দুগ্ধজাত পণ্য: সংশোধিত সংস্করণের মধ্যে পার্থক্য
NasirkhanBot (আলোচনা | অবদান) অ (fix: </u>]]) |
সম্পাদনা সারাংশ নেই |
||
১ নং লাইন: | ১ নং লাইন: | ||
[[Category:Banglapedia]] | [[Category:Banglapedia]] | ||
'''দুগ্ধজাত পণ্য '''(Dairy products) মিষ্টান্নসহ দুধের তৈরি যাবতীয় [[ | '''দুগ্ধজাত পণ্য''' (Dairy products) মিষ্টান্নসহ দুধের তৈরি যাবতীয় [[খাদ্যসামগ্রী|খাদ্যসামগ্রী]]। বহুকাল আগে থেকেই বাংলাদেশের মানুষের খাবারে দুগ্ধজাতপণ্য ঐতিহ্যগতভাবে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। উল্লেখযোগ্য দুগ্ধজাতপণ্য হচ্ছে সর বা ক্রিম (cream), দই, ছানা, মাখন, ঘি, পনির প্রভৃতি। ক্রিমে স্নেহপদার্থের পরিমাণ শতকরা ১৮ ভাগের কম নয়, সাধারণত ১৮ থেকে ৮০ ভাগের মধ্যে। স্থানীয়ভাবে সর, মালাই হিসেবেও পরিচিত। মাখন, ঘি ও আইসক্রিম তৈরিতে ক্রিমের ব্যবহার ব্যাপক। | ||
''দই'' গাঁজনকৃত দুগ্ধপণ্য যা স্বাভাবিক দুধ বা দুধের সর থেকে তৈরি করা যায়। বিশুদ্ধভাবে উৎপাদিত যে কোনো গাঁজানোর উপযোগী অণুজীব সামান্য পরিমাণে ব্যবহার করে দই তৈরি করা যায়। সামান্য পরিমাণ পূর্বে তৈরিকৃত দই দুধে যোগ করেও দই তৈরি করা যায়। দই মিষ্টি হতে পারে বা ফলের রস প্রভৃতি দিয়ে সুঘ্রাণযুক্ত করা যেতে পারে। উন্নতমানের দই তৈরির জন্য বিশুদ্ধভাবে উৎপাদিত ''Streptococcus thermophilus'' ও ''Lactobacillus'' species ব্যবহার করা হয়। বগুড়ায় তৈরি দই বিশেষভাবে জনপ্রিয়। সাধারণত দইয়ের পুষ্টিমান নির্ভর করে দুধ ও তৈরির সময় ব্যবহূত অন্যান্য উপাদানের ওপর। | |||
''পনির'' তৈরি করা হয় ঘনীভূত দুধ থেকে। দুধের ঘনীভূত অংশ থেকে জলীয় অংশ আলাদা করার জন্য ছোট ছোট টুকরা করা হয়। ঘনীভূত দুধ শুকানো হয়, লবণ মিশানো হয়, তারপর চাপ প্রয়োগে পনিরের চূড়ান্ত রূপ দেওয়া হয়। তৈরির কৌশল ও স্বাদের ওপর ভিত্তি করে পনিরের বিভিন্ন নাম দেওয়া হয়। কিশোরগঞ্জ জেলার অষ্টগ্রামের পনির মান ও স্বাদের জন্য বিখ্যাত। | |||
''ছানা'' ফুটন্ত দুধে পর্যাপ্ত টক, ছানার পানি, লেবুর রস বা সাইট্রিক এসিড দ্রবণ মিশিয়ে জমানো দুধের স্নেহপদার্থের (entrained milk fat) সঙ্গে আমিষ পৃথক করে তৈরি করা হয়। ছানাকে মূল উপাদান হিসেবে ব্যবহার করে তৈরি করা যায় নানাধরনের মিষ্টি, যেমন রসগোল্লা, সন্দেশ, কাঁচাগোল্লা, চমচম, মন্ডা, রসমালাই, ছানামুখী প্রভৃতি। নাটোরের কাঁচাগোল্লা, টাঙ্গাইলের চমচম ও কুমিল্লার রসমালাই, মুক্তাগাছার মন্ডা, ব্রাক্ষণবাড়ীয়ার ছানামুখী প্রভূতি নামকরা মিষ্টি। ভারতীয় উপমহাদেশ বিশেষ করে বাংলাদেশে মিষ্টান্ন অত্যন্ত জনপ্রিয় খাদ্য, বিশেষ ধরনের অনুষ্ঠানে একটি অত্যাবশ্যকীয় উপাদান। মহিষের দুধ ছানা তৈরির জন্য উপযোগী নয়। | |||
''মাখন'' ক্রীমের মন্থনের (churning) মাধ্যমে তৈরি করা হয়। এক্ষেত্রে ব্যবহার করা হয় শতকরা ৩৫-৪২ ভাগ স্নেহপদার্থবিশিষ্ট ক্রিম, যা তৈরির পরপরই বা কিছু সময় রেখে টক করে ব্যবহার করা যায়। মাখনের উপাদান বিভিন্ন হতে পারে। একটি গড়মাত্রার মাখনে রয়েছে শতকরা ৪২ ভাগ স্নেহপদার্থ, ০.৪ ভাগ আমিষ, ১৫ ভাগ পানি, ২ ভাগ লবণ, এবং খাদ্যপ্রাণ এ ও ডি। | |||
''ঘি'' শোধনকৃত মাখন, এতে শতকরা প্রায় ৯৯.৭ ভাগ দুগ্ধ-স্নেহপদার্থ থাকতে পারে এবং গরু ও মহিষ উভয়ের দুধ থেকে তৈরি করা যায়। ঘি শক্তির একটি ঘনীভূত উৎস এবং বাংলাদেশে পোলাও, বিরিয়ানি, রোস্ট, কোরমা ও এ ধরনের অন্যান্য সুস্বাদু খাদ্য তৈরিতে ব্যবহূত হয়। [এ.কে.এম আবদুল মান্নান] | |||
আরও | ''আরও দেখুন'' [[দুধ|দুধ]]; [[দুগ্ধখামার|দুগ্ধখামার]]। | ||
[[en:Dairy Product]] | [[en:Dairy Product]] |
০৪:২৯, ১৪ জানুয়ারি ২০১৫ তারিখে সম্পাদিত সর্বশেষ সংস্করণ
দুগ্ধজাত পণ্য (Dairy products) মিষ্টান্নসহ দুধের তৈরি যাবতীয় খাদ্যসামগ্রী। বহুকাল আগে থেকেই বাংলাদেশের মানুষের খাবারে দুগ্ধজাতপণ্য ঐতিহ্যগতভাবে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। উল্লেখযোগ্য দুগ্ধজাতপণ্য হচ্ছে সর বা ক্রিম (cream), দই, ছানা, মাখন, ঘি, পনির প্রভৃতি। ক্রিমে স্নেহপদার্থের পরিমাণ শতকরা ১৮ ভাগের কম নয়, সাধারণত ১৮ থেকে ৮০ ভাগের মধ্যে। স্থানীয়ভাবে সর, মালাই হিসেবেও পরিচিত। মাখন, ঘি ও আইসক্রিম তৈরিতে ক্রিমের ব্যবহার ব্যাপক।
দই গাঁজনকৃত দুগ্ধপণ্য যা স্বাভাবিক দুধ বা দুধের সর থেকে তৈরি করা যায়। বিশুদ্ধভাবে উৎপাদিত যে কোনো গাঁজানোর উপযোগী অণুজীব সামান্য পরিমাণে ব্যবহার করে দই তৈরি করা যায়। সামান্য পরিমাণ পূর্বে তৈরিকৃত দই দুধে যোগ করেও দই তৈরি করা যায়। দই মিষ্টি হতে পারে বা ফলের রস প্রভৃতি দিয়ে সুঘ্রাণযুক্ত করা যেতে পারে। উন্নতমানের দই তৈরির জন্য বিশুদ্ধভাবে উৎপাদিত Streptococcus thermophilus ও Lactobacillus species ব্যবহার করা হয়। বগুড়ায় তৈরি দই বিশেষভাবে জনপ্রিয়। সাধারণত দইয়ের পুষ্টিমান নির্ভর করে দুধ ও তৈরির সময় ব্যবহূত অন্যান্য উপাদানের ওপর।
পনির তৈরি করা হয় ঘনীভূত দুধ থেকে। দুধের ঘনীভূত অংশ থেকে জলীয় অংশ আলাদা করার জন্য ছোট ছোট টুকরা করা হয়। ঘনীভূত দুধ শুকানো হয়, লবণ মিশানো হয়, তারপর চাপ প্রয়োগে পনিরের চূড়ান্ত রূপ দেওয়া হয়। তৈরির কৌশল ও স্বাদের ওপর ভিত্তি করে পনিরের বিভিন্ন নাম দেওয়া হয়। কিশোরগঞ্জ জেলার অষ্টগ্রামের পনির মান ও স্বাদের জন্য বিখ্যাত।
ছানা ফুটন্ত দুধে পর্যাপ্ত টক, ছানার পানি, লেবুর রস বা সাইট্রিক এসিড দ্রবণ মিশিয়ে জমানো দুধের স্নেহপদার্থের (entrained milk fat) সঙ্গে আমিষ পৃথক করে তৈরি করা হয়। ছানাকে মূল উপাদান হিসেবে ব্যবহার করে তৈরি করা যায় নানাধরনের মিষ্টি, যেমন রসগোল্লা, সন্দেশ, কাঁচাগোল্লা, চমচম, মন্ডা, রসমালাই, ছানামুখী প্রভৃতি। নাটোরের কাঁচাগোল্লা, টাঙ্গাইলের চমচম ও কুমিল্লার রসমালাই, মুক্তাগাছার মন্ডা, ব্রাক্ষণবাড়ীয়ার ছানামুখী প্রভূতি নামকরা মিষ্টি। ভারতীয় উপমহাদেশ বিশেষ করে বাংলাদেশে মিষ্টান্ন অত্যন্ত জনপ্রিয় খাদ্য, বিশেষ ধরনের অনুষ্ঠানে একটি অত্যাবশ্যকীয় উপাদান। মহিষের দুধ ছানা তৈরির জন্য উপযোগী নয়।
মাখন ক্রীমের মন্থনের (churning) মাধ্যমে তৈরি করা হয়। এক্ষেত্রে ব্যবহার করা হয় শতকরা ৩৫-৪২ ভাগ স্নেহপদার্থবিশিষ্ট ক্রিম, যা তৈরির পরপরই বা কিছু সময় রেখে টক করে ব্যবহার করা যায়। মাখনের উপাদান বিভিন্ন হতে পারে। একটি গড়মাত্রার মাখনে রয়েছে শতকরা ৪২ ভাগ স্নেহপদার্থ, ০.৪ ভাগ আমিষ, ১৫ ভাগ পানি, ২ ভাগ লবণ, এবং খাদ্যপ্রাণ এ ও ডি।
ঘি শোধনকৃত মাখন, এতে শতকরা প্রায় ৯৯.৭ ভাগ দুগ্ধ-স্নেহপদার্থ থাকতে পারে এবং গরু ও মহিষ উভয়ের দুধ থেকে তৈরি করা যায়। ঘি শক্তির একটি ঘনীভূত উৎস এবং বাংলাদেশে পোলাও, বিরিয়ানি, রোস্ট, কোরমা ও এ ধরনের অন্যান্য সুস্বাদু খাদ্য তৈরিতে ব্যবহূত হয়। [এ.কে.এম আবদুল মান্নান]
আরও দেখুন দুধ; দুগ্ধখামার।