলেরই যেন একটি সংস্করণ ছিল এ মাদ্রাসা। [এ.বি.এম হোসেন] | ১৯৭৩-৭৫ সালে সংঘটিত প্রত্নতাত্ত্বিক উৎখননের সময় এখানে প্রচুর পোড়ামাটির ফলক পাওয়া যায়। এগুলি বর্তমানে [[ছোট সোনা মসজিদ|ছোট সোনা মসজিদ ]]এর নিকট স্থাপিত প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের গেস্ট হাউসের একটি কক্ষে সংরক্ষিত আছে। মাদ্রাসাটির আবিষ্কার ছিল যথেষ্ট গুরুত্ববহ। মধ্যযুগের বাংলায় এ ধরনের স্থাপত্যের এটিই ছিল একমাত্র উদাহরণ। ময়নামতী, পাহাড়পুরসহ অন্যান্য অঞ্চলে প্রাচীনকালে নির্মিত বৌদ্ধবিহার থেকে শুরু করে বর্তমান সময়ে শিক্ষার্থীদের জন্য নির্মিত আবাসিক হলেরই যেন একটি সংস্করণ ছিল এ মাদ্রাসা। [এ.বি.এম হোসেন] | ||
[[en:Darasbari Madrasa]] | [[en:Darasbari Madrasa]] |
০৭:০৫, ৭ জানুয়ারি ২০১৫ তারিখে সম্পাদিত সর্বশেষ সংস্করণ
দরসবাড়ি মাদ্রাসা গৌড়-লখনৌতির বাংলাদেশ অংশে ঘোষপুর মৌজায় কোতোয়ালী দরওয়াজা থেকে দক্ষিণ-পশ্চিমে এক কিলোমিটার দূরে এবং ছোট সোনা কোতোয়ালী সড়কের আধা কিলোমিটার দূরে অবস্থিত। পূর্ব ও পশ্চিমে অবস্থিত দুটি পুকুরের মাঝখানে মাদ্রাসাটি স্থাপিত হয়েছিল।
এখানে নির্মিত একই নামের মসজিদ থেকে মাদ্রাসাটি পৃথক ছিল। শিলালিপির সাক্ষ্য থেকে জানা যায় যে, ৯০৯ হিজরিতে (১৫০৪ খ্রি.) আলাউদ্দীন হোসেন শাহ এ মসজিদটি নির্মাণ করেন। বিশ শতকের সত্তরের দশকে প্রত্নতাত্ত্বিক উৎখননের পর সম্পূর্ণ ভূমি-পরিকল্পনা উন্মোচিত হওয়ায় মাদ্রাসাটি সবার নজরে আসে। এ আবিষ্কারের ফলে দুবছর আগে নির্মিত বেলবারি মাদ্রাসার সঙ্গে দরসবাড়ি মাদ্রাসার অবস্থান সংক্রান্ত বিভ্রান্তি দূরীভূত হয়।
পরিকল্পনা অনুযায়ী মাদ্রাসাটি ছিল বর্গাকৃতির। এর প্রতিপার্শ্বের পরিমাপ ছিল ৫৫.৫০ মিটার। মাদ্রাসায় মোট চল্লিশটি কক্ষ ছিল। কক্ষের প্রতিপার্শেতর পরিমাপ ছিল ৩ মিটার। ৪১.৫ মিটার বর্গাকৃতির আঙিনার চারদিক ঘিরে এ কক্ষগুলির অবস্থান ছিল। পশ্চিম দিকে কক্ষগুলির মাঝামাঝি মাদ্রাসা ঘেঁষে নির্মিত হয়েছিল একটি মসজিদ। এর দেয়ালের ৪.৯ মিটার পরিমাপ এক পার্শ্ব থেকে অন্য পার্শেত সামান্য বড় ছিল। পশ্চিম দেয়ালে তিনটি মিহরাবের উপস্থিতি মসজিদের অবস্থানকে নিশ্চিত করেছে। মসজিদে ছিল তিনটি প্রবেশপথ।
প্রত্যেকটি পূর্ব, উত্তর ও দক্ষিণ দেয়ালের মাঝামাঝিতে নির্মিত হয়েছিল। আঙিনার মাঝামাঝি একটি কাঠামোর ধ্বংসাবশেষ পড়ে আছে। এ স্থাপনাটির পরিচিতি স্পষ্ট না থাকলেও অনুমান করা হয় যে, এটি ছিল লাইব্রেরি এবং হলঘর অথবা একটি বিশাল অলঙ্কৃত জলাধার যেখানে ভেতরের দিকে পানি নির্গমনের ব্যবস্থা ছিল। মাদ্রাসার দেয়ালের বাইরে ও ভেতরে অংলকরণে শোভিত ছিল। এর সম্মুখভাগ পোড়ামাটির অলঙ্করণ ও ছাঁচে তৈরি নকশায় ছিল আবৃত।
১৯৭৩-৭৫ সালে সংঘটিত প্রত্নতাত্ত্বিক উৎখননের সময় এখানে প্রচুর পোড়ামাটির ফলক পাওয়া যায়। এগুলি বর্তমানে ছোট সোনা মসজিদ এর নিকট স্থাপিত প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের গেস্ট হাউসের একটি কক্ষে সংরক্ষিত আছে। মাদ্রাসাটির আবিষ্কার ছিল যথেষ্ট গুরুত্ববহ। মধ্যযুগের বাংলায় এ ধরনের স্থাপত্যের এটিই ছিল একমাত্র উদাহরণ। ময়নামতী, পাহাড়পুরসহ অন্যান্য অঞ্চলে প্রাচীনকালে নির্মিত বৌদ্ধবিহার থেকে শুরু করে বর্তমান সময়ে শিক্ষার্থীদের জন্য নির্মিত আবাসিক হলেরই যেন একটি সংস্করণ ছিল এ মাদ্রাসা। [এ.বি.এম হোসেন]