দাশগুপ্ত, কমলা: সংশোধিত সংস্করণের মধ্যে পার্থক্য
সম্পাদনা সারাংশ নেই |
সম্পাদনা সারাংশ নেই |
||
৬ নং লাইন: | ৬ নং লাইন: | ||
১৯৩০ সালে দলের নির্দেশে কমলা দাশগুপ্ত বাড়ি ত্যাগ করেন এবং গড়পার রোডের এক মহিলা হোস্টেলে ম্যানেজারের চাকরি নেন। সেখানে তার দলীয় দায়িত্ব ছিল চাকরির অন্তরালে থেকে বিপ্লবীদের জন্য তৈরি বোমা বা বোমা তৈরির সরঞ্জাম লুকিয়ে রাখা। বোমা হামলার সাথে জড়িত থাকার অভিযোগে তিনি কয়েকবার গ্রেফতার হন। প্রমাণের অভাবে তিনি সহজেই মুক্তি পেয়ে যেতেন। তবে ডালহৌসি স্কোয়ার ষড়যন্ত্র মামলায় গ্রেফতার হয়ে তিনি ২১ দিন হাজতবাস করেন। ফলে তার হোস্টেলের চাকরি চলে যায়। বিপ্লবী বীনা দাসকে তিনি একটি রিভলভার দিয়েছিলেন, যা দিয়ে বীনা দাস ১৯৩২ সালে ফেব্রুয়ারি মাসে বাংলার গভর্নর স্ট্যানলি জ্যাকসনকে গুলি করার চেষ্টা করে। এবারও তিনি গ্রেফতার হন এবং প্রমাণের অভাবে মুক্তি পেয়ে যান। অবশেষে ১৯৩৩ সালে পুলিশবাহিনী তাকে প্রমাণসহ গ্রেফতার করে। প্রথমে প্রেসিডেন্সি জেলে, পরে মেদিনীপুরের হিজলি জেলে রাজবন্দী হিসেবে থাকেন। ১৯৩৬ সালে জেল থেকে মুক্তি পেলেও গৃহবন্দী হয়ে থাকেন ১৯৩৮ সাল পর্যন্ত। ঐ বছরেই গান্ধীর সাথে যুগান্তর দলের আলোচনার ফলে এ দল কংগ্রেসের সাথে একাত্ম হয়। | ১৯৩০ সালে দলের নির্দেশে কমলা দাশগুপ্ত বাড়ি ত্যাগ করেন এবং গড়পার রোডের এক মহিলা হোস্টেলে ম্যানেজারের চাকরি নেন। সেখানে তার দলীয় দায়িত্ব ছিল চাকরির অন্তরালে থেকে বিপ্লবীদের জন্য তৈরি বোমা বা বোমা তৈরির সরঞ্জাম লুকিয়ে রাখা। বোমা হামলার সাথে জড়িত থাকার অভিযোগে তিনি কয়েকবার গ্রেফতার হন। প্রমাণের অভাবে তিনি সহজেই মুক্তি পেয়ে যেতেন। তবে ডালহৌসি স্কোয়ার ষড়যন্ত্র মামলায় গ্রেফতার হয়ে তিনি ২১ দিন হাজতবাস করেন। ফলে তার হোস্টেলের চাকরি চলে যায়। বিপ্লবী বীনা দাসকে তিনি একটি রিভলভার দিয়েছিলেন, যা দিয়ে বীনা দাস ১৯৩২ সালে ফেব্রুয়ারি মাসে বাংলার গভর্নর স্ট্যানলি জ্যাকসনকে গুলি করার চেষ্টা করে। এবারও তিনি গ্রেফতার হন এবং প্রমাণের অভাবে মুক্তি পেয়ে যান। অবশেষে ১৯৩৩ সালে পুলিশবাহিনী তাকে প্রমাণসহ গ্রেফতার করে। প্রথমে প্রেসিডেন্সি জেলে, পরে মেদিনীপুরের হিজলি জেলে রাজবন্দী হিসেবে থাকেন। ১৯৩৬ সালে জেল থেকে মুক্তি পেলেও গৃহবন্দী হয়ে থাকেন ১৯৩৮ সাল পর্যন্ত। ঐ বছরেই গান্ধীর সাথে যুগান্তর দলের আলোচনার ফলে এ দল কংগ্রেসের সাথে একাত্ম হয়। | ||
১৯৪১ সালে তিনি বঙ্গীয় প্রদেশ মহিলা কংগ্রেসের সম্পাদক হন। এসময় তিনি [[ভারত ছাড় আন্দোলন|ভারত ছাড় আন্দোলনে]] যোগ দিয়ে আবার প্রায় চার বছর কারাবাস করেন। এর পর তিনি নিজেকে রিলিফ কর্মকান্ডে যুক্ত করেন। বিশেষকরে তিনি বার্মিজ রিফিউজিদের জন্য রিলিফ প্রদানের কাজে জড়িত ছিলেন। ১৯৪৬ সালে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা বাঁধলে তিনি গান্ধীর নির্দেশে নোয়াখালীতে রিলিফ ক্যাম্প পরিচালনার দায়িত্ব পান। | ১৯৪১ সালে তিনি বঙ্গীয় প্রদেশ মহিলা কংগ্রেসের সম্পাদক হন। এসময় তিনি [[ভারত ছাড় আন্দোলন, ১৯৪২|ভারত ছাড় আন্দোলনে]] যোগ দিয়ে আবার প্রায় চার বছর কারাবাস করেন। এর পর তিনি নিজেকে রিলিফ কর্মকান্ডে যুক্ত করেন। বিশেষকরে তিনি বার্মিজ রিফিউজিদের জন্য রিলিফ প্রদানের কাজে জড়িত ছিলেন। ১৯৪৬ সালে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা বাঁধলে তিনি গান্ধীর নির্দেশে নোয়াখালীতে রিলিফ ক্যাম্প পরিচালনার দায়িত্ব পান। | ||
১৯৩৮ সালে কমলা দাশগুপ্ত কয়েক বছরের জন্য মহিলাদের পত্রিকা মন্দিরা সম্পাদনার ভার নেন। কমলা দাশগুপ্ত ১৯৪৬ থেকে ১৯৭২ সাল পর্যন্ত কলকাতার আদর্শ হিন্দি হাই স্কুলে শিক্ষকতা করেন। এছাড়া তিনি নারীদের ভোকেশনাল ট্রেনিং-এর জন্য কংগ্রেস মহিলা শিল্প কেন্দ্র এবং দক্ষিণেশ্বর নারী স্বাবলম্বী সদনে কাজ করেন। তিনি দলীয় কাজের বাইরে লেখালেখির সাথেও জড়িত ছিলেন। বিভিন্ন পত্র-পত্রিকায় তিনি লিখতেন। তিনি তাঁর আত্মজীবনী রক্তের অক্ষরে (১৯৫৪) এবং স্বাধীনতা সংগ্রামে নারী (১৯৬৩) নামে দুটি গ্রন্থ লিখেন। যে দুটিতে তাঁর বিপ্লবী ও রাজনৈতিক জীবনের নানা বিষয় উঠে এসেছে। ২০০০ সালে কলকাতায় তাঁর মৃত্যু হয়। [মামুনূর রশীদ] | ১৯৩৮ সালে কমলা দাশগুপ্ত কয়েক বছরের জন্য মহিলাদের পত্রিকা মন্দিরা সম্পাদনার ভার নেন। কমলা দাশগুপ্ত ১৯৪৬ থেকে ১৯৭২ সাল পর্যন্ত কলকাতার আদর্শ হিন্দি হাই স্কুলে শিক্ষকতা করেন। এছাড়া তিনি নারীদের ভোকেশনাল ট্রেনিং-এর জন্য কংগ্রেস মহিলা শিল্প কেন্দ্র এবং দক্ষিণেশ্বর নারী স্বাবলম্বী সদনে কাজ করেন। তিনি দলীয় কাজের বাইরে লেখালেখির সাথেও জড়িত ছিলেন। বিভিন্ন পত্র-পত্রিকায় তিনি লিখতেন। তিনি তাঁর আত্মজীবনী রক্তের অক্ষরে (১৯৫৪) এবং স্বাধীনতা সংগ্রামে নারী (১৯৬৩) নামে দুটি গ্রন্থ লিখেন। যে দুটিতে তাঁর বিপ্লবী ও রাজনৈতিক জীবনের নানা বিষয় উঠে এসেছে। ২০০০ সালে কলকাতায় তাঁর মৃত্যু হয়। [মামুনূর রশীদ] | ||
[[en:Dasgupta, Kamala]] | [[en:Dasgupta, Kamala]] |
০৪:৩২, ১৩ জানুয়ারি ২০১৫ তারিখে সম্পাদিত সর্বশেষ সংস্করণ
দাশগুপ্তা, কমলা (১৯০৭-২০০০) ভারতীয় স্বাধীনতা আন্দোলনের কর্মী, জাতীয় কংগ্রেসের নেত্রী। ১৯০৭ সালে ঢাকার বিক্রমপুরে এক বৈদ্য পরিবারে তিনি জন্ম গ্রহণ করেন। ১৯২৪ সালে তিনি ঢাকার ব্রাহ্মবালিকা শিক্ষালয় থেকে প্রবেশিকা পাশ করেন। এর পরে তার পরিবার কলকাতায় চলে যায়। সেখানে তিনি বেথুন কলেজে ভর্তি হন। ১৯২৮ সালে বেথুন কলেজ থেকে বি.এ ডিগ্রি লাভ করেন এবং পরে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়-এর অধীনে ইতিহাসে এম.এ ডিগ্রি অর্জন করেন।
তার এম.এ শ্রেণির ছাত্রাবস্থায় কলকাতার তরুণ প্রজন্মের মধ্যে জাতীয়তাবাদী আন্দোলনের ধারণা পরিপূর্ণ রূপ পেতে থাকলে তার মধ্যেও ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনে যোগ দেওয়ার ব্যাপারে দাগিদ জন্মে। তিনি পড়ালেখা ত্যাগ করে সবরমতি আশ্রমে যোগ দিয়ে দেশের জন্য কাজ করতে চান- এ মর্মে মহাত্মা গান্ধীকে চিঠি লেখেন। মহাত্মা গান্ধীও তাকে সম্মতি দেন। কিন্তু তার পরিবারের চাপে তাকে কলকাতায় অবস্থান করে পড়ালেখা চালিয়ে যেতে হয়। এসময় যুগান্তর দলের কতিপয় সদস্যের সাথে তার বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক গড়ে ওঠে। তিনি বিপ্লবী দীনেশ মজুমদারের কাছে লাঠিখেলা শিখতে থাকেন। ১৯২৯ সালে যুগান্তর দলের নেতা রসিকলাল দাসের প্রেরণায় গান্ধীর অহিংসবাদ ত্যাগ করে সশস্ত্র সংগ্রামের জন্য যুগান্তর দলে যোগ দেয়।
১৯৩০ সালে দলের নির্দেশে কমলা দাশগুপ্ত বাড়ি ত্যাগ করেন এবং গড়পার রোডের এক মহিলা হোস্টেলে ম্যানেজারের চাকরি নেন। সেখানে তার দলীয় দায়িত্ব ছিল চাকরির অন্তরালে থেকে বিপ্লবীদের জন্য তৈরি বোমা বা বোমা তৈরির সরঞ্জাম লুকিয়ে রাখা। বোমা হামলার সাথে জড়িত থাকার অভিযোগে তিনি কয়েকবার গ্রেফতার হন। প্রমাণের অভাবে তিনি সহজেই মুক্তি পেয়ে যেতেন। তবে ডালহৌসি স্কোয়ার ষড়যন্ত্র মামলায় গ্রেফতার হয়ে তিনি ২১ দিন হাজতবাস করেন। ফলে তার হোস্টেলের চাকরি চলে যায়। বিপ্লবী বীনা দাসকে তিনি একটি রিভলভার দিয়েছিলেন, যা দিয়ে বীনা দাস ১৯৩২ সালে ফেব্রুয়ারি মাসে বাংলার গভর্নর স্ট্যানলি জ্যাকসনকে গুলি করার চেষ্টা করে। এবারও তিনি গ্রেফতার হন এবং প্রমাণের অভাবে মুক্তি পেয়ে যান। অবশেষে ১৯৩৩ সালে পুলিশবাহিনী তাকে প্রমাণসহ গ্রেফতার করে। প্রথমে প্রেসিডেন্সি জেলে, পরে মেদিনীপুরের হিজলি জেলে রাজবন্দী হিসেবে থাকেন। ১৯৩৬ সালে জেল থেকে মুক্তি পেলেও গৃহবন্দী হয়ে থাকেন ১৯৩৮ সাল পর্যন্ত। ঐ বছরেই গান্ধীর সাথে যুগান্তর দলের আলোচনার ফলে এ দল কংগ্রেসের সাথে একাত্ম হয়।
১৯৪১ সালে তিনি বঙ্গীয় প্রদেশ মহিলা কংগ্রেসের সম্পাদক হন। এসময় তিনি ভারত ছাড় আন্দোলনে যোগ দিয়ে আবার প্রায় চার বছর কারাবাস করেন। এর পর তিনি নিজেকে রিলিফ কর্মকান্ডে যুক্ত করেন। বিশেষকরে তিনি বার্মিজ রিফিউজিদের জন্য রিলিফ প্রদানের কাজে জড়িত ছিলেন। ১৯৪৬ সালে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা বাঁধলে তিনি গান্ধীর নির্দেশে নোয়াখালীতে রিলিফ ক্যাম্প পরিচালনার দায়িত্ব পান।
১৯৩৮ সালে কমলা দাশগুপ্ত কয়েক বছরের জন্য মহিলাদের পত্রিকা মন্দিরা সম্পাদনার ভার নেন। কমলা দাশগুপ্ত ১৯৪৬ থেকে ১৯৭২ সাল পর্যন্ত কলকাতার আদর্শ হিন্দি হাই স্কুলে শিক্ষকতা করেন। এছাড়া তিনি নারীদের ভোকেশনাল ট্রেনিং-এর জন্য কংগ্রেস মহিলা শিল্প কেন্দ্র এবং দক্ষিণেশ্বর নারী স্বাবলম্বী সদনে কাজ করেন। তিনি দলীয় কাজের বাইরে লেখালেখির সাথেও জড়িত ছিলেন। বিভিন্ন পত্র-পত্রিকায় তিনি লিখতেন। তিনি তাঁর আত্মজীবনী রক্তের অক্ষরে (১৯৫৪) এবং স্বাধীনতা সংগ্রামে নারী (১৯৬৩) নামে দুটি গ্রন্থ লিখেন। যে দুটিতে তাঁর বিপ্লবী ও রাজনৈতিক জীবনের নানা বিষয় উঠে এসেছে। ২০০০ সালে কলকাতায় তাঁর মৃত্যু হয়। [মামুনূর রশীদ]