ওয়াটসন, অ্যাডমিরাল চার্লস: সংশোধিত সংস্করণের মধ্যে পার্থক্য
NasirkhanBot (আলোচনা | অবদান) অ (Added Ennglish article link) |
সম্পাদনা সারাংশ নেই |
||
(একই ব্যবহারকারী দ্বারা সম্পাদিত একটি মধ্যবর্তী সংশোধন দেখানো হচ্ছে না) | |||
১ নং লাইন: | ১ নং লাইন: | ||
[[Category:বাংলাপিডিয়া]] | [[Category:বাংলাপিডিয়া]] | ||
[[Image:WatsonAdmiralCharles.jpg|thumb|right|চার্লস ওয়াটসন]] | |||
'''ওয়াটসন, অ্যাডমিরাল চার্লস''' (১৭১৪-১৭৫৭) পলাশীর যুদ্ধের একজন বিজয়ী ব্যক্তি হিসেবে ব্রিটিশ ও ভারতীয় ইতিহাসে উল্লেখযোগ্য হয়ে আছেন। তিনি ওয়েস্টমিনস্টারে জন্মগ্রহণ করেন এবং নাবিক পরিবারের ঐতিহ্য অনুযায়ী তিনি ১৭২৮ সালে ব্রিটিশ নৌবাহিনীতে যোগ দেন। প্রধান নৌ সেনাপতির দপ্তরের প্রথম লর্ড-এর ভ্রাতুষ্পুত্র ছিলেন বলে অতি দ্রুত নিম্ন পদগুলি অতিক্রম করে ১৭৪৩ সালে তিনি অধিনায়কের পদ লাভ করেন। ১৭৪৭-৪৮ সালে নিউফাউন্ডল্যান্ড এবং উত্তর আমেরিকান স্টেশনের প্রধান সেনাপতি হিসেবে ওয়াটসনকে পাঠানো হয়। ১৭৫৪ সালে তিনি ইস্ট ইন্ডিজের সর্বাধিনায়ক নিযুক্ত হন। ১৭৫৬ সালের জুন মাসে ওয়াটসন ভাইস অ্যাডমিরাল পদে পদোন্নতি লাভ করেন এবং একই পদমর্যাদায় তিনি ১৭৫৬ সালের ডিসেম্বর মাসে লে. কর্নেল রবার্ট ক্লাইভ ও তার ছোট সৈন্যবাহিনীসহ বাংলার জলসীমায় আসেন। | '''ওয়াটসন, অ্যাডমিরাল চার্লস''' (১৭১৪-১৭৫৭) পলাশীর যুদ্ধের একজন বিজয়ী ব্যক্তি হিসেবে ব্রিটিশ ও ভারতীয় ইতিহাসে উল্লেখযোগ্য হয়ে আছেন। তিনি ওয়েস্টমিনস্টারে জন্মগ্রহণ করেন এবং নাবিক পরিবারের ঐতিহ্য অনুযায়ী তিনি ১৭২৮ সালে ব্রিটিশ নৌবাহিনীতে যোগ দেন। প্রধান নৌ সেনাপতির দপ্তরের প্রথম লর্ড-এর ভ্রাতুষ্পুত্র ছিলেন বলে অতি দ্রুত নিম্ন পদগুলি অতিক্রম করে ১৭৪৩ সালে তিনি অধিনায়কের পদ লাভ করেন। ১৭৪৭-৪৮ সালে নিউফাউন্ডল্যান্ড এবং উত্তর আমেরিকান স্টেশনের প্রধান সেনাপতি হিসেবে ওয়াটসনকে পাঠানো হয়। ১৭৫৪ সালে তিনি ইস্ট ইন্ডিজের সর্বাধিনায়ক নিযুক্ত হন। ১৭৫৬ সালের জুন মাসে ওয়াটসন ভাইস অ্যাডমিরাল পদে পদোন্নতি লাভ করেন এবং একই পদমর্যাদায় তিনি ১৭৫৬ সালের ডিসেম্বর মাসে লে. কর্নেল রবার্ট ক্লাইভ ও তার ছোট সৈন্যবাহিনীসহ বাংলার জলসীমায় আসেন। | ||
ওয়াটসনের কামানের সহায়তায় রবার্ট ক্লাইভ নওয়াব সিরাজউদ্দৌলার নিয়ন্ত্রণ থেকে [[কলকাতা|কলকাতা]] পুনর্দখল করেন। [[সিরাজউদ্দৌলা |সিরাজউদ্দৌলা]] এখান থেকে ইতোপূর্বে ইংরেজদের বিতাড়িত করে দিয়েছিল। সম্মিলিতভাবে সেনা ও নৌবাহিনী কলকাতা ফোর্ট উইলিয়মের কর্তৃত্ব গ্রহণ করে। কিছুদিনের মধ্যেই তারা হুগলি বন্দরও করায়ত্ত করে। [[হুগলি নগরী|হুগলি]] দখলের পর ওয়াটসন চন্দননগরের উপর আঘাত হেনে সেখান থেকে ফরাসিদের বিতাড়িত করেন। তবে তার সবচেয়ে বড় সাফল্য ছিল সিরাজউদ্দৌলার প্রতিপক্ষ শক্তিগুলির সঙ্গে বেশ কিছু গোপন এবং প্রকাশ্য আলোচনায় অংশগ্রহণ এবং সবশেষে নওয়াবের সেনাবাহিনীর মীর বকশী বা পেমাস্টার জেনারেল মীরজাফর আলী খানের পক্ষে নওয়াবকে ক্ষমতাচ্যুত করার জন্য তাদের সঙ্গে একটি গোপন চুক্তি স্থাপন। অবশ্য সবক্ষেত্রেই ওয়াটসন তার পেশাদারিত্বকে উচ্চে স্থান দিয়েছেন। নওয়াবের বিরূদ্ধে ষড়যন্ত্রে লিপ্ত লোভী ও নীতি-বিবর্জিত সওদাগর [[উমিচাঁদ|উমিচাঁদ]] প্রচুর অর্থ না পেলে নওয়াবের কাছে ষড়যন্ত্র ফাঁস করার কথা বলে ক্লাইভকে হুমকি দিলে ক্লাইভ উমিচাঁদকে প্রতারিত করার উদ্দেশ্যে একটি জাল দলিলে স্বাক্ষর করতে ওয়াটসনকে নির্দেশ দেন। কিন্তু পেশাদারি নীতির বহির্ভূত বিধায় ওয়াটসন তা করতে অস্বীকার করেন। যদিও ক্লাইভের কাছে এ নীতির গুরুত্ব তেমন ছিলনা। তাই ক্লাইভ সে দলিলে নিজেই স্বাক্ষর করে চক্রান্তকারীর মুখ বন্ধ করেন। পলাশীর যুদ্ধে রবার্ট ক্লাইভ মূলত নির্ভর করেছেন ওয়াটসনের নৌসেনাদের ওপর এবং এ যুদ্ধে তারা ছিল গোলন্দাজ বাহিনীর ভূমিকায়। | ওয়াটসনের কামানের সহায়তায় রবার্ট ক্লাইভ নওয়াব সিরাজউদ্দৌলার নিয়ন্ত্রণ থেকে [[কলকাতা|কলকাতা]] পুনর্দখল করেন। [[সিরাজউদ্দৌলা |সিরাজউদ্দৌলা]] এখান থেকে ইতোপূর্বে ইংরেজদের বিতাড়িত করে দিয়েছিল। সম্মিলিতভাবে সেনা ও নৌবাহিনী কলকাতা ফোর্ট উইলিয়মের কর্তৃত্ব গ্রহণ করে। কিছুদিনের মধ্যেই তারা হুগলি বন্দরও করায়ত্ত করে। [[হুগলি নগরী|হুগলি]] দখলের পর ওয়াটসন চন্দননগরের উপর আঘাত হেনে সেখান থেকে ফরাসিদের বিতাড়িত করেন। তবে তার সবচেয়ে বড় সাফল্য ছিল সিরাজউদ্দৌলার প্রতিপক্ষ শক্তিগুলির সঙ্গে বেশ কিছু গোপন এবং প্রকাশ্য আলোচনায় অংশগ্রহণ এবং সবশেষে নওয়াবের সেনাবাহিনীর মীর বকশী বা পেমাস্টার জেনারেল মীরজাফর আলী খানের পক্ষে নওয়াবকে ক্ষমতাচ্যুত করার জন্য তাদের সঙ্গে একটি গোপন চুক্তি স্থাপন। অবশ্য সবক্ষেত্রেই ওয়াটসন তার পেশাদারিত্বকে উচ্চে স্থান দিয়েছেন। নওয়াবের বিরূদ্ধে ষড়যন্ত্রে লিপ্ত লোভী ও নীতি-বিবর্জিত সওদাগর [[উমিচাঁদ|উমিচাঁদ]] প্রচুর অর্থ না পেলে নওয়াবের কাছে ষড়যন্ত্র ফাঁস করার কথা বলে ক্লাইভকে হুমকি দিলে ক্লাইভ উমিচাঁদকে প্রতারিত করার উদ্দেশ্যে একটি জাল দলিলে স্বাক্ষর করতে ওয়াটসনকে নির্দেশ দেন। কিন্তু পেশাদারি নীতির বহির্ভূত বিধায় ওয়াটসন তা করতে অস্বীকার করেন। যদিও ক্লাইভের কাছে এ নীতির গুরুত্ব তেমন ছিলনা। তাই ক্লাইভ সে দলিলে নিজেই স্বাক্ষর করে চক্রান্তকারীর মুখ বন্ধ করেন। পলাশীর যুদ্ধে রবার্ট ক্লাইভ মূলত নির্ভর করেছেন ওয়াটসনের নৌসেনাদের ওপর এবং এ যুদ্ধে তারা ছিল গোলন্দাজ বাহিনীর ভূমিকায়। |
০৬:২৭, ৭ জুলাই ২০১৪ তারিখে সম্পাদিত সর্বশেষ সংস্করণ
ওয়াটসন, অ্যাডমিরাল চার্লস (১৭১৪-১৭৫৭) পলাশীর যুদ্ধের একজন বিজয়ী ব্যক্তি হিসেবে ব্রিটিশ ও ভারতীয় ইতিহাসে উল্লেখযোগ্য হয়ে আছেন। তিনি ওয়েস্টমিনস্টারে জন্মগ্রহণ করেন এবং নাবিক পরিবারের ঐতিহ্য অনুযায়ী তিনি ১৭২৮ সালে ব্রিটিশ নৌবাহিনীতে যোগ দেন। প্রধান নৌ সেনাপতির দপ্তরের প্রথম লর্ড-এর ভ্রাতুষ্পুত্র ছিলেন বলে অতি দ্রুত নিম্ন পদগুলি অতিক্রম করে ১৭৪৩ সালে তিনি অধিনায়কের পদ লাভ করেন। ১৭৪৭-৪৮ সালে নিউফাউন্ডল্যান্ড এবং উত্তর আমেরিকান স্টেশনের প্রধান সেনাপতি হিসেবে ওয়াটসনকে পাঠানো হয়। ১৭৫৪ সালে তিনি ইস্ট ইন্ডিজের সর্বাধিনায়ক নিযুক্ত হন। ১৭৫৬ সালের জুন মাসে ওয়াটসন ভাইস অ্যাডমিরাল পদে পদোন্নতি লাভ করেন এবং একই পদমর্যাদায় তিনি ১৭৫৬ সালের ডিসেম্বর মাসে লে. কর্নেল রবার্ট ক্লাইভ ও তার ছোট সৈন্যবাহিনীসহ বাংলার জলসীমায় আসেন।
ওয়াটসনের কামানের সহায়তায় রবার্ট ক্লাইভ নওয়াব সিরাজউদ্দৌলার নিয়ন্ত্রণ থেকে কলকাতা পুনর্দখল করেন। সিরাজউদ্দৌলা এখান থেকে ইতোপূর্বে ইংরেজদের বিতাড়িত করে দিয়েছিল। সম্মিলিতভাবে সেনা ও নৌবাহিনী কলকাতা ফোর্ট উইলিয়মের কর্তৃত্ব গ্রহণ করে। কিছুদিনের মধ্যেই তারা হুগলি বন্দরও করায়ত্ত করে। হুগলি দখলের পর ওয়াটসন চন্দননগরের উপর আঘাত হেনে সেখান থেকে ফরাসিদের বিতাড়িত করেন। তবে তার সবচেয়ে বড় সাফল্য ছিল সিরাজউদ্দৌলার প্রতিপক্ষ শক্তিগুলির সঙ্গে বেশ কিছু গোপন এবং প্রকাশ্য আলোচনায় অংশগ্রহণ এবং সবশেষে নওয়াবের সেনাবাহিনীর মীর বকশী বা পেমাস্টার জেনারেল মীরজাফর আলী খানের পক্ষে নওয়াবকে ক্ষমতাচ্যুত করার জন্য তাদের সঙ্গে একটি গোপন চুক্তি স্থাপন। অবশ্য সবক্ষেত্রেই ওয়াটসন তার পেশাদারিত্বকে উচ্চে স্থান দিয়েছেন। নওয়াবের বিরূদ্ধে ষড়যন্ত্রে লিপ্ত লোভী ও নীতি-বিবর্জিত সওদাগর উমিচাঁদ প্রচুর অর্থ না পেলে নওয়াবের কাছে ষড়যন্ত্র ফাঁস করার কথা বলে ক্লাইভকে হুমকি দিলে ক্লাইভ উমিচাঁদকে প্রতারিত করার উদ্দেশ্যে একটি জাল দলিলে স্বাক্ষর করতে ওয়াটসনকে নির্দেশ দেন। কিন্তু পেশাদারি নীতির বহির্ভূত বিধায় ওয়াটসন তা করতে অস্বীকার করেন। যদিও ক্লাইভের কাছে এ নীতির গুরুত্ব তেমন ছিলনা। তাই ক্লাইভ সে দলিলে নিজেই স্বাক্ষর করে চক্রান্তকারীর মুখ বন্ধ করেন। পলাশীর যুদ্ধে রবার্ট ক্লাইভ মূলত নির্ভর করেছেন ওয়াটসনের নৌসেনাদের ওপর এবং এ যুদ্ধে তারা ছিল গোলন্দাজ বাহিনীর ভূমিকায়।
পলাশী জয়ের পর এ দুবিজেতার মধ্যে বিরোধের সূত্রপাত ঘটে। তারা উভয়েই ফোর্ট উইলিয়মের গভর্নর হওয়ার জন্য প্রবলভাবে আগ্রহী হয়ে ওঠেন। পদবি এবং চাকরির জ্যেষ্ঠতা উভয় দিক থেকেই কনিষ্ঠ হওয়া সত্ত্বেও ক্লাইভ নিজেকে ফোর্টের গভর্নর হিসেবে অভিষিক্ত করেন। গভর্নর হিসেবে স্বীকৃতি না দিলে ক্লাইভ ওয়াটসনকে দ্বন্দ্বযুদ্ধে আহবান করেন। কিন্তু কনিষ্ঠ পদবির কারণে ওয়াটসন ক্লাইভের এ দ্বন্দ্বযুদ্ধ প্রত্যাখ্যান করেন। একদিকে হতাশাগ্রস্ত আর অন্যদিকে বিরূপ আবহাওয়ার ফলে ওয়াটসন অসুস্থ হয়ে পড়েন এবং ১৭৫৭ সালের ১৬ আগস্ট ওয়াটসন কলকাতায় মারা যান। কলকাতায় সমাধিস্থ হলেও ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির অর্থানুকূল্যে ওয়েস্টমিনস্টার অ্যাবেতে তার স্মৃতির উদ্দেশে একটি সৌধ নির্মিত হয়। [সিরাজুল ইসলাম]