লোকগণিত: সংশোধিত সংস্করণের মধ্যে পার্থক্য
NasirkhanBot (আলোচনা | অবদান) অ (Added Ennglish article link) |
সম্পাদনা সারাংশ নেই |
||
২০ নং লাইন: | ২০ নং লাইন: | ||
আর্যাটির মর্মার্থ কুড়বা দিয়ে কুড়বাকে গুণ করলে হবে বর্গ কুড়বা, কাঠাকে কুড়বা দিয়ে গুণ করলে বর্গ কাঠা, কাঠাকে কাঠা দিয়ে গুণ করলে পাওয়া যাবে ধূল যা ২০ বর্গ কাঠার সমান, অবশিষ্টকে (যদি থাকে) ১৬ দিয়ে গুণ করলে বর্গ গন্ডা বের হয়। | আর্যাটির মর্মার্থ কুড়বা দিয়ে কুড়বাকে গুণ করলে হবে বর্গ কুড়বা, কাঠাকে কুড়বা দিয়ে গুণ করলে বর্গ কাঠা, কাঠাকে কাঠা দিয়ে গুণ করলে পাওয়া যাবে ধূল যা ২০ বর্গ কাঠার সমান, অবশিষ্টকে (যদি থাকে) ১৬ দিয়ে গুণ করলে বর্গ গন্ডা বের হয়। | ||
মজার ব্যাপার হলো, গন্ডা ও পণ অস্ট্রো-এশিয়াটিক শব্দ এবং বাংলাদেশের বগুড়া জেলার মহাস্থানগড় উৎখনন এলাকায় প্রাপ্ত প্রমাণ থেকে দেখা যায় যে, ৩০০ খ্রিস্টপূর্ব থেকেই এই শব্দগুলি ব্যবহূত হয়ে আসছে। অন্যান্য ইতিবাচক ভিত্তির কারণে বিশ্বাস করা যায় যে, লোকগণিতের প্রচলন কেবল প্রাচীন ভারতেই নয়, বাংলায়ও বিদ্যমান ছিল। বর্তমান কালে নগরায়ণ, যান্ত্রিক উন্নয়ন ইত্যাদির কারণে লোকগণিতের চর্চা, ব্যবহার ও প্রচলন কমে আসলেও গ্রামবাংলার মানুষের কাছে এখনও এটি জনপ্রিয়। | মজার ব্যাপার হলো, গন্ডা ও পণ অস্ট্রো-এশিয়াটিক শব্দ এবং বাংলাদেশের বগুড়া জেলার মহাস্থানগড় উৎখনন এলাকায় প্রাপ্ত প্রমাণ থেকে দেখা যায় যে, ৩০০ খ্রিস্টপূর্ব থেকেই এই শব্দগুলি ব্যবহূত হয়ে আসছে। অন্যান্য ইতিবাচক ভিত্তির কারণে বিশ্বাস করা যায় যে, লোকগণিতের প্রচলন কেবল প্রাচীন ভারতেই নয়, বাংলায়ও বিদ্যমান ছিল। বর্তমান কালে নগরায়ণ, যান্ত্রিক উন্নয়ন ইত্যাদির কারণে লোকগণিতের চর্চা, ব্যবহার ও প্রচলন কমে আসলেও গ্রামবাংলার মানুষের কাছে এখনও এটি জনপ্রিয়। [নন্দলাল মাইতি] | ||
[নন্দলাল মাইতি] | |||
[[en:Mathematics, Folk]] | [[en:Mathematics, Folk]] |
১০:৫৮, ১১ মার্চ ২০১৫ তারিখে সম্পাদিত সর্বশেষ সংস্করণ
লোকগণিত (Folk Mathematics) প্রাচীনকাল থেকে লোকের মুখে মুখে প্রচলিত ঐতিহ্যিক গণিত। অন্যভাবে বলতে গেলে, একটি দেশের ঐতিহ্যবাহী ঢঙের গণিত। লোকগণিতকে গণিতের মূলধারার অন্তঃস্রোত হিসেবে গণ্য করা যেতে পারে। এটি গণিতের মূলধারাকে যেমন পুষ্ট করে, আবার তেমনি মূলধারা কর্তৃক এটি পুষ্টও হতে থাকে। লোকগণিত চরমভাবে বাস্তব বৈশিষ্ট্যমন্ডিত এবং সমাজের প্রতি স্তরের মানুষের প্রত্যহিক প্রয়োজন মেটায়। সাধারণ মানুষ তাদের দৈনন্দিন জীবনে উদ্ভূত নানাবিধ সমস্যা সমাধানে লোকগণিতের সহজ প্রয়োগ ঘটিয়ে থাকে। মানুষ এর মাঝে বিনোদন অন্বেষণ করে এবং মুখে মুখে গুরুত্ববহ বা তুচ্ছ যাই হোক না কেন, নতুন নতুন সমস্যা বা বিমূঢ়কর প্রশ্নের উত্তর সন্ধানে উৎসাহী হয়।
প্রাচীন ভারতে প্রচলিত লোকগণিত বিষয়ক কতিপয় সমস্যা আজও বখশালী পান্ডুলিপি (৩০০ খ্রিস্টাব্দ), পতন পান্ডুলিপি (৭৭৫ খ্রিস্টাব্দ), মহাবীর-এর গণিত সার সংগ্রহ (৮৫০ খ্রিস্টাব্দ) এবং গণিতের অন্যান্য গবেষণাকর্মে প্রতিফলিত হয়। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই বাঙালিরা গণিতচর্চায় অধিক উৎসাহ প্রদর্শন না করা সত্ত্বেও, সম্ভবত ৩০০ খ্রিস্টপূর্ব থেকে বাঙালিদের চর্চাকৃত শুভঙ্করীতে গণিতশাস্ত্রের সমাবেশ ঘটেছিল। আক্ষরিক অর্থে শুভঙ্করী বলতে গণিত বিষয়ক গ্রন্থকে বোঝায়, যা গণশিক্ষায় ভূমিকা রাখতে পারে। সপ্তদশ শতকের প্রথমার্ধে মলদের শাসনামলে শুভঙ্কর কর্তৃক পাটিগণিত পদ্ধতি প্রবর্তিত হয়েছিল কিনা তা নিশ্চিত নয়। তবে নিশ্চিতভাবে বলা যায় যে, বাংলার মধ্যযুগে শুভঙ্কর নামে একজন গণিতবিদ ছিলেন, যিনি লোকতোষ ছন্দের আকারে গণিত সংক্রান্ত কতকগুলি বিধি (আর্যা) প্রণয়ন করেছিলেন। তিনি প্রধানত মধ্যযুগীয় বাংলা ভাষায় বিধি বা আর্যাগুলি প্রণয়ন করেছিলেন, যার মধ্যে প্রাকৃত, অপভ্রংশ, অবহট্ট ও অস্ট্রো-এশিয়াটিক ভাষা থেকে ধার করা বহু শব্দের সমাবেশ ঘটেছিল। এখানে উলেখ্য, বাংলার মধ্যযুগে বাংলা ও আসামে বহু আর্যা রচয়িতা ছিলেন, যাঁদের নাম কতিপয় আর্যার শেষে উলিখিত হয়েছে।
বহুল প্রচলিত আর্যার উদাহরণ হিসেবে ভূমির ক্ষেত্রফল পরিমাপের জন্য ব্যবহূত নিচের আর্যাটি উল্লেখযোগ্য:
কুড়বা কুড়বা কুড়বা লিহ্যে
কাঠায় কুড়বা কাঠায় লিহ্যে
কাঠায় কাঠায় ধূল পরিমাণ
বিশ গন্ডা হয় কাঠার প্রমাণ
গন্ডা বাকি থাকে যদি কাঠা নিলে পর
ষোল দিয়ে পুরি তারে সারা গন্ডা ধর
আর্যাটির মর্মার্থ কুড়বা দিয়ে কুড়বাকে গুণ করলে হবে বর্গ কুড়বা, কাঠাকে কুড়বা দিয়ে গুণ করলে বর্গ কাঠা, কাঠাকে কাঠা দিয়ে গুণ করলে পাওয়া যাবে ধূল যা ২০ বর্গ কাঠার সমান, অবশিষ্টকে (যদি থাকে) ১৬ দিয়ে গুণ করলে বর্গ গন্ডা বের হয়।
মজার ব্যাপার হলো, গন্ডা ও পণ অস্ট্রো-এশিয়াটিক শব্দ এবং বাংলাদেশের বগুড়া জেলার মহাস্থানগড় উৎখনন এলাকায় প্রাপ্ত প্রমাণ থেকে দেখা যায় যে, ৩০০ খ্রিস্টপূর্ব থেকেই এই শব্দগুলি ব্যবহূত হয়ে আসছে। অন্যান্য ইতিবাচক ভিত্তির কারণে বিশ্বাস করা যায় যে, লোকগণিতের প্রচলন কেবল প্রাচীন ভারতেই নয়, বাংলায়ও বিদ্যমান ছিল। বর্তমান কালে নগরায়ণ, যান্ত্রিক উন্নয়ন ইত্যাদির কারণে লোকগণিতের চর্চা, ব্যবহার ও প্রচলন কমে আসলেও গ্রামবাংলার মানুষের কাছে এখনও এটি জনপ্রিয়। [নন্দলাল মাইতি]