ঝিনুক শিল্প: সংশোধিত সংস্করণের মধ্যে পার্থক্য
NasirkhanBot (আলোচনা | অবদান) অ (fix: image tag) |
সম্পাদনা সারাংশ নেই |
||
২ নং লাইন: | ২ নং লাইন: | ||
'''ঝিনুক শিল্প''' বাংলাদেশের একটি সম্ভাবনাময় শিল্প। বাংলাদেশের কক্সবাজার অঞ্চল ঝিনুক চাষের জন্য অত্যন্ত উপযোগী। এটি একটি অমেরুদন্ডী প্রাণি। পৃথিবীতে প্রায় ১,০০,০০০ প্রজাতির ঝিনুক পাওয়া যায়। যার সিংহভাগ বাস করে লবণাক্ত পানিতে। বাংলাদেশের প্রায় ৬৯,৯০০ বর্গকিলোমিটার সমুদ্র জলরাশিতে প্রায় ৩০০ প্রজাতির ঝিনুক রয়েছে। এসব প্রজাতি কক্সবাজার ও এর নিকটবর্তী উপকূলীয় অঞ্চলে বেশি পরিমাণে পাওয়া যায়; যা এখনো প্রায় অব্যবহূত অবস্থায় আছে। অর্থনৈতিকভাবে ঝিনুকের গুরুত্ব অপরিসীম। এই ঝিনুক বৈজ্ঞানিক ভাষায় Perna Viridis এবং Crassostrea species নামে পরিচিত। সাধারণত বিভিন্ন প্রকার ঝিনুককে মলাস্ক নামে অভিহিত করা হয়। এই Perna Viridis এবং Crassostrea species চাষের মাধ্যমে প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করা সম্ভব। | '''ঝিনুক শিল্প''' বাংলাদেশের একটি সম্ভাবনাময় শিল্প। বাংলাদেশের কক্সবাজার অঞ্চল ঝিনুক চাষের জন্য অত্যন্ত উপযোগী। এটি একটি অমেরুদন্ডী প্রাণি। পৃথিবীতে প্রায় ১,০০,০০০ প্রজাতির ঝিনুক পাওয়া যায়। যার সিংহভাগ বাস করে লবণাক্ত পানিতে। বাংলাদেশের প্রায় ৬৯,৯০০ বর্গকিলোমিটার সমুদ্র জলরাশিতে প্রায় ৩০০ প্রজাতির ঝিনুক রয়েছে। এসব প্রজাতি কক্সবাজার ও এর নিকটবর্তী উপকূলীয় অঞ্চলে বেশি পরিমাণে পাওয়া যায়; যা এখনো প্রায় অব্যবহূত অবস্থায় আছে। অর্থনৈতিকভাবে ঝিনুকের গুরুত্ব অপরিসীম। এই ঝিনুক বৈজ্ঞানিক ভাষায় Perna Viridis এবং Crassostrea species নামে পরিচিত। সাধারণত বিভিন্ন প্রকার ঝিনুককে মলাস্ক নামে অভিহিত করা হয়। এই Perna Viridis এবং Crassostrea species চাষের মাধ্যমে প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করা সম্ভব। | ||
প্রাচীনকাল থেকেই বিভিন্নপ্রকার ঝিনুক খাদ্য হিসেবে ব্যবহূত হয়ে আসছে। বাংলাদেশে, বিশেষকরে রাখাইন ও পার্বত্য চট্টগ্রামের আদিবাসীরা ঝিনুককে খাদ্য হিসেবে গ্রহণ করে। ঝিনুক থেকে উৎপন্ন চুন পানের সাথে প্রায় সকল মানুষ গ্রহণ করে থাকে। মাছের খাদ্য হিসেবে সরাসরি ঝিনুকের মাংসল অংশ দেওয়া হয়। পোল্ট্রি ইন্ডাস্ট্রিতে ক্যালসিয়ামের বিকল্প হিসেবে ঝিনুক শেলের গুড়া খাদ্যের উপাদান হিসেবে ব্যবহূত হয়। এছাড়া [[চিংড়ি|চিংড়ি]], [[কাঁকড়া|কাঁকড়া]] এবং হাঁস প্রতিপালনে ঝিনুকের মাংসল অংশের ব্যবহার লক্ষ্য করা যায়। | [[Image:Shankha.jpg|thumb|400px|ঝিনুক শিল্প]] | ||
প্রাচীনকাল থেকেই বিভিন্নপ্রকার ঝিনুক খাদ্য হিসেবে ব্যবহূত হয়ে আসছে। বাংলাদেশে, বিশেষকরে রাখাইন ও পার্বত্য চট্টগ্রামের আদিবাসীরা ঝিনুককে খাদ্য হিসেবে গ্রহণ করে। ঝিনুক থেকে উৎপন্ন চুন পানের সাথে প্রায় সকল মানুষ গ্রহণ করে থাকে। মাছের খাদ্য হিসেবে সরাসরি ঝিনুকের মাংসল অংশ দেওয়া হয়। পোল্ট্রি ইন্ডাস্ট্রিতে ক্যালসিয়ামের বিকল্প হিসেবে ঝিনুক শেলের গুড়া খাদ্যের উপাদান হিসেবে ব্যবহূত হয়। এছাড়া [[চিংড়ি|চিংড়ি]], [[কাঁকড়া|কাঁকড়া]] এবং হাঁস প্রতিপালনে ঝিনুকের মাংসল অংশের ব্যবহার লক্ষ্য করা যায়। | |||
মুক্তা একটি মূল্যবান সম্পদ। ঝিনুক জাতীয় প্রাণির খোলসের ভেতর শক্ত ও গোল অনিয়মিত মসৃণ, প্রায়শঃ চকচকে এবং বিভিন্ন রঙের নিসৃত পদার্থই মুক্তা। এককালে মহেশখালী দ্বীপ মুক্তার জন্য প্রসিদ্ধ ছিল। এই মূল্যবান মুক্তা উৎপাদনের গুরুত্বপূর্ণ উপাদান হলো এক বিশেষ ধরনের ঝিনুক। | মুক্তা একটি মূল্যবান সম্পদ। ঝিনুক জাতীয় প্রাণির খোলসের ভেতর শক্ত ও গোল অনিয়মিত মসৃণ, প্রায়শঃ চকচকে এবং বিভিন্ন রঙের নিসৃত পদার্থই মুক্তা। এককালে মহেশখালী দ্বীপ মুক্তার জন্য প্রসিদ্ধ ছিল। এই মূল্যবান মুক্তা উৎপাদনের গুরুত্বপূর্ণ উপাদান হলো এক বিশেষ ধরনের ঝিনুক। | ||
১৪ নং লাইন: | ১১ নং লাইন: | ||
বাংলাদেশের দক্ষিণাঞ্চলে মাছ চাষে ঝিনুককে মাছের খাদ্য হিসেবে ব্যবহার করা হয়। লৌহজাত পণ্য প্রস্ত্ততিতে ঝিনুক থেকে উৎপাদন ক্যালসিয়াম অক্সাইড ব্যবহার করা হয়, যেন লোহাকে সুবিধামত বাঁকা করানো যায়। বাণিজ্যিকভাবে খাবার লবণ প্রস্ত্ততিতেও ক্যালসিয়াম অক্সাইডের ব্যবহার লক্ষ্য করা যায়। এসিআই, কনফিডেন্স, পূবালী প্রভৃতি বাণিজ্যিক লবণ কারখানায় লবণকে শুষ্ক ও ঝরঝরে করার জন্য ক্যালসিয়াম অক্সাইড মেশানো হয়। এছাড়াও চিনি, কাগজ ও ঔষধ শিল্পে বিভিন্নভাবে ঝিনুক ব্যবহূত হয়। পানি ও মাটির ক্ষারত্ব, পানির টক্সিসিটি কমাতে, প্লাংটন ব্লুম নিয়ন্ত্রণে এবং পানিতে ভাসমান তৈলজাত পদার্থ পরিশোধনে ঝিনুক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। | বাংলাদেশের দক্ষিণাঞ্চলে মাছ চাষে ঝিনুককে মাছের খাদ্য হিসেবে ব্যবহার করা হয়। লৌহজাত পণ্য প্রস্ত্ততিতে ঝিনুক থেকে উৎপাদন ক্যালসিয়াম অক্সাইড ব্যবহার করা হয়, যেন লোহাকে সুবিধামত বাঁকা করানো যায়। বাণিজ্যিকভাবে খাবার লবণ প্রস্ত্ততিতেও ক্যালসিয়াম অক্সাইডের ব্যবহার লক্ষ্য করা যায়। এসিআই, কনফিডেন্স, পূবালী প্রভৃতি বাণিজ্যিক লবণ কারখানায় লবণকে শুষ্ক ও ঝরঝরে করার জন্য ক্যালসিয়াম অক্সাইড মেশানো হয়। এছাড়াও চিনি, কাগজ ও ঔষধ শিল্পে বিভিন্নভাবে ঝিনুক ব্যবহূত হয়। পানি ও মাটির ক্ষারত্ব, পানির টক্সিসিটি কমাতে, প্লাংটন ব্লুম নিয়ন্ত্রণে এবং পানিতে ভাসমান তৈলজাত পদার্থ পরিশোধনে ঝিনুক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। | ||
পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ যেমন চীন, জাপান, ফ্রান্স, কোরিয়া, ডেনমার্ক প্রভৃতি দেশ ঝিনুক চাষের মাধ্যমে তাদের অর্থনীতিকে সমৃদ্ধ করেছে। এসব দেশের মত আমাদের দেশেও কক্সবাজার ও সুন্দরবন উপকূলীয় অঞ্চলে Mystilus edulis, Perna Viridis, Crassorstrea | পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ যেমন চীন, জাপান, ফ্রান্স, কোরিয়া, ডেনমার্ক প্রভৃতি দেশ ঝিনুক চাষের মাধ্যমে তাদের অর্থনীতিকে সমৃদ্ধ করেছে। এসব দেশের মত আমাদের দেশেও কক্সবাজার ও সুন্দরবন উপকূলীয় অঞ্চলে Mystilus edulis, Perna Viridis, Crassorstrea species জাতীয় ঝিনুক চাষের মাধ্যমে দেশের অর্থনীতিকে সমৃদ্ধির পথে এগিয়ে নেওয়া সম্ভব। [রফিকুল আহসান] | ||
[রফিকুল আহসান] | |||
[[en:Shell Crafts]] | [[en:Shell Crafts]] |
০৬:০৫, ২১ ডিসেম্বর ২০১৪ তারিখে সম্পাদিত সর্বশেষ সংস্করণ
ঝিনুক শিল্প বাংলাদেশের একটি সম্ভাবনাময় শিল্প। বাংলাদেশের কক্সবাজার অঞ্চল ঝিনুক চাষের জন্য অত্যন্ত উপযোগী। এটি একটি অমেরুদন্ডী প্রাণি। পৃথিবীতে প্রায় ১,০০,০০০ প্রজাতির ঝিনুক পাওয়া যায়। যার সিংহভাগ বাস করে লবণাক্ত পানিতে। বাংলাদেশের প্রায় ৬৯,৯০০ বর্গকিলোমিটার সমুদ্র জলরাশিতে প্রায় ৩০০ প্রজাতির ঝিনুক রয়েছে। এসব প্রজাতি কক্সবাজার ও এর নিকটবর্তী উপকূলীয় অঞ্চলে বেশি পরিমাণে পাওয়া যায়; যা এখনো প্রায় অব্যবহূত অবস্থায় আছে। অর্থনৈতিকভাবে ঝিনুকের গুরুত্ব অপরিসীম। এই ঝিনুক বৈজ্ঞানিক ভাষায় Perna Viridis এবং Crassostrea species নামে পরিচিত। সাধারণত বিভিন্ন প্রকার ঝিনুককে মলাস্ক নামে অভিহিত করা হয়। এই Perna Viridis এবং Crassostrea species চাষের মাধ্যমে প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করা সম্ভব।
প্রাচীনকাল থেকেই বিভিন্নপ্রকার ঝিনুক খাদ্য হিসেবে ব্যবহূত হয়ে আসছে। বাংলাদেশে, বিশেষকরে রাখাইন ও পার্বত্য চট্টগ্রামের আদিবাসীরা ঝিনুককে খাদ্য হিসেবে গ্রহণ করে। ঝিনুক থেকে উৎপন্ন চুন পানের সাথে প্রায় সকল মানুষ গ্রহণ করে থাকে। মাছের খাদ্য হিসেবে সরাসরি ঝিনুকের মাংসল অংশ দেওয়া হয়। পোল্ট্রি ইন্ডাস্ট্রিতে ক্যালসিয়ামের বিকল্প হিসেবে ঝিনুক শেলের গুড়া খাদ্যের উপাদান হিসেবে ব্যবহূত হয়। এছাড়া চিংড়ি, কাঁকড়া এবং হাঁস প্রতিপালনে ঝিনুকের মাংসল অংশের ব্যবহার লক্ষ্য করা যায়।
মুক্তা একটি মূল্যবান সম্পদ। ঝিনুক জাতীয় প্রাণির খোলসের ভেতর শক্ত ও গোল অনিয়মিত মসৃণ, প্রায়শঃ চকচকে এবং বিভিন্ন রঙের নিসৃত পদার্থই মুক্তা। এককালে মহেশখালী দ্বীপ মুক্তার জন্য প্রসিদ্ধ ছিল। এই মূল্যবান মুক্তা উৎপাদনের গুরুত্বপূর্ণ উপাদান হলো এক বিশেষ ধরনের ঝিনুক।
আমাদের দেশে অলংকার হিসেবে ঝিনুকের বহুল ব্যবহার লক্ষ্য করা যায়। বিশেষ করে কক্সবাজার, কুতুবদিয়া, মহেশখালী, চট্টগ্রাম প্রভৃতি অঞ্চলে প্রায় সকল বিপণি বিতানগুলিতে ঝিনুকের অলংকার পাওয়া যায়।
বাংলাদেশের দক্ষিণাঞ্চলে মাছ চাষে ঝিনুককে মাছের খাদ্য হিসেবে ব্যবহার করা হয়। লৌহজাত পণ্য প্রস্ত্ততিতে ঝিনুক থেকে উৎপাদন ক্যালসিয়াম অক্সাইড ব্যবহার করা হয়, যেন লোহাকে সুবিধামত বাঁকা করানো যায়। বাণিজ্যিকভাবে খাবার লবণ প্রস্ত্ততিতেও ক্যালসিয়াম অক্সাইডের ব্যবহার লক্ষ্য করা যায়। এসিআই, কনফিডেন্স, পূবালী প্রভৃতি বাণিজ্যিক লবণ কারখানায় লবণকে শুষ্ক ও ঝরঝরে করার জন্য ক্যালসিয়াম অক্সাইড মেশানো হয়। এছাড়াও চিনি, কাগজ ও ঔষধ শিল্পে বিভিন্নভাবে ঝিনুক ব্যবহূত হয়। পানি ও মাটির ক্ষারত্ব, পানির টক্সিসিটি কমাতে, প্লাংটন ব্লুম নিয়ন্ত্রণে এবং পানিতে ভাসমান তৈলজাত পদার্থ পরিশোধনে ঝিনুক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ যেমন চীন, জাপান, ফ্রান্স, কোরিয়া, ডেনমার্ক প্রভৃতি দেশ ঝিনুক চাষের মাধ্যমে তাদের অর্থনীতিকে সমৃদ্ধ করেছে। এসব দেশের মত আমাদের দেশেও কক্সবাজার ও সুন্দরবন উপকূলীয় অঞ্চলে Mystilus edulis, Perna Viridis, Crassorstrea species জাতীয় ঝিনুক চাষের মাধ্যমে দেশের অর্থনীতিকে সমৃদ্ধির পথে এগিয়ে নেওয়া সম্ভব। [রফিকুল আহসান]