হোসেন, নওয়াব মুশাররফ: সংশোধিত সংস্করণের মধ্যে পার্থক্য
NasirkhanBot (আলোচনা | অবদান) অ (Added Ennglish article link) |
সম্পাদনা সারাংশ নেই |
||
১ নং লাইন: | ১ নং লাইন: | ||
[[Category:বাংলাপিডিয়া]] | [[Category:বাংলাপিডিয়া]] | ||
'''হোসেন, নওয়াব মুশাররফ '''(১৮৭১-১৯৬৬) | '''হোসেন, নওয়াব মুশাররফ''' (১৮৭১-১৯৬৬) আইনজীবী, রাজনৈতিক নেতা। তিনি ১৮৭১ সালে কুমিল্লা জেলার চৌদ্দগ্রাম উপজেলাধীন চেওরা গ্রামের কাজী পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতা কাজী মুকাররম আলী ছিলেন কুমিল্লা জজকোর্টের একজন উকিল। | ||
[[Image:HossainNawabMusharraf.jpg|thumb|right|নওয়াব মুশাররফ হোসেন]] | |||
মুশাররফ হোসেন ১৮৯৯ সালে হুগলি কলেজ হতে বি.এ পাস করেন এবং [[কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়|কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়]] হতে বি.এল ডিগ্রি অর্জন করেন। বৈবাহিকসূত্রে জলপাইগুড়ির এক চা-বাগানের মালিক হন। তিনি জলপাইগুড়ি জেলা বারে যোগদান করেন এবং জলপাইগুড়ি মিউনিসিপ্যালিটির ভাইস-চেয়ারম্যান হিসেবে বেশ কয়েক বছর কাজ করেন। | মুশাররফ হোসেন ১৮৯৯ সালে হুগলি কলেজ হতে বি.এ পাস করেন এবং [[কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়|কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়]] হতে বি.এল ডিগ্রি অর্জন করেন। বৈবাহিকসূত্রে জলপাইগুড়ির এক চা-বাগানের মালিক হন। তিনি জলপাইগুড়ি জেলা বারে যোগদান করেন এবং জলপাইগুড়ি মিউনিসিপ্যালিটির ভাইস-চেয়ারম্যান হিসেবে বেশ কয়েক বছর কাজ করেন। | ||
১৯১৮ সালে প্রথম বারের মতো বঙ্গীয় আইন পরিষদের সদস্য নির্বাচিত হয়ে তিনি নিজেকে একজন দক্ষ পার্লামেন্টারিয়ান হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে সক্ষম হন। তিনি একাধারে ১৯২৩ হতে ১৯৩৬ সাল পর্যন্ত বঙ্গীয় কাউন্সিলের সদস্য নির্বাচিত হন এবং আইন পরিষদের ভেতর ও বাইরে মুসলিম স্বার্থ সংরক্ষণের জন্য চেষ্টা করেন। [[বেঙ্গল প্যাক্ট, ১৯২৩|বেঙ্গল প্যাক্ট]] এর একটি ধারাকে অর্থাৎ সরকারি চাকরিতে শূন্য পদগুলির শতকরা ৫৫টি পদ মুসলমানদের দ্বারা পূরণ করার বিষয়টি অনতিবিলম্বে কার্যকর করার জন্য ১৯২৪ সালে বঙ্গীয় আইন পরিষদে তিনি একটি প্রস্তাব উত্থাপন করেন। কিন্তু আইন পরিষদের কতিপয় হিন্দু নেতার ঘোর বিরোধিতার কারণে অনির্দিষ্টকালের জন্য সরকার কর্তৃক সিদ্ধান্তটি স্থগিত করা হয়। মুশাররফ হোসেন ১৯২৭ সালে বাংলা সরকারের শিক্ষামন্ত্রী হন এবং ওই সময়ে তিনি বঙ্গীয় আইন পরিষদে অবৈতনিক প্রাথমিক শিক্ষা বিল পাস করিয়ে নেন। তিনি বেঙ্গল ইউনাইটেড মুসলিম পার্টির সহ-সভাপতি ছিলেন। | ১৯১৮ সালে প্রথম বারের মতো বঙ্গীয় আইন পরিষদের সদস্য নির্বাচিত হয়ে তিনি নিজেকে একজন দক্ষ পার্লামেন্টারিয়ান হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে সক্ষম হন। তিনি একাধারে ১৯২৩ হতে ১৯৩৬ সাল পর্যন্ত বঙ্গীয় কাউন্সিলের সদস্য নির্বাচিত হন এবং আইন পরিষদের ভেতর ও বাইরে মুসলিম স্বার্থ সংরক্ষণের জন্য চেষ্টা করেন। [[বেঙ্গল প্যাক্ট, ১৯২৩|বেঙ্গল প্যাক্ট]] এর একটি ধারাকে অর্থাৎ সরকারি চাকরিতে শূন্য পদগুলির শতকরা ৫৫টি পদ মুসলমানদের দ্বারা পূরণ করার বিষয়টি অনতিবিলম্বে কার্যকর করার জন্য ১৯২৪ সালে বঙ্গীয় আইন পরিষদে তিনি একটি প্রস্তাব উত্থাপন করেন। কিন্তু আইন পরিষদের কতিপয় হিন্দু নেতার ঘোর বিরোধিতার কারণে অনির্দিষ্টকালের জন্য সরকার কর্তৃক সিদ্ধান্তটি স্থগিত করা হয়। মুশাররফ হোসেন ১৯২৭ সালে বাংলা সরকারের শিক্ষামন্ত্রী হন এবং ওই সময়ে তিনি বঙ্গীয় আইন পরিষদে অবৈতনিক প্রাথমিক শিক্ষা বিল পাস করিয়ে নেন। তিনি বেঙ্গল ইউনাইটেড মুসলিম পার্টির সহ-সভাপতি ছিলেন। | ||
মুশাররফ হোসেন ১৯৩৬ সালের ডিসেম্বর মাসের সাধারণ নির্বাচনে একজন স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় বঙ্গীয় আইন পরিষদের সদস্য নির্বাচিত হন এবং এর পরই তিনি অল-ইন্ডিয়া মুসলিম লীগে যোগদান করেন। ১৯৩৭ হতে ১৯৪১ পর্যন্ত তিনি আইন ও বিচার বিভাগীয় মন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। তিনি পুনরায় ১৯৪৩ হতে ১৯৪৫ সাল পর্যন্ত বাংলা সরকারের মন্ত্রীর পদ অলংকৃত করেন। মুশাররফ হোসেন পাকিস্তান আন্দোলনে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করেন। তবে দেশ বিভাগের পর তিনি পাকিস্তানে অভিবাসন করেননি। তবে পশ্চিমবঙ্গের বিধান সভার সদস্য হিসেবে তিনি দীর্ঘকাল রাজনীতিতে যুক্ত থাকেন। | মুশাররফ হোসেন ১৯৩৬ সালের ডিসেম্বর মাসের সাধারণ নির্বাচনে একজন স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় বঙ্গীয় আইন পরিষদের সদস্য নির্বাচিত হন এবং এর পরই তিনি অল-ইন্ডিয়া মুসলিম লীগে যোগদান করেন। ১৯৩৭ হতে ১৯৪১ পর্যন্ত তিনি আইন ও বিচার বিভাগীয় মন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। তিনি পুনরায় ১৯৪৩ হতে ১৯৪৫ সাল পর্যন্ত বাংলা সরকারের মন্ত্রীর পদ অলংকৃত করেন। মুশাররফ হোসেন পাকিস্তান আন্দোলনে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করেন। তবে দেশ বিভাগের পর তিনি পাকিস্তানে অভিবাসন করেননি। তবে পশ্চিমবঙ্গের বিধান সভার সদস্য হিসেবে তিনি দীর্ঘকাল রাজনীতিতে যুক্ত থাকেন। |
১২:৩৮, ২৪ মার্চ ২০১৫ তারিখে সম্পাদিত সর্বশেষ সংস্করণ
হোসেন, নওয়াব মুশাররফ (১৮৭১-১৯৬৬) আইনজীবী, রাজনৈতিক নেতা। তিনি ১৮৭১ সালে কুমিল্লা জেলার চৌদ্দগ্রাম উপজেলাধীন চেওরা গ্রামের কাজী পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতা কাজী মুকাররম আলী ছিলেন কুমিল্লা জজকোর্টের একজন উকিল।
মুশাররফ হোসেন ১৮৯৯ সালে হুগলি কলেজ হতে বি.এ পাস করেন এবং কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় হতে বি.এল ডিগ্রি অর্জন করেন। বৈবাহিকসূত্রে জলপাইগুড়ির এক চা-বাগানের মালিক হন। তিনি জলপাইগুড়ি জেলা বারে যোগদান করেন এবং জলপাইগুড়ি মিউনিসিপ্যালিটির ভাইস-চেয়ারম্যান হিসেবে বেশ কয়েক বছর কাজ করেন।
১৯১৮ সালে প্রথম বারের মতো বঙ্গীয় আইন পরিষদের সদস্য নির্বাচিত হয়ে তিনি নিজেকে একজন দক্ষ পার্লামেন্টারিয়ান হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে সক্ষম হন। তিনি একাধারে ১৯২৩ হতে ১৯৩৬ সাল পর্যন্ত বঙ্গীয় কাউন্সিলের সদস্য নির্বাচিত হন এবং আইন পরিষদের ভেতর ও বাইরে মুসলিম স্বার্থ সংরক্ষণের জন্য চেষ্টা করেন। বেঙ্গল প্যাক্ট এর একটি ধারাকে অর্থাৎ সরকারি চাকরিতে শূন্য পদগুলির শতকরা ৫৫টি পদ মুসলমানদের দ্বারা পূরণ করার বিষয়টি অনতিবিলম্বে কার্যকর করার জন্য ১৯২৪ সালে বঙ্গীয় আইন পরিষদে তিনি একটি প্রস্তাব উত্থাপন করেন। কিন্তু আইন পরিষদের কতিপয় হিন্দু নেতার ঘোর বিরোধিতার কারণে অনির্দিষ্টকালের জন্য সরকার কর্তৃক সিদ্ধান্তটি স্থগিত করা হয়। মুশাররফ হোসেন ১৯২৭ সালে বাংলা সরকারের শিক্ষামন্ত্রী হন এবং ওই সময়ে তিনি বঙ্গীয় আইন পরিষদে অবৈতনিক প্রাথমিক শিক্ষা বিল পাস করিয়ে নেন। তিনি বেঙ্গল ইউনাইটেড মুসলিম পার্টির সহ-সভাপতি ছিলেন।
মুশাররফ হোসেন ১৯৩৬ সালের ডিসেম্বর মাসের সাধারণ নির্বাচনে একজন স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় বঙ্গীয় আইন পরিষদের সদস্য নির্বাচিত হন এবং এর পরই তিনি অল-ইন্ডিয়া মুসলিম লীগে যোগদান করেন। ১৯৩৭ হতে ১৯৪১ পর্যন্ত তিনি আইন ও বিচার বিভাগীয় মন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। তিনি পুনরায় ১৯৪৩ হতে ১৯৪৫ সাল পর্যন্ত বাংলা সরকারের মন্ত্রীর পদ অলংকৃত করেন। মুশাররফ হোসেন পাকিস্তান আন্দোলনে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করেন। তবে দেশ বিভাগের পর তিনি পাকিস্তানে অভিবাসন করেননি। তবে পশ্চিমবঙ্গের বিধান সভার সদস্য হিসেবে তিনি দীর্ঘকাল রাজনীতিতে যুক্ত থাকেন।
বিত্তশালী মুশাররফ হোসেন একজন দানশীল ব্যক্তি ছিলেন। তিনি তাঁর নিজ গ্রাম চেওরাতে একটি উচ্চ ইংরেজি বিদ্যালয় স্থাপন করে তাঁর স্ত্রীর নামে তার নামকরণ করেন ‘ফয়জুন্নেসা উচ্চ ইংরেজি বিদ্যালয়’। তিনি স্কুলের নামে দশ একর জমি ও নগদ ৫০,০০০ টাকা দান করেন। তিনি ১৯২১ সালে নবপ্রতিষ্ঠিত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-ছাত্রীদের জন্য কতগুলি বৃত্তি প্রদান করেন। ১৯২৬ সালে কলকাতা ইসলামিয়া কলেজ প্রতিষ্ঠায় তিনি সক্রিয় ভূমিকা পালন করেন। তিনি জলপাইগুড়ি ও পশ্চিম বঙ্গের বিভিন্ন স্থানের স্কুল-মাদ্রাসার জন্য বিপুল আর্থিক সহায়তা প্রদান করেন। জনকল্যাণে তাঁর অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ সরকার প্রথমে তাঁকে ‘খান বাহাদুর’ উপাধি এবং ১৯২৬ সালে ‘নওয়াব’ উপাধিতে ভূষিত করে। নওয়াব মুশাররফ হোসেন ১৯৬৬ সালের ১৫ নভেম্বর জলপাইগুড়িতে মারা যান। [মুহম্মদ আবদুস সালাম]