দানেশ, হাজী মোহাম্মদ: সংশোধিত সংস্করণের মধ্যে পার্থক্য
NasirkhanBot (আলোচনা | অবদান) অ (Added Ennglish article link) |
সম্পাদনা সারাংশ নেই |
||
(একই ব্যবহারকারী দ্বারা সম্পাদিত ২টি মধ্যবর্তী সংশোধন দেখানো হচ্ছে না) | |||
১ নং লাইন: | ১ নং লাইন: | ||
[[Category:Banglapedia]] | [[Category:Banglapedia]] | ||
'''দানেশ | [[Image:DaneshHajiMohammad.jpg|thumb|400px|right|হাজী মোহাম্মদ দানেশ]] | ||
'''দানেশ, হাজী মোহাম্মদ''' (১৯০০-১৯৮৬) কৃষকনেতা ও রাজনীতিক। দিনাজপুর জেলার সুলতানপুর গ্রামে ১৯০০ সালে তাঁর জন্ম। আলীগড় মুসলিম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১৯৩১ সালে ইতিহাসে এম.এ এবং ১৯৩২ সালে বি.এল ডিগ্রি লাভ করে হাজী দানেশ দিনাজপুরে আইনব্যবসা শুরু করেন। | |||
হাজী দানেশ ১৯৩৮ সালে বঙ্গীয় প্রাদেশিক কমিউনিস্ট পার্টির অঙ্গসংগঠন কৃষক সমিতির সঙ্গে সম্পৃক্ত হন এবং উত্তরবঙ্গে কৃষক আন্দোলন সংগঠিত করেন। তাঁর নেতৃত্বে দিনাজপুর জেলায় টোল আদায় বন্ধ ও জমিদারি উচ্ছেদের দাবিতে কৃষক আন্দোলন জোরদার হয়। আন্দোলনকালে তিনি গ্রেফতার হন এবং কারাভোগ করেন (১৯৩৮)। নীলফামারি জেলার ডোমারে ১৯৪২ সালে অনুষ্ঠিত বঙ্গীয় কৃষক সম্মেলনের অন্যতম উদ্যোক্তা ছিলেন হাজী দানেশ। সম্মেলনের পরপরই তিনি গ্রেফতার হন এবং দীর্ঘদিন কারাভোগ করেন। বর্গাচাষীদের অধিকার আদায়ের লক্ষ্যে তিনি উত্তরবঙ্গে তেভাগা আন্দোলন সংগঠিত করেন। | হাজী দানেশ ১৯৩৮ সালে বঙ্গীয় প্রাদেশিক কমিউনিস্ট পার্টির অঙ্গসংগঠন কৃষক সমিতির সঙ্গে সম্পৃক্ত হন এবং উত্তরবঙ্গে কৃষক আন্দোলন সংগঠিত করেন। তাঁর নেতৃত্বে দিনাজপুর জেলায় টোল আদায় বন্ধ ও জমিদারি উচ্ছেদের দাবিতে কৃষক আন্দোলন জোরদার হয়। আন্দোলনকালে তিনি গ্রেফতার হন এবং কারাভোগ করেন (১৯৩৮)। নীলফামারি জেলার ডোমারে ১৯৪২ সালে অনুষ্ঠিত বঙ্গীয় কৃষক সম্মেলনের অন্যতম উদ্যোক্তা ছিলেন হাজী দানেশ। সম্মেলনের পরপরই তিনি গ্রেফতার হন এবং দীর্ঘদিন কারাভোগ করেন। বর্গাচাষীদের অধিকার আদায়ের লক্ষ্যে তিনি উত্তরবঙ্গে তেভাগা আন্দোলন সংগঠিত করেন। | ||
৬ নং লাইন: | ৭ নং লাইন: | ||
হাজী দানেশ ১৯৪৫ সালে মুসলিম লীগে যোগ দেন। কিন্তু তেভাগা আন্দোলনে নেতৃত্ব দান অব্যাহত রাখার কারণে ১৯৪৬ সালে মুসলিম লীগ থেকে বহিষ্কৃত হন। ঐ বছরই তিনি বঙ্গীয় সরকার কর্তৃক গ্রেফতার হন এবং ১৯৪৭ সালে মুক্তিলাভ করেন। এরপরই তিনি দিনাজপুর সুরেন্দ্রনাথ কলেজে ইতিহাসের অধ্যাপক পদে যোগ দেন। | হাজী দানেশ ১৯৪৫ সালে মুসলিম লীগে যোগ দেন। কিন্তু তেভাগা আন্দোলনে নেতৃত্ব দান অব্যাহত রাখার কারণে ১৯৪৬ সালে মুসলিম লীগ থেকে বহিষ্কৃত হন। ঐ বছরই তিনি বঙ্গীয় সরকার কর্তৃক গ্রেফতার হন এবং ১৯৪৭ সালে মুক্তিলাভ করেন। এরপরই তিনি দিনাজপুর সুরেন্দ্রনাথ কলেজে ইতিহাসের অধ্যাপক পদে যোগ দেন। | ||
হাজী দানেশ ১৯৫২ সালে গণতন্ত্রী দল নামে একটি নতুন রাজনৈতিক দল গঠন করেন এবং দলের সভাপতি নির্বাচিত হন। ১৯৫৩ সালের ডিসেম্বরে গণতন্ত্রী দল যুক্তফ্রন্টে যোগ দেয়। [[ | হাজী দানেশ ১৯৫২ সালে গণতন্ত্রী দল নামে একটি নতুন রাজনৈতিক দল গঠন করেন এবং দলের সভাপতি নির্বাচিত হন। ১৯৫৩ সালের ডিসেম্বরে গণতন্ত্রী দল যুক্তফ্রন্টে যোগ দেয়। [[যুক্তফ্রণ্ট|যুক্তফ্রণ্ট]] মনোনীত প্রার্থী হিসেবে হাজী দানেশ ১৯৫৪ সালে দিনাজপুর থেকে পূর্ববঙ্গ আইন পরিষদের সদস্য নির্বাচিত হন। হাজী দানেশ ১৯৪৫ সালে মুসলিম লীগে যোগ দেন। | ||
কিন্তু তেভাগা আন্দোলনে নেতৃত্ব দান অব্যাহত রাখার কারণে ১৯৪৬ সালে মুসলিম লীগ থেকে বহিষ্কৃত হন। ঐ বছরই তিনি বঙ্গীয় সরকার কর্তৃক গ্রেফতার হন এবং ১৯৪৭ সালে মুক্তিলাভ করেন। এরপরই তিনি দিনাজপুর সুরেন্দ্রনাথ কলেজে ইতিহাসের অধ্যাপক পদে যোগ দেন। | কিন্তু তেভাগা আন্দোলনে নেতৃত্ব দান অব্যাহত রাখার কারণে ১৯৪৬ সালে মুসলিম লীগ থেকে বহিষ্কৃত হন। ঐ বছরই তিনি বঙ্গীয় সরকার কর্তৃক গ্রেফতার হন এবং ১৯৪৭ সালে মুক্তিলাভ করেন। এরপরই তিনি দিনাজপুর সুরেন্দ্রনাথ কলেজে ইতিহাসের অধ্যাপক পদে যোগ দেন। | ||
হাজী দানেশ ১৯৫২ সালে গণতন্ত্রী দল নামে একটি নতুন রাজনৈতিক দল গঠন করেন এবং দলের সভাপতি নির্বাচিত হন। ১৯৫৩ সালের ডিসেম্বরে গণতন্ত্রী দল যুক্তফ্রন্টে যোগ দেয়। যুক্তফ্রন্ট মনোনীত প্রার্থী হিসেবে হাজী দানেশ ১৯৫৪ সালে দিনাজপুর থেকে পূর্ববঙ্গ আইন পরিষদের সদস্য নির্বাচিত হন। কেন্দ্রীয় সরকার কর্তৃক ৯২-ক ধারা জারি করে পূর্ববঙ্গে যুক্তফ্রন্ট মন্ত্রিসভা ভেঙ্গে দেওয়ার পর তিনি গ্রেফতার হন এবং ১৯৫৬ সালে মুক্তিলাভ করেন। ১৯৫৭ সালে গণতন্ত্রী দল বিলোপ করে তিনি মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানীর নেতৃত্বে গঠিত ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টিতে যোগ দেন এবং দলের সহসভাপতি নির্বাচিত হন। ১৯৫৮ সালে দেশে সামরিক শাসন জারি হলে তিনি কারারুদ্ধ হন। হাজী দানেশ ১৯৬৪ সালে ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টির পূর্ব পাকিস্তান শাখার সাধারণ সম্পাদক এবং ১৯৬৫ সালে দলের কেন্দ্রীয় কমিটির সহসভাপতি নির্বাচিত হন। তিনি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ছয়দফা কর্মসূচির বিরুদ্ধে রাজনৈতিক কর্মকান্ড পরিচালনা করেন। ১৯৭১ সালে তিনি [[ | হাজী দানেশ ১৯৫২ সালে গণতন্ত্রী দল নামে একটি নতুন রাজনৈতিক দল গঠন করেন এবং দলের সভাপতি নির্বাচিত হন। ১৯৫৩ সালের ডিসেম্বরে গণতন্ত্রী দল যুক্তফ্রন্টে যোগ দেয়। যুক্তফ্রন্ট মনোনীত প্রার্থী হিসেবে হাজী দানেশ ১৯৫৪ সালে দিনাজপুর থেকে পূর্ববঙ্গ আইন পরিষদের সদস্য নির্বাচিত হন। কেন্দ্রীয় সরকার কর্তৃক ৯২-ক ধারা জারি করে পূর্ববঙ্গে যুক্তফ্রন্ট মন্ত্রিসভা ভেঙ্গে দেওয়ার পর তিনি গ্রেফতার হন এবং ১৯৫৬ সালে মুক্তিলাভ করেন। ১৯৫৭ সালে গণতন্ত্রী দল বিলোপ করে তিনি মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানীর নেতৃত্বে গঠিত ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টিতে যোগ দেন এবং দলের সহসভাপতি নির্বাচিত হন। ১৯৫৮ সালে দেশে সামরিক শাসন জারি হলে তিনি কারারুদ্ধ হন। হাজী দানেশ ১৯৬৪ সালে ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টির পূর্ব পাকিস্তান শাখার সাধারণ সম্পাদক এবং ১৯৬৫ সালে দলের কেন্দ্রীয় কমিটির সহসভাপতি নির্বাচিত হন। তিনি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ছয়দফা কর্মসূচির বিরুদ্ধে রাজনৈতিক কর্মকান্ড পরিচালনা করেন। ১৯৭১ সালে তিনি [[ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি|ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি]] থেকে পদত্যাগ করেন। হাজী দানেশ মুজিবনগরে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে কাজ করেন। | ||
হাজী দানেশ ১৯৭৩ সালের ডিসেম্বর মাসে জাতীয় গণমুক্তি ইউনিয়ন নামে একটি রাজনৈতিক দল গঠন করেন এবং দলের সভাপতি নির্বাচিত হন। ১৯৭৫ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে তিনি বাংলাদেশ কৃষক শ্রমিক আওয়ামী লীগে (বাকশাল) যোগ দেন এবং কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য নিযুক্ত হন। বাকশাল সরকারের পতনের পর ১৯৭৬ সালে তিনি জাতীয় গণমুক্তি ইউনিয়ন পুনরুজ্জীবিত করেন। কিন্তু ১৯৮০ সালে এই দল বিলোপ করে হাজী দানেশ গণতান্ত্রিক পার্টি নামে একটি নতুন দল গঠন করেন এবং দলের সভাপতি নির্বাচিত হন। ১৯৮৬ সালে গণতান্ত্রিক পার্টি জেনারেল হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদের জাতীয় পার্টির সঙ্গে একীভূত করা হয়। হাজী দানেশ জাতীয় পার্টির অঙ্গ সংগঠন জাতীয় কৃষক পার্টির প্রধান উপদেষ্টা নিযুক্ত হন। ১৯৮৬ সালে তিনি দিনাজপুর নির্বাচনী এলাকা থেকে জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে পরাজিত হন। হাজী দানেশ তেভাগা আন্দোলনের নেতা হিসেবেই সমধিক পরিচিত। ১৯৮৬ সালের ২৮ জুন তিনি ঢাকায় মৃত্যুবরণ করেন। [মাহফুজুর রহমান সরকার] | হাজী দানেশ ১৯৭৩ সালের ডিসেম্বর মাসে জাতীয় গণমুক্তি ইউনিয়ন নামে একটি রাজনৈতিক দল গঠন করেন এবং দলের সভাপতি নির্বাচিত হন। ১৯৭৫ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে তিনি বাংলাদেশ কৃষক শ্রমিক আওয়ামী লীগে (বাকশাল) যোগ দেন এবং কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য নিযুক্ত হন। বাকশাল সরকারের পতনের পর ১৯৭৬ সালে তিনি জাতীয় গণমুক্তি ইউনিয়ন পুনরুজ্জীবিত করেন। কিন্তু ১৯৮০ সালে এই দল বিলোপ করে হাজী দানেশ গণতান্ত্রিক পার্টি নামে একটি নতুন দল গঠন করেন এবং দলের সভাপতি নির্বাচিত হন। ১৯৮৬ সালে গণতান্ত্রিক পার্টি জেনারেল হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদের জাতীয় পার্টির সঙ্গে একীভূত করা হয়। হাজী দানেশ জাতীয় পার্টির অঙ্গ সংগঠন জাতীয় কৃষক পার্টির প্রধান উপদেষ্টা নিযুক্ত হন। ১৯৮৬ সালে তিনি দিনাজপুর নির্বাচনী এলাকা থেকে জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে পরাজিত হন। হাজী দানেশ তেভাগা আন্দোলনের নেতা হিসেবেই সমধিক পরিচিত। ১৯৮৬ সালের ২৮ জুন তিনি ঢাকায় মৃত্যুবরণ করেন। [মাহফুজুর রহমান সরকার] | ||
[[en:Danesh, Haji Mohammad]] | [[en:Danesh, Haji Mohammad]] |
০৯:৩৯, ৮ সেপ্টেম্বর ২০২১ তারিখে সম্পাদিত সর্বশেষ সংস্করণ
দানেশ, হাজী মোহাম্মদ (১৯০০-১৯৮৬) কৃষকনেতা ও রাজনীতিক। দিনাজপুর জেলার সুলতানপুর গ্রামে ১৯০০ সালে তাঁর জন্ম। আলীগড় মুসলিম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১৯৩১ সালে ইতিহাসে এম.এ এবং ১৯৩২ সালে বি.এল ডিগ্রি লাভ করে হাজী দানেশ দিনাজপুরে আইনব্যবসা শুরু করেন।
হাজী দানেশ ১৯৩৮ সালে বঙ্গীয় প্রাদেশিক কমিউনিস্ট পার্টির অঙ্গসংগঠন কৃষক সমিতির সঙ্গে সম্পৃক্ত হন এবং উত্তরবঙ্গে কৃষক আন্দোলন সংগঠিত করেন। তাঁর নেতৃত্বে দিনাজপুর জেলায় টোল আদায় বন্ধ ও জমিদারি উচ্ছেদের দাবিতে কৃষক আন্দোলন জোরদার হয়। আন্দোলনকালে তিনি গ্রেফতার হন এবং কারাভোগ করেন (১৯৩৮)। নীলফামারি জেলার ডোমারে ১৯৪২ সালে অনুষ্ঠিত বঙ্গীয় কৃষক সম্মেলনের অন্যতম উদ্যোক্তা ছিলেন হাজী দানেশ। সম্মেলনের পরপরই তিনি গ্রেফতার হন এবং দীর্ঘদিন কারাভোগ করেন। বর্গাচাষীদের অধিকার আদায়ের লক্ষ্যে তিনি উত্তরবঙ্গে তেভাগা আন্দোলন সংগঠিত করেন।
হাজী দানেশ ১৯৪৫ সালে মুসলিম লীগে যোগ দেন। কিন্তু তেভাগা আন্দোলনে নেতৃত্ব দান অব্যাহত রাখার কারণে ১৯৪৬ সালে মুসলিম লীগ থেকে বহিষ্কৃত হন। ঐ বছরই তিনি বঙ্গীয় সরকার কর্তৃক গ্রেফতার হন এবং ১৯৪৭ সালে মুক্তিলাভ করেন। এরপরই তিনি দিনাজপুর সুরেন্দ্রনাথ কলেজে ইতিহাসের অধ্যাপক পদে যোগ দেন।
হাজী দানেশ ১৯৫২ সালে গণতন্ত্রী দল নামে একটি নতুন রাজনৈতিক দল গঠন করেন এবং দলের সভাপতি নির্বাচিত হন। ১৯৫৩ সালের ডিসেম্বরে গণতন্ত্রী দল যুক্তফ্রন্টে যোগ দেয়। যুক্তফ্রণ্ট মনোনীত প্রার্থী হিসেবে হাজী দানেশ ১৯৫৪ সালে দিনাজপুর থেকে পূর্ববঙ্গ আইন পরিষদের সদস্য নির্বাচিত হন। হাজী দানেশ ১৯৪৫ সালে মুসলিম লীগে যোগ দেন।
কিন্তু তেভাগা আন্দোলনে নেতৃত্ব দান অব্যাহত রাখার কারণে ১৯৪৬ সালে মুসলিম লীগ থেকে বহিষ্কৃত হন। ঐ বছরই তিনি বঙ্গীয় সরকার কর্তৃক গ্রেফতার হন এবং ১৯৪৭ সালে মুক্তিলাভ করেন। এরপরই তিনি দিনাজপুর সুরেন্দ্রনাথ কলেজে ইতিহাসের অধ্যাপক পদে যোগ দেন।
হাজী দানেশ ১৯৫২ সালে গণতন্ত্রী দল নামে একটি নতুন রাজনৈতিক দল গঠন করেন এবং দলের সভাপতি নির্বাচিত হন। ১৯৫৩ সালের ডিসেম্বরে গণতন্ত্রী দল যুক্তফ্রন্টে যোগ দেয়। যুক্তফ্রন্ট মনোনীত প্রার্থী হিসেবে হাজী দানেশ ১৯৫৪ সালে দিনাজপুর থেকে পূর্ববঙ্গ আইন পরিষদের সদস্য নির্বাচিত হন। কেন্দ্রীয় সরকার কর্তৃক ৯২-ক ধারা জারি করে পূর্ববঙ্গে যুক্তফ্রন্ট মন্ত্রিসভা ভেঙ্গে দেওয়ার পর তিনি গ্রেফতার হন এবং ১৯৫৬ সালে মুক্তিলাভ করেন। ১৯৫৭ সালে গণতন্ত্রী দল বিলোপ করে তিনি মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানীর নেতৃত্বে গঠিত ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টিতে যোগ দেন এবং দলের সহসভাপতি নির্বাচিত হন। ১৯৫৮ সালে দেশে সামরিক শাসন জারি হলে তিনি কারারুদ্ধ হন। হাজী দানেশ ১৯৬৪ সালে ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টির পূর্ব পাকিস্তান শাখার সাধারণ সম্পাদক এবং ১৯৬৫ সালে দলের কেন্দ্রীয় কমিটির সহসভাপতি নির্বাচিত হন। তিনি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ছয়দফা কর্মসূচির বিরুদ্ধে রাজনৈতিক কর্মকান্ড পরিচালনা করেন। ১৯৭১ সালে তিনি ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি থেকে পদত্যাগ করেন। হাজী দানেশ মুজিবনগরে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে কাজ করেন।
হাজী দানেশ ১৯৭৩ সালের ডিসেম্বর মাসে জাতীয় গণমুক্তি ইউনিয়ন নামে একটি রাজনৈতিক দল গঠন করেন এবং দলের সভাপতি নির্বাচিত হন। ১৯৭৫ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে তিনি বাংলাদেশ কৃষক শ্রমিক আওয়ামী লীগে (বাকশাল) যোগ দেন এবং কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য নিযুক্ত হন। বাকশাল সরকারের পতনের পর ১৯৭৬ সালে তিনি জাতীয় গণমুক্তি ইউনিয়ন পুনরুজ্জীবিত করেন। কিন্তু ১৯৮০ সালে এই দল বিলোপ করে হাজী দানেশ গণতান্ত্রিক পার্টি নামে একটি নতুন দল গঠন করেন এবং দলের সভাপতি নির্বাচিত হন। ১৯৮৬ সালে গণতান্ত্রিক পার্টি জেনারেল হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদের জাতীয় পার্টির সঙ্গে একীভূত করা হয়। হাজী দানেশ জাতীয় পার্টির অঙ্গ সংগঠন জাতীয় কৃষক পার্টির প্রধান উপদেষ্টা নিযুক্ত হন। ১৯৮৬ সালে তিনি দিনাজপুর নির্বাচনী এলাকা থেকে জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে পরাজিত হন। হাজী দানেশ তেভাগা আন্দোলনের নেতা হিসেবেই সমধিক পরিচিত। ১৯৮৬ সালের ২৮ জুন তিনি ঢাকায় মৃত্যুবরণ করেন। [মাহফুজুর রহমান সরকার]