কলকাতা ট্রামওয়ে: সংশোধিত সংস্করণের মধ্যে পার্থক্য
NasirkhanBot (আলোচনা | অবদান) অ (Added Ennglish article link) |
সম্পাদনা সারাংশ নেই |
||
(একই ব্যবহারকারী দ্বারা সম্পাদিত একটি মধ্যবর্তী সংশোধন দেখানো হচ্ছে না) | |||
২ নং লাইন: | ২ নং লাইন: | ||
'''কলকাতা ট্রামওয়ে''' গণপরিবহণ ব্যবস্থায় প্রথম সংগঠিত প্রতিষ্ঠান হিসেবে বিকাশ লাভ করে। ব্রিটিশ বিনিয়োগকারী ও ব্যবসায়ীদের বাণিজ্য ও ব্যবসা কেন্দ্র হিসেবে [[কলকাতা|কলকাতা]] খুব দ্রুত গড়ে উঠছিল। তারপরও এটি ছিল পালকি, ঘোড়ার গাড়ি এবং ব্যক্তিগতভাবে অন্যান্য পশুবাহিত যানবাহনের শহর। কলকাতা কর্পোরেশন ১৮৬৭ সালের নবম অ্যাক্ট (Act IX)-এর অনুমোদনে এবং বাংলা সরকারের আর্থিক সহায়তায় গণপরিবহণ ব্যবস্থা উন্নয়নের উদ্যোগ নেয়। এরই প্রত্যক্ষ ফল হিসেবে কলকাতা ট্রামওয়ে প্রবর্তিত হয়। ১৮৭৩ সালের ২৪ ফ্রেরুয়ারি কলকাতার রাস্তায় প্রথম বারের মতো ট্রাম চলে। ঘোড়াচালিত গাড়িগুলি শিয়ালদা থেকে বউবাজার ও ডালহৌসী স্কোয়ার হয়ে আর্মেনিয়া ঘাট পর্যন্ত চলত। এটি শুধু যাত্রীদের সুবিধার্থেই ব্যবহূত হতো। | '''কলকাতা ট্রামওয়ে''' গণপরিবহণ ব্যবস্থায় প্রথম সংগঠিত প্রতিষ্ঠান হিসেবে বিকাশ লাভ করে। ব্রিটিশ বিনিয়োগকারী ও ব্যবসায়ীদের বাণিজ্য ও ব্যবসা কেন্দ্র হিসেবে [[কলকাতা|কলকাতা]] খুব দ্রুত গড়ে উঠছিল। তারপরও এটি ছিল পালকি, ঘোড়ার গাড়ি এবং ব্যক্তিগতভাবে অন্যান্য পশুবাহিত যানবাহনের শহর। কলকাতা কর্পোরেশন ১৮৬৭ সালের নবম অ্যাক্ট (Act IX)-এর অনুমোদনে এবং বাংলা সরকারের আর্থিক সহায়তায় গণপরিবহণ ব্যবস্থা উন্নয়নের উদ্যোগ নেয়। এরই প্রত্যক্ষ ফল হিসেবে কলকাতা ট্রামওয়ে প্রবর্তিত হয়। ১৮৭৩ সালের ২৪ ফ্রেরুয়ারি কলকাতার রাস্তায় প্রথম বারের মতো ট্রাম চলে। ঘোড়াচালিত গাড়িগুলি শিয়ালদা থেকে বউবাজার ও ডালহৌসী স্কোয়ার হয়ে আর্মেনিয়া ঘাট পর্যন্ত চলত। এটি শুধু যাত্রীদের সুবিধার্থেই ব্যবহূত হতো। | ||
[[Image:CalcuttaTram.jpg|thumb|400px|right|কলকাতার ট্রামওয়ে]] | |||
কর্পোরেশনের প্রচেষ্টা থাকা সত্ত্বেও এটি অর্থনৈতিকভাবে লাভজনক না হওয়াতে ১৮৭৯ সালের ২ অক্টোবর ইংল্যান্ডের তিনজন বিখ্যাত শিল্পপতির (রবিনসন সাউটার, অ্যালফ্রেড পার্স এবং ডেলউইন পেরি) সঙ্গে কর্পোরেশন চুক্তি স্বাক্ষর করে। তাঁরা কলকাতায় ট্রামওয়ে নির্মাণ এবং রক্ষণাবেক্ষণের জন্য মূলধন নিয়োগের অধিকার লাভ করে। ১৮৮০ সালের কলকাতা ট্রামওয়ে অ্যাক্ট-এর মাধ্যমে এ চুক্তি অনুমোদিত হয়। লন্ডনে রেজিস্ট্রিকৃত কলকাতা ট্রামওয়ে কোম্পানি ১৮৮০ সালে প্রতিষ্ঠা লাভ করে। | কর্পোরেশনের প্রচেষ্টা থাকা সত্ত্বেও এটি অর্থনৈতিকভাবে লাভজনক না হওয়াতে ১৮৭৯ সালের ২ অক্টোবর ইংল্যান্ডের তিনজন বিখ্যাত শিল্পপতির (রবিনসন সাউটার, অ্যালফ্রেড পার্স এবং ডেলউইন পেরি) সঙ্গে কর্পোরেশন চুক্তি স্বাক্ষর করে। তাঁরা কলকাতায় ট্রামওয়ে নির্মাণ এবং রক্ষণাবেক্ষণের জন্য মূলধন নিয়োগের অধিকার লাভ করে। ১৮৮০ সালের কলকাতা ট্রামওয়ে অ্যাক্ট-এর মাধ্যমে এ চুক্তি অনুমোদিত হয়। লন্ডনে রেজিস্ট্রিকৃত কলকাতা ট্রামওয়ে কোম্পানি ১৮৮০ সালে প্রতিষ্ঠা লাভ করে। | ||
বাংলা সরকার এবং [[কলকাতা কর্পোরেশন|কলকাতা কর্পোরেশন]] ১৮৮০ সালের ১ নভেম্বর কোম্পানিকে ট্রাম চালানোর অনুমতি দেয়। শিয়ালদা রেলস্টেশন থেকে ডালহৌসি স্কোয়ার হয়ে চাঁদপাল ঘাট পর্যন্ত ট্রাম চলাচলের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। কিন্তু নভেম্বরের মধ্যে সম্পূর্ণ ট্রামলাইন নির্মাণ সম্পন্ন না হওয়ায় প্রথম কয়েকদিন শুধু শিয়ালদা থেকে ডালহৌসী স্কোয়ার পর্যন্ত ট্রাম চলে। তবে ১৮৮৪ সালের মধ্যে ৮ টি লাইন বসানো হয়। এগুলি হলো- ১৮৮১ সালে শিয়ালদা, চিতপুর এবং চৌরঙ্গী; ১৮৮২ সালে ধর্মতলা, স্ট্যান্ডরোড, শ্যামবাজার ও খিদিরপুর এবং ১৮৮৪ সালে ওয়েলেসলী লাইন। ১৮৮২ এবং ১৮৮৪ সালের মধ্যে খুব অল্পসময়ের জন্য খিদিরপুর এবং চৌরঙ্গী এলাকায় বাষ্পচালিত ট্রাম চলে। লাইনগুলিতে অবশ্য ঘোড়াচালিত ট্রামই চলত। | বাংলা সরকার এবং [[কলকাতা কর্পোরেশন|কলকাতা কর্পোরেশন]] ১৮৮০ সালের ১ নভেম্বর কোম্পানিকে ট্রাম চালানোর অনুমতি দেয়। শিয়ালদা রেলস্টেশন থেকে ডালহৌসি স্কোয়ার হয়ে চাঁদপাল ঘাট পর্যন্ত ট্রাম চলাচলের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। কিন্তু নভেম্বরের মধ্যে সম্পূর্ণ ট্রামলাইন নির্মাণ সম্পন্ন না হওয়ায় প্রথম কয়েকদিন শুধু শিয়ালদা থেকে ডালহৌসী স্কোয়ার পর্যন্ত ট্রাম চলে। তবে ১৮৮৪ সালের মধ্যে ৮ টি লাইন বসানো হয়। এগুলি হলো- ১৮৮১ সালে শিয়ালদা, চিতপুর এবং চৌরঙ্গী; ১৮৮২ সালে ধর্মতলা, স্ট্যান্ডরোড, শ্যামবাজার ও খিদিরপুর এবং ১৮৮৪ সালে ওয়েলেসলী লাইন। ১৮৮২ এবং ১৮৮৪ সালের মধ্যে খুব অল্পসময়ের জন্য খিদিরপুর এবং চৌরঙ্গী এলাকায় বাষ্পচালিত ট্রাম চলে। লাইনগুলিতে অবশ্য ঘোড়াচালিত ট্রামই চলত। | ||
১৮৯৬ সালে মেসার্স কিলবার্ন অ্যান্ড কোম্পানি কলকাতা কর্পোরেশনের কাছ থেকে সর্বপ্রথম বিদ্যুৎচালিত ট্রাম চালানোর অনুমতি লাভ করে। ১৮৯৯ সালে প্রস্তাব গ্রহীত হয় এবং ১৯০২ সালে কলকাতা ট্রামওয়েতে বিদ্যুতায়ন সম্পূর্ণ হয়। ওই একই বছরে খিদিরপুর এলাকায় প্রথমবারের মতো বিদ্যুৎচালিত ট্রাম চলে। | ১৮৯৬ সালে মেসার্স কিলবার্ন অ্যান্ড কোম্পানি কলকাতা কর্পোরেশনের কাছ থেকে সর্বপ্রথম বিদ্যুৎচালিত ট্রাম চালানোর অনুমতি লাভ করে। ১৮৯৯ সালে প্রস্তাব গ্রহীত হয় এবং ১৯০২ সালে কলকাতা ট্রামওয়েতে বিদ্যুতায়ন সম্পূর্ণ হয়। ওই একই বছরে খিদিরপুর এলাকায় প্রথমবারের মতো বিদ্যুৎচালিত ট্রাম চলে। | ||
১৪ নং লাইন: | ১৩ নং লাইন: | ||
১৯২০ সালের পর থেকে কলকাতা ট্রামওয়ে শ্রমিকরা ট্রেড ইউনিয়নে সক্রিয়ভাবে জড়িয়ে পড়ে। ১৯২০ সালে কলকাতা ট্রামওয়ে কর্মীরা তাদের প্রথম সংগঠন ‘কলকাতা ট্রামওয়ে এমপ্লয়িজ ইউনিয়ন’ গঠন করে। ১৯২৭ সালে ‘কলকাতা ট্রামওয়ে এমপ্লয়িজ ইউনিয়ন’ ‘কলকাতা ট্রামওয়ে ওয়ার্কাস ইউনিয়ন’ নতুন নামে পুনর্গঠিত হয়। প্রথম দিকের মার্কসীয় তত্ত্বের অনুসারী ভুপেন্দ্রনাথ দত্ত এবং ফণীন্দ্রকুমার স্যান্নাল ছিলেন যথাক্রমে এর প্রতিষ্ঠাতা প্রেসিডেন্ট ও সেক্রেটারি। পরবর্তীকালে সোমনাথ লাহিড়ি, বঙ্কিম মুখার্জী এবং মুহম্মদ ইসমাইলের মতো কয়েকজন কমিউনিস্ট নেতা এ ইউনিয়নের সঙ্গে সম্পৃক্ত হন। কলকাতা ট্রামওয়ে কর্মীরা বামপন্থি ট্রেড ইউনিয়ন নেতাদের প্রভাবে ১৯৩৯, ১৯৪৫ এবং ১৯৪৭ সালে বিদেশি ব্যবস্থাপনার বিরুদ্ধে সন্ত্রাসী আন্দোলনে অংশ নেন। তবে কলকাতার দাঙ্গায় কলকাতা ট্রামওয়ে কর্মীরা হিন্দু-মুসলিম সম্প্রীতি বজায় রাখতে এক উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করে। | ১৯২০ সালের পর থেকে কলকাতা ট্রামওয়ে শ্রমিকরা ট্রেড ইউনিয়নে সক্রিয়ভাবে জড়িয়ে পড়ে। ১৯২০ সালে কলকাতা ট্রামওয়ে কর্মীরা তাদের প্রথম সংগঠন ‘কলকাতা ট্রামওয়ে এমপ্লয়িজ ইউনিয়ন’ গঠন করে। ১৯২৭ সালে ‘কলকাতা ট্রামওয়ে এমপ্লয়িজ ইউনিয়ন’ ‘কলকাতা ট্রামওয়ে ওয়ার্কাস ইউনিয়ন’ নতুন নামে পুনর্গঠিত হয়। প্রথম দিকের মার্কসীয় তত্ত্বের অনুসারী ভুপেন্দ্রনাথ দত্ত এবং ফণীন্দ্রকুমার স্যান্নাল ছিলেন যথাক্রমে এর প্রতিষ্ঠাতা প্রেসিডেন্ট ও সেক্রেটারি। পরবর্তীকালে সোমনাথ লাহিড়ি, বঙ্কিম মুখার্জী এবং মুহম্মদ ইসমাইলের মতো কয়েকজন কমিউনিস্ট নেতা এ ইউনিয়নের সঙ্গে সম্পৃক্ত হন। কলকাতা ট্রামওয়ে কর্মীরা বামপন্থি ট্রেড ইউনিয়ন নেতাদের প্রভাবে ১৯৩৯, ১৯৪৫ এবং ১৯৪৭ সালে বিদেশি ব্যবস্থাপনার বিরুদ্ধে সন্ত্রাসী আন্দোলনে অংশ নেন। তবে কলকাতার দাঙ্গায় কলকাতা ট্রামওয়ে কর্মীরা হিন্দু-মুসলিম সম্প্রীতি বজায় রাখতে এক উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করে। | ||
ভারতের স্বাধীনতার পর কোম্পানি এবং পশ্চিম বাংলা সরকারের মধ্যে ব্যবস্থাপনা ও মালিকানা নিয়ে আলাপ-আলোচনা শুরু হয়। ১৯৫৭ সালের কলকাতা ট্রামওয়ে অ্যাক্ট সরকার কর্তৃক বিশ বছর পর ক্রয় করার মাধ্যমে এর দায়িত্বভার গ্রহণের বিষয় অনুমোদন করে। অবশেষে ১৯৬৭ সালের অ্যাক্ট-এর মাধ্যমে সরকার কলকাতা ট্রামওয়ে কোম্পানি জাতীয়করণ করে। | ভারতের স্বাধীনতার পর কোম্পানি এবং পশ্চিম বাংলা সরকারের মধ্যে ব্যবস্থাপনা ও মালিকানা নিয়ে আলাপ-আলোচনা শুরু হয়। ১৯৫৭ সালের কলকাতা ট্রামওয়ে অ্যাক্ট সরকার কর্তৃক বিশ বছর পর ক্রয় করার মাধ্যমে এর দায়িত্বভার গ্রহণের বিষয় অনুমোদন করে। অবশেষে ১৯৬৭ সালের অ্যাক্ট-এর মাধ্যমে সরকার কলকাতা ট্রামওয়ে কোম্পানি জাতীয়করণ করে। [রাজশেখর বসু] | ||
[রাজশেখর বসু] | |||
'''গ্রন্থপঞ্জি ''' Siddhartha Guha Ray, “History of the Working class in the Calcutta Tramways Company, 1920–1967”, Unpublished PhD Dissertation, University of Calcutta, 1988; Sisir Mitra, A public facility, its management and the workers: A case study of the Calcutta Tramways, its growth and decay, 1939-1975, New Delhi, 1980. | |||
[[en:Calcutta Tramways]] | [[en:Calcutta Tramways]] |
০৮:০৮, ৫ আগস্ট ২০১৪ তারিখে সম্পাদিত সর্বশেষ সংস্করণ
কলকাতা ট্রামওয়ে গণপরিবহণ ব্যবস্থায় প্রথম সংগঠিত প্রতিষ্ঠান হিসেবে বিকাশ লাভ করে। ব্রিটিশ বিনিয়োগকারী ও ব্যবসায়ীদের বাণিজ্য ও ব্যবসা কেন্দ্র হিসেবে কলকাতা খুব দ্রুত গড়ে উঠছিল। তারপরও এটি ছিল পালকি, ঘোড়ার গাড়ি এবং ব্যক্তিগতভাবে অন্যান্য পশুবাহিত যানবাহনের শহর। কলকাতা কর্পোরেশন ১৮৬৭ সালের নবম অ্যাক্ট (Act IX)-এর অনুমোদনে এবং বাংলা সরকারের আর্থিক সহায়তায় গণপরিবহণ ব্যবস্থা উন্নয়নের উদ্যোগ নেয়। এরই প্রত্যক্ষ ফল হিসেবে কলকাতা ট্রামওয়ে প্রবর্তিত হয়। ১৮৭৩ সালের ২৪ ফ্রেরুয়ারি কলকাতার রাস্তায় প্রথম বারের মতো ট্রাম চলে। ঘোড়াচালিত গাড়িগুলি শিয়ালদা থেকে বউবাজার ও ডালহৌসী স্কোয়ার হয়ে আর্মেনিয়া ঘাট পর্যন্ত চলত। এটি শুধু যাত্রীদের সুবিধার্থেই ব্যবহূত হতো।
কর্পোরেশনের প্রচেষ্টা থাকা সত্ত্বেও এটি অর্থনৈতিকভাবে লাভজনক না হওয়াতে ১৮৭৯ সালের ২ অক্টোবর ইংল্যান্ডের তিনজন বিখ্যাত শিল্পপতির (রবিনসন সাউটার, অ্যালফ্রেড পার্স এবং ডেলউইন পেরি) সঙ্গে কর্পোরেশন চুক্তি স্বাক্ষর করে। তাঁরা কলকাতায় ট্রামওয়ে নির্মাণ এবং রক্ষণাবেক্ষণের জন্য মূলধন নিয়োগের অধিকার লাভ করে। ১৮৮০ সালের কলকাতা ট্রামওয়ে অ্যাক্ট-এর মাধ্যমে এ চুক্তি অনুমোদিত হয়। লন্ডনে রেজিস্ট্রিকৃত কলকাতা ট্রামওয়ে কোম্পানি ১৮৮০ সালে প্রতিষ্ঠা লাভ করে।
বাংলা সরকার এবং কলকাতা কর্পোরেশন ১৮৮০ সালের ১ নভেম্বর কোম্পানিকে ট্রাম চালানোর অনুমতি দেয়। শিয়ালদা রেলস্টেশন থেকে ডালহৌসি স্কোয়ার হয়ে চাঁদপাল ঘাট পর্যন্ত ট্রাম চলাচলের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। কিন্তু নভেম্বরের মধ্যে সম্পূর্ণ ট্রামলাইন নির্মাণ সম্পন্ন না হওয়ায় প্রথম কয়েকদিন শুধু শিয়ালদা থেকে ডালহৌসী স্কোয়ার পর্যন্ত ট্রাম চলে। তবে ১৮৮৪ সালের মধ্যে ৮ টি লাইন বসানো হয়। এগুলি হলো- ১৮৮১ সালে শিয়ালদা, চিতপুর এবং চৌরঙ্গী; ১৮৮২ সালে ধর্মতলা, স্ট্যান্ডরোড, শ্যামবাজার ও খিদিরপুর এবং ১৮৮৪ সালে ওয়েলেসলী লাইন। ১৮৮২ এবং ১৮৮৪ সালের মধ্যে খুব অল্পসময়ের জন্য খিদিরপুর এবং চৌরঙ্গী এলাকায় বাষ্পচালিত ট্রাম চলে। লাইনগুলিতে অবশ্য ঘোড়াচালিত ট্রামই চলত।
১৮৯৬ সালে মেসার্স কিলবার্ন অ্যান্ড কোম্পানি কলকাতা কর্পোরেশনের কাছ থেকে সর্বপ্রথম বিদ্যুৎচালিত ট্রাম চালানোর অনুমতি লাভ করে। ১৮৯৯ সালে প্রস্তাব গ্রহীত হয় এবং ১৯০২ সালে কলকাতা ট্রামওয়েতে বিদ্যুতায়ন সম্পূর্ণ হয়। ওই একই বছরে খিদিরপুর এলাকায় প্রথমবারের মতো বিদ্যুৎচালিত ট্রাম চলে।
বিদ্যুৎ সংযোজন সম্পূর্ণ হলে কলকাতার ট্রামওয়েতে এক অস্বাভাবিক উন্নতি ঘটে। হাওড়া এলাকায় ট্রামওয়ে সংযোজনের পথ প্রশস্ত করে কলকাতা ট্রামওয়ে অ্যাক্ট (হাওড়া) ১৯০৫ এর সূত্রপাত করে। ১৯২৬ সালে কলকাতা ট্রামওয়ে কোম্পানি কলকাতায় প্রথমবারের মত বাস সার্ভিস চালানোর অধিকার পায়, যদিও প্রকল্পটি পরবর্তী সময়ে বাতিল হয়ে যায়। ১৯৪৩ সালের মধ্যে সমস্ত কলকাতা জুড়ে ট্রাম সার্ভিসের নেটওর্য়াক ছড়িয়ে পড়ে যা টালিগঞ্জ থেকে গালিফস্ট্রীট এবং শিবপুর (হাওড়া) থেকে রাজাবাজার পর্যন্ত বিস্তৃত ছিল।
১৯২০ সালের পর থেকে কলকাতা ট্রামওয়ে শ্রমিকরা ট্রেড ইউনিয়নে সক্রিয়ভাবে জড়িয়ে পড়ে। ১৯২০ সালে কলকাতা ট্রামওয়ে কর্মীরা তাদের প্রথম সংগঠন ‘কলকাতা ট্রামওয়ে এমপ্লয়িজ ইউনিয়ন’ গঠন করে। ১৯২৭ সালে ‘কলকাতা ট্রামওয়ে এমপ্লয়িজ ইউনিয়ন’ ‘কলকাতা ট্রামওয়ে ওয়ার্কাস ইউনিয়ন’ নতুন নামে পুনর্গঠিত হয়। প্রথম দিকের মার্কসীয় তত্ত্বের অনুসারী ভুপেন্দ্রনাথ দত্ত এবং ফণীন্দ্রকুমার স্যান্নাল ছিলেন যথাক্রমে এর প্রতিষ্ঠাতা প্রেসিডেন্ট ও সেক্রেটারি। পরবর্তীকালে সোমনাথ লাহিড়ি, বঙ্কিম মুখার্জী এবং মুহম্মদ ইসমাইলের মতো কয়েকজন কমিউনিস্ট নেতা এ ইউনিয়নের সঙ্গে সম্পৃক্ত হন। কলকাতা ট্রামওয়ে কর্মীরা বামপন্থি ট্রেড ইউনিয়ন নেতাদের প্রভাবে ১৯৩৯, ১৯৪৫ এবং ১৯৪৭ সালে বিদেশি ব্যবস্থাপনার বিরুদ্ধে সন্ত্রাসী আন্দোলনে অংশ নেন। তবে কলকাতার দাঙ্গায় কলকাতা ট্রামওয়ে কর্মীরা হিন্দু-মুসলিম সম্প্রীতি বজায় রাখতে এক উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করে।
ভারতের স্বাধীনতার পর কোম্পানি এবং পশ্চিম বাংলা সরকারের মধ্যে ব্যবস্থাপনা ও মালিকানা নিয়ে আলাপ-আলোচনা শুরু হয়। ১৯৫৭ সালের কলকাতা ট্রামওয়ে অ্যাক্ট সরকার কর্তৃক বিশ বছর পর ক্রয় করার মাধ্যমে এর দায়িত্বভার গ্রহণের বিষয় অনুমোদন করে। অবশেষে ১৯৬৭ সালের অ্যাক্ট-এর মাধ্যমে সরকার কলকাতা ট্রামওয়ে কোম্পানি জাতীয়করণ করে। [রাজশেখর বসু]
গ্রন্থপঞ্জি Siddhartha Guha Ray, “History of the Working class in the Calcutta Tramways Company, 1920–1967”, Unpublished PhD Dissertation, University of Calcutta, 1988; Sisir Mitra, A public facility, its management and the workers: A case study of the Calcutta Tramways, its growth and decay, 1939-1975, New Delhi, 1980.