জিনজিরা প্রাসাদ: সংশোধিত সংস্করণের মধ্যে পার্থক্য
NasirkhanBot (আলোচনা | অবদান) অ (Added Ennglish article link) |
অ (Text replacement - "\[মুয়ায্যম হুসায়ন খান\]" to "[মুয়ায্যম হুসায়ন খান]") |
||
(একজন ব্যবহারকারী দ্বারা সম্পাদিত একটি মধ্যবর্তী সংশোধন দেখানো হচ্ছে না) | |||
১ নং লাইন: | ১ নং লাইন: | ||
[[Category:Banglapedia]] | [[Category:Banglapedia]] | ||
'''জিনজিরা প্রাসাদ''' ঢাকার [[বড় কাটরা, ঢাকা|বড় কাটরা]] প্রাসাদ-দুর্গের প্রায় দক্ষিণ বরাবর বুড়িগঙ্গা নদীর অপর তীরে অবস্থিত। বাংলার মুগল সুবাহদার দ্বিতীয় ইবরাহিম খান (১৬৮৯-১৬৯৭) তাঁর প্রমোদকেন্দ্র হিসেবে প্রাসাদটি নির্মাণ করেন। পারিপার্শ্বিক এলাকাসহ প্রাসাদস্থলটি তখন ছিল চতুষ্পার্শ্বে নদীবেষ্টিত একটি দ্বীপের মতো। এ কারণেই ওই স্থানে নির্মিত প্রাসাদটির নামকরণ হয় কস্র''-''এ''-''জাজিরা বা দ্বীপের প্রাসাদ। প্রাসাদটি নদীর তীর ঘেষে নির্মিত হয়েছিল, এবং নদীর ওপর একটি কাঠের সেতু দ্বারা বড় কাটরার নিকটে ঢাকা নগরীর সঙ্গে প্রাসাদটির সংযোগ স্থাপিত ছিল। | '''জিনজিরা প্রাসাদ''' ঢাকার [[বড় কাটরা, ঢাকা|বড় কাটরা]] প্রাসাদ-দুর্গের প্রায় দক্ষিণ বরাবর বুড়িগঙ্গা নদীর অপর তীরে অবস্থিত। বাংলার মুগল সুবাহদার দ্বিতীয় ইবরাহিম খান (১৬৮৯-১৬৯৭) তাঁর প্রমোদকেন্দ্র হিসেবে প্রাসাদটি নির্মাণ করেন। পারিপার্শ্বিক এলাকাসহ প্রাসাদস্থলটি তখন ছিল চতুষ্পার্শ্বে নদীবেষ্টিত একটি দ্বীপের মতো। এ কারণেই ওই স্থানে নির্মিত প্রাসাদটির নামকরণ হয় কস্র''-''এ''-''জাজিরা বা দ্বীপের প্রাসাদ। প্রাসাদটি নদীর তীর ঘেষে নির্মিত হয়েছিল, এবং নদীর ওপর একটি কাঠের সেতু দ্বারা বড় কাটরার নিকটে ঢাকা নগরীর সঙ্গে প্রাসাদটির সংযোগ স্থাপিত ছিল। | ||
জিনজিরা প্রাসাদে ছিল মূল প্রাসাদ ভবন, আয়তাকার সুবিস্তৃত দ্বিতল [[হাম্মাম|হাম্মাম]] (স্নানাগার), দক্ষিণের সদরে প্রহরী-কক্ষ সহ দ্বিতল প্রবেশ-ফটক এবং দুটি অষ্টকোণী পার্শ্ববুরুজ। পলেস্তরা দেয়াল ঘেরা কক্ষগুলি ছিল আয়তাকার এবং উপরে কুঁড়েঘর আকৃতির চৌচালা খিলানাকার ছাদ। প্রাসাদের বহিঃদেয়ালের সুপ্রশস্ত ভিত এবং সুদৃঢ় প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাসহ চতুষ্পার্শ্বস্থ পরিখা এর প্রাসাদ-দুর্গের বৈশিষ্ট্যের ইঙ্গিতবহ। | জিনজিরা প্রাসাদে ছিল মূল প্রাসাদ ভবন, আয়তাকার সুবিস্তৃত দ্বিতল [[হাম্মাম|হাম্মাম]] (স্নানাগার), দক্ষিণের সদরে প্রহরী-কক্ষ সহ দ্বিতল প্রবেশ-ফটক এবং দুটি অষ্টকোণী পার্শ্ববুরুজ। পলেস্তরা দেয়াল ঘেরা কক্ষগুলি ছিল আয়তাকার এবং উপরে কুঁড়েঘর আকৃতির চৌচালা খিলানাকার ছাদ। প্রাসাদের বহিঃদেয়ালের সুপ্রশস্ত ভিত এবং সুদৃঢ় প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাসহ চতুষ্পার্শ্বস্থ পরিখা এর প্রাসাদ-দুর্গের বৈশিষ্ট্যের ইঙ্গিতবহ। | ||
৮ নং লাইন: | ৮ নং লাইন: | ||
বাংলার [[দীউয়ানি|দীউয়ানি]] লাভের পর [[মুর্শিদকুলী খান|মুর্শিদকুলী খান]] এ প্রাসাদে বসবাস করতে থাকেন। তাঁর রাজস্ব প্রশাসন দপ্তর মকসুদাবাদে স্থানান্তরের (১৭০৩) পূর্ব পর্যন্ত প্রাসাদটি তাঁর আবাসস্থল ছিল। এর পরেও রাষ্ট্রীয় প্রয়োজনে ঢাকা সফরকালে তিনি এ প্রাসাদেই অবস্থান করতেন। নবাব আলীবর্দী খানের অধীনে ঢাকার নায়েব নাযিম নওয়াজিশ মুহাম্মদ খানের প্রতিনিধি হোসেন কুলি খানের পারিবারিক আবাসস্থল ছিল এ প্রাসাদ। | বাংলার [[দীউয়ানি|দীউয়ানি]] লাভের পর [[মুর্শিদকুলী খান|মুর্শিদকুলী খান]] এ প্রাসাদে বসবাস করতে থাকেন। তাঁর রাজস্ব প্রশাসন দপ্তর মকসুদাবাদে স্থানান্তরের (১৭০৩) পূর্ব পর্যন্ত প্রাসাদটি তাঁর আবাসস্থল ছিল। এর পরেও রাষ্ট্রীয় প্রয়োজনে ঢাকা সফরকালে তিনি এ প্রাসাদেই অবস্থান করতেন। নবাব আলীবর্দী খানের অধীনে ঢাকার নায়েব নাযিম নওয়াজিশ মুহাম্মদ খানের প্রতিনিধি হোসেন কুলি খানের পারিবারিক আবাসস্থল ছিল এ প্রাসাদ। | ||
মুর্শিদাবাদ নিযামতের শেষ বছরগুলিতে সংঘটিত বেদনাবিধুর ঘটনার নীরব সাক্ষী ছিল জিনজিরা প্রাসাদ। নবাব সরফরাজ খানের (১৭৩৯-১৭৪০) পতনের পর তাঁর মাতা, স্ত্রী, ভগ্নি, পুত্রকন্যা এবং তাঁর হারেমের কতিপয় মহিলাকে এ প্রাসাদে অন্তরীণ রাখা হয়। মুর্শিদাবাদের রাজপথে হোসেন কুলি খানের হত্যাকান্ডের (১৭৫৪) পর এ প্রাসাদে বসবাসরত তাঁর পরিবার পরিজনকেও বন্দিজীবন যাপন করতে হয়। অদৃষ্টের এ এক নির্মম পরিহাস যে, সিরাজউদ্দৌলার পতনের পর আলীবর্দী খানের মহিষী শরীফুন্নেসা, কন্যা ঘসেটি বেগম ও আমেনা বেগম, সিরাজউদ্দৌলার স্ত্রী লুৎফুন্নেসা বেগম ও তাঁর কন্যা কুদসিয়া বেগম ওরফে উম্মে জোহরাকে জিনজিরা প্রাসাদে এনে কড়া পাহারায় রাখা হয়। এরূপ জনশ্রুতি আছে যে, নবাব মীর জাফর আলী খানের পুত্র মীর সাদেক আলী খান ওরফে মিরনের নির্দেশে জমাদার বকর খান মুর্শিদাবাদে নিয়ে যাওয়ার অজুহাতে ঘসেটি বেগম ও আমেনা বেগমকে প্রাসাদ থেকে নৌকায় তুলে ধলেশ্বরী নদীতে নৌকা ডুবিয়ে হত্যা করে (জুন ১৭৬০)। | মুর্শিদাবাদ নিযামতের শেষ বছরগুলিতে সংঘটিত বেদনাবিধুর ঘটনার নীরব সাক্ষী ছিল জিনজিরা প্রাসাদ। নবাব সরফরাজ খানের (১৭৩৯-১৭৪০) পতনের পর তাঁর মাতা, স্ত্রী, ভগ্নি, পুত্রকন্যা এবং তাঁর হারেমের কতিপয় মহিলাকে এ প্রাসাদে অন্তরীণ রাখা হয়। মুর্শিদাবাদের রাজপথে হোসেন কুলি খানের হত্যাকান্ডের (১৭৫৪) পর এ প্রাসাদে বসবাসরত তাঁর পরিবার পরিজনকেও বন্দিজীবন যাপন করতে হয়। অদৃষ্টের এ এক নির্মম পরিহাস যে, সিরাজউদ্দৌলার পতনের পর আলীবর্দী খানের মহিষী শরীফুন্নেসা, কন্যা ঘসেটি বেগম ও আমেনা বেগম, সিরাজউদ্দৌলার স্ত্রী লুৎফুন্নেসা বেগম ও তাঁর কন্যা কুদসিয়া বেগম ওরফে উম্মে জোহরাকে জিনজিরা প্রাসাদে এনে কড়া পাহারায় রাখা হয়। এরূপ জনশ্রুতি আছে যে, নবাব মীর জাফর আলী খানের পুত্র মীর সাদেক আলী খান ওরফে মিরনের নির্দেশে জমাদার বকর খান মুর্শিদাবাদে নিয়ে যাওয়ার অজুহাতে ঘসেটি বেগম ও আমেনা বেগমকে প্রাসাদ থেকে নৌকায় তুলে ধলেশ্বরী নদীতে নৌকা ডুবিয়ে হত্যা করে (জুন ১৭৬০)। [মুয়ায্যম হুসায়ন খান] | ||
[[en:Jinjira Palace]] | [[en:Jinjira Palace]] |
১৬:৩৪, ১৭ এপ্রিল ২০১৫ তারিখে সম্পাদিত সর্বশেষ সংস্করণ
জিনজিরা প্রাসাদ ঢাকার বড় কাটরা প্রাসাদ-দুর্গের প্রায় দক্ষিণ বরাবর বুড়িগঙ্গা নদীর অপর তীরে অবস্থিত। বাংলার মুগল সুবাহদার দ্বিতীয় ইবরাহিম খান (১৬৮৯-১৬৯৭) তাঁর প্রমোদকেন্দ্র হিসেবে প্রাসাদটি নির্মাণ করেন। পারিপার্শ্বিক এলাকাসহ প্রাসাদস্থলটি তখন ছিল চতুষ্পার্শ্বে নদীবেষ্টিত একটি দ্বীপের মতো। এ কারণেই ওই স্থানে নির্মিত প্রাসাদটির নামকরণ হয় কস্র-এ-জাজিরা বা দ্বীপের প্রাসাদ। প্রাসাদটি নদীর তীর ঘেষে নির্মিত হয়েছিল, এবং নদীর ওপর একটি কাঠের সেতু দ্বারা বড় কাটরার নিকটে ঢাকা নগরীর সঙ্গে প্রাসাদটির সংযোগ স্থাপিত ছিল।
জিনজিরা প্রাসাদে ছিল মূল প্রাসাদ ভবন, আয়তাকার সুবিস্তৃত দ্বিতল হাম্মাম (স্নানাগার), দক্ষিণের সদরে প্রহরী-কক্ষ সহ দ্বিতল প্রবেশ-ফটক এবং দুটি অষ্টকোণী পার্শ্ববুরুজ। পলেস্তরা দেয়াল ঘেরা কক্ষগুলি ছিল আয়তাকার এবং উপরে কুঁড়েঘর আকৃতির চৌচালা খিলানাকার ছাদ। প্রাসাদের বহিঃদেয়ালের সুপ্রশস্ত ভিত এবং সুদৃঢ় প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাসহ চতুষ্পার্শ্বস্থ পরিখা এর প্রাসাদ-দুর্গের বৈশিষ্ট্যের ইঙ্গিতবহ।
প্রাসাদটি এখন নিশ্চিহ্নপ্রায়। মূল প্রাসাদের সাতটি কক্ষ এখনও ভগ্নপ্রায় অবস্থায় টিকে আছে। অপরাপর টিকে থাকা স্থাপনার মধ্যে রয়েছে দুটি অষ্টভুজাকৃতির পার্শ্ববুরুজ, দক্ষিণ দিকের ভগ্নপ্রায় ফটক (দেউড়ি), প্রাসাদের সুপ্রশস্ত ভিত এবং চতুষ্পার্শ্বস্থ পরিখা। প্রাসাদস্থলটি এখন স্থানীয় লোকদের নিকট হাওলি (হাভেলি’র অপভ্রংশ) নামে পরিচিত। বর্তমানে এর চারপাশে গড়ে উঠেছে ঘিঞ্জি বসতি ও বাণিজ্যিক স্থাপনা।
বাংলার দীউয়ানি লাভের পর মুর্শিদকুলী খান এ প্রাসাদে বসবাস করতে থাকেন। তাঁর রাজস্ব প্রশাসন দপ্তর মকসুদাবাদে স্থানান্তরের (১৭০৩) পূর্ব পর্যন্ত প্রাসাদটি তাঁর আবাসস্থল ছিল। এর পরেও রাষ্ট্রীয় প্রয়োজনে ঢাকা সফরকালে তিনি এ প্রাসাদেই অবস্থান করতেন। নবাব আলীবর্দী খানের অধীনে ঢাকার নায়েব নাযিম নওয়াজিশ মুহাম্মদ খানের প্রতিনিধি হোসেন কুলি খানের পারিবারিক আবাসস্থল ছিল এ প্রাসাদ।
মুর্শিদাবাদ নিযামতের শেষ বছরগুলিতে সংঘটিত বেদনাবিধুর ঘটনার নীরব সাক্ষী ছিল জিনজিরা প্রাসাদ। নবাব সরফরাজ খানের (১৭৩৯-১৭৪০) পতনের পর তাঁর মাতা, স্ত্রী, ভগ্নি, পুত্রকন্যা এবং তাঁর হারেমের কতিপয় মহিলাকে এ প্রাসাদে অন্তরীণ রাখা হয়। মুর্শিদাবাদের রাজপথে হোসেন কুলি খানের হত্যাকান্ডের (১৭৫৪) পর এ প্রাসাদে বসবাসরত তাঁর পরিবার পরিজনকেও বন্দিজীবন যাপন করতে হয়। অদৃষ্টের এ এক নির্মম পরিহাস যে, সিরাজউদ্দৌলার পতনের পর আলীবর্দী খানের মহিষী শরীফুন্নেসা, কন্যা ঘসেটি বেগম ও আমেনা বেগম, সিরাজউদ্দৌলার স্ত্রী লুৎফুন্নেসা বেগম ও তাঁর কন্যা কুদসিয়া বেগম ওরফে উম্মে জোহরাকে জিনজিরা প্রাসাদে এনে কড়া পাহারায় রাখা হয়। এরূপ জনশ্রুতি আছে যে, নবাব মীর জাফর আলী খানের পুত্র মীর সাদেক আলী খান ওরফে মিরনের নির্দেশে জমাদার বকর খান মুর্শিদাবাদে নিয়ে যাওয়ার অজুহাতে ঘসেটি বেগম ও আমেনা বেগমকে প্রাসাদ থেকে নৌকায় তুলে ধলেশ্বরী নদীতে নৌকা ডুবিয়ে হত্যা করে (জুন ১৭৬০)। [মুয়ায্যম হুসায়ন খান]